somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তমালের কথা...................................

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(তমাল গাছের ফল)

আমার ডাক নাম তমাল। সার্টিফিকেটে দাদা-দাদীর দেওয়া একটা বাহারী নাম আছে। সার্টিফিকেটের নামটা নিয়ে ছোট বেলায় এক রকম অভিযোগ ছিল, এতো নাম থাকতে এই নামটা কেন দেওয়া হলো! এখন অবশ্য কোন আক্ষেপ নাই.

আম্মাকে বলতাম তমাল নামের অর্থ কি? কেন আমার নাম তমাল হলো? উত্তর শুনে কিছুটা মন খারাপ হয়েছিল। 'তমাল' নাকি একটা গাছের নাম! আমার জন্মের সময় আমার গায়ের রং ছিল কালো, তমাল গাছের সাথে কালোর যেন কি একটা সম্পর্ক আছে। এই সব মিলে মিশে আমার নাম তমাল রাখা হয়েছে। তবে স্কুলের কবিতায় যখন হিজল-তমাল বা তাল-তমালের কথা থাকতো তখন বুকটা ভরে যেত। প্রাইভেট পড়াতাম যে ছাত্রীকে সে একদিন বলে ’স্যার আপনার নামটা না নাটকের নায়কের মত।’

মিরপুর বোটানীক্যাল গার্ডেনে 'তমাল' গাছ দেখেছিলাম। ৩২ বছর বয়সে যে গাছের নামের সাথে মিল রেখে আমার নাম রাখা হয়েছে সেই গাছের দেখা পেলাম। একটা টিনের পাতে লিখা নামটা গাছের গায়ে পেরেক দিয়ে আটকানো ছিল। আমি কাছে গিয়ে গাছের গায়ে হাত বুলিয়ে এসেছি।

আজ গুগলে এই গাছের সমন্ধে কিছু জানার চেষ্টা করেছি তা এখানে উপস্থাপন করছি।

দৃষ্টি নন্দন কান্ড – শাখা আর পত্র পল্লবিত “তমাল তরু” আবহমান বাংলার একটি পরিচিত গাছ। বৈষ্ণব কবির কবিতায় একে তমাল তরু বলা হলেও এটি তরু নয় , এটি একটি মধ্যম আকারের অরণ্যক বৃক্ষ। এর উদ্ভিদ জাগতিক নাম “ গার্সেনিয়া জেলখো সাইমাস” Garcinia xanthochymus।। কৃষ্ণ কালো তমাল শাখাঁর ফাকে আকাশকে অপরুপ নীল দেখায় বলে বোধ হয় এর আরেক নাম নীলধজ। হিন্দু সম্প্রদায় তমালকে পবিত্র বৃক্ষ হিসেবে পূজা দিয়ে থাকেন।
Clusiaceae গোত্রের Garcinia গণের একটি চিরসবুজ মধ্যমাকারের বৃক্ষ। এদের আদি নিবাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। বাংলাদেশে এই গাছ প্রচুর দেখা যায়। এদের বাকলের রঙ ধূসর। বাকলের পুরুত্ব ১/৪ ইঞ্চি। এর কাঠের রঙ প্রায় সাদা। এই গাছ থেকে আঠা নির্গত হয়। এর পাতার রঙ গাঢ় সবুজ এবং উজ্জ্বল, আকারে বড়। ৮-১৪ ইঞ্চি লম্বা পাতাগুলো অবনত অবস্থায় দেখা যায়। পাতার বোঁটা প্রায় ১ ইঞ্চি লম্বা, পাতার শিরা সমান্তরাল থাকে।


( তমাল গাছের পাতা )

এই গাছের ফুল ধরে বসন্তকালে। এর ফুলের রঙ সাদা এবং পাপড়ি পুরু ও খসখসে। পাপড়িগুলো ‌১/৩ ইঞ্চি লম্বা হয়। ফুলগুলো উভ-লিঙ্গিক। এতে পাঁচটি পুংকেশর থাকে। গর্ভাশয়ে পাঁচটি কক্ষ থাকে।



ফলগুলো গোলাকার হয়, ফলের রঙ গাঢ় পীতবর্ণ। ফলের নিম্নভাগ সুচালো। এর বীজগুলো কাঁঠালের বিচির মতো লম্বাটে। প্রতিটি ফলে ১-৪টি বীজ থাকে। গ্রীষ্মকালে ফল পাকে। ফলের স্বাদ অম্ল-মিষ্ট।


(তমাল গাছের ফল)


ঔষধ হিসাবে এর ফল বীজ ও বাকল ব্যবহৃত হয়। এর কচি ডাল পানিতে পেষণ করে ফোঁড়ায় লাগালে উপশম হয়। ফল স্কার্ভির রোগের জন্য উপকারী। এছাড়া এর ফল দিয়ে অম্ল-পানীয় তৈরি করা হয়। এর বীজ চূর্ণ করে পানির ভিতর মন্থন করলে এক প্রকার মাখনের মতো পদার্থ পাওয়া যায়। একে বলা হয় 'কোককমননী'। এর অপর নাম আমশূল। এই আমশূল ভাতের সাথে অল্প পরিমাণ মিশিয়ে খেলে আমাশয় ভালো হয়। এছাড়া পা-ফাটা নিরাময়ে আমশূল ব্যবহার করা হয়।

গীতা দাস স্মৃতী চারন “তখন ও এখন” লিখেছেন:

’আমাদের উঠানে একটা তমাল গাছ ছিল। তুলসী তলার পাশে। ঐটার ফল কাঁচা থাকতে সবুজ ও পাকলে লালাভ হলুদ রঙ হত। খাওয়ার অযোগ্য। আফসোস হত। তমালের বদলে অন্য কোন ফল গাছ লাগালেও তো পারত।

প্রশ্ন করে জেনেছি — তমাল গাছটি লাগায়নি। আপনা আপনি অর্থাৎ নিজে নিজেই উঠেছে। তবে আপনা আপনি উঠলেও পরে অনেক যত্ন পেয়েছে।

উঠান ঝাড়ু দিয়ে তমালের পাতা সাবধানে রাখা হত যাতে উনুনে না যায়। যে গাছের ডালে কৃষ্ণ বসে সে গাছের পাতা পর্যন্ত ভুলেও পুড়ানো মহাপরাধ। কিন্তু কৃষ্ণের বসবাসের গাছের ফল কেন যে খাওয়ার অযোগ্য তা বোধগম্য হত না। কৃষ্ণ বসার ফলে তো তমাল ফল অমৃত হয়ে যাবার কথা।’

আর এক কবিতায় পেলাম

না পেড়াইও রাধার অঙ্গ
না ডুবাই ও জলে,
মরিলে তুলিয়া রাইখো
তমালের ও ডালে।

পরিশেষে, গাছের নামের সাথে মিলিয়ে নাম রাখার জন্য কিনা আমার স্বভাব কিছুটা গাছের মত, তবে সেটা তমাল গাছের মত দৃঢ় নয়, লতা জাতিয় গাছের মত। আমার একটা শক্ত নারকেল গাছ আছে যাকে অবলম্বন করে সব সময় জড়িয়ে থাকি, সেও পরম মমতায় আমাকে ছায়া দিয়ে আগলে রাখে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:৩১
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরোনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×