somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দিনের শেষে: ফালি ফালি করে কাটা জীবনটুকু...

২৩ শে জুন, ২০১৪ রাত ৮:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জীবনটা অদ্ভুতভাবে কেটে যাচ্ছে। এর ছুটে চলা এখন আর ঠিকমতো খেয়ালও করতে পারছি না। দিন থেকে সপ্তাহ, সপ্তাহ থেকে মাস, মাস থেকে বছর। এরশাদের আমল, খালেদার প্রথম আমল, হাসিনার প্রথম আমল, খালেদার দ্বিতীয় আমল, মাঝখানে দু’বছর বিশেষ তত্ত্বাবধায়কের আমল, আবার হাসিনার দ্বিতীয় আমল শেষ হয়ে এবার আমরা তৃতীয় আমলে আছি। যারা জিয়া বা সাত্তারের আমল দেখেছেন তারা আরও তাড়াতাড়ি জীবনের পরিক্রমাটি দেখতে পাবেন। এভাবে চিন্তা করলে জীবনটাকে মাত্র কয়েকটা ফালিতে ভাগ করে ফেলা যায়। আবার দেখুন, ফুটবলের বিশ্বকাপ দিয়ে হিসাব করলে চার করে ভাগ হয়ে যায় জীবনটুকু। ২০১৪, ২০১০, ২০০৬, ২০০২, ১৯৯৮, ১৯৯৪, ১৯৯০, ১৯৮৬, ১৮৮২... আর কত বছর যাওয়া যায়। দেখা যাবে জন্মসাল পার হয়ে গেছি!

শিক্ষাজীবন যারা নিয়মিতভাবে অতিক্রম করেন তারা জীবনের পঁচিশটি বছর স্বপ্নাবিষ্ট হয়ে অতিক্রম করেন। কর্মজীবন এবং সংসার জীবন কারও জীবনে পাশাপাশি চলে, কারও জীবনে আসে প্রথমটির পরে। হাসি আনন্দ আর সাংসারিক ব্যস্ততায় চলে যায় আরও পঁচিশটি বছর। পরবর্তি সময়টুকুর অধিকাংশ চলে যায় অপেক্ষায় - কখন আসবে বিদায়ের কাল। এই ক্যাটেগরিতে জীবনকে মাত্র তিন-চার ভাগ করা যায়।

টিভিতে হারকিউলিস দেখতাম, ম্যাকাইভার দেখতাম,মিস্টিরিয়াস আইল্যান্ড, অথবা ধরুন, এক্স ফাইলস। এক্স ফাইলসের প্রারম্ভিক মিউজিকটি কি কারও মনে পরে? এই সেদিনের কথা। অথচ কতটি বছর হয়ে গেলো! এই সেদিন না অর্জুনা রানাতুঙ্গার শ্রীলংকা প্রথম জিতে নিলো ক্রিকেটের বিশ্বকাপ! মাছ মার্কায় পাশ করে মেয়র হলেন মোহাম্মদ হানিফ! আহা, এরশাদ তো এই সেদিন কেবল পদত্যাগ করলেন বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। ঢাকায় বিক্ষিপ্ত বিজয় মিছিল। নব্বুইয়ের গণ আন্দোলন! মাঝখানে স্বপ্নবিভোর শহুরে শিক্ষাজীবন। দীর্ঘদিন গ্রামে থেকে আবার ফিরে আসা ঢাকার জীবনে। শুরুর দিকে ছাত্র; তারপর খণ্ডকালীন ছাত্র। শেষের দিকে খণ্ডকালীন চাকুরে। এখন পূর্ণকালীণ সেমি-প্রৌঢ় পেশাজীবি! ক’দিনের কথা! দিনের শেষে মনে হয়, ঢাকায় এসে যেন সময়ের চাকা আরও বেশি গতিতে চলতে শুরু করছে।

একটা সময় ছিলো, যখন সবকিছুকে খুব গুরুত্বের সাথে নিতাম। ছোট হোক বড় হোক সব কাজকে নিজের যোগ্যতা প্রকাশের জন্য সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতাম। এর সুফল নিয়ে স্বপ্নে বিভোর হতাম। চিন্তা দিতাম, শ্রম দিতাম নিজেই। টিমকে কেবল ‘ফলো’ করতে বলতাম। রাতের পর রাত ওটার পেছনে লেগে থাকতাম। ক্ষুধা, ক্লান্তি, নিদ্রামগ্নতা ভুলে শেষ পর্যন্ত ওটাতেই যুক্ত থাকতাম। শেষ দিনটি পর্যন্ত আত্মপ্রকাশের উত্তেজনায় ছটফট করতাম। ফল আসতো - অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সুফল। সুফল আসার পর, শুভাকাঙ্ক্ষীদের ভিড় লেগে যেতো। কে কীভাবে আমাকে সাহায্য করেছে; কীভাবে অবদান রেখেছে তা প্রকাশ করার জন্য সহপাঠী-সহকর্মীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা লেগে যেতো। জুনিয়র হলে কৃতীত্ব নিজের কাছে কিছুটা ফিরে আসতো। সিনিয়র হলে, অধিকাংশ সময়েই বেদখল হতো! সবক্ষেত্রেই কৃতীত্ব ভাগাভাগি হয়ে যেতো। কে চ্যালেন্জ নিয়েছে, কে শেষাবধি লেগে আছিলো, তা কেউ মনে রাখতো না। বিরবির করে তখন ওপরে তাকিয়ে বলতাম, ‘ধন্যবাদ ঈশ্বর! কাজটি তো করতে পেরেছি, সেটাই বড় পাওয়া।’ সুফল আসতো প্রতিষ্ঠানের, প্রমোশন হতো বিগ বসের। নির্বোধ মন বলতো, কী দরকার ছিলো এতটা পরিশ্রমের! পুরস্কার নেই - কমপক্ষে স্বীকৃতিটাতো পাওয়া উচিত ছিলো! সুবোধ মন আমাকে প্রবোধ দিয়ে বলতো: চালিয়ে যাও, কাজ শিখছো, নিজেকে আবিষ্কার করছো, আত্মবিশ্বাস বাড়ছে - এর চেয়ে বড় পুরস্কার আর কী হতে পারে?

এখনও যে চ্যালেন্জ নিচ্ছি না, তা নয়। কিন্তু দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে। মাণের চেয়ে পরিমাণের দিকে মনযোগ বেড়েছে। ‘কয়েকজনের জন্য এ-প্লাস নয়, সকলের পাশ চাই’ - এরকম একটা মনোভাব। কিছু বিষয়ে চমৎকার হলে চলবে না, সকল বিষয়ে এগিয়ে থাকতে হবে। প্রতিষ্ঠানকে দাঁড় করাতে হবে বিশিষ্ট হিসেবে। কাজ উদ্ধার করতে হবে, যে কোনভাবে! তাই এখন খুঁজি কে ওই কাজটি ভালোভাবে করতে পারবে; কাকে কাজটি দিলে দ্রুত এবং নিশ্চিতভাবে ফল আসবে। কে কাজটি মাথায় নিয়ে শেষ বেলায় এসে অজুহাত দাঁড় করিয়ে ‘সরি’ বলবে না; কে আমার নির্দেশ বুঝবে - এসব নিয়ে ভাবি। কিন্তু আগের সেই ‘সিরিয়াস’ ভাবটুকু নেই, সেটা ফিরে পেতেও মন চায় না। তার পরিবর্তে একটি নতুন উপলব্ধি এসে ভর করেছে। আমি দেখেছি, আমি যাতে বেশি মনোযোগ দিই, তাতে আমার টিমমেটরা কম মনোযোগ দেয়। ফল আসে কম। মনযোগ ব্যাপারটা টবের পানি আর বাতাসের মতো হয়ে গেছে। পানি বেশি থাকলে বাতাস কম! তাই কিছু ক্ষেত্রে ইচ্ছে করেই মনোযোগ কম দেই অথবা কম দেখাই। তাতে যদি অধিকাংশ মানুষের মনযোগ বাড়ে! সুফল এখনও আসে, তবে ভাগ করাতেই আমার আনন্দ। মূল্যায়নের দিন দৃষ্টিতে সমস্ত মনযোগ নিয়ে খুঁজি টিমের কোন সদস্যটি বেশি শ্রম ও আন্তরিকতা দিয়েছে। তাকেই করি পুরস্কৃত! বাকি সকলকে প্রেরণা দেই আগামির জন্য। সামগ্রিক সফলতায় গর্ববোধ করি, প্রতিষ্ঠানের এগিয়ে চলায় পুলকিত হই।

কিন্তু সমস্যা গুরুতর হচ্ছে। যেসব অসুখ অপেক্ষাতেই সেরে যেতো, এখন ওষুধ খেলেও যায় না। ক্লান্তি এসে ভর যখন তখন। দারুণ ক্লান্তি! জীবনে যা কখনও হয় নি, তা হতে শুরু করেছে। অফিসের ডেসকে ঘুম আসতে চায়! নাউজুবিল্লাহ। ‘টিমলিডারকে কোন রকমের শারীরিক দুর্বলতা প্রদর্শন করা চলিবে না।’ প্রশিক্ষণে প্রাপ্ত এই নসিহত আর আমাকে ঝিমানো থেকে আটকাতে পারে না। সিনিয়রের ভয় তো কেটে গেছে সেই কবে! এখন ভয় করে সময়কে নিয়ে। দারুণ ভয় পাই আমি সময়কে। হল্লা করে ছুটছে আমার পেছনে। কবে যে সময় এসে বলবে, অনেক হয়েছে - এবার থামো! পড়নের কাপড়েই সাথে চলো! সব কথা হবে থানায়। ইউ আর আন্ডার এরেস্ট!


[ একজন কর্মজীবির কর্পোরেট লাইফ অবলম্বনে ]
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০১৪ রাত ৯:১৩
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

লিখেছেন আবু ছােলহ, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৮

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

গুগল থেকে নেয়া ছবি।

সামুতে মাল্টি নিক নিয়ে অনেকেই কথা বলেন। অনেকের কাছে মাল্টি যন্ত্রণারও কারণ। শুধু যন্ত্রণা নয়, নরক যন্ত্রণাও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×