ফুটবল আমাকে ক্রিকেটের চেয়ে অনেক বেশী টানে।
ছোটকালে ক্রিকেটের চেয়ে ফুটবলই বেশী খেলেছি। আবাহনি প্রিয় দল হলেও যে দল বা খেলোয়াড় ভাল খেলে ব্রাদার্স বা মোহামডান যেই হোক তাদেরকে সমর্থন দিতাম।
তবে আমি ছোট থেকেই ইংলিশ ফুটবল লীগ ও ইংল্যান্ড দলের ভয়াবহ রকমের পাগলা সমর্থক। বন্ধুরা খুব অবাক হতো আমি কেন ব্রাজিল আর্জেন্টিনা বার্সেলোনা মাদ্রিদ ব্রায়ান বুরুশিয়া এসি মিলান বাদ দিয়ে ফালতু ইংলিশ দলকে সমর্থন করি।
অনেক কিছুরই কোন কারন থাকে না।
১৯৭৭ ও ৭৮ এ পরপর ২ বার চ্যাম্পিয়ান সহ মোট ৪ বারের চ্যাম্পিয়ান লিভারপুল।
এছাড়া অন্যান্ন ইংলিশ দল ম্যানচেসটার ইউনাইটেড, এস্টনভিলা, নটিংহাম ফরেষ্ট, চেলসি একাধিক বার চ্যাম্পিয়ান হয়েছিল।
আজ যেভাবে চ্যাম্পিয়ান লিভারপুল।
শনিবার চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালটা এবার ছিল ‘অল ইংলিশ’।
নিজ দেশের টিম লন্ডনের টটেনহ্যাম হটস্পারকে হারিয়ে ১৪ বছর পর আবারও চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জয়ের উচ্ছ্বাসে মাতলো দলটি । মাদ্রিদের ওয়ান্দা মেত্রোপলিতানোয় আজ শনিবার শিরোপা লড়াইয়ে ২-০ গোলে জিতল।
২ মিনিটেই গোল দিয়ে এগিয়ে যায় লিভারপুল। প্রথম আক্রমণে ডি-বক্সে ঢুকে পড়া সাদিও মানের শটে বল মিডফিল্ডার মুসা সিসোকোর বুকে লেগে এরপর হাতে। রেফারি বাজান পেনাল্টির বাঁশি। নিখুঁত স্পট কিকে লিভারপুলকে এগিয়ে দেন ১১ নং জার্সির মোহামেদ সালাহ।
শুরুর ধাক্কা সামলে বল দখলে রেখে আক্রমণে মনোযোগী হয় টটেনহ্যাম। তবে বিরতির আগে একটি শটও লক্ষ্যে রাখতে পারেনি এর মাঝে ৬৯তম মিনিটে জেমস মিলনারের নিচু শট পোস্ট ঘেঁষে চলে গেলে ব্যবধান বাড়েনি। ১০ মিনিট পর সন হিউং মিনের দূরপাল্লার বুলেট গতির শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান লিভারপুল গোলরক্ষক আলিসন। তিন মিনিট পর ডি-বক্সের বাঁ দিক থেকে ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনের শট ঝাঁপিয়ে দারুণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দলকে এগিয়ে রাখেন আলিসন। ৮৭তম মিনিটে বলতে গেলে সব অনিশ্চয়তার ইতি টেনে দেন ওরিগি। সেই দির্ঘদেহী কালো বেলজিয়ামের ফরোয়ার্ড। ডি-বক্সে বাঁ দিকে বলটি পেয়েই পেয়ে নিচু শটে সেকেন্ড বার দিয়ে জালে গোল।
চ্যাম্পিয়ান হলো লিভারপুল।
ফাইনালের চেয়েও অনেক বড় কঠিন ছিল সেই সেমিফাইনাল
৭ ই মে সেকেন্ড লেগ সেমিফাইনালে নিজ মাঠ এনফিল্ডে যেভাবে কঠিন বার্সেলোনা কে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে লিভারপুল।
ফাইনালের চেয়েও অনেক কঠিন ছিল সেই খেলায় জেতা। দুই টপ আহত সালাহ ও ফিরমিনো নেই।
ফলটা সত্যি অবিশ্বাস্য। ন্যু ক্যাম্পে ৩-০ গোলে হেরে এসেছিল লিভারপুল। তিন গোলে পিছিয়, এখনো অনেক দূরের পথ। কি হবে? অনেকটা অসম্ভবকে সম্ভব করে সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে বার্সাকে ৪-০ গোলে হারাল অল রেডসরা। তাই দুই লেগ মিলে ৪-৩ গোলে এগিয়ে থেকে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল নিশ্চিত করেছিল লিভারপুল।
সে দিন পাহাড়সম একটা লক্ষ্য নিয়ে মঙ্গলবার রাতে এনফিল্ডে খেলতে নামে জার্গেন ক্লপের শিষ্যরা। ওরিগি ও উইনালডাম দুজনে জোড়া গোল করে স্বপ্ন সম্ভবের পথে।
প্রথম লেগে বার্সেলনার মাঠে মেসির দ্বারা নাস্তানাবুদ লিভারপুল নিজ মাঠে গতিময় ফুটবল আর লম্বা পাসে কাবু হয়ে যায় মেসিদের বার্সা। খেলার ৭ মিনিটে প্রথম গোল পায় লিভারপুল। এ সময় জর্ডান হেন্ডারসনের শট বার্সার গোলরক্ষক স্টোগন ফিরিয়ে দেন। তবে ফিরতি বলে গোল করে শুরুতেই লিভারপুল সমর্থকদের আনন্দে উদ্ভাসিত করেন ২৭ নং জার্সির ওরিগি। প্রথমার্ধে মাত্র ১-০ গোলে অগ্রগামী। এগ্রগেটে জিততে হলে দরকার আরো ৩ গোল।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে হাল্কা চোট পাওয়া রবার্টসনের পরিবর্তে জর্জিনিও উইনালডামকে মাঠে নামান ক্লপ। নাটকিয় ফল। দ্বিতীয়ার্ধের ১১ মিনিটে জোড়া গোল করে উইনালডাম। খেলার ৫৪ মিনিটে আর্নল্ডের সঙ্গে বল দেয়া-নেয়া করে দুর্দান্ত এক গোল এই ডাচ মিডফিল্ডারের। দুই মিনিটের ব্যবধানে শাকিরির নেয়া শটে মাথা ছুঁয়ে ফের লক্ষ্যভেদ করেন উইনালডাম। ৩-৩ গোলে সমতা।
সমীকরণটা তখন অনেক সহজ হয়ে যায় লিভারপুলের জন্য। ফাইনালে যেতে রক্ষণ সামলে প্রয়োজন ছিল মাত্র এক গোলের। নইলে টাইব্রেকার।
৭৯ মিনিটে সেই ওরিগিই। এ সময় কর্নার পায় লিভারপুল। গোলরক্ষক স্টেগেনসহ বার্সেলোনার রক্ষণভাগ তখনও ঠিকভাবে প্রস্তুত। রেফারির বাঁশ সঙ্গে সঙ্গে কর্নার শট অ্যালেকজান্ডার-আর্নল্ড। সেই বলে জোরালো শটে বল ঠিকানায় পাঠান সেই ওরিগি। সালাহ ও ফিরমিনো সুস্থ থাকলে ওরিগি হয়তো মাঠে নামারই সুযোগ পেতেননা।
এরপর ইতিহাস। ফাইনালে লিভারপুল।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১৯ দুপুর ১:২৬