somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"জানো, আমি লিখছি বাবা"

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ১২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জীবনে কয়টা কলম হারিয়েছি হিসাব করে বলা মুশকিল। সংখ্যা বিশ্বাস্য নাও হতে পারে। কেন জানি ইউজ অ্যান্ড থ্রো হোক আর লাইফ টাইম গ্যারান্টেডই হোক, পরীক্ষার খাতায় লেখার সমাপ্তি অথবা কোথাও সাইন করার পরে তা পকেটে রাখার কথা বেমালুম ভুলে যাই। আফশোষ হয়, তবে সান্ত্বনা পাই যার বেশী প্রয়োজন তার পকেটে গিয়েছে ভেবে। লেখনির সাথে আমার কি মধুর সম্পর্ক বিদ্যমান তা সহজেই বোধগম্য।

বাবার প্ররোচনায় ছোটবেলা থেকেই আমার বই পড়ার প্রতি প্রচন্ড ঝোঁক। সাড়ে তিন থেকে চার বছর বয়সে ক্লাস ওয়ান এর বইগুলো মূখস্থ হয়ে গিয়েছিল। সেগুলো আর মন টানতো না। সেই সময় মস্কো থেকে বাইপোস্টে "সোভিয়েত ইউনিয়ন" বলে একটা মাসিক ম্যাগাজিন আসতো। এই ম্যাগাজিন এর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম। রাশিয়ার রূপকথাগুলো শুধু নয়, মন নাড়া দিয়ে তাদের জীবন যাপনের কাহিনী গুলোও। রুদ্ধশ্বাসে পড়তাম তাদের সাফল্যের ইতিকথা। বাবা বুঁঝতে পেরেছিলেন থরে থরে সাজানো বইয়ের আলমারী খুলে দেওয়ার সময় এসেছে। কোন দিন কিছু পড়তে বাধা দেন নি। উৎসাহ দিয়েছেন। আমিও সোৎসাহে পড়ে ফেলেছি গোর্কি, পুশকিন, আন্তন মাকারেঙ্কো, লেনিন, সাথে রামায়ণও। বয়স বাড়ার সাথে সাথে বঙ্কিম, শরৎ, দিজেন্দ্রলাল, মধূসূধন, গিরিশ সব। বাবার আফশোষ, এ দেশে আসার সময় হাজার তিনেক বই ফেলে আসতে হয়েছে, যার অনেকগুলোই দূস্প্রাপ্যতার কারনে পড়াতে পারলেন না। বাবার সাথে সাথে আমারও খুব আফশোষ হত। তবুও পড়েছি অনেক কিন্তু লিখিনি তার কনা মাত্র।

বাবা বললেন, লিখতে শুরু কর, আমি বললাম , ধুর পড়তেই মজা। বাবা জোর করে ছড়া আর গল্প লিখিয়ে প্রতিযোগিতায় পাঠালেন, জেলায় প্রথম হলাম। তাতেও বিন্দুমাত্র লেখার উৎসাহ পাইনি। আমাকে পাঠকের সাথে সাথে লেখক বানানোর কোনো অভিসন্ধিই কাজে আসেনি। আসলে আমার কিছু করার ছিল না। জমিতে হাল দেওয়ার খাটনি আর নিয়মিত কলম দিয়ে কাগজে লেখা আমার একই মনে হত। আর বেটা মাতাল কলম কিছুতেই আমার হাতে সোজা পথে চলতনা। আমি লিখতাম বাংলায় আর ওর মাথা দিয়ে যেটা বের হতো তা মনে হয় হিব্রুই হবে। বাবা, মা কারোরই হিব্রু ভাষায় দক্ষতা না থাকায় আমাকে চরম ভৎর্সনার শিকার হতে হতো। বাবা ভীষণ দুঃখ পেতেন। কিন্তু আমার কলম কখনোই কথা শোনেনি, সেই কারনেই বোধকরি এখনও কলমের সাথে আমার দীর্ঘসহাবস্থান হয়ে ওঠে না।

আপাত দৃষ্টিতে সাহিত্য চর্চায় এই ছিল আমার বাহ্যিক রূপ। কিন্তু একটা গোপন কথা আছে। আমি ভীষণ ভাবতে ভালবাসতাম। তেপান্তরের মাঠে ঘোড়ার পিঠে রাজকন্যা নিয়ে চিন্তা করতাম নিজেকেই। নিজেই তৈরী করতাম রূপকথার রাজমহল। রাশিয়ার লালফৌজের সৈনিক হয়ে নিজেকেই খুঁজে পেতাম পাহাড় ও স্তেপে। প্রচন্ড ইচ্ছে করতো লিখতেও, কিন্তু সেই কলম!

সাম হোয়ারের ব্লগার "অনুমান" আমাকে প্রথম এই ওয়েবসাইট দেখান। ওনার উৎসাহেই শুরু। ওপরে নীল আকাশ, নিচে আমি তুমি ধপাস অথবা আমি তুমি মিলে তাল গাছের নিচে টালির ঘর বানিয়ে থাকবো, ক্ষিদে পেলে তাল খাব পিপাসায় তাড়ি। যাই লিখিনা কেন তা পঠনযোগ্য আর অপঠনীয়ই হোক, লিখছি তো! সবচেয়ে সুখের কথা এখানে কলমের ঝামেলা নেই, হাতের লেখাও নিখুঁত।

আজ আমার শততম পোস্ট হলো। আউট যখন হইনি ইনিংস সহজে শেষ হবেনা। এই ওয়েব সাইটের খোঁজ, এত সুন্দর প্ল্যাটফর্ম এবং এতদিন পর্যন্ত আমাকে সহ্য করে প্রেরনা দেওয়ার জন্য "অনুমান", "সামহোয়ার ইন ব্লগ" ও সর্বোপরি আপনাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আজ আকাশের দিকে তাকিয়ে ভীষণ বলতে ইচ্ছে করছে "জানো, আমি লিখছি বাবা"।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ১২:৪০
৪৪টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×