somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুঃস্বপ্ন থেকে গল্পঃ কুকুরের ডাক

২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ব্রাম স্টোকার একবার স্বপ্নে দেখেছিলেন যে অক্টোপাসের মতো দেখতে একটি প্রাণী তাকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে, তার ঘাড়ে শ্বদন্ত বসিয়ে রক্ত চুষে খাচ্ছে। স্বপ্ন দেখে ধরফর করে উঠে বসেই তিনি লেখা শুরু করে দেন, কারণ স্বপ্নের স্মৃতি মানুষ সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ভুলতে থাকে। এই স্বপ্নের সারাংশ থেকেই স্টোকার ড্রাকুলা গল্পটির প্লট দাড় করিয়েছিলেন এবং টানা পাঁচ বছর পরিশ্রম করে, বিভিন্ন বই পত্র, মিউজিয়ামের নথি ঘেঁটে এবং স্থানীয় রূপকথা ইত্যাদি একসঙ্গে করে বিখ্যাত "ড্রাকুলা" বইটি লিখেছিলেন। দুঃস্বপ্ন থেকে গল্প লেখার এই ধারণাটি আমার খুব ভালো লেগেছিল। আমি নিজের কিছু দুঃস্বপ্নকে পরিমার্জিত করে কয়েকটি গল্প লিখেছি। ভাবছি, ধারাবাহিক ভাবে, বিভিন্ন পর্বে বিভিন্ন দুঃস্বপ্ন নিয়ে লিখব। তবে বলে রাখি, এই লেখাগুলো আমি ঘুম থেকে উঠে লিখিনি, ঘুম থেকে উঠে এক-দুই লাইনে টুকে রেখেছি, পরে ঠান্ডা মাথায় ভেবে চিনতে লিখেছি।   



কুকুরের ডাক

১.
বান্ধবীর বিয়ে হতে রাত করে ফিরছিল তিতলি, সঙ্গে ওর বড় ভাই শিমুল। রাস্তার বিপরীত দিক থেকে ছুটে যাচ্ছিল একটা কুকুর। দেখতে কেমন বিদঘূটে, কালো লোম গুলো কেমন যেন অশরীরী। তিতলির পাশ দিয়ে যাবার সময় এতটাই গা ঘেঁষে যাচ্ছিল যে, তিতলি প্রায় আঁতকে উঠে পাশে সরে যাবার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সরে যেতে পারেনি সে, কুকুরটার একটা পা ওর পায়ের পাতার উপর দিয়ে ঘঁষা লেগে চলে গেল, কুকুরের ধারালো নখের আঁচড়ে বেশ একটা ক্ষত তৈরি হলো জায়গাটাতে। আর্তনাদ করে উঠল তিতলি। শিমুল উৎকন্ঠা নিয়ে জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে? তিতলি জবাব না দিয়ে প্রবল যন্ত্রণায় চেপে ধরল ক্ষতটা। কুকুরটা মুহুর্তে থমকে গিয়ে তিতলির দিকে তাকাল। কি ভয়ংকর চোখ কুকুরটার! এক মুহুর্ত তাকিয়ে থেকেই আবার ছুটে গেল, যেদিকে যাচ্ছিল।

২.
ঘরে ফেরার পর ক্ষতটা এ্যান্টিসেপটিক দিয়ে ধুয়ে ব্যান্ডিজ করে দিল তিতলির মা। তার চাচা ডাক্তার, সে কিছু ওষুধের নাম দিল, সেগুলো খেতে বলল তিতলিকে। ব্যাথা কমে গেলেও কুকুরের ভয়ার্ত চোখের দৃষ্টি ভুলল না তিতলি।

৩.
সেই ঘটনার পর তিন মাস কেটে গেছে। এখনো ক্ষত সারেনি তিতলির। যেমন ছিল, তার চেয়েও দগদগে হয়েছে। বেশ ক’জন বড় বড় ডাক্তার দেখিয়েছে সে, ওষুধও খাচ্ছে, কিন্তু ক্ষত মোটেও কমছে না। প্রায় রাতে সেই কুকুরের ভয়ার্ত দৃষ্টি মনে পড়ে তিতলির।

৪.
আরো এক সপ্তাহ পরের কথা, প্রচন্ড ব্যাথা হচ্ছে আজ তিতলির পায়ে। সে নিজেও জানে না, কেন এত ব্যাথা হচ্ছে, কেনই বা সেরে যাচ্ছে না। জলাতঙ্কের টিকাও সে নিয়েছে, কিন্তু কিছু হচ্ছে না কিছুতেই। তার উপর, ব্যাথার জায়গাটা যতটা না যন্ত্রণা দিচ্ছে, তার চেয়ে অনেক বেশি হচ্ছে চুলকানি। খুব চুলকাচ্ছে জায়গাটা, কিছুক্ষণ পর পর অদ্ভুত রকম কামড় দিচ্ছে ভিতর থেকে। সেই রাতে শেষমেষ ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমোতে হলো তিতলিকে।

৫.
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে তিতলি আবিস্কার করল, তার ক্ষত প্রচন্ড রকম চুলকাচ্ছে, অবিশ্বাস্য রকম চুলকাচ্ছে। সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয়, কেমন একটা বিদঘূটে মোচড় দিচ্ছে তিতলির পায়ে। সে দ্রুত উঠে বসে নিজের পায়ের উপর ঝুঁকে পড়ল ক্ষতটা দেখার জন্য। দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারল না সে! তার পায়ের ভেতর ক্ষত হতে একটা জীবন্ত শতপদী বের হয়ে আসছে, অর্ধেক বাইরে সেটার, অর্ধেক ভেতরে। একটু একটু করে বেরোচ্ছে।গলা ফাঁটিয়ে চিৎকার দিল তিতলি!

৬.
কোন ওষুধে কাজ হচ্ছে না, প্রতি ২-৩ মাস পরপর অদ্ভুত অদ্ভুত শতপদী পোকা বেরোচ্ছে, এমন ভয়ংকর কেস কোন ডাক্তার কখনো পায়নি। ক্ষতটাও বড় হয়ে চলেছে দিন দিন। ক্ষত যত বড়, শতপদীও ততো বড়। তাই শেষমেষ বাধ্য হয়ে পা-টা কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিল ডাক্তাররা।

৭.
অপারেশনের দিন ডাক্তাররা ভয়াবহ চমকে গেল, চিৎকার দিয়ে উঠল একজন নার্স। কারন তিতলির কাটা পা থেকে শুধু শতপদী আর শতপদী বেরোচ্ছে। অপারেশন থিয়েটার ছেঁয়ে গেছে শতপদীতে! নার্সের চিৎকার ছাপিয়ে, দূরে কোথাও কুকুরের ডাক শোনা গেল।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:১৬
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×