জঙ্গি অর্থায়নের ভয়াবহ চিত্র
প্রকাশ : ২৩ আগস্ট, ২০১৫
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের প্রতিবেদন থেকে জঙ্গি অর্থায়নের যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তা এক কথায় ভয়াবহ। এক জঙ্গি নেতার ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনা শেষে তো হতবাক হয়ে পড়েছেন গোয়েন্দারা। ঢাকা ও সিলেটে ব্লগার হত্যার সঙ্গে জড়িত মাদ্রাসা শিক্ষক আবুল বাশার ব্যাংক ও ব্যাংকের বাইরের চ্যানেলে জঙ্গিদের জোগান দিয়েছেন প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা। এই শিক্ষক জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নেতা। শুধু আবুল বাশার নন, ব্যাংক ও অন্যান্য চ্যানেলে জঙ্গি অর্থায়নের এক ধুম লেগেছে বলা যায়। কয়েকদিন আগে জঙ্গি সংগঠন শহীদ হামজা ব্রিগেডকে অর্থ জোগান দেয়ার অভিযোগে রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকা থেকে মহিলা এক ব্যারিস্টারসহ তিন আইনজীবীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। বলাবাহুল্য, তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে উদ্ঘাটিত হতে পারে জঙ্গি অর্থায়নের আরও অনেক তথ্য।
বলার অপেক্ষা রাখে না, জঙ্গি তৎপরতা বিস্তারে বড় ভূমিকা রাখছে এর পেছনে অর্থায়ন। কারা, কীভাবে জঙ্গি সংগঠনগুলোকে অর্থের জোগান দিচ্ছে, জঙ্গি দমনে তা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জঙ্গি অর্থায়ন প্রতিরোধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছে অনেক আগেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেছেন, জঙ্গিদের লেনদেন বা যে কোনো সন্দেহজনক লেনদেনের বিষয়ে সব ব্যাংক সতর্ক। আমাদের প্রশ্ন, এত যে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা, তারপরও জঙ্গি অর্থায়ন হচ্ছে কীভাবে? দ্বিতীয় কথা, যারা জঙ্গি অর্থায়নে যুক্ত রয়েছে বলে প্রমাণ মিলছে, তাদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে? জঙ্গিদের বড় অংকের অর্থ জোগানদার আবুল বাশার বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন। তিনি আত্মগোপনে যাওয়ার সুযোগ পেলেন কীভাবে? জঙ্গি অর্থায়নের তদন্ত করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট। তাহলে এ কেমন গোয়েন্দাগিরি যে, অপরাধী টের পেয়ে যায় তার খবর জানতে পেরেছে গোয়েন্দারা? আমরা বলব, ব্যাংক হিসাব খোলা ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অপারেশনের ওপর কার্যকর মনিটরিং থাকলে জঙ্গি অর্থায়নের স্বরূপ উদ্ঘাটন করা যেমন সম্ভব, তেমনি সম্ভব অর্থের জোগানদারদের তাৎক্ষণিকভাবে আইনের আওতায় আনা। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এ ব্যাপারে আরও সতর্ক, আরও একনিষ্ঠ হতে হবে।
সাম্প্রতিককালের ঘটনাপ্রবাহ বলছে, জঙ্গি সগঠনগুলো নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদও বলেছেন, জঙ্গিরা আগের চেয়ে অনেক বেশি কৌশলী হয়েছে, তারা ভোগ করছে আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা। বলা নিষ্প্রয়োজন, অর্থের জোর তাদের বড় জোর। প্রযুক্তি তাদের আয়ত্তে, একই সঙ্গে যদি থাকে অর্থের জোগান, তাহলে জঙ্গিদের উত্থান ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়বে। আইনশৃংখলা বাহিনী, বিশেষত দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যদি তাদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে না পারে, তাহলে বলতে হবে, এ দেশের শিরে সংক্রান্তি। তাই আমরা বলব, শুধু জঙ্গিদের আস্তানা নয়, তাদের ব্যাংক হিসাব ও অর্থ জোগানের চ্যানেলগুলোর ওপরও ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে, নিতে হবে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা।
- See more at: Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৭:৫৭