মুল্যস্ফীতি নিয়ে আলোচনার শুরুতেই বলা দরকার মুল্যস্ফীতি এবং মুল্যস্ফীতির হার কি ? শাব্দিক বিচারে স্ফীতি মানে হল প্রসারণ এবং মুল্যস্ফীতি মানে হল মুল্যের প্রসারণ বা বৃদ্ধি । আর মুল্যস্ফীতির হার হল একটি অর্থনীতিতে এক বছর সময়ের ব্যাবধানে নিত্য প্রয়োজনীয় কয়েকটি তালিকাবদ্ধ পণ্যমুল্যের শতকরা বৃদ্ধির হার । তো যে কোন অর্থনীতিতে স্বাভাবিকভাবেই একটি নির্দিষ্ট মাত্রার মুল্যস্ফীতি বিরাজ করে । এটি ক্ষতিকর হলেও অর্থনৈতিক কার্যক্রম বিস্তারের একটি প্রণোদনাও বটে । এখন এই মুল্যস্ফীতির সাথে খাপ খাইয়ে চলার জন্য স্বাভাবিকভাবেই দরকার জনসাধারণের আয় বৃদ্ধি । না হলে এই অবস্থায় তাকে পূর্বের তুলনায় কম ভোগ করতে হবে । অর্থাৎ তার জীবনযাত্রার মান কমে যাবে যা তাকে একটি খারাপ অবস্থায় দিনযাপন করতে বাধ্য করবে।
বাংলাদেশে খাদ্যমুল্যস্ফীতির হার সংখ্যাতাত্ত্বিক বিচারে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় সন্তোষজনক । ভারত ও পাকিস্তানে মুল্যস্ফীতি কয়েক বছর ধরেই ডাবল ডিজিটের উপরে অবস্থান করছিল । ভারতে শুধু গত ১২ মাসেই খাদ্যমূল্য সূচক বেড়েছে ১৭ দশমিক ৭০ শতাংশ, যা বার্ষিক মূল্যস্ফীতির তুলনায় ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি । পাকিস্তানে যদিও প্রচুর খাদ্যশস্য জন্মে তারপরও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দ্রব্যমুল্যের অবস্থা নাজুক । কিন্তু সাম্প্রতিককালে এসে বাংলাদেশের মুল্যস্ফীতির হার বিশেষত খাদ্যমুল্যস্ফীতির হার অসহনীয় পর্যায়ে এসে দাড়িয়েছে । বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবে বাংলাদেশে এবছর মূল্যস্ফীতির পরিমাণ ১০ শতাংশের বেশি, যেটি এক বছর আগেও ছিল সাড়ে আট শতাংশের কাছাকাছি।
ভোক্তা মুল্যসুচক (বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো )
সাধারণ-সুচক মুল্যস্ফীতি এপ্রিল, ২০১০ সাধারণ-সুচক মূল্যস্ফীতি এপ্রিল, ২০১১ খাদ্যমুল্যস্ফীতি এপ্রিল,২০১০ খাদ্যমুল্যস্ফীতি এপ্রিল, ২০১১
জাতীয় ৮.৫৪ ১০.৬৭ ১০.৪৭ ১৪.৬
গ্রামাঞ্চল ৮.৭৭ ১১.৪৯ ১০.৩৬ ১৫.৩৮
শহর ৭.৯৫ ৮.৬২ ১০.৭২ ১২.৪
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন মূলত চালের মূল্য বৃদ্ধিই এই স্ফীতির কারণ এবং এই স্ফীতির কারণে নির্দিষ্ট আয়ের পরিবারগুলোই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক শাহজাহান আলী মোল্লার মতে , শুধু খাদ্যমুল্যেই মুল্যস্ফীতি একবছরে দেড়গুণ বেড়ে ১৫% এসে দাড়িয়েছে এবং জাতীয়ভাবে মুল্যস্ফীতির পরিমাণ দাড়িয়েছে সাড়ে ১০ % এরও বেশি । তিনি বলেন , গ্রামাঞ্চলে ২১৫ টি এবং শহরাঞ্চলে ৩০২ টি দ্রব্যের নিয়মিত মুল্য যাচাইয়ের মাধ্যমেই তারা মুল্যস্ফীতির হিশাব করে থাকেন ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিশাব সরকার গ্রহণ করে না এবং অর্থমন্ত্রীর মতে এ বছরের শেষে মুল্যস্ফীতির হার হবে ৮% এর মধ্যে যা ২০১০/১১ বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬.৫% এর মধ্যে সীমিত রাখা । এবং পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে খাদ্যমুল্যস্ফীতির হার এপ্রিল ২০১১ এসে ১৪.৬% এ দাড়িয়েছে । আগামী অর্থবছরে এ মুল্যস্ফীতির হার ৭.৫% এর মধ্যে নামিয়ে রাখার টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে । অর্থমন্ত্রীর প্রাক্কলন সঠিক ধরলেও বর্তমান ৮% মুল্যস্ফীতির বোঝা তাদের পক্ষে খুবই অসহনীয় যাদের আয় নির্দিষ্ট এবং বৃদ্ধির কোন সুযোগ নেই । আমাদের এ কথাও মাথায় রাখতে হবে যে উন্নয়নশীল ও উচ্চ প্রবৃদ্ধির অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির মূল কারণ জনসাধারণের আয় বৃ্দ্ধি ।
এ অবস্থায় খাদ্যমুল্যস্ফীতির কারণ অনুসন্ধান করলে আমরা দেখতে পাব আমাদের মোট খাদ্যশস্যের প্রায় ৫% আমদানি করতে হয় এবং ২০১০/১১ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে খাদ্যশস্য আমদানি হয়েছে ৫০ লাখ মেট্রিক টন । আর সাম্প্রতিক অর্থবছরগুলোতে টাকার ক্রমাগত অবমুল্যায়ন আমদানিকৃ্ত পণ্যের দাম বাড়িয়ে মুল্যস্ফীতিকে উসকে দিয়েছে । ২০১০/১১ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে আমেরিকান ডলারের বিপরীতে টাকার অবমুল্যায়ন হয়েছে ৬ % । মে ২৪, ২০১১ তারিখে এক ডলারের বিপরীতে ৭৩.৩৪ টাকা হয়েছে যেখানে গত বছরের একই সময়ে এটি ছিল ৬৯.৩২ টাকা । এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সংকোচনমুলক মুদ্রানীতি মূল্যস্ফীতি প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছে । মুল্যস্ফীতির অন্যতম কারণ হিশেবে উল্লেখ করা যায় রপ্তানি আয়ের উচ্চ প্রবৃদ্ধির হার এবং অব্যাহত প্রবাসী আয়ের প্রবাহ । ২০১০/১১ অর্হবছরের প্রথম ১০ মাসে রপ্তানি প্রবৃ্দধি হয়েছে ৪১% যা ২০০৯/১০ অর্থবছরে ছিল ১০% মাত্র এবং একই সময়ে দেশে রেমিটেন্স এসেছে ১১ হাজার কোটি টাকার অধিক । অধিকন্তু বাংলাদেশে একটি মধ্যবিত্তশ্রেনী দ্রুত বিকাশ লাভ করেছে যাদের ক্রয়ক্ষমতা উচ্চ । এগুলো মুল্যস্ফীতির অন্যতম প্রভাবক হিশেবে কাজ করেছে ।
বাংলাদেশে উৎপাদক কৃষক বেশিরভাগই নিজের পরবর্তী বছরের প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য ব্যক্তিগতভাবে সংরক্ষণ করে আর বাজার থেকে চাল কিনে খায় প্রায় ৭৫% ভোক্তা । এ অবস্থায় আভ্যন্তরীনভাবে গুদামজাত ও সংরক্ষণের সমস্যা ও বিশ্ববাজারের দামের প্রভাব পড়ে আমাদের অভ্যন্তরীন বাজারের দাম উঠানামা করে । তাছাড়া গত কয়েক বছর ধরেই আমাদের চাল আমদানির মুল ক্ষেত্র থাইল্যান্ড, ভারত , ভিয়েতনাম পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রপ্তানি কমিয়ে দিয়েছে । তাই আমাদের ছুটতে হচ্ছে নতুন বাজারের সন্ধানে । আর এক্ষেত্রে গুণতে হচ্ছে বেশি পরিমাণ অর্থ । অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি ঘোষনা দিয়েছেন যে দেশে ভবিষ্যতে খাদ্যদ্রব্যের কোন সঙ্কট থাকবে না । এখানে বলে রাখা দরকার , মুল সমস্যা কিন্ত যোগানে নয় , বরং প্রাপ্যতা অর্জনে । উচ্চমুল্যের কারণে যদি ইফেক্টিভ ডিমান্ড ই না হয় অর্থাৎ জনসাধারণ যদি ক্রয় করতে না পারে তাহলে এ প্রাচুর্যতার কোন ভিত্তি নেই । এটি আমাদের খাদ্যনিরাপত্তার প্রশ্নকে নতুন করে সামনে নিয়ে এসেছে । তাই খাদ্যমুল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মৌলিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে আমাদের প্রয়োজন ব্যাপক আকারে খাদ্যনিরাপত্তার দিকে দৃষ্টি দেওয়া । কেননা নিত্যাবশ্যক খাদ্যদ্রব্য আমদানির উপর নির্ভর করে আমাদের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সাংবিধানিক অধিকার খাদ্যের অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব নয় । আর খাদ্যনিরাপত্তা অর্জিত না হলে ক্রমবর্ধমাণ জনসংখ্যার এই অর্থনীতি একটি স্থায়ী ভিতের উপর প্রতিষ্ঠা পেতে পারবে না ।
তাই আমাদের দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টি থাকা উচিত খাদ্যনিরাপত্তা অর্জনে । খাদ্যনিরাপত্তা অর্জনে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া যেতে পারে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ---
কৃষিজমির পরিমাণ বৃ্দধি করা ঃ
একটি হিশাব থেকে দেখা গেছে বাংলাদেশে প্রতিবছর কৃ্ষিজমির পরিমাণ ১% হারে কমছে । এ হার অব্যাহত থাকলে আগামী ১০০ বছর পর বাংলাদেশে কোন চাষযোগ্য জমি থাকবে না । এ ভয়াবহ অবস্থার সম্মুখীন হতে না চাইলে এই মুহুর্তেই এ প্রবণতার লাগাম টেনে ধরতে হবে । দক্ষিন কোরিয়া কিংবা হংকং এর মত বাজারভিত্তিক ভুমিসংস্কার করে হলেও কৃ্ষিজমিকে সংরক্ষণ করতে হবে । খাদ্যনিরাপত্তা অর্জনের প্রথম ও প্রধান ধাপই হতে হবে চাষযোগ্য জমি সংরক্ষণ ।
সিংগল আইটেম এপ্রোস ঃ
সরকার ইতিমধ্যেই এই পদ্ধতি অবলম্বনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে । এটি হল এমন এক ব্যবস্থা যার মাধ্যমে প্রতিটি জেলা একটি নির্দিষ্ট ফসলের জন্য চিহ্নিত করে দেওয়া হবে । যেমন চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভালো আম জন্মে , তাই এই জেলায় শুধুই আম চাষ করা হবে পরিকল্পিত উপায়ে , বরিশালে ধানের ফলন ভালো , তাই সেখানে শুধুই ধান উতপাদন করা হবে । এইভাবে জমির সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে জমি থেকে সর্বোত্তম প্রাপ্যটুকুই বুঝে নেওয়া হবে । এই পদ্ধতিতে দেশে কৃ্ষির ক্ষেত্রে বিপ্লব সুচনা সম্ভব এবং যত দ্রুত সম্ভব এই পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত ।
গুদামজাত ব্যবস্থার উন্নয়ন ঃ
এইতো কিছুদিন আগে পত্রিকার খবরে দেখলাম যে , বস্তা থেকে আলু ফেলে দিয়ে বস্তা চুরি করে নিয়ে গেছে । অর্থাৎ আলুর দাম এতই কমে গেছে যে আলু চুরির চেয়ে ছালাটা চুরি করাই বেশি লাভজনক হয়ে গেছে । গুদামের অভাব এবং গুদামে বিদ্যুতের নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহের অভাবের কারণে আলু ও বিভিন্ন খাদ্যশস্য পচে যায় ও বাজারে সঙ্কট সৃষ্টি করে । ধানের ক্ষেত্রে ও একই কথা প্রযোজ্য । তাই সংরক্ষনের ভালো ব্যবস্থা না করতে পারলে আমাদের আমদানিকৃ্ত খাদ্যও নষ্ট হয়ে যাবে এবং আমরা সমস্যায় পতিত হব ।
বিকল্প খাদ্যাভাস ঃ
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ভাতের পাশাপাশি আলুর উপর জোর দিতে অনেক প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছিল কিন্তু কার্যত কোন পরিবর্তন হয় নি । অর্থনীতির গিফেন তত্ত্ব বলে যে, যদি ভাতের দাম বাড়ে তাহলে অপেক্ষাকৃ্ত স্বল্পমুল্যের রুটির চাহিদা বাড়বে । কিন্তু আমাদের অর্থনীতিতে হুজুগে ও ভোজনরসিক ভেতো বাঙ্গালিত্ত্বের কারণে এ তত্ত্ব প্রয়োগ হয় না । কিন্তু বাস্তবিকই আমাদের এখানে যদি সমপরিমাণ জমিতে আলুর ফলন ধান-গমের চেয়ে বেশি হয় তাহলে অধিক পুষ্টিমানের আলুকে গ্রহণ করার অভ্যাসই কি আমাদের জন্য মঙ্গলজনক নয় । সরকারকে এ বিষয়ে কার্যকর নীতি গ্রহণ করে মনোক্রপের বা ভাতের উপর চাপ কমাতে হবে ।
বিদেশে কৃ্ষিজমির সন্ধান ঃ
আফ্রিকার কৃষি খাতে বিনিয়োগের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। ভারত ও চীন সম্প্রতি আফ্রিকায় তাদের বিনিয়োগ কার্যক্রম সম্প্রসারিত করেছে। ২০০৯ সালে আফ্রিকার সুদান, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, মাদাগাস্কার, সেনেগাল মোজাম্বিক ইত্যাদি দেশের কৃষি খাতে ভারতের ৮০টি কোম্পানি ১৫০ কোটি পাউন্ড বা ভারতীয় মুদ্রায় ১১ হাজার ৩০০ কোটি রুপি বিনিয়োগ করেছে। এ অর্থ বিনিয়োগ হয়েছে মূলত কৃষি জমি কেনা বাবদ। উল্লেখ্য, আফ্রিকা মহাদেশে আবাদযোগ্য কৃষি জমির মোট পরিমাণ ৮০ কোটি ৭০ লাখ হেক্টর। এর মধ্যে মাত্র ১৯ কোটি ৭০ লাখ হেক্টর জমি চাষের আওতায় রয়েছে। অবশিষ্ট প্রায় ৬০ কোটি হেক্টর জমি আবাদের বাইরে রয়েছে। এসব জমি বেশ সস্তা এবং তুলনামূলক উর্বর। ফলে একটু উদ্যোগ নিলেই এসব জমি থেকে সোনা ফলানো সম্ভব। ভারত ও চীন দু’টি জনবহুল দেশ তাদের জনগণের খাদ্য চাহিদা পূরণের জন্য তাই আফ্রিকার প্রতি দৃষ্টি দিয়েছে। ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি আফ্রিকান দেশ তাদের দেশে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ সরকারের নিকট প্রস্তাব পাঠিয়েছে। উল্লেখিত দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। মূলত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে চমৎকার পারফরমেন্সের কারণেই দেশগুলো বাংলাদেশের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। তারা চাচ্ছে, বাংলাদেশ শুধু শান্তি রক্ষার কাজেই নয়, তাদের জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নেও অবদান রাখুক। তাই বাংলাদেশের উচিত এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজ দেশের খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়টিও নিশ্চিত করা ।
কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠা ঃ
বিশ্বের প্রায় সব দেশেই কমোডিটি এক্সচেঞ্জ এর বিস্তার রয়েছে । পার্শবর্তী ভারত কমোডিটি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে কৃ্ষকদের অবস্থার পরিবর্তনে আমূল ভুমিকা রাখছে । কমোডিটি এক্সচেঞ্জ হলো কিছু নির্দিষ্ট দ্রব্যের জন্য স্থায়ী বাজার যেটাকে আড়তের সাথে তুলনা করা যেতে পারে । এখানে কৃ্ষকরা কোন মধ্যস্বত্ত্বভোগীর সাহায্য ছাড়াই ন্যয্যমুল্যে সরাসরি পণ্য কেনাবেচা করতে পারে । বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি গবেষণা কেন্দ্রের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকার গবেষণা প্রকল্পে এর সম্ভ্যাব্যতা যাচাই করা হয়েছিল , কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় নি । কমোডিটি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে কৃ্ষকদের ন্যয্যমুল্যে চাষবাসের পরিবেশ আমাদের অধিক উতপাদনশীল একটি কৃ্ষিখাত উপহার দিবে বলে আশা করা যায় ।
বর্তমান সরকার কৃ্ষি এবং কৃষকদের উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে । তাদেরকে ব্যাংকিং ব্যবস্থার সাথে সম্পৃক্ত করেছে , উতপাদনের উপকরণে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে । কিন্তু তারপরও বিভিন্ন কারণে কৃ্ষকরা এর পুরোপুরি সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । সর্বোপরি বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি কাঠামোগত পরিবর্তনের (লুইসের উন্নয়ন তত্ত্বানুসারে) মধ্য দিয়ে যাচ্ছে । এ অবস্থায় কৃ্ষিকে প্রযুক্তিনির্ভর না করতে পারলে জাতীয় উন্নয়ন তরান্বিত করা সম্ভব হবে না । তাই শুধুই মুদ্রানীতি কিংবা স্বল্পমেয়াদী নীতি দ্বারা মুল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেই যেন সরকার সীমিত না থাকে , জাতীয় স্বার্থে খাদ্যনিরাপত্তার দীর্ঘমেয়াদী সমাধানকল্পেই লক্ষ্য স্থির করতে হবে ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১১ দুপুর ১:০৪