somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহর জন্মদিন

১০ ই জুলাই, ২০০৮ ভোর ৫:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভাষার প্রতি ভালোবাসা ছিলো তার অপার। অনুরাগ ছিলো জ্ঞানের প্রতি। তাইতো অনেকগুলো ভাষা আর অনেক বিষয়ে ছিলো দখলদারি। প্রবল আগ্রহ আর নিষ্ঠাগুণেই হয়ে ওঠেন তিনি বহু ভাষাবিদ পন্ডিত। ১০ জুলাই এই মনীষীর জন্মবার্ষিকী। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। অত্যন্ত মেধাবী আর দৃঢ়চেতা ছিলেন তিনি। কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত শাস্ত্রে এম এ করার জন্য তার আগ্রহ আর চেষ্টা চলতি স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটার মতোই এক অবাক যুদ্ধ ছিলো। সে যাত্রায় সমস্যা বেধেছিলো ‘বেদ’ নিয়ে। যা এমএ ক্লাসের পাঠ্য বিষয়। সংশ্লিষ্ট অধ্যাপক সাফ জানালেন, অহিন্দুকে বেদ পড়ানো যাবে না। তারপরও শহীদুল্লাহ নাছোড়বান্দার মতো লেগেছিলেন এমএ করার জন্য। এর থেকে আরও যে সত্যটি বেরিয়ে আসে- প্রকৃত জ্ঞানী কখনোই নিজেকে কোনও গোষ্ঠী বা গন্ডিতে সীমিত রাখেন না।

ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহর জন্ম চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাট মহকুমার পেয়ারা গ্রামে, ১৮৮৫ সালে। যে বয়সে মুহম্মদ শহীদুল্লাহর প্রথম স্কুলে যাওয়ার কথা ছিল সে বয়সে তিনি যাননি। বাড়িতেই তাঁর হাতেখড়ি। এরপর তাকে ভর্তি করা হয় গ্রামের পাঠশালায়। মুহম্মদ শহীদুল্লাহর বয়স যখন দশ বছর তিনি পড়তে গেলেন হাওড়ার মধ্য ইংরেজি স্কুলে। সেখান থেকে পাস করার পর হাওড়ার জেলা স্কুলে ভর্তি হলেন ১৮৯৯ সালে। বার্ষিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করলেন এবং রূপার পদক পেলেন।

১৯০৪ সালে এনট্রান্স পাস করেই মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ভর্তি হলেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে। এই কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এফএ পাস করেন। সংস্কৃতে অনার্স নিয়ে বিএ ক্লাসে ভর্তি হলেন হুগলি কলেজে। অসুস্থ থাকায় বিএ পরীক্ষা দেয়া হয়নি। পরিবারের আর্থিক অবস্থাও ভাল ছিল না। যশোর জিলা স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি নিয়ে চলে আসেন তিনি। এক বছর চাকরি করে ভর্তি হন সিটি কলেজে। ঠিকমত পড়ালেখা না করে পরীক্ষা দিলেন। পাস না করলেও তিনি উৎসাহ হারালেন না। পরের বছর সংস্কৃতে অনার্সসহ বিএ পাস করে ভর্তি হলেন ঐতিহ্যবাহী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভাষাতত্ত্বে এমএ পাস করার পর উপাচার্য আশুতোষ মুখোপাধ্যায় খুশি হলেন এবং জার্মানীতে বৃত্তির জন্য সুপারিশ করলেন। বৃত্তি পেলেও স্বাস্থ্যগত কারণে তিনি যেতে পারেননি। বিদেশে যেতে না পেরে শহীদুল্লাহ কলকাতায় এক মুসলিম এতিমখানায় চাকরি নেন। আইনশাস্ত্র নিয়ে পড়ালেখা করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন পরীক্ষায় পাস করলেন ১৯১৪ সালে। পরে শহীদুল্লাহ আইন ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করেন। সেই সাথে চলে সাহিত্যচর্চা। পরবর্তীতে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ কলকাতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন অধ্যাপক হিসেবে। ১৯২৬ সালে গেলেন প্যারিসে। সেখানকার সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাতত্ত্বে পড়ালেখা করলেন, শিখলেন আসামি, উড়িয়া, মৈথিলি, হিন্দি, পাঞ্জাবি, গুজরাটি, মারাঠি, কাশ্মীরি, নেপালি, সিংহলি, তিব্বতি, সিন্ধি ইত্যাদি ভাষা।

প্যারিস থেকে মুহম্মদ শহীদুল্লাহ গেলেন জার্মানি। ফ্রাইবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা করে আবার এলেন সোরবোন। বাংলায় ভাষার পুরাতন কবিতা নিয়ে গবেষণা করে ডক্টরেট পেলেন। বাংলা ধ্বনিতত্ত্বে ডিপ্লোমা নিয়ে ১৯২৮ সালে দেশে আসেন। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ একাধিক ভাষায় অনর্গল বক্তৃতা দিতে পারতেন। কর্মজীবনের ফাঁকে ফাঁকে তিনি পড়তেন। তিনি যে গভীর জ্ঞানের সন্ধান লাভ করেছিলেন তারই দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন সাহিত্যে।ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ অনেক বই লিখেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল --
ভাষা ও সাহিত্য
বাংলা ভাষার ইতিবৃত্ত
দীওয়ানে হাফিজ
রুবাইয়াত-ই-ওমর খৈয়াম
বিদ্যাপতি শতক।
বাংলা সাহিত্যের কথা(২ খন্ড)
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান

বহু ভাষাবিদ পন্ডিত ও প্রাচ্যে অন্যতম সেরা ভাষাবিজ্ঞানী ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ছিলেন একজন খাঁটি বাঙালি, ও ধর্মপ্রাণ মুসলমান। জাতিসত্তা সম্পর্কে মুহাম্মদ শহিদুল্লাহর স্মরণীয় উক্তি ছিল " আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙ্গালি। পাকিস্তান প্রতিষ্টার পরই দেশের রাষ্ট্রভাষা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলে বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার পক্ষে যে কজন মানুষ জোরালো বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন তাদের মধ্যে ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ অন্যতম। তার এই ভূমিকার ফলে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পথ অনেক প্রশস্ত হয়।

ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এমেরিটাস অধ্যাপক পদ লাভ করেন। একই বছর ফ্রান্স সরকার তাকে সম্মানজনক পদক নাইট অফ দি অর্ডারস অফ আর্টস অ্যান্ড লেটার্স দেয়।

মহান মনীষী ও জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ১৯৬৯ সালের ১৩ জুলাই মারা যান।

(তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, ইত্তেফাক)
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×