বাংলাদেশে ডেসটিনির মতো নিউইর্য়কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ষ্ট্রিটে বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকায় প্রতারণার নতুন ফাঁদ পেলেছেন (মাল্টি লেভেল মার্কেটিং) এলএমএম কোম্পানী । মার্কেটিং বা বিপণনের সবচেয়ে বড় অস্ত্র মানুষের লোভ। আর এই লোভ ব্যবহার করে যত ধরণের নোংরা ব্যবসা টিকে আছে তার অন্যতম হল এমএলএম বা মাল্টি লেভেল মার্কেটিং। এমএলএম কোম্পানীর মাধ্যমে গুটি কয়েকজন লাভবান হলেও হাজার হাজার লোক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এদের মধ্যে বেশীর ভাগই লোক লজ্জায় তা প্রকাশ করতে পারছেননা। এমএলএম কোম্পানীর ধারণাটা যদিও উন্নয়ণশীল রাষ্ট্রগুলোর তবুও বাংলাদেশের ডেসটিনির আদলে নিউইর্য়কে চলছে বিভিন্ন নামে এদের কার্যত্রুম। এসব কোম্পানীতে ৫০০ ডলার দিয়ে সদস্য হয়ে শতশত সাধারণ মানুষ আজ প্রতারণার শিকার। এদের মধ্যে বেশীর ভাগই যুবক। বাংলাদেশে ডেসটিনিসহ অন্যান্য কোম্পানী পণ্য বিত্রিুর মাধ্যমে কাজ করতো। নিউইর্য়কের কোম্পানীগুলো পলিসি ভিন্ন। এখানে এনার্জি অর্থাৎ বিদ্যুৎ, গ্যাস ও বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানীর বিল সংগ্রহের মাধ্যমে কাজ করে। বিভিন্ন বিল সংগ্রহের মধ্য দিয়ে কোম্পানীগুলো সর্ব সাধারণকে সদস্য করে থাকে। যত বিল তত ডলার উপার্জের ঘোষণা দিলেও এটা কোম্পানী গুলোর নবতর কৌশল। বিল সংগ্রহের কথাটা নামে মাত্র, এদের মূল উদ্দেশ্য হলো ৫০০ ডলার সদস্য ফি। এতে কমিশনও ঘোলক ধাঁধা। যাদের থেকে বিলের রেট কমানোর কথা বলে বিল সংগ্রহ করে তাদের অনেকের অভিযোগ প্রথম এক-দুইমাস বিল সামান্য কম হলেও পরে তা বৃদ্ধি পায় দ্বিগুন। এসব কোম্পানীগুলো এলাকা ভিক্তিক কিছু এজেন্ট নিয়োগ করে রেখেছে। এরা পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়ে সদস্যদের আকৃষ্ট করার কাজে লিপ্ত থাকে। এক কোম্পানীর লোকদেরকে অন্য কোম্পানী বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে তাদের পক্ষে নেয়ার এমন ঘটনাও ঘটেছে। অভিযোগ উঠেছে মুলধারার লিডার দাবীদার এমন একজন সম্প্রতি একটি কোম্পানী থেকে অন্য আরেকটি কোম্পানীতে যোগদান করেছেনবহু অর্থের বিনিময়ে। অপর একটি সূত্রে জানায় আগামী তিন মাসের মধ্যে দুইহাজার সদস্য করার শর্তে প্রথম কোম্পানীতে ছেড়েছেন ঐ লিডার। এ কারণে র্দীঘদিন যারা কাজ করেছেন তাদের অনেকে ক্ষুব্ধ। এসব কোম্পানীগুলোর নেই কোন সুনিদিষ্ট অফিস। বাসা-বাড়ী, রেষ্টুরেন্ট, এবং কয়েকটা কোচিং স্কুল এদের অস্থায়ী অফিস হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। সাধারণ জনগণকে আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে সিটির অভিজাত হোটেলে মাঝে মধ্যে সেমিনার করাটাই এসব কোম্পানীর প্রধান পূঁজি। এতে কোম্পানীর নিয়োগ করা কনসালটেন্সগণ সামান্য বক্তব্যেও পরই প্রজেক্টের মাধ্যমে এদের কার্যত্রুম পরিবেশন করে থাকেন। এতে বুঝানো হয় অর্থই অর্থ। সেলস ট্রেনিং এর সময় বিল সংগ্রহের মূল কৌশলে শেখানো হয় কিভাবে নতুন খদ্দের ধরতে হয়, সেখানে বিভিন্ন বিল যে বৃদ্ধি পেতে পারে সে সম্পর্কে কথা বলা হয়না বললেই চলে। এখানে আসল আকর্ষণ হলো পরবর্তী কমিশনে। সদস্য সংগ্রহের শুরুতে কোন কোন কোম্পানী সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসে নাগরিকদের স্পর্শকাতর সোস্যাল সিকিউরিটি নম্বার দিতে হয়। এছাড়াও সদস্য ফি বাবদ ৫০০ ডলার পরিশোধ করতে হয় ত্রেুডিট ও ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে। নগদ ও চেক গ্রহন করা হয় না। আবারও সদস্যদের নামে ওয়েবসাইড ব্যবহারের জন্য মাসে ত্রেুডিট-ডেবিট কার্ড থেকে মাসিক নির্ধারিত পরিমান ডলার কেটে নেয় বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। কোম্পানীর অনেক কিছু প্রথমে গোপন রেখে তাদের নিয়োগ করা এজেন্টরা সুন্দর বুলি দিয়ে শুধু লাভই লাভ এমন কথা বলে সদস্যদের আকর্ষণ করেন। একজন লোক সদস্য হওয়ার পর কোম্পানী সর্ম্পকে জানতে পারে। তখন আর কিছু করার থাকেনা। চতুর এ কোম্পানীগুলো বিল সংগ্রহে মার্কেটিং করার জন্য এক্সিকিউটিভ, ব্রোঞ্চ এক্সিকিউটিভ, সিলভার এক্সিকিউটিভ গোল্ড এক্সিকিউটিভ এবং প্লাটিনাম এক্সিকিউ নামের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এক্সিকিউটিভ পদ পেতে হলে তাকে ডানে এবং বামে ১ জন সদস্য সংগ্রহ করতে হবে। এভাবে একটা সাজরা (গাছ) তৈরী করেন। তারা বুঝায়ে থাকেন গাছের যত ডালা বের হবে তত লাভবান। অর্থ্যাৎ ডলারই ডলার। পদের অনুকুলে নির্ধারিত সদস্য সংগ্রহ করতে হয়, এইভাবে যতবেশী সদস্য হবে তত পদমর্যাদা হবে বলে সাধারণ মানুষের মগজ দোলাই করে থাকেন তারা। এজন্য এমএলএম কোম্পানীগুলো নেটওয়ার্কেও উপরের দিকের লোকেরা নতুন কাস্টমার ধরে কম, তাদের মূল কাজ ম্যারাথন প্রোগ্রাম, ট্রেনিং প্রোগ্রাম, সেলেব্রেশন প্রোগ্রাম এবং সবচেয়ে ভয়াবহ হলো টিম মিটিংএর মাধ্যমে কর্মীদের মনে সবসময় স্বপ্ন দেখানোর ইনপুট দিয়ে যাওয়া। এই কাজে এরা সাইকোলজিকাল যত অস্ত্র আছে তার সবই ব্যবহার করে। নিরাশা বা থমকে যাওয়া থেকে কর্মীদলকে রক্ষা করতে সুন্দর সব উপমা, খ্যাতিমানদের উক্তি, শিক্ষণীয় নানা গল্প দিয়ে একটা জিনিসই প্রমাণ করে ছাড়া হয় তা হলো একজন নতুন মানুষকে এসব কোম্পানীতে ঢুকানোর মাধ্যমে নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করাতেই জীবনের সব সাফল্য লুকিয়ে আছে। এখানে লক্ষ্যণীয় যে কর্মীদের দিয়ে বিল সংগ্রহ করানো নয়, তাদের সফল হবার জন্য উৎসাহ দেয়া যে তুমি একটা স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছ। সফল হবার এই স্বপ্নকে সত্যি করতে হলে তোমাকে তোমার ডাউনলাইনের মনে আগুন জ্বালাতে হবে, তাদেরকেও সফল হবার স্বপ্ন দেখাতে হবে। তারা মানুষকে বোঝায়-দেখ আমরা নিজেরা একা বড়লোক হতে চাইনা, তোমাদেরকেও বড়লোক বানাতে চাই। ডাউনলাইন কাজ না করে তাহলে আপলাইন কখনোই ধনী হতে পারবেনা। এদের প্রতিটা কাজ দেশের প্রচলিত আইন মেনে করা হয়, প্রতিটি আইনের ফাঁক-ফোঁকর কাজে লাগানোর জন্য একটি দক্ষ আইনজীবি দল পোষা হয়। দেশের নিয়মিত কর আদায় হয় কড়ায় গন্ডায়, যেন সরকারের মুখ বন্ধ থাকে। খুব উঁচু মানের একাউন্টিং সফ্টওয়ার দিয়ে প্রতিটা হিসাব সংরক্ষণ করা হয়। কোম্পানীগুলো ভাড়া করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, খ্যাতনামা কবি-সাহিত্যিক, চিত্র নায়ক, গায়ক ’নাট্যকার, কমিউনিটির লিডার ও প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের তাদের সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামে আনে। এরা সবাই অকুন্ঠ কন্ঠে এমএলএম কোম্পানীর প্রশংসা করে, বেকারত্ব দূর করার প্রয়াসের সার্টিফিকেট ও প্রলোভন দিয়ে থাকে। কোম্পানীর চতুর কর্মকর্তারা প্রশাসনের লোকের সামনে তাদের অবস্থান এমনভাবে তুলে ধরেন এতে অবিশ্বাস করার কোন সুযোগ থাকেনা এটা আরেকটা ভাউতাবাজি। উপমার পর উপমা দেয়। চেক দেখায় উমকে আজ এত ডলার পেয়েছে, উমকের বিশাল অংকের চেক অন দ্যা ওয়ে ইত্যাদি, ইত্যাদি । মনে হয় এসব কোম্পানীতে যোগ দেয়া মানে মর্হুতেই হাজার হাজার ডলারের মালিক। তাছাড়া কথা গুলো এমনভাবে উপস্থাপন করেন মনে হয় তাদের ধারণা সফল হবার তীব্র আকাঙ্খা না থাকলে কেউ সফল হতে পারেনা। ‘আমি পারবই’ এ ধারণা নিয়ে সদস্যদের মগজে গেঁথে দেয়া হয়। হাজারো উপেক্ষা, অপমান, প্রত্যাখান সব কিছুকে হাসিমুখে সহ্য করে এসব ভাউতাবাজ কোম্পানীর পরিবেশকরা। এরা বারবার মানুষদের কাছে যান, সহজ-সরল সাধারণ মানুষকে তাদের জালে জড়াতে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:২৩