২৮শে অক্টোবর ছিল বিএনপি সরকারের শেষ দিন।
সেদিনই বঙ্গভবনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার শপথ হবার কথা।
আওয়ামী লীগ আগেই ঘোষণা দিয়েছিল যে কেএম হাসান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হলে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। তবে কে এম হাসান দায়িত্ব নেবেন না - এমন একটি গুঞ্জন আগেই তৈরি হয়েছিল।
প্রবল বিতর্কের কারনে কে এম হাসান সেদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে পারে নাই। পুলিশের অনেকটা নিষ্ক্রিয়। তখন বিএনপি মাত্রই ক্ষমতা ছেড়েছে। লাঠিয়াল জড় করে প্রস্তুত। বিএনপির রাষ্ট্রপতি তখনো চেয়ারে, বিএনপি প্রশাসন ও পুলিশ রাষ্ট্রপতির নিয়ন্ত্রনে রেখেছে, কিন্তু তত্ত্বাবধায় সরকার তখনো গঠিত হতে পারে নাই।
আওয়ামীলীগ দেশের একমাত্র তৃণমূলের দল জনমানুষের দল ,
ইতিহাস বলে আওয়ামী লীগ গণপিটুনি খায় না। আওয়ামী লীগ গণপিটূনি দিয়ে অভ্যস্ত।
শিবির সমর্থক অনেকে বলে থাকে লীগ পুলিশ ছাড়া একবার রাস্তায় আসুক, দেখাইয়া দিব। সেই ২৮ শে অক্টোবরে আওয়ামী লীগের সাথে পুলিশ ছিল না।
সেদিন আওমীলীগ ও বিএনপি উভয়েই পল্টন ময়দানে সমাবেশ করতে চেয়েছিল। তবে শুধু বিএনপি অনুমতি পায়।
বিএনপি দিনব্যাপি পল্টন ময়দানে সমাবেশ ডাকে, আওয়ামী লীগও সমাবেশ ডাকে দলীয় অফিসে সামনে।
বিএনপি-জামাত একত্র ভাবে পল্টনে সমাবেশ থাকার কথা থাকলেও অজ্ঞাত কারনে জামাত আলাদাভাবে বায়তুল মোকাররমের সামনে সমাবেশ শুরু করে এরপর পল্টন ময়দানে বিএনপি' কিছু লোক জড় করলেও দুপুরের পর মানুষ কমতে থাকে, বড় বড় নেতারা সকালে আসলেও দুপুরে ভাষন দেয়ার মত কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিকেলে পল্টন ময়দান খালী।
এদিকে মানুষ দলে দলে আওয়ামী লীগের ব্যানার নিয়ে আসছে তো আসছেই। আওয়ামীলীগ অফিসের দিকে, ততক্ষনে পুরো ঢাকা শহরের অলগলি সব রাস্তা আওয়ামী লীগের দখলে। রাস্তাঘাটে সমাবেশ গান-বাজনার তালে নৃত্য এমনকি পথনাটক পর্যন্ত হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের একটি খন্ড মিছিল বায়তুল মোকাররমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় বাইতুল মোকাররম মসজিদ থেকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়।
সেখানে ছিল জামাতের মিটিং। সিপিবির অফিস বায়তুল মোকাররমের উঃ গেইটের সামনেই, সিপিবির ছোট একটা মিছিল ছিল দলীয় অফিসে যাওয়ার দিকে অগ্রসর হলে জামাতিদের ইট-পাটকেল এবং গুলিবর্শনের শিকার হয়।
প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুযায়ী - আওয়ামী লীগের কর্মীরা জামায়াতের সমাবেশের দিকে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করলেও জামায়াত-শিবিরের গুলির মুখে পিছিয়ে আসে।
সে সংঘাতে কোন পক্ষ গুলি করেছে সেটি নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ভিন্ন-ভিন্ন ভাষ্য পাওয়া যায়।
পরদিন ২৯ অক্টোবর প্রকাশিত দৈনিক প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে দেখা যায় - "মুখে কাপড় বাঁধা জামায়াত-শিবির কর্মীদের হাতে দেখা গেছে রিভলভার, পিস্তল ও শটগান। বিকেলে জামায়েতের আমির ও শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী যখন বায়তুল মোকারমের উত্তর ফটকের সামনে বক্তৃতা করছিলেন, তখন তার পাশে একজন দলীয় কর্মী অস্ত্র বের করেন। পরে সিনিয়র নেতারা তাকে প্রকাশ্যে অস্ত্র বের করা থেকে নিবৃত করেন।"
লাঠিসোটা নিয়ে ধাওয়া দেয় আওয়ামী লীগের ছোট মিছিলটিও ক্ষেপে আছে বাইতুলমোকারম থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপের কারনে। এরপর আওয়ামী লীগও সিপিবির সমর্থকরা সঙ্গবদ্ধ হয়ে বাইতুল মোকাররমের দিকে পালটা ধাওয়া করে, কাউকে টার্গেট করে গণপিটুনি দেয়া হয় নি, ধাওয়া পালটা ধাওয়ায় যারা হোচট খেয়ে মাটিতে পরে যায় তারাই শাপ মারার মত লাঠিপেটার শিকার হয়ে নিহত হয়েছিল লাঠিবৈঠার পিটুনিতে সেদিন ১০ জন নিহত হয়েছিল।
এর পর থেকে আওয়ামীলীগ ঢাকা ও বাংলাদেশের রাজপথ ১-১১র আগের দিন পর্যন্ত একটানা ৩ মাস দখলে রেখেছিল। লীগ ও লীগের শিল্পিরা রাস্তাঘাটে সমাবেশ গান-বাজনার আসর যেমন খুসি তেমন সাজো এমনকি পথনাটক করে মাতিয়ে রেখেছিল। তখন ঢাকা শহরের রাস্তায় বিএনপি-জামাতের টিকিও খুজে পাওয়া যায় নি।
বিএনপি-জামাত ১৭ বছরেও ঢাকার রাজপথ ১ ঘন্টাও দখলে রাখতে পারে নি, বাকি ১৭ বছরেও পারবে না।
বাংলার ইতিহাসে আওয়ামী লীগ বাদে এজাবৎ কোন গণআন্দোলন তৈরি হয়নি। ভবিশ্বতে হবে এমন কোন আলামত দেখা যাচ্ছে না।
সুত্র ও ছবি - বিবিসি
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০২৩ দুপুর ২:২৭