somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৭৫ নম্বর ওয়ার্ড। ইভিএম-এ এতো ভোট পড়ল কিভাবে?

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এবারের দুই সিটির ভোটের গড় যেখানে ২৭%
সেখানে ইভিএম-এ এতো বেশি ভোট পড়ল কিভাবে? এ নিয়ে প্রশ্ন জেগেছে অনেকের মনে।

খিলগাঁও থানা এলাকার বিলের ভেতর একটি ওয়ার্ড ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডে ভোট পড়েছে প্রায় ৭৩%
কারচুপি নাকি?
মানবজমিন পত্রিকার দুই সাংবাদিক গেছিল সেই গ্রামে।
পত্রিকায় যা লিখেছে।


ছবি পাইনি, তবে 'গুগল স্ট্রিট ভিউ' থেকে এলাকার একটি ছবি।


এই ওয়ার্ডের নাসিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ৭৬ ভাগ,
ত্রিমোহনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৭৩ ভাগ
ত্রিমোহনী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬২ শতাংশ
বালুরঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েছে ৭৫
ফকিরখালী নুরানিয়া হাফিজিয়া মাদরাসায় পড়েছে ৭৪ ভাগ

ইভিএম-এ এতো বেশি ভোট পড়ল কিভাবে এ নিয়ে প্রশ্ন জেগেছে অনেকের মনে। মানবজমিন এর অনুসন্ধানে উঠে আসে এই এলাকার ভোট উৎসবের নেপথ্যের তথ্য।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডটি ত্রিমোহনী, নাসিরাবাদ, দাশেরকান্দি, গজারিয়া, কায়েতপারা, বাবুর জায়গা, বালুর পার, উত্তর দুর্গাপুর, নাগদারপাড়া, ইদারকান্দি, শেখের জায়গা ও ভাইদিয়াসহ মোট ১২টি গ্রাম নিয়ে গঠিত। এক সময় এই গ্রামগুলো নাসিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে ছিল। আয়তনের দিক থেকে ওয়ার্ডটি ৯ বর্গমাইলের কাছাকাছি। জনসংখ্যা প্রায় অর্ধলক্ষ এবং এটি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মতিঝিল জোনের খিলগাঁও থানার আওতাধীন। থানা থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে।
ওয়ার্ডের মধ্যে বয়ে গেছে নড়াই, বালু ও দোলাই নদী। এছাড়াও এলাকাটি দিয়ে গজারিয়া ও নন্দীপাড়া খালও বয়ে গেছে। খিলগাঁও থানা থেকে সাত কিলোমিটার দূরে ওয়ার্ডটির অবস্থান। কয়েক বছর আগেও এলাকাটি নির্জন দ্বীপের মত ছিল। রাস্তাঘাট, স্কুল, যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটা ছিল না। বর্তমানে ও সিটির আওতায় আসার পর কিছু রাস্তাঘাট হয়েছে। বেশিরভাগ মানুষই কৃষি নির্ভর বালু ব্যাবসা নির্ভর। অবহেলিত এলাকাটির অনেক সড়ক এখনো খানাখন্দে ভরপুর।



মতিঝিল জোনের খিলগাঁও থানার আওতাধীন। ওয়ার্ড ৭৫


এত ভোট পড়লো, কে জিতলো এই ৭৫ নং ওয়ার্ডে ?

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এই ওয়ার্ডে
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেন 'ঠেলা গাড়ি' প্রতীক মোট ভোট পেয়েছেন ৪,৭৫০টি।
বিএনপি মনোনিত প্রার্থী আকবর হোসেন 'ঘুড়ি' প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৪,৯৫৭ ভোট।
এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী সোনিয়া হোসেন 'ঝুড়ি' প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১,৩৫০
আতাবর রহমান 'ট্র্যাক্টর' প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৭১ ভোট।

এদের মধ্যে ২০৭ ভোট বেশি পেয়ে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আকবর হোসেন বিজয়ী হয়েছেন।
তবে সবকটি কেন্দ্রে মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগের ব্যারিষ্টার ফজলে নুর তাপস বিপুল ব্যাবধানে জয়ী হন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডে রাজনৈতিক রেষারেষি ও সংঘাত না থাকায় এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অন্যান্য নির্বাচনে এই ওয়ার্ডের কেন্দ্রগুলোতে বেশি ভোট পড়ে।

ত্রিমোহনী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী দোকানদার সামির আলী বলেন,
আমাদের এলাকার লোকজন চাইছে ত্রিমোহনী এলাকা থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হোক। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে যে লোককে তিনি অন্য এলাকার। আমারা এলাকার ছেলেকে নির্বাচিত করেছি। তিনি আরো জানান, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া নেতা তোফাজ্জল হোসেন তাতী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত। তিনি আরো বলেন, অন্যান্য বারের থেকে এবার মানুষ কম ভোট দিয়েছে। আর অনেকে ইভিএম-এ ভোট হবার কারণে যায় নাই।

ত্রিমোহনী এলাকার আরেক বাসিন্দা অলী হোসেন বলেন,
৭৫ নম্বর আওয়ামী লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম, আকবর আলীর হয়ে কাজ করেছেন। সেইসঙ্গে সবাই আওয়ামী লীগের হয়েও কাজ করেছেন। দলের প্রভাব খাটিয়ে অনেক কাজ করা যায়। কিন্তু তিনি দলীয় মনোনয়ন পেলেও বিপক্ষ দল সেই প্রভাব খাটিয়েছে। মজার ব্যাপার হলো জয়ের পর বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা একসঙ্গে আনন্দ মিছিল করেছেন। তিনি বলেন, এলাকার ভোটাররা অধিকাংশই এলাকায় থাকেন। ফলে ভোট বেশি পড়েছে পাশাপাশি ভোট এখানে সুষ্ঠু হওয়ায় সবাই ভোট দিতে এসেছেন।

ত্রিমোহনীর আরেক বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন,
ভোটের পরিবেশ অনেক ভালো ছিল। কোন ঝামেলা হয় নাই। লাইনে দাঁড়িয়ে সুন্দর মতো আমরা ভোট দিয়েছি।
ত্রিমোহনী এলাকার বাসিন্দারা খুশি হলেও নাসিরাবাদসহ অন্যান্য এলাকার বাসিন্দারা তোফাজ্জল হোসেনের পরাজয়ে মর্মাহত।

নাসিরাবাদ এলাকার শিক্ষার্থী রাইয়ান মাহমুদ বলেন,
আমরা ১৫/২০ বছরে যা পাইনি। তা তোফাজ্জল হোসেন ৯ মাসে করে দিয়েছেন। বিদ্যুতের খুঁটি, পিচ ঢালা রাস্তা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা এসব কল্পনাই করা যেত না। সব করে দিয়েছেন তিনি। আসলে ত্রিমোহনী এলাকার ওপর দিয়ে যেতে হয় আমাদের। তাদের ওপর দিয়ে আমরা কথাও বলতে পারি না। তারা আমাদের শাসন করে আসছেন। সেই শাসন তারা ধরে রাখতে চায়। এজন্যই ত্রিমোহনী এলাকা থেকে অন্য এলাকার আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়ায় বিরোধীতা করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তারা যৌথভাবে কাজ করে শুধুমাত্র এলাকার প্রভাব ধরে রাখার জন্য মুক্তিযোদ্ধা আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিঃসন্দেহে একজন ভালো মানুষকে হারিয়ে দিয়েছেন।

নাসিরাবাদ এলাকার বাসিন্দা আবুল হোসেন ও আনোয়ার হোসেন বলেন,
আমাদের এই ওয়ার্ডে ত্রিমোহনী এলাকার ভোট বেশি। অন্যসব এলাকার লোক একসঙ্গে হয়েও ওই এক এলাকার লোকেদের হারাতে পারিনি। তোফাজ্জল অনেক ভালো মানুষ। এমনও হইছে খেটে খাওয়া মানুষ সারাদিন কাজ করে এসে ৫শ’ টাকা আয় করে ১শ’ টাকা নির্বাচনের খরচের জন্য দিয়েছেন এমন উদাহরণও আছে।

নাসিরাবাদ মসজিদের সভাপতি হাজী আবুল হাশেম সরকার বলেন,
এলাকার ভোট খুবই ভালো। কোন ধরণের সমস্যা হয়নি। নাসিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার তাসনিম বলেন, এখানে ভোট গ্রহণ সুষ্ঠু হয়েছে। এখানে কোন রকমের ঝামেলা হয়নি। সবাই শান্তিপূর্নভাবে ভোট দিয়েছে। কোন ধরণের ঝামালে বা হুমকি আমরা মোকাবিলা করিনি।


মানবজমিনের লেখাটা ভাল লেগেছে। যেহেতু রিপোর্টার দুজন কষ্ট করে এলাকায় যেয়ে খবরটি সংগ্রহ করে এনেছেন।
লেখার সুত্র - view this link
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:২৮
১৩টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×