somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মেহেরুন
“Sometimes the strength of motherhood is greater than natural laws.”

মোঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস-৬ ( আইন-ই-আকবরি)

১৬ ই নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সম্রাট আকবরের হেরেম বা বেগমখানা
সম্রাট আকবর বিশাল এক মাঠের ভেতর চারদিকে উঁচু পাঁচিল দিয়ে তার ভেতর একদল বেগমের জন্য মহল নির্মাণ করেন। দুই তিন টি মহলের মধ্যে একটি করে বাগান, পুকুর ও কুয়া নির্মিত থাকতো। এই বিশাল আকারের মহল গুলোকে হারেম বলা হত। বাদশাহ আকবরের প্রায় পাঁচ হাজারের বেশী বেগম ও সেবিকা বা দাসী ছিল।এক এক দলের বেগমের উপর এক এক কাজের ভার দেয়া ছিল। আবার এক একদল বেগমের কাজ দেখার জন্য স্ত্রী দারোগা নিযুক্ত ছিল। প্রত্যেক বেগমের জন্য মাসিক মাসহারা দেবার ব্যবস্থাও ছিল। বেগমের সর্ব শ্রেষ্ঠ দলের বয়স এবং রূপ ও গুণ অনুসারে এক হাজার ছয়শত দশ টাকা হতে এক হাজার আটশত টাকা পর্যন্ত মাসহারা দেয়া হত। সেবিকাদের পঞ্চাশ হএ এবং যারা ধাত্রী তাদের কে চল্লিশ হতে দুইশ পর্যন্ত মাসহারা দেয়া হত। বৃদ্ধ হয়ে গেলে তাদের হারেম থেকে নিয়ে আলাদা বাসস্থান দেয়া হত।বেগম দের কারো কোন সামগ্রী লাগলে তারা হারেমের কোষাধক্ষ্যের কাছে আবেদন করতো। হারেমে ব্যবহারের জন্য আলাদা রকমের মুদ্রা ছিল যা বাইরে পাওয়া যেতো না।


বাদশাহ এর সফরঃ
বাদশাহ শিকার কিংবা দেশ ভ্রমনে গেলে যে ব্যবস্থা করা হত এই অংশে তার কথা বলা হবে। বাদশাহ আকবর গুলালবার নামক একটা জায়গা নিজের তত্ত্বাবধানে তৈরি করেন। তার চারটি দরজা আছে, এবং চারটি তেই তালা দেয়া থাকতো এবং পাহারাও থাকতো। এই গুলালবারের ভেতরে একটা গৃহ আছে যাতে ৬৪ টি ঘর ছিল। প্রতিটা ঘর ২৪ গজ লম্বা ও ২৪ গজ চউরা ছিল। মাজখানে চউবিন রউতি নামক একটা জায়গা ছিল। এই চউবিন রউতির চারপাশে অন্য সামিয়ানা গুলো খাড়া থাকতো। এর পাশে কাঠের একটা দোতলা ঘর ছিল যাতে বাদশাহ নামাজ পড়তেন। এই জায়গায় স্ত্রী লোক যেতে পারতো না। এর পাশে আরও ২৪ টি চউবিন রউতি তৈরি করা হত যাতে বেগম রা থাকতো সফরের সময়।বাদশাহ যখন পদচারনা করতে করতে ক্লান্ত হতেন অখন এই তাবু গুলোতে গিয়ে বিশ্রাম করতেন। তাবুগুলোর চারপাশে মুক্তার ঝালর ঝুলানো থাকতো। এখানে বসে বাদশাহ সন্ধ্যায় সময় কাটাতেন।গুলালবারের কাছেই আরেকটি সামিয়ানা তৈরি করা হত যার ব্যস ছিল ৩৬০ গজ। এর মাঝখানেও চউবিন রউতি তৈরি থাকতো যার চারপাশে ৪০ টি ছোট তাবু বানানো হত। এঁকে বলা হত অপকেচি খানা।


এখানে বাদশার স্নান করার জায়গা ছিল। এর কাছে কার্পেটের একটা বড় তাবু থাকতো। বাদশাহ এর সফরকালে এই তাবু গুলো সামগ্রী সমেত তার সাথে যেত। এগুলো বহন করার জন্য ১০০ হাতি, ৫০০ উট, ৪০০ গরুর গাড়ি এবং ১০০০ মুটিয়া নিযুক্ত ছিল। এগুলো দেখাশোনা করার জন্য ৫০০ ঘোড়া সউয়ার অষ্ট প্রহর নিযুক্ত থাকতো। এগুলো খাটানোর জন্য ইরান ও তুরান দেশের ১০০০ ফরাস, ৫০০ মজুর,১০০ ভিস্তি, ৫০ জন ছুতার মিস্ত্রী, ৫০ জন তাবু ওলা, ১০০ দর্জি, ৩০ জন চামার,২০ জন কামার, ২০০ মেথর নিযুক্ত ছিল।


বাদশাহের সীলমোহরঃ
বাদশার নানা ধরনের সীলমোহর ছিল। তার একদিকে বাদশার নাম লিখা থাকতো, অন্য দিকে “ সাধুতাই ভগবান কে সন্তুষ্ট করিবার মূল উপায়” লিখা থাকতো। এছারা অনেক মহরে আবার চারপাশে “ যে সোজা পথে চলে, সে কখনো পথ হারায় না” লেখা থাকতো।


বাদশাহের পানশালাঃ সোরা দিয়ে বাদশাহের পানীয় ঠাণ্ডা করা হত। বালি ও মাটির তৈরি কুঁজোতে পানি ভোরে তার মুখে ভেজা কাপর দিয়ে বেঁধে একটা বড় গামলায় রাখা হত। সেই গামলায় পানি থাকতো। পানিতে প্রচুর পরিমানে সোরা মেশান হত। তারপর রেশমের দড়ি দিয়ে বেঁধে কুঁজো টাকে ঘুরানো হত। তিনপাক ঘুরালে কুঁজোর পানি খুব ঠাণ্ডা হত। বাদশাহের পাকশালায় সবসময় গঙ্গা ও জমুনার পানি ব্যবহার করা হত।
বাদশাহের পাকশালাঃ
বাদশাহ আকবরের পাকশালার প্রধান কর্মচারীর নাম ছিল মীর বেকাইওয়েল। এই করমচারি শুধু খাবার চাখতেন। ইনি চাখার পড়েই সম্রাট খাবার মুখে দিতেন। বাদশাহের খাবারের জন্য সবসময় ই মাংস, ঘি, তেল, শাকসবজি, নানা দেশের ফল, গরম মশলা ও মিষ্টি তৈরি করা হত। বছরে একবার পাকশালার ভাণ্ডার বিতরন করা হত। বহরাঞ্চ নগর থেকে সুখদোষ চাউল, বাজউরি হতে খঞ্জন নামক চাউল, হিসার থেকে ঘি ও তেল, কাশ্মীর থেকে নান ধরনের পাখি, বাবুর্চি ও পাচকেরা ভেরা ও মুরগী মোটা তাজা রাখতো। শাক সব্জির জন্য বাদশার নিজের বাগান ছিল। বাদশাহ স্বর্ণ, রুপা, মার্বেল ও উৎকৃষ্ট চীনা বাসনে আহার করতেন। বাদশার জন্য যখন পাচকেরা খাবার নিয়ে যেতো তখন তাদের মুখে ও নাকে রুমাল বাঁধা থাকতো। খাবার গুলোকে রেশমের কাপড় দিয়ে সিল করে দেয়া হত। খাবার সময় মীর বেকাইওয়েল সিল খুলে খাবার চাখতেন। তারপর বাদশাহ খাবার মুখে দিতেন।

সুত্রঃ The Ain-I-Akbari by Abul Fazl & Akbarnama by Abul Fazl

ছবি- গুগল থেকে।

মোঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস-৫ ( আইন-ই-আকবরি)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১৮
৩২টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্টে যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×