শরীর আবার খারাপ করেছে, গতকাল থেকেই খারাপ করেছে। কথা বললেই, মাথা নাড়লেই অসুবিধে। তবুও গত দুইদিন অনেক কথা বলেছি। নতুন কিছু ছেলে এসেছে, তাদের দেখলেই হেসেছি, কথা বলেছি। আর বলেছি প্লিজ বাসায় এসো। নতুন ছেলেগুলো খুব ভালো।
শরীর খারাপ নিয়ে কোন কিছু লিখতে মা নিষেধ করেছে। তাতে, শ্বশুর বাড়ির লোকেরা খারাপ বলবে। বলবে অসুস্থ মেয়েকে গছিয়ে দিয়েছে। শ্বাশুড়িও তীব্রভাবে নিষেধ করেছেন। বলেছেন লতায় পাতায় আত্মীয়রা আমার শরীর খারাপ নিয়ে ভীষণ ভাবছেন, নানান কথা বলছেন। আমি শ্বাশুড়ির নিষেধ অমান্য করেই লিখছি। আমার শ্বাশুড়ি মানুষ ভাল। শ্বাশুড়ি মানেই সাধারণত শ্বশুর বাড়ির প্রধান ভিলেন। তবে উনি সেরকম নন। স্কাইপে যেদিন কথা বলেছি সেদিনই বুঝেছি উনি নায়কপক্ষের লোক।
আজ খুব লিখতে ইচ্ছে করছে, শরীর খারাপ হলেই লিখতে ইচ্ছে করে আমার। টুকটুকির সাথে কথা বলতেও ইচ্ছে করে। তবে টুকটুকি ভারী ব্যস্ত, সামনে পরীক্ষা তার। সে সারাদিন পড়ে আর খুব বাজে নাম্বার পায়। স্কুলে তার রোল ত্রিশ। তবে সেকশন ভাগের পর কিছুটা কম।
যখন শুয়ে ছিলাম, মনে মনে অনেকটা লিখেছি। এখন সেসবের কিছুই মনে আসছে না। আয়ুশের কথা মনে আসছে। তার কথা লেখা যেতে পারে।
আয়ুশ আমাদের নিচে থাকে। আমি হাই দিলে সে হাই দেই। আমি গাড়ি স্টার্ট দিলে সে দৌড়ে সিঁড়ির উপর ওঠে। তারপর দাদীর আঁচল ধরে আমার চলে যাওয়া দেখে। আয়ুশের মা সবসময় একটা ফোলা পেট নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। একদিন দেখি ফোলাটা নেই আর তার দাদী একটা বাচ্চা কোলে নিয়ে ঘুরছে।
আয়ুশরা নেপালি, ওর দাদী শাড়ি ব্লাউজ পরে, তবে বুকে কাপড় দেয় না। পুরা শাড়িটা লুঙ্গির মত পেঁচিয়ে রাখে। আমি সেদিন নিচে ময়লা ফেলতে যেয়ে ওদের বাসায় ঢুকেছি। এর আগে কখনও যাইনি। আয়ুশ আমার সাথে কোন কথা বলেনি, কেমন যেন লজ্জা পেয়েছে। তবে যাবার আগে হাতের মধ্যে একটা কিট ক্যাট গুজে দিয়েছে। সেই কিট ক্যাট আমি আর আমার স্বামী দুজন মিলে ভাগ করে খেয়েছি। আয়ুশের ভাইটা ভারী সুন্দর হয়েছে দেখতে। ওরা একটা সুন্দর বাঙালী টাইপ নাম রেখেছে। তবে এই মুহূর্তে সেটি মনে পড়ছে না।
আয়ুশদের বাসার সবাই খুব সুন্দর। তবে সুন্দর হলেও ওর বাবার মাথায় টাক আছে। আয়ুশরা নিচে, আমরা দোতালায় থাকি। দোতলায় দাঁড়ালেই ওর বাবার টাক খুব ভালো দেখা যায়। আয়ুশের মায়ের মাথায় টাক নেই, ভীষণ লম্বা কালো চুল। ওর দাদীর চুল কিছুটা সাদা।
আয়ুশ ছাড়া এখানে আরও বাচ্চা আছে। একটি বাচ্চা ভারী পরিশ্রমী। সে কখনই বসে থাকে না। যেখানেই যায় সব তছনছ করে। তবে বাচ্চাটি ফ্রেন্ডলি। তাকে চুরি করা মনে হয় খুব সহজ, কারন সে সবার কাছেই যাই। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় ওকে চুরি করে নিয়ে আসি, খুব আদর করি, একশোটা চুমু দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেই। আর ওর বাবা-মা ৯১১ এ ফোন দিয়ে কাঁদুক, কেঁদে কেঁদে বলুক, আমার ছেলে হারিয়ে গেছে, না জানি কোথায় কিভাবে আছে।
আর একটি বাচ্চা নতুন এসেছে। সে খুব মায়া মায়া চোখে বড় বড় করে তাকায়। কিন্তু মা ছাড়া কোথাও নড়ে না, কোলেও আসে না। একদিন ভেবেছি আমি ওকেও চুরি করব, কস্টেপ দিয়ে বুকের সাথে আটকাবো, যাতে পালাতে না পারে। তারপর ওকে জড়িয়ে ধরে অনেক অনেক ক্ষণ ঘুমাবো।
বাচ্চা নিয়ে আর লিখতে ইচ্ছা করছে না। কাল একটা বিয়ে আছে। আমি সব কাপড় জামা রেডি করে রেখেছি। দেশ থেকে আমাদের জন্য জামা –কাপড় পাঠানো হয়েছে। স্বামীর জন্য দুইটা পাঞ্জাবী পাঠিয়েছে। ফুলতোলা পাঞ্জাবীটা পরে ট্রায়াল দেওয়া হয়েছে। তবে স্বামী নয়, আমি দিয়েছি। আমার স্বামী খুব অলস। সে বলেছে তুমিই দাও, একজন দিলেই হয়।
বিয়েতে খুব যেতে ইচ্ছে করছে আমার। আবার যেতে পারব কিনা এই নিয়ে দুশ্চিন্তাও হচ্ছে। সোশ্যাল গেদারিং এর পর আমার আফটার ইফেক্ট হয়।
ফেসবুকে সেটা হয় না। এখানে কেউ কোন কথা বলে না, কোন শব্দ করে না। তবুও যেন অনেকটা বলা হয়।
অনেকটা বলা হয়।
পরিশিষ্টঃ শরীরটা ভাল নেই। আজ কারো কমেন্টের উত্তর হয়ত দিতে পারবনা। তবে কি হয়েছে আমার এই নিয়ে জানতে চাইলে, এই পোস্টটা পড়তে পারেন। এখানে কিছুটা লিখেছি।
লিংক
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:৪১