"ভিরায় দিমু মামা ?"
ধুক! করে ওঠে নীলুর বুকটা, শংকাভরা বিশ্বাস নিয়ে তাকায় রাজুর দিকে...যেন ওকে অভয় দিতেই ততক্ষনে রাজুর হাতটা আলতোকরে নেমে এসেছে ওর মাথায়।
না মামা.. ভিরাতে হবে না, আপনি নৌকা বান, আমরা নৌকায় ঘুরতে এসেছি।
ভরসা পেয়ে রাজুর কোলে মাথা রাখে নীলু। আর চোখে তাকিয়ে দেখে পাশ্বের চর মত জায়গাটায় ভিরানো সারি সারি নৌকাগুলোর দিকে, সবগুলো নৌকারই ছই-এর দুদেকে কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা। মাঝিরা একটু দুরে সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে, কেউবা তাস খেলছে...
"কি মামা ভিরায় দিমু? আবার বলে মাঝি... কোন অসুবিধা নাই, সবার জন্যই এক, এক ঘন্টা আপনারে ভিতরে থকেন আমি কাপড় দিয়া ঢাইকা দিমুনে....
এবার একটু কড়া ভাবেই মাঝিকে না করে রাজু, "কেন যে নৌকায় ঘুরতে রাজি হলো সে?" এখানকার অবস্থা সে আগে থেকেই জানত কিন্তু নীলুকে বুঝাতে পারেনি, আর নিলুর নৌকায় ঘোরার মজাটা কেড়েও নিতে চায়নি সে.. তিন বছরের প্রেম ওদের। নিলুর বিয়ের প্রস্তাবও আসছে বিভিন্ন, অসম্ভব চাপে আছে মেয়েটা, এখনও ভালো একটা চাকরিও জোগাড় করতে পারেনি রাজু যে নীলুকে বিয়ে করবে।তাই ওর এই সামান্য ইচ্ছেগুলোতে বাঁধা দিতে পরেনা সে...নীলুর চুলে বিলিকাটে রাজু, আর বাঁধাদিয়েই বা কি? হাত গুটিয়ে বসে থাকবে? চুরি পরে! সব জায়গায়ই একই অবস্থা।
এইতো সেদিন ঈদ করতে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিল সে। একদিন বিকালে মাঠে গিয়েছিল ক্রিকেট খেলতে পুরোনো সেই নেশার টানে। কিন্তু মাঠে পা দেয়ার সাথে সাথে ওর কানে এলো "দশে বিশ, বিশে চল্লিশ..." প্রথমে এর অর্থ বুঝে উঠতে পারেনি সে পরে খোঁজ নিয়ে জানল এখানে এখন তিন তিন ছয় ওভানরের ক্রিকেট ম্যাচ হবে আটশ আটশ ষোলশো টাকার। মানে দু দল আটশ করে টাকা দিয়েছে যে জিতবে সে ষোলশো টাকা পাবে। মানে কেউ দশ টাকা দিলে সে বিষ টাকা পাবে আরকি আর হারলে দশ টাকা হার।
রাজু খোঁজ নিয়ে জানলো মাঠে সারদিনই এধরনের ম্যাচ হয় এবং প্রতিদিনই প্রায় ছয় থেকে আট হাজার টাকার খেলা হয়। রাজু বুঝতে পারেনা এটা ক্রিকেট নাকি জুয়া??
নীলুর কথায় বর্তমানে ফিরে আসে রাজু,''তুমি কবে একটা ভালো চাকরি পাবা?"
" পাব খুব তারাতারিই পাবো " বললেও নিজের মুখেই শুকনো চিড়ের মত লাগে কথাগুলো ওর। মনে পড়ে পাবনার ঘটনা, " সরকারি দলের গুন্ডারা কিভাবে পরীক্ষা কেন্দ্রে হামলা চালালো আর সরকার কি নির্লজ্জভাবে করলো প্রশাসনের বদলী প্রহসন।
আবার বেশ কিছুদিন আগে বাসে আজিমপুর যাবে মোহাম্মদপুর থেকে, নিসর্গ পরিবহন। ফিজিক্যাল মোড় থেকে একজন টিকেট ছাড়াই জোড় করে বাসে উঠলো, হেলপার ভারা চাইতে গেলে বললো স্টুডেন্ট ঢাকা কলেজ।
মামা কিছু দেন, বলে হেলপার।
যা ভাগ... কলেজের সামন দিয়া যাবি না?
হেলপার আর কোন কথা বলে না, চুপচাপ সরেপরে।
"কি হলো কি ভাবো আজকাল এতো?" নীলুর জিগেস করে।
"নাহ্ কিছু না। এই খুব তারাতারি একটা ভালো চাকরি পাবো.. তোমাকে বিয়ে করব... এসব আরকি।
পরম আস্থায় রাজর ঘারে মাথা রাখে নীলু।
"মামা কি আরও ঘুরবেন? নৌকা বাইতে বাইতে হাতে ব্যাথা হয়ে গেছে।"
"না মামা আর ঘুরব না।" বলে রাজু "আচ্ছা মামা এরপর এলে আপনারে পাওয়া যবে, ঘোরার জন্য?
"না মামা আপনেগরে নিয়া ঘুরন যাইব না, আপনেরা ঘুরলে ঘন্টা ৫০০ টাকা নেয়া উচিত।"
কিছুটা ব্যাকুব বনে যায় রাজু, নৌকা ঘাটের দিকে ফিরতে থাকে, রাজু তাকায় পর্দাঘেরা নৌকাগুলোর দিকে... কেমন একটা নির্দিষ্ট ছন্দে নৌকাগুলো একবার একাত আর একবার ওকাত হচ্ছে...