যুক্তফ্রন্ট-ঐক্যফ্রন্টের প্রায় সবারই একসময় একটা ভাল ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল।
যেমন কামাল হোসেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর ছিল, সংবিধান রচনা টিমের প্রধান, ডা জাফরুল্লা মুক্তিযুদ্ধকালিন হাসপাতাল, শক্তভাবে স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধু পক্ষে .. এখনো আছেন। এমনকি মাহামুদুর রহমান মান্নাও ৮০-৯০ দশকে বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে দারুন বক্তা হিসেবে ছাত্রলীগ ও স্বাধিনতা পক্ষকে উজ্জিবিত করে গেছেন।
কিন্তু ব্যারিষ্টার মইনুল? বাংলাদেশ বা বাংগালী দেশবাসির জন্য তার কি অবদান?
ইতর মইনুলের এজাবৎ যা পাওয়া গেছে সবই দেশবিরোধী মীরজাফরি কর্মকান্ড।
ইত্তেফাকের পুরনো সাংবাদিক যারা তাকে জানেন মইনুল কি জাতের খারাপ লোক।
ইত্তেফাক ভবনে ঢুকলেই তার খিস্তি গালিগালাজে সবাই অতিষ্ঠ হয়ে যেতো। এই খারাপ লোকটা এখন টকশোতে এসে সাংবাদিকদের সংগে চাড়ালের মতো ব্যবহার করছে। একবার এক টকশোতে দেখলাম এক সাংবাদিককে সাসাচ্ছে "সাবধানে কথা বলবেন" ... "হসিনা তো দেশেই থাকতে পারবেনা"। সে সবাইকে যেন মনে করছে তার ইত্তেফাকের সাবেক কর্মচারী! সাংবাদিক/কলাম লেখক মাসুদা্র বিরুদ্ধে যে অশালীন ব্যবহার সে করেছে, রাস্তায় নামিয়ে গনপিটুনি দিলেও এর বিচার কম হবে।
এর আগে আরেক ঐক্যফ্রড আ স ম রব সাংবাদিক নজরুল কবিরের সংগে দূর্ব্যবহার করেন! এটি কোন শয়তানদের জাতীয় ঐক্য?
কে এই মইনুল
ইত্তেফাক এর প্রকাশনা শুরু হয় ১৯৫৩ সনের ২৪ ডিসেম্বর থেকে।
তকন ইত্তেফাক মানেই আওয়ামীলীগের দলিয় পত্রিকা
আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও ইয়ার মোহাম্মাদ খান এর হাত ধরে। উর্দুভাসি বাংগালী ইয়ার মোহাম্মাদ খান হলেন এর প্রতিষ্ঠাতা প্রকাশক। হোসেন সহিদ সরওয়ারদিও উর্দুভাসি ছিলেন। তবে তাঁরা সবাই সক্রিয় আওয়ামী রাজনীতি ও পাকিস্তানী বিরোধী আন্দোলনে ব্যস্ত থাকায়, তাঁরা স্টাফ রিপোর্টার তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে সম্পাদক নিয়োগ করেন।
এখন প্রশ্ন হলো, সম্পাদক কিভাবে মালিক বনে যায়?
ইত্তেফাকের মালিকানা কিভাবে ব্যক্তি মালিকানায় চলে আসল? মালিকানা হস্তান্তর কি আদৌ করা হয়েছিল? যদি না করা হয়ে থাকে তাহলে উত্তরাধিকার আইন কি প্রযোজ্য হবে? না জাতীয়করন?
দেশ স্বাধীনের পরে তো অনেক কাহিনী
অবশেষে, মানিক মিয়ার দুই পুত্র ইত্তেফাকের মালিকানা ভাগাভাগি নিয়ে খুনোখুনি পর্যন্ত করল!
১৯৭১ পর্ব
একাত্তরে হানাদার পাকিস্তান মিলিটারির পক্ষ নেওয়াদের তালিকায় মানিক মিয়ার দুই পূত্র, মইনুল ও মঞ্জু যেমন আছে তেমন আছে আবুল মনসুর আহমদের পূত্রদ্বয়, যথাক্রমে মাহবুব আনাম এবং মাহফুজ আনাম (ডেইলি স্টার)।
শহীদ জননী জাহানারা ইমামের 'একাত্তরের দিনগুলি' যারা পড়েছেন, তারা নিশ্চয়ই খেয়াল করে থাকবেন মাহবুব আনামের নাম, যার গাড়ি 'হাইজ্যাক' করে রুমি-বদিরা আক্রমন এসাইনমেন্টে গিয়েছিল। বদিকে চিনে ফেলেছিল মাহবুব আনাম। সেখানেই কি শেষ ছিল?
তাহলে বীর যোদ্ধা বদি যে ধরা পড়ল অধ্যাপক জালালুদ্দিনের বাসায়! নেপত্থে মাহাফুজের ভাই মাহবুব আনাম কি ছিল না?
সেই প্রশ্ন এসেছিল, কিন্তু কেউ করেনি, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, বন্যা খাদ্যাভাব। ৩ বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধু হতা, জেল হত্যা। মইনুল অথবা মাহবুব আনামেরা কেউ যুদ্ধাপরাধের সাথে যুক্ত ছিল কি না, সেকরম কোন অভিযোগ যেকোনো কারণেই হোক, মানুষ তখন তোলেনি। যেখানে জামাত-মুসলিম লীগের ডাকসাইটে যুদ্ধাপরাধীরা মন্ত্রী হয়ে যাচ্ছে সেখানে মইনুল-মাহবুব-মাহাফুজ আনামদের আর কেন বাল!
আরো আছে
মইনুলের পাপ লিখে শেষ করা যাবে না।
১৯৬৯ সালে মানিক মিয়ার মৃত্যুর পরে সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেন ‘মঞ্চে নেপথ্যে’ নামে কলাম লিখতে শুরু করেন। এই কলামে পাকিস্তানী দুঃশাসনকে তুলে ধরেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরি করতে থাকেন। কলামটি সে সময়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
এই সময়কালে সিরাজুদ্দিন হোসেন দুসপ্তাহের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি মাগুরা যান। সে সময়ে ইত্তেফাকে চাকরি করতেন জামায়াতে ইসলামী সমর্থক খোন্দকার আব্দুল হামিদ। তিনি ছিলেন পাকি সমর্থক, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধী। সম্পর্কে মইনুল হোসেনের আত্মীয়। সিরাজুদ্দিন হোসেনের অনুপস্থিতিতে জনপ্রীয় 'মঞ্চে নেপথ্যে' কলামটি মইনুল হোসেনের মারফতে খোন্দকার আব্দুর হামিদ ছিনতাই করে নেন। তিনি সেই থেকে সেখানে চিপা দিয়া স্বাধীকার আন্দোলনের বিরুদ্ধে লিখতে থাকেন। এই লেখার মধ্যে দিয়ে পুর্বপাকিস্তানের স্বাধীনতাকামী মানুষদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন।
সিরাজুদ্দিন হোসেন মাগুরা থেকে ফিরে আওমীলীগের পত্রিকার এই অবস্থা দেখে রাগ করে ইত্তেফাক অফিসে যাওয়া ছেড়ে দেন। তখন মানিক মিয়ার স্ত্রী তাকে অনুরোধ করে আবার অফিসে নিয়ে আসেন। মইনুল হোসেন তাকে মঞ্চে নেপথ্যে কলামটি আর ফেরত দেননি। পাকিস্তানের দালাল খোন্দকার আব্দুল হামিদকেই দিয়ে রাখেন। হামিদ সেখানে পাকিস্তানী মতাদর্শই প্রকাশ অব্যাহত রাখেন।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ইত্তেফাক অফিস পুড়িয়ে দেয় পাক বাহিনী। খোন্দকার আব্দুল হামিদের মাধ্যমে মইনুল হোসেন পাকিস্তান সরকারের কাছ থেকে ক্ষতিপুরণ আদায় করে নেন। হামিদ তখন কুখ্যাত রাও ফরমান আলীর খুব ঘনিষ্ট হয়ে ওঠেন। বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়নে তাকে সহযোগিতা করেন। দেশে তখন পাকবাহিনী নির্বিচারে গণহত্যা চালাচ্ছে। লুটপাট করছে। মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ শুরু করেছে।
এর মধ্যে মইনুল হোসেনের ভাই মঞ্জুকে পাক বাহিনী ধরে নিয়ে যায়। দুদিন পরে খোন্দকার আব্দুল হামিদের তৎপরতায় মঞ্জু ছাড়া পান।
এই পরিস্থিতির মধ্যেও সিরাজুদ্দিন হোসেন ইত্তেফাকে লিখতে থাকেন। মইনুল আছেন, তাই পাক বাহিনী থেকে নিরাপদ ভেবেছিলেন।
মইনুল-হামিদের ষড়যন্ত্র আঁচ করতে পারেন নি, একদিন জামায়াতে ইসলামীর পত্রিকা দৈনিক সংগ্রাম সিরাজুদ্দিন হোসেনকে ভারতিয় চর বলা হোল।
পরদিনই চামেলী বাগের বাসা থেকে সিরাজুদ্দিন হোসেনকে ধরে নিয়ে যায় পাকবাহিনীর দোসর আলবদররা। তিনি আর ফিরে আসেন নি, সম্ভবত তাকে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়।
দেশ স্বাধীনের পরে শহীদ সিরাজুদ্দিন হোসেনের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। তাতে অন্যতম আসামী করা হয়েছিল পলাতক পাক বাহিনীর দালাল খোন্দকার আব্দুল হামিদকে।
পরে অবস্য জিয়া অনেক রাজাকারকে ফিরিয়ে এনে মন্ত্রী করার সময় এই মইনুল সহচর ঘাতক খোন্দকার আব্দুল হামিদকেও মন্ত্রী করা হয়েছিল।
১৯৭৪ সালে বাসন্তি নামে একজন বালিকাকে জাল পরিয়ে সাজিয়ে ইত্তেফাক পত্রিকায় একটি ছবি প্রকাশ করা হয়। এই ছবির মধ্যে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করা হয়। এবং পচাত্তরের ঘাতকদের প্রোপাগাণ্ডা হিসেবে এই ছবিটি ব্যবহৃত হয়েছিল। এই বাসন্তিকে জাল পরানোর পরিকল্পনাটি ছিল মইনুল হোসেনের বলে অভিযোগ রয়েছে।
১৯৭৫ সালের পনেরো আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে পাকিপন্থারাই ক্ষমতায় আসে। মইনুল হোসেন তখন এই ঘাতকদের সহযোগিতা করা মিরজাফর। পরে খুনি খোন্দকার মোশতাক আহমদের নেতৃত্বে ডেমোক্রেটিক লীগ গঠন করেন।
জিয়াউর রহমান সামরিক শাসক হিসেবে ক্ষমতা নিলে ঘাতক খোন্দকার আব্দুল হামিদ তাকে পাকিস্তানী ভাবাদর্শে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ তত্ত্বটি সরবরাহ করেন। মন্ত্রী হন খোন্দকার আব্দুল হামিদ। এই তত্ত্বের মধ্যে দিয়েই জিয়া পাকিস্তানপন্থী রাজনীতিবিদদের নিয়ে বিএনপি গঠন করেন।
মইনুল খাস রাজাকার, এর প্রমান
নিজের পিতা তোফাজ্জল হোসেনের মতাদর্শ নয়, জামায়াতপন্থী খোন্দকার আব্দুল হামিদের মতাদর্শই ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন সারাজীবন ধরেই বহন করে চলেছেন। প্রতি বছর জামায়াতে ইসলামী সন্ত্রাসী ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবিরের সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে স্বীকার করেন, তার সঙ্গে এই পাকিস্তানী ঘাতক সংগঠনের সম্পর্ক বহুদিনের।
তথ্য ঋণ :- শহীদ সিরাজুদ্দিন স্মারকগ্রন্থ।
মইনুলের বড় পরিচয় ইত্তেফাকের মালিক (জবরদখল করা) এই পরিচয় বিক্রি করেই সে শুশিল।
সমাজ দেশ রাষ্ট্র নিয়ে তার সামান্য কোন অবদানের কথা কখনো শোনা যায় নি। বরং অভিযোগ আছে।
মইনুলের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ হল: ১/১১ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসাবে নিয়ম বহিভূর্ত যে কাজকাম করেছে, ব্যাবসায়িদের আটক ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, হাসিনা-খালেদা বিরুদ্ধে চাদাবাজির সাক্ষী হওয়া, চলমান বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা বন্ধ করা। সবচেয়ে চরম অন্যায় করেছিল বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বিষয়ে মন্তব্য করে, সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উদ্ধত জোড় গলায় বলেছিল, "আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার নিয়ে আগ্রহী নই"।
বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বলেই তখন হয়তো অনেকে তেমন গুরুত্ব দিয়ে ভাবেনি। কিন্তু ভাবা উচিত ছিল। জিয়া-বিএনপি-জামাতের পূঞ্জিভূত পাপে বাংলাদেশে বিচারের বাণী যে দির্ঘদিন নিরবে-নিভৃতে কাঁদছিল, সেই কান্নাকে আরো গভীরে নিয়ে গিয়েছিল তখনকার মইনুলদের আস্ফালন।
মইনুল-মাহাবুব গং দের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ তদন্ত শুরু করা এখন ফরজ হয়ে গেছে।
আর তসলিমার কথা আর কি বলবো, ২১ বছর আগে কেউ এক সময় তার প্রসংসা করে নি বা বিরুদ্ধাচরণ করেছিল। তাই এখন সুযোগ।
"আমি তোমারে এসাইলাম দিসি (সুপারিস করেছি)। তুমি আমার বই বের হলে প্রশংসা করবা। না করলে তুমি চরিত্রহীন !!
এখন সেই বিরুদ্ধবাদীর দুঃসময়ে তার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়াটা কি নারীবাদিতা না বিকারগ্রস্থ হিটসিকার?