somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিনা বেগমের দেশে ফেরা

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঢাকা শহরে স্বামী দিনমজুর আর স্ত্রী মিনা বেগম অন্যের বাসাবাড়িতে কাজ করে। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। এবার মিনা বেগম জীবনে স্বচ্ছলতার একটা স্বপ্ন দেখলেন। স্বচ্ছল হলে ছোট মেয়েকে লেখাপড়া করাতে পারবেন। পড়ালেখা করাতে পারলে সে বড় অফিসে চাকরি করবে। এসব স্বপ্ন পূরণে ৪৫ বছর বয়সী মিনা বেগম সৌদি আরব গেলেন গৃহকর্মী হিসেবে। তার এই প্রবাস জীবনের বয়স ছিলো মাত্র ৩ মাস। সেই স্বপ্নকে বিদায় করে তিনি দেশে ফিরলেন গত ৩ ফেব্রুয়ারি। দেশে ফিরে ’প্রবাস কথা’র সাথে কথা বলেন মিনা বেগম।

‘বাসাবাড়িতে কাজের চুক্তিতে আমি আর আমার এক বোন সৌদি আরব গেছিলাম। কথা ছিল দুইজন একই পরিবারে কাজ করবো। আর বেতন দেবে মাসে ২১০০০ টাকা। কিন্তু ওখানে গিয়ে আমাদের মাঠে পাথর ভাঙ্গার কাজ দেয়। এই কাজ আমি করতে পারি না’।

পাথর ভাঙ্গার কাজে ১৯ দিন পেরিয়ে যায় মিনা বেগমদের। তারপর শরিফের সাথে যোগাযোগ করতে পারে তারা। শরিফের মাধ্যমেই তারা সৌদি আরব যায় বলে জানিয়েছে মিনা বেগম। সেই শরিফই এসে তাদের পাথর ভাঙ্গার কাজ থেকে মুক্তি দেয়।

‘শরিফ আমাদের ২ জনকে ২ পরিবারে নিয়ে যায়। আমি যে পরিবারে যাই সেখানে সদস্য ছিল ৯ জন। আর যাওয়ার আগে আমাদের বলছিল যে, আমরা যে পরিবারে কাজ করবো সেখানে ৩ জন সদস্য থাকবে। তাদের ছোট ছেলেকে দেখে রাখতে হবে আর বাসার কাজ করতে হবে। কিন্তু আমাদের ২ জনকে সেই পরিবারে কাজ না দিয়ে আলাদা আলাদা পরিবারে পাঠায়’।

‘প্রবাস কথা’ জানতে চায় তার পরের ঘটনা।

‘কি আর করব, তখন সে পরিবারে কাজ করতে থাকলাম। ওরা আমাকে সারা দিন-রাত কাজ করাতো। সকাল ৭ টায় কাজ শুরু হতো, শেষ হতে হতে রাত ৩টা বেজে যেতো। খাওয়া দাওয়ার খবর থাকতো না। দেশে কারো সাথে কথা হইতো না। ১ মিনিট সময়ও বসারর উপায় আছিলো না’।

মিনা বেগম বলছেন, তিনি যেন বাড়িতে কারো সাথে কথা বলতে না পারেন সে জন্য তাকে মোবাইল ব্যবহার করতে দিতো না। তারপরেও তিনি গোপনে একটা মোবাইল ব্যবহার করতেন।

‘একদিন ঐ পরিবারের একটা ছেলে আমার সাথে খারাপ কাজ করতে চায়। আমি তখন তাদেরকে জানাই। কিন্তু তখন তারা আমার প্রতি আরো বেশি খেপে গেল। আমাকে অত্যাচার করা শুরু করল। একদিন তাদের স্টোর রুমে কাজ করতাছিলাম, তখন তাদের বড় মেয়ে এসে কাজ করি না বলে আমাকে মারতে শুরু করল। এর মধ্যে তারা বুঝতে পারলো যে আমি গোপনে মোবাইল ব্যবহার করি। তখন সবাই মিলে আমাকে মারলো। আমি প্রথমে মোবাইল দেই নাই। পরে মার সইতে না পেরে মোবাইল বের করে দেই’।


এরপর ঐ পরিবার থেকে শরিফকে ডাকা হয়। শরিফ আসে। শরিফ তখন তাদের পক্ষ নিয়ে মিনা বেগমকে ধমকায়। মিনা বেগম শরিফকে জানায়, এখানে থাকলে সে মারা যাবে।বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানায় শরিফকে।

‘আমাকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেন। আমি এই কষ্ট সইতে পারছি না। আমি বাংলাদেশ যেয়ে আপনার সব টাকা দিয়ে দিব। কিন্তু শরিফ আমার কোন কথা শুনে না। পরে ওদের সাথে কথা বলে শরিফ। ওরা তখন আমাকে ৩৩০০০ হাজার টাকা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দেয়। পরে শরিফ ওদের সাথে কথা বলে আমাকে বিমানবন্দরে নিয়ে আসে। আমার কাছ থেকে ২৫০০০ টাকা নিয়ে আমাকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। এর মাঝে আমার সেই বোনটির সাথে একদিন দেখা হইছিল। আমি কিছু বলতে পারি নাই। ২ মিনিট আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে আবার চলে গেছে। যাওয়ার আগে শুধু বলে গেল, আপা তুমি বাংলাদেশে যেয়ে আমাকে নেওয়ার ব্যবস্থা করো’।

মিনা বেগম জানান, সৌদি আরব যেতে তার দেড় লাখ টাকা খরচ হয়। এমন মিনা বেগমদের ঘটনা আরো অনেক আছে। আবার তাদের মতো গৃহকর্মী হিসেবে গিয়ে নিজের পরিবারের স্বচ্ছলতা আনতে পেরেছেন অনেকেই।
http://www.probashkotha.com/মিনা-বেগমের-দেশে-ফেরা/#.VrmShBh95kg
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:২৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইরান ইসরাইলের আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ আর আমাদের সুন্নী-শিয়া মুমিন, অ-মুমিন কড়চা।

লিখেছেন আফলাতুন হায়দার চৌধুরী, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩০

(ছবি: © আল জাযীরা মিডিয়া নেটওয়ার্ক)

শ্রদ্ধেয় ব্লগার সামিউল ইসলাম বাবু'র স্বাগতম ইরান পোষ্টটিতে কয়েকটি কমেন্ট দেখে এই পোষ্ট টি লিখতে বাধ্য হলাম।
আমি গরীব মানুষ, লেখতে পারিনা। তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৯




আমরা পৃথিবীর একমাত্র জাতী যারা নিজেদের স্বাধীনতার জন্য, নিজস্ব ভাষায় কথা বলার জন্য প্রাণ দিয়েছি। এখানে মুসলিম হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান চাকমা মারমা তথা উপজাতীরা সুখে শান্তিতে বসবাস করে। উপমহাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্যা লাস্ট ডিফেন্ডারস অফ পলিগ্যামি

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০


পুরুষদের ক্ষেত্রে পলিগ্যামি স্বাভাবিক এবং পুরুষরা একাধিক যৌনসঙ্গী ডিজার্ভ করে, এই মতবাদের পক্ষে ইদানিং বেশ শোর উঠেছে। খুবই ভালো একটা প্রস্তাব। পুরুষের না কি ৫০ এও ভরা যৌবন থাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রিয় কাকুর দেশে (ছবি ব্লগ) :#gt

লিখেছেন জুন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৩



অনেক অনেক দিন পর ব্লগ লিখতে বসলাম। গতকাল আমার প্রিয় কাকুর দেশে এসে পৌছালাম। এখন আছি নিউইয়র্কে। এরপরের গন্তব্য ন্যাশভিল তারপর টরেন্টো তারপর সাস্কাচুয়ান, তারপর ইনশাআল্লাহ ঢাকা। এত লম্বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেরত

লিখেছেন রাসেল রুশো, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:০৬

এবারও তো হবে ইদ তোমাদের ছাড়া
অথচ আমার কানে বাজছে না নসিহত
কীভাবে কোন পথে গেলে নমাজ হবে পরিপাটি
কোন পায়ে বের হলে ফেরেশতা করবে সালাম
আমার নামতার খাতায় লিখে রেখেছি পুরোনো তালিম
দেখে দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×