তাসরীফ আমার বড় ভাইয়ের এক মাত্র ছেলে , বয়স তিন . এখন সে সম্পূর্ণ শব্দ ব্যবহার করে কথা বলতে পারে . এবং কথা বলতে অনেক পছন্দ ও করে . শিখতে ও অনেক আগ্রহী . কেউ যদি তার সামনে অনেক বড় কোন বাক্য বলে ঐটা সে পুনরাবৃত্তি করবে অথবা করার সম্পূর্ণ চেষ্টা করবে .
তার সম্পর্কে আর ও একটি মজার তথ্য সে সবাই কে নাম ধরে সম্বোধন করতে ভালোবাসে. তার সাথে আমার সম্পর্কটা মা –ছেলে মতো , যত আবদার অথবা অভিযোগ আমার কাছে তবে তা বেশি ভাগ সময়ে তার বড় বোন নিয়ে , তার বোনের বয়স সাত . দুই জনের কাছকাছি নাম – বোনের নাম তাসনীম. দুই জনের মধ্যে ঝামেলা হয় কম্পিউটার গেম খেলা নিয়ে , অন্য সময়ে খুব ভালো বন্ধু .
আজ কাল সে ছবি আঁকা এবং রং দিয়ে খেলা করতে খুবই কর্মব্যস্ত ------
আজকের দিনে তার সাথে আমার মজার কিছু কথা হয়েছে.
অফিস থেকে এসে দেখি তাসরীফ আমার রুমে , গভীর মনোযোগের সাথে ছবি তে রং করতেছে . মেঝের অর্ধেকটা রঙে মাখামাখি .
আমি তার দিকে না তাকিয়ে আমার ছোট বোনের সাথে কথা বলতে ছিলাম রুমে টুকে , একটু পর সে আমার কাছে আসলো – আমাদের কথা
তাসরীফ : মম
আমি : হমম
তাসরীফ: (নিরব)
আমি : কিছু বলবে ?
তাসরীফ : মিনা (আমার বোন ) আমার জন্য গতকাল চকলেট কেক এনেছে .
আমি : ওহ আচ্ছা , আগামীকাল আমি নিয়ে আসবো.
তাসরীফ : মিনা আমার জন্য ডরে মন খেলনা ও এনেছে . আজ আবার চকলেট কেক আনবে .
এই বলে সোজা চলে গেল এবং আবার রং করতে লেগে গেল.
আমার বোন তখন আমাকে বললো , ও কেন তোমাকে এইটা বললো জানো কারণ তুমি অফিস থেকে আসার সময়ে তার জন্য কিছুই নিয়ে আসো নাই , তাই সে মিনা কে উদারন দিয়ে তোমাকে জানিয়ে দিলো . এইটা হইলো আমাদের বুদ্ধিমান তাসরীফ .
একটু পর তার দাদী তার ছবি দেখতে আসলো , তাকে জিজ্ঞাসা করলো তাসরীফ তুমি কি ছবি আঁকো
তাসরীফ এর বর্ণনা:
আমি সাগর এর ছবি আঁকি , সাগরের মাঝে একটা নৌকা আছে কিন্ত এখন সাগরে ঝড় শুরু হয়েছে তাই নৌকা ডোবে গেছে দাদু , দুইটা মানুষ ছিল এখন তারা গাছের ওপরে বসে আছে .
আমি তাসরীফ কে জিজ্ঞাসা করলাম সাগরে তুমি গাছ কোথায় পেলে ---
তার বুদ্ধিমান উত্তর : পাশে একটা island ছিল.
ততক্ষণে তার রং করা শেষ , আমি জানতে ছিলাম তাসরীফ তুমি বড় হয়ে কি হবে----------
তাসরীফ : আমি বড় হয়ে আর্টিস্ট হবো
আমি : আর্টিস্ট হবে?
তাসরীফ : হতেই হবে
তার এই “হতেই হবে” কথাটা আমার আজ অনেক ভালো লাগলো , একটা তিন বছরের শিশু জানেনা তার জন্য কি অপেক্ষা করতেছে কিন্ত সে এখনই স্বপ্ন আঁকার শুরু করে দিয়েছে .
এই জন্যই এই লেখাটা লেখা – একদিন তাসরীফ অনেক বড় হবে , ওর পৃথিবীর অনেক কিছুই পরিবর্তন হবে , ওর ইচ্ছা গুলো ও কিন্ত ওর জীবনের প্রথম ইচ্ছা – “আমি আর্টিস্ট হবো “ যেন ভুলে না যায়. রঙের সাথে সে যেন খেলে অনাবিল আনন্দ নিয়ে সবসময়ে . যে দিন সে পড়তে শিখবে এই লেখা টা যেন পড়তে পারে সে দিন – ওর জীবনের প্রথম ইচ্ছার কথা.
আবার এই জন্য ও - আমার সাথে তার শৈশবের কথা গুলো অনেক বড় হবার পরও যেনো সে মনে করতে পারে . আমার গল্প বলার মতো কেউ যদি ওর সাথে নাও থাকে , আমি যেনো থাকতে পারি অনেক দূরে থেকেও ওর কিছু স্মৃতির কাছাকাছি , কারণ আমি ওকে অনেক ভালোবাসি.