বাবার প্ররোচনায় ছোটবেলা থেকেই আমার বই পড়ার প্রতি প্রচন্ড ঝোঁক। সাড়ে তিন থেকে চার বছর বয়সে ক্লাস ওয়ান এর বইগুলো মূখস্থ হয়ে গিয়েছিল। সেগুলো আর মন টানতো না। সেই সময় মস্কো থেকে বাইপোস্টে "সোভিয়েত ইউনিয়ন" বলে একটা মাসিক ম্যাগাজিন আসতো। এই ম্যাগাজিন এর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম। রাশিয়ার রূপকথাগুলো শুধু নয়, মন নাড়া দিয়ে তাদের জীবন যাপনের কাহিনী গুলোও। রুদ্ধশ্বাসে পড়তাম তাদের সাফল্যের ইতিকথা। বাবা বুঁঝতে পেরেছিলেন থরে থরে সাজানো বইয়ের আলমারী খুলে দেওয়ার সময় এসেছে। কোন দিন কিছু পড়তে বাধা দেন নি। উৎসাহ দিয়েছেন। আমিও সোৎসাহে পড়ে ফেলেছি গোর্কি, পুশকিন, আন্তন মাকারেঙ্কো, লেনিন, সাথে রামায়ণও। বয়স বাড়ার সাথে সাথে বঙ্কিম, শরৎ, দিজেন্দ্রলাল, মধূসূধন, গিরিশ সব। বাবার আফশোষ, এ দেশে আসার সময় হাজার তিনেক বই ফেলে আসতে হয়েছে, যার অনেকগুলোই দূস্প্রাপ্যতার কারনে পড়াতে পারলেন না। বাবার সাথে সাথে আমারও খুব আফশোষ হত। তবুও পড়েছি অনেক কিন্তু লিখিনি তার কনা মাত্র।
বাবা বললেন, লিখতে শুরু কর, আমি বললাম , ধুর পড়তেই মজা। বাবা জোর করে ছড়া আর গল্প লিখিয়ে প্রতিযোগিতায় পাঠালেন, জেলায় প্রথম হলাম। তাতেও বিন্দুমাত্র লেখার উৎসাহ পাইনি। আমাকে পাঠকের সাথে সাথে লেখক বানানোর কোনো অভিসন্ধিই কাজে আসেনি। আসলে আমার কিছু করার ছিল না। জমিতে হাল দেওয়ার খাটনি আর নিয়মিত কলম দিয়ে কাগজে লেখা আমার একই মনে হত। আর বেটা মাতাল কলম কিছুতেই আমার হাতে সোজা পথে চলতনা। আমি লিখতাম বাংলায় আর ওর মাথা দিয়ে যেটা বের হতো তা মনে হয় হিব্রুই হবে। বাবা, মা কারোরই হিব্রু ভাষায় দক্ষতা না থাকায় আমাকে চরম ভৎর্সনার শিকার হতে হতো। বাবা ভীষণ দুঃখ পেতেন। কিন্তু আমার কলম কখনোই কথা শোনেনি, সেই কারনেই বোধকরি এখনও কলমের সাথে আমার দীর্ঘসহাবস্থান হয়ে ওঠে না।
আপাত দৃষ্টিতে সাহিত্য চর্চায় এই ছিল আমার বাহ্যিক রূপ। কিন্তু একটা গোপন কথা আছে। আমি ভীষণ ভাবতে ভালবাসতাম। তেপান্তরের মাঠে ঘোড়ার পিঠে রাজকন্যা নিয়ে চিন্তা করতাম নিজেকেই। নিজেই তৈরী করতাম রূপকথার রাজমহল। রাশিয়ার লালফৌজের সৈনিক হয়ে নিজেকেই খুঁজে পেতাম পাহাড় ও স্তেপে। প্রচন্ড ইচ্ছে করতো লিখতেও, কিন্তু সেই কলম!
সাম হোয়ারের ব্লগার "অনুমান" আমাকে প্রথম এই ওয়েবসাইট দেখান। ওনার উৎসাহেই শুরু। ওপরে নীল আকাশ, নিচে আমি তুমি ধপাস অথবা আমি তুমি মিলে তাল গাছের নিচে টালির ঘর বানিয়ে থাকবো, ক্ষিদে পেলে তাল খাব পিপাসায় তাড়ি। যাই লিখিনা কেন তা পঠনযোগ্য আর অপঠনীয়ই হোক, লিখছি তো! সবচেয়ে সুখের কথা এখানে কলমের ঝামেলা নেই, হাতের লেখাও নিখুঁত।
আজ আমার শততম পোস্ট হলো। আউট যখন হইনি ইনিংস সহজে শেষ হবেনা। এই ওয়েব সাইটের খোঁজ, এত সুন্দর প্ল্যাটফর্ম এবং এতদিন পর্যন্ত আমাকে সহ্য করে প্রেরনা দেওয়ার জন্য "অনুমান", "সামহোয়ার ইন ব্লগ" ও সর্বোপরি আপনাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আজ আকাশের দিকে তাকিয়ে ভীষণ বলতে ইচ্ছে করছে "জানো, আমি লিখছি বাবা"।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ১২:৪০