গতকাল থেকেই মেজাজটা খিঁচরে ছিল। সবাইকে ছুটি দিয়ে দিয়েছিলাম আগের দিনই। ভেবেছিলাম গতকাল অফিস থেকে লুকিয়ে দুপুরেই বাস ধরে বাড়ি চলে আসব। আজ দোল উৎসব। বাড়িতে নিয়ে আসার পর পিচ্চিটাকেও দেখিনি। যাইহোক দুপুরে লুকিয়ে আসতে হয়নি, সবাইকে জানিয়েই বাস ধরতে গিয়েছিলাম। বাসটা নেই, জানা গেল পরের বাসটা রাত ১১টায়। অগত্যা কি আর করা, আবার অফিস। সামহোয়ারে বসে জানতে পারলাম জেবতিক ভাইয়ের "তাকে ডেকেছিল ধূলিমাখা চাঁদ" যাযাবর ভাইয়ের হাতে পৌঁছে গেছে অথচ ঘরের কাছে আমার দেশে পৌঁছয়নি। মেজাজ যত না গরম হল তার চাইতে ভয় হল বেশী। যদি বইটা পোস্ট অফিসেই গায়েব হয়ে যায়! ভীষনভাবে পেতে চাইছিলাম ওটা। খানকতক গাল পারলাম ভারতীয় ডাক ব্যাবস্থাকে। আগেও আমার অনেক কিছু হারিয়েছে।
দুপুরেই চলে যাব বলে মাসিকে বলে রেখেছি রাতে রান্নার প্রয়োজন নেই। সুতরাং কড়া মশলা দেওয়া নুনপোড়া তরকারি সহযোগে হোটেলের ভাত। কিছুক্ষন পরই বাইরের তুলনায় পেটের বায়ুর চাপ বৃদ্ধি এবং মাঝে মাঝে দেশী পেটোর আওয়াজ। হায় ভগবান, বাসে আজকে প্রেস্টিজ থাকবেনা। ১১টার বাস এলো ১২.১৫ তে। ততক্ষনে মহিলা মশারা একা পেয়ে আমার যথেষ্টই খিদমত করেছেন। বাসের ভিতরেও রেহাই নেই। কোন রকম বিধ্বস্ত অবস্থায় ভোরে পৌঁছলাম বাড়ির চল্লিশ কিলোমিটার দুরের শহরে। জানা গেল এই বাস আজকে আর বেশী দুর যাওয়ার পারমিশন পায়নি। পরের বাসে পৌছে দেওয়া হবে। পাক্কা এক ঘন্টা। এদিকে সকালে আমার টয়লেট না গেলে মুশকিল। সারা দিনে ঐ একবারই যাই। বাসস্ট্যান্ডের টয়লেটে যাওয়া আর সরাসরি টয়লেটের ট্যাঙ্কে যাওয়া সমান।
যাই হোক, একগাদা বিরক্তি আর ক্লান্তি নিয়ে ভোর সোয়া ছয়টায় বাড়ি পৌঁছলাম। পিচ্চি আর পিচ্চির মা বাবা ঘুমোচ্ছে। ডাকিনি আর, সারারাত ঘুমোতে পারেনা এমনিতেই। সোজা বাথরুম। প্রাতকৃত্য, স্নান সেরে মায়ের ঘরে ঢুকেছি। মনে একটা অদ্ভুত আনন্দ ছেয়ে গেল। মায়ের হারমোনিয়াম টার ওপর একটা প্যাকেট রাখা। বুকপোস্ট। শুভেচ্ছা সহ জেবতিক ভাইয়ের স্বাক্ষর করা "তাকে ডেকেছিল ধূলিমাখা চাঁদ"।
(অচুদা, বেশী প্রশংসা করতে পারিনা তবে আপনাকে কখনো ভুলবো না। অনেক ধন্যবাদ। এবার কৌশিকদার অপেক্ষায় আছি)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০০৮ সকাল ১০:৪১