somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারী পুরুষের নামাযের পার্থক্য

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নারী পুরুষের নামাযের পার্থক্য

ভূমিকা

بسم الله الرحمن الرحيم

نحمده ونصلى على رسوله الكريم আল্লাহ তায়ালা তার সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে মানব জাতিকে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত জাতি হিসাবে সৃষ্টি করেছেন এবং বিশেষ উদ্দেশ্যে এ জাতিকে নারী-পুরুষ দু ভাগে বিভক্ত করে, যার জন্য যা সমীচিন মনে করেছেন তা তার জন্য নির্ধারণ করেন। যেমন, নারীদের জন্য ঘরে অবস্থান, ঘর সাজানো, সন্তান ধারণ করা, সন্তান প্রসব করা, সন্তান প্রতিপালন, তাদেরকে দুধ পান করানো, স্বামী-সন্তানদের দেখাশোনা করা, রান্না-বান্না প্রভৃতি অভ্যন্তরীন কাজকর্ম নির্ধারণ করেছেন। পক্ষান্তরে পুরুষদের জন্য বাহিরের কষ্টসাধ্য ঝুকিপূর্ণ, কঠিন ও শক্ত কাজ কর্ম নির্ধারণ করেছেন।

নারী-পুরুষ উভয় জাতি মানুষ ও শরিয়াতের মুকাল্লাফ হওয়া হিসাবে এক হলেও উভয়ের মাঝে শারিরীক অবকাঠামো, মনমানসিকতা, শক্তি সামর্থ , দাযিত্ত্ব ও কর্তব্য প্রভৃতি গত বিস্তর ফারাক রয়েছে।

নারী-পুরুষ সৃষ্টিকর্তার দুটি পৃথক সত্তা, পৃথক সত্তার পৃথক কাজ, পৃথক গন্ডি, পৃথক পদ্ধতি ও দায়িত্ব থাকাটাই স্বাভাবিক ও যুক্তিযুক্ত।

এই দৃষ্টিভঙ্গিকেই বলা হয়েছে যে, الرجال قوامون على النساء بما فضل الله بعضهم على بعض و بما انفقوا من اموالهم অর্থাৎ পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্ত্বশীল, এজন্য যে আল্লাহ তায়ালা একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট দান করেছেন। এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। (সূরা নিসা : ৩৪)

ইসলামে নারীদের পর্দা ও সতর রক্ষার গুরত্ত্ব অপররিসীম। এজন্য ইসলামের প্রতিটি বিধি-বিধান এর ক্ষেত্রে পর্দার প্রতি বিশেষ গুরুত্ত্ব আরোপ করা হয়েছে।

উদাহরণ স্বরূপ, হজ্জের ক্ষেত্রে নারীদেরকে পুরুষদের চেয়ে ভিন্ন এমন পদ্ধতি অবলম্বন করে হজ্জব্রত পালন করতে বলা হয়েছে যা তাদের পর্দা ও সতরের রক্ষার অধিক সহায়ক । যেমন, সেলাইকৃত কাপড় পরিধান করা, সায়ী করার সময় সবুজ নিশানাদ্বয়ের মাঝে না দৌড়ানো, তাওয়াফে রমল না করা ইত্যাদি।

নামাযের মত মহান ইবাদাতে উক্ত বিষয়টি বিবেচনায় রেখে রুকু, সিজদা, তাকবীরে তাহরীমা, জলসা সহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে নারীদেরকে সংকুচিতপূর্ণ এমন পদ্ধতিতে নামায আদায়ের কথা বলা হয়েছে যা তাদের পর্দা ও সতর রক্ষার অধিক সহায়ক।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, তথাকথিক লা মাযহাবী গায়রে মুকাল্লিদ ভাইগণ এই অনস্বীকার্য বাস্তবতাকে (যা নবী সা. এর যুগ থেকে অবিচ্ছিন্ন ধারায় সর্বজন স্বীকৃত সরূপ চলে আসছে) অস্বীকার করে নারী -পুরুষের নামায আদায়ের পদ্ধতি এক ও অভিন্ন নব স্লোগানের মধ্য দিয়ে কোমলমতি দ্বীনদার নারীদেরকে সংশয়ের সম্মুখীন করে দিচ্ছে; যা মোটেও কাম্য নয়।

নাজুক এ সময়ে মুসলিম উম্মাহকে ইসলাম নির্দেশিত সঠিক পদ্ধতিতে নামায আদায় করার পথ প্রদর্শণের জন্যই আমার ক্ষুদ্র প্রয়াস।

পরিশেষে কিতাবটি সংকলনে যারা আমাকে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করেছেন ও উৎসাহ যুগিয়েছেন; তাদের সকলকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও মুবারকবাদ জানাই। আল্লাহ তায়ালা তাদের সকলকে জাযায়ে খায়ের দান করুন। আমীন।

এছাড়া কিতাবটি ত্র“টিমুক্ত করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়েছে। মানুষ সীমিত জ্ঞানের অধিকারী। । আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, وم اوتيتم من العلم الا قليلا. তোমাদেরকে অল্প জ্ঞানই দেওয়া হয়েছে। (সূরা বনী ইসরাইল : ৮৪) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে - ولو كان من عند غير الله لوجدوا فيه اختلافا كثيرا - কোরআন যদি আল্লাহ ব্যতীত অপর কারও পক্ষ থেকে হত, তবে তাতে অবশ্যই বহু বৈপরিত্য দেখতে পেতে। (সূরা নিসা : ৮২)

ইমাম শাফেয়ী রহ . বলেন, ابى الله ان يكون كتاب صحيحا غير كتابه
আল্লাহ তায়ালা কোরআন ব্যতীত অপর কোন কিতাবের বিশুদ্ধতা নাকোচ করে দিয়েছেন। (কাশফুল আসরার-১৯)

জ্ঞানের দূর্বলতা ও মুদ্রণ জনিত ত্র“টি-বিচ্যুতির কারণে এ কিতাবে কোন আক্ষরিক কিংবা তাথ্যিক ভুল ত্র“টি দৃষ্টিগোচর হলে সহৃদয়ে পাঠক বৃন্দ আমাকে জানালে পরবর্তী সংস্করণে তা কৃতজ্ঞতার সাথে সংশোধনের চেষ্টা করব। ইনশাআল্লাহ।













بسم الله الرحمن الرحيم
ইসলাম ধর্মে ঈমানের পর নামাযের গুরুত্ব অপরিসীম। নামায এমন একটি ইবাদাত যা পত্যহ পাঁচবার আদায় কররে হয়। আর অন্যান্য ইবাদত গুলোর অধিকাংশই প্রত্যহিক নয়।
নামাযের গুরুত্ত্ব সম্পর্কে হাদীসে এসেছে -
عن عمر رض قال قال رسول الله صلى الله عليه الصلوة عماد الدين. (رواه ابو نعيم فى الحلية و هو حديث حسن - الجامع الصغير ২/১২০)

অর্থ ঃ নামায দ্বীন ইসলামের খুঁটি স্বরুপ। অর্থাৎ মুসলমানের দায়িত্ব থেকে নামাযের যিম্মাদারী আদায় হওয়া এবং পরকালে প্রতিদান পাওয়ার যোগ্য হতে হলে ইসলাম নির্দেশিত সঠিক পদ্ধতিতে নামায আদায় একান্ত জরুরী।

এ ক্ষেত্রে নামাযের মৌলিক বিষয় তথা আহকাম আরকান, একাগ্রতা, একনিষ্ঠতা, ও খোদাভীরুতা ইত্যাদি বিষয়ে নারী-পুরুষের নামাযের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। তবে পার্থক্য রয়েছে শুধু আদায়ের পদ্ধতিতে। যে পদ্ধতিগুলোর প্রতি যতœবান না হলে ইসলাম নির্দেশিত সঠিক পদ্ধতিতে নামায আদায় করার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাড়াবে।

নিম্মে পুরুষ ও মহিলার নামাযে কয়েকটি পার্থক্য তুলে ধরা হলো-
১. তাকবীরে তাহরীমার সময় পুরুষ চাদর হতে হাত বের করে কান পর্যন্ত উঠাবে । মহিলা হাত বের করবে না, বরং হাত কাপরের ভিতর রেখেই কাঁধ পর্যন্ত উঠাবে।
২. তাকবীরে তাহরীমা বলে পুরুষ নাভীর নিচে হাত বাঁধবে। আর মহিলা বুকের উপর হাত বাঁধবে।
৩. পুরুষ হাত বাঁধার সময় ডান হাতের বৃদ্ধা ও কনিষ্ঠা আঙ্গুল দ্বারা হালকা বানিয়ে বাম হাতের কব্জি ধরবে। এবং ডান হাতের অনামিকা, মধ্যমা ও শাহাদাত আঙ্গুল বাম হাতের কালাইর উপর বিছিয়ে রাখবে। আর মহিলা শুধু ডান হাতের পাতা বাম হাতের পাতার টিঠের উপর রেখে দিবে। কব্জি ধরবে না।
৪. রুকু করার সময় পুরুষ এমনভাবে ঝুঁকবে যেন মাথা, পিঠ ও কোমর বরাবর থাকে। আর মহিলা এই পরিমাণ ঝুঁকবে যাতে হাত, হাঁটু পর্যন্ত পৌছে।
৫. রুকুর সময় পুরুষ হাতের কুনুই পাঁজর হতে ফাঁক করে রাখবে। আর মহিলা কনুই পাঁজরের সাথে মিলিয়ে রাখবে।
৬. সিজদার সময় পুরুষ পেট উরু হতে এবং বাজু বগল হতে পৃথক রাখবে। আর মহিলা পেট উরুর সাথে এবং বাজু বগলের সাথে মিলিয়ে রাখবে।
৭. সিজদার সময় ুরুষ উভয় হাতের কনুই মাটি হতে ফাঁক করে উঁচু করে রাখবে। পক্ষান্তরে মহিলা কনুই মাটির সাথে মিলিয়ে রাখবে।
৮. সিজদার সময় পুরুষ পায়ের আঙ্গুলগুলো কেবলার দিকে ফিরিয়ে রেখে তার উপর ভর দিয়ে পায়ের পাতাদ্বয় খাড়া করে রাখবে। পক্ষান্তরে মহিলা উভয় পায়ের পাতা ডানদিকে বের করে মাটিতে বিছিয়ে রাখবে।
৯. বসার সময় পুরুষ ডান পায়ের আঙ্গুলগুলো কেবলার দিকে ফিরিয়ে তার উপর ভর করে ডান পায়ের পাতা খাড়া রাখবে এবং বাম পায়ের পাতা বিছিয়ে তার উপর বসবে। পক্ষান্তরে মহিলা পায়ের পাতার উপর বসবে না বরং নিতম্ব মাটিতে লাগিযে বসবে এবং উভয় পায়ের পাতা ডান েিদকে বের করে দিবে। আর ডান রান বাম রানের উপর এবং ডান নলা বাম নলার উপর রাখবে ।
১০. মহিলাদের জন্য আযান, ইক্বামত, ইমামতি, জুমআ ও ঈদের নামায নেই। তাছাড়া উচ্চস্বরে ক্বিরাত পড়া ও তাকবীর বলার অনুমতি নেই। মহিলারা সর্বদা নামাযের ক্বিরাত নিঁচু স্বরে পড়বে।

পুরুষ মহিলার নামযের মাঝে উপরোল্লিখিত পার্থক্যগুলো সহজেই অনুমেয় ও সর্বজনস্বীকৃত ও সহীহ হাদীসের আলোকে প্রমাণিত। কিন্তু তথাকথিত লা মাযহাবী , গাইরে মুকাল্লিদ ভাইগণ এই পার্থক্য মেনে নিতে রাজি নন।
তাই এ ব্যাপারে সহীহ হাদীসের আলোকে কিছুটা আলোচনা পর্যালোচনা, বিভিন্ন মতামত ও তার জবাব তুলে ধরার চেষ্ট করব । ইনশাআল্লাহ।

হাদিসের আলোকে নারী পুরুষের নামাযের পার্থক্য

পুরুষ-মহিলার নামায আদায়ের পদ্ধতি ভিন্ন হওয়ার ব্যাপারে একাধিক মারুফু হাদিস বর্ণিত আছে। বিস্তারিত সনদ সহ নিুে উল্লেখ করা হলো -
(১) قال الامام ابوداؤد رح فى كتاب المراسيل له انبأنا ابن وهب عن حيوة بن شريح عن سالم بن غيلان عن يزيد بن ابى حبيب ان رسول الله صلى الله عليه وسلم مر على امرأتين تصليان ، فقال : اذا سجدتما فضما بعض اللحم الى الارض ، فان المرأة ليست فى ذلك كالرجل.
اخرجه الامام البيهقى ايضا فى سننه الكبرى ৩/৭৫ و قال هو حديث مرسل و هو احسن من موصولين فى هذا الباب .
তাবেয়ী ইয়াযিদ ইবনে আবী হাবীব রহ. বলেন, নবী করীম স. নামাযরত দুই মহিলার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি তাদেরকে (সংশোধনের জন্য) বললেন, যখন তোমরা সিজদা করবে শরীর জমীনের সাথে মিলিয়ে জড়সড় হয়ে সিজদা করব,ে কেননা এক্ষেত্রে মহিলারা পুরুষদের মতো নয়।
(কিতাবুল মারাসিল, ইমাম আবু দাউদ৮, বাইহাকী শরীফ ৩/৭৫)

উক্ত হাদিস থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয় যে, সিজদার ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলার বিধান এক নয়।
আলোচ্য হাদিস সম্পর্কে গায়রে মুকাল্লিদ ভাইদের উত্থাপিত আপত্তি ও তার জবাব :

আলোচট্য হাদিস সম্পর্কে আমাদের গায়রে মুকাল্লিদ ভাইদের অন্যতম মুখপাত্র আল্লামা নাছিরুদ্দীন আলবানী সাহেব তার লিখিত صفة صلوة النبي صلى الله عليه و سلم من التكبير و الى التسليم كانك تراه নামক গ্রন্থের ২০৭ পৃষ্ঠায় প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, এট (আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত হাদিস) মুরসাল হাদিস, যা দলীল যোগ্য নয়।

আমাদের বক্তব্য : প্রথমে জানা আবশ্যক যে উপরোক্ত মুরসাল হাদিসটি ইয়াযিদ ইবনে আবী হাবিক এর সুত্রে বর্ণিত হয়েছে। যিনি قرون ثلاثة তথা স্বর্ণযুগের ইমামদের মধ্যে অন্যতম ইমাম হওয়ার পাশাপাশি যিনি বিশ্বস্ততা ও নির্ভরযোগ্যতার সর্বোচ্চ শিখরে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। মিসরের মুফতী হিসেবেও খ্যাতি অর্জণ করেছিলেন।

হাফেজে হাদিস ইমাম শামসুদ্দীন যাহাবী রহ. তার সম্পর্কে বলেন, তার হাদিস সর্ব সম্মতিক্রমে দলীল হওয়ার যোগ্য। তার ভাষায় -
يزيد بن ابى حبيب الامام الحجة مفتى الديار المصرية و هو من صغار التابعين ارتفع بالتقوى و مجمع على الاحتجاج
(ইয়াযিদ ইববে আবী হাবিব ছিলেন একজন ইমাম, মিসরের মুফতী, তাবেয়ী, খোদভীতির সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণকারী এবং বিরল ব্যক্তিত্বের অধিকারী, যার হাদিস দলীল হওয়ার ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই। (সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৬/২০৭)

উপরোক্ত বক্তব্য থেকে প্রমাণিত হয়ে যে, ইয়াযিদ ইবনে আবী হাবিব তাবেয়ী ছিলেন। হাদিসের উসূল (মূলনীতি) অনুযায়ী তাবেয়ীর মুরসাল হাদিস গ্রহণযোগ্য। যেমন ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী রহ. এর ভাষায় -
محل قبول المرسل عند الحنفية ما اذا كان مرسله من اهل القرون الثلثة الفاضلة.
অর্থাৎ হানাফীদের মতে মুরসাল হাদিস তখনই গ্রহনযোগ্য হবে, যখন মুরসিল তথা উক্ত হাদিস বর্ণনাকারী স্বর্নযুগের হবেন। (তাদরীবুর রাবী, ১৬১)

ইবনুল হাম্বলী রহ. এর ভাষায় -
المختار فى التفصيل قبول مرسل الصحابى اجماعا و مرسل اهل القرون الثلثة عند الحنفية ومالك مطلقا و عند ا لشافعى رح باحد الامور الثلاثة.
অর্থাৎ বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী ছাহাবায়ে কিরাম থেকে বর্ণিত মুরসাল হাদিস সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণযোগ্য আর স্বর্ণযুগের ইমামগণের মুরসাল হাদিস ইমাম আবু হানিফা রহ. ও ইমাম মালিক রহ. এর মতে নিঃশর্তে এবং ইমাম শাফেয়ী রহ. এর মতে পাঁচটি শর্তের কোন এক শর্ত সাপেক্ষে গ্রহণযোগ্য। (কুফুল আছার -১৪)

সর্বোপরি মুরসাল হাদিসের সমর্থনে যখন কোন مرفوع ও موقوف হাদিস সহ عمل السلف তথা পূর্বসূরীদের আমল ও سنة متوارثه তথা অবিচ্ছিন্ন পদ্ধতি বিদ্যমান থাকে তখন তা সর্ব সম্মতিক্রমে গ্রহনযোগ্যতা লাভ করে। যেমন লা মাযহাবী ভাইদের অনুসৃত ব্যাক্তি ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. এর ভাষায় ,
المرسل الذى له ما ن يوافقه او الذى عمل به السلف حجة باتفاق العلماء .
অর্থাৎ যে মুরসাল হাদিসের সমর্থনে কোন রেওয়ায়েত কিংবা পূর্বসুরীদের আমল বিদ্যমান থাকে তা সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহনযোগ্য।
(মাজমুয়া ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া-২৩/২৭১, মিনহাজ -৪/১১৭)
আমাদের আলোচ্য মুরসাল হাদিসটির সমর্থণেও মারফু ও মাওকুফ হাদিস সহ علم السلف ও سنة متوارثه বিদ্যমান রয়েছে। (যার আলোচনা সামনে আসবে।) সুতরাং এটিও গ্রহনযোগ্য।

প্রিয় পাঠক ! আলোচ্য মুরসাল হাদিসটি শুধু হানাফীরে মূলনীতি অনুসারে নয় বরং সকল ইমামগণেল মূলনীতি অনুসারে দলীল হওয়ার যোগ্য। স্বয়ং লামাযহাবী গায়রে মুকাল্লিদ ভাইদের এক সময়ের মুখপাত্র প্রখ্যাত মুহাদ্দিস নওয়াব সিদ্দিক হাসান খান কুনুযী রহ. ও অকপটে স্বীকার করেছেন। তার পূর্ণ বক্তব্য নিুরুপ -

فمن يرى المرسل حجة و هو ومذهب الى حنيفة و مالك فى طائفة و الامام احمد فى المشهور عنه ، فحجتهم المرسل المذكور و من لا يرى المرسل حجة كالشافعى رح و جمهور المحدثين فناعتضاد كل من الموصول و المرسل بالآخر و حصول القوة من الصورة المجموعة قال فى فتح البارى وهذا مثال لما ذكره الشافعى رح من ان المرسل يعتضد بمرسل آخر او مسند - كذا فى عون البارى ২/১৫৯ ، طبع دار الرشيد)

মোদ্দাকথা হল, বক্ষমান নিবন্ধে যে মুরসাল হাদিস সম্পর্কে আলোচনা চলছে, তা সর্বসম্মতিক্রমে দলীল হওয়ার যোগ্য। সুতরাং এটাকে দলীল হওয়ার অযোগ্য বলাটা হবে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

(১) এখানে আরও একটি বিষয় লক্ষণীয়। আর তা হলো, স্বয়ং আলবানী সাহেব صلة التراويح নামক গ্রন্থের ৫ পৃষ্ঠায় তারাবীর নামায জামাতের সাতে আদায় করা প্রসঙ্গে ثعلبة بن ابى مالك القرظى এর মুরসাল রেওয়ায়েত দ্বারা দলীল পেশ করেছেন এবং তার شواهد (সমর্থণ) হিসাবে আবু দাউদ শরীফের একটি ضعيف روايت (দূর্বল বর্ণনা) উল্লেখ করেছেন। (যে রেওয়ায়েত সম্পর্কে ইমাম আবু দাউদ রহ. এর ভাষ্য হল -
ليس هذا الحديث بالقوى ، مسلم بن خالد ضعيف ، ১/১৯৫
কিন্তু আলবানী সাহেব তা উল্লেখ করেন নি । অথব একজন নিষ্ঠাবান আলেমের প্রথম দায়িত্ব হল নকল (উদ্ধৃতি) এর ক্ষেত্রে আমানত দারিতার পরিচয় দেওয়া।


আল্লামা যাহেদ কাওসারী রহ. এর ভাষায় -
اول ما يجب على العالم الامانة فى النقل، مقالات كوثوى ৩৮
সুতরাং এর দ্বারা কি নকল এর ক্ষেত্রে তার علمى خيانت প্রমাণিত হয় না? যাই হোক। আলবানী সাহেবের উছূল অনুযায়ী মুরসাল রেওয়ায়েতের সমর্থণে একটি মাত্র দূর্বল বর্ণনা থাকায়ই যদি তা প্রমাণযোগ্য হয়, তাহলে বক্ষমান প্রবন্ধে যে মুরসাল রেওয়ায়েত সম্পর্কে আলোচনা চলছে (অর্থাৎ সিজদা অবস্থায় নারীদের সংকুচিত হওয়া সম্পর্কিত আবু দাউদ শরীফের মুরসাল রেওয়ায়েত) এর সমর্থনেও مرفوع ، موقوف এবং عمل متوارث বিদ্যমান রয়েছে। সুতরাং এটি প্রমাণযোগ্য ও গ্রহনযোগ্য হওয়া উচিত।

বস্তুত যয়ীফের ভিত্তিতে মুরসাল বর্ণনা গুলোকে প্রমাণ অযোগ্য বলা মানে হাদিসে নববীর এক বিরাট অংশকে বাদ দিয়ে দেয়া, যা মোটেও ঐ সব লোকদের জন্য সমীচীন নয় যারা নিজেদেরকে হাদিসের ধারক-বাহক ও আমলকারী বলে দাবী করে। তাদের জন্য করণীয় হলে হাদিস নববীর বিশাল ভান্ডার থেকে খুঁজে খুঁজে হাদিস বের কর ও তদানুযায়ী আমল কর।

আল্লাম আবদুল আযীয় আল বুখারী রহ. (মৃত্যু ৭৩০ হিজরী) এ প্রসঙ্গে যথার্থই বলেছেন,
فى رد المرسل تعطيل كثير من السنن ، فان المرسيل قد جمعت فبلغت قريبا من خمسين جزأ و هذا شنيع عليهم ، اصحاب الحديث - فانهم سموا انفسهم اصحاب الحديث و انتصبوا لحيازة الاحاديث والعمل بها ثم ردوا منها ما هو اقوى اقسامها مع كثرته فى نفسه ، فكان هذا تعطيل للسنن و تضييعا لها لا حفظا لها.
অর্থাৎ মুরসাল রেওয়ায়েত ঢালাওভাবে প্রমাণের অযোগ্য বলা মানে হাদিসের বিরাট অংশ বাদ দিয়ে দেওয়া। কেননা মুরসাল রেওয়ায়েত একত্রিত করার পর তা ৫০ খান্ডে পূর্ণ হয়। আসহাবে হাদিস বলে দাবিদার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বড় একটি অভিযোগ এই যে, তারা নিজেদেরকে আসহাবে হাদিস এবং হাদিসের সংরক্ষক ও তদানুযায়ী আমলকারী দাবী করা সত্ত্বেও এমন হাদিস (মুরসাল হাদিস) প্রত্যাখান করে যার আকসান (প্রকার) অত্যন্ত শক্তিশালী ও সংখ্যায় অকে বেশী। সুতরাং এর দ্বারা হাদিসের সংরক্ষণ নয় বরং বিলুপ্তিই ঘটে।
(কাশফুল আসরার-৩/১৩-১৪)



(২) ورى البيهقى فى السنن الكبرى ৩/৭৪ بسنده عن ابى مطيع الحكم بن عبد الله البلخى عن عمربن ذر عن مجاهد عن عبد الله بن عمر قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : اذا جلست المرأة فى الصلوة وضعت فخذها على فخذها الآخر و اذا سجدت الصقت بطنها فى فخذيها كاستر ما يكون لها ، وان الله تعالى ينظر اليها يقول يا ملائكتى اشهدكم انى قد غفرت لها.

অর্থাৎ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সা. বলেন, স্ত্রীলোক যখন নামাযের মধ্যে বসবে তখন এক উরু অন্য উরুর উপর রাখবে এবং যখন সিজদা করবে তখন পেট উভয় উরুর সাথে এমনভাবে মিলিয়ে রাখবে যাতে সতরের পূর্ণ হেফাযত হয়। আল্লাহ তায়ালা সেই স্স্রীলোকের দিকে তাকিয়ে ফেলেশতাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, হে আমার ফেরেশতারা ! তোমরা সাক্ষী থাক। আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম।
(বাইহাকী শরীফ- ৩/৭৪)

সনদ পর্যালোচনা : আলোচ্য হাদিসে বর্ণনাকারীদের মধ্যে একজন হলেন, فقه الاكبر গ্রন্থের রচয়িতা এবং ইমাম আবু হানিফার বিশিষ্ট শাগরিদ আবূল মুতী হাকাম ইবনে আবদুল্লাহ রহ. তার সম্পর্কে হাদিস শাস্ত্রবিদগণের মন্তব্য নিুরুপ -
كان مرجئا صالحا فى الحديث الا ان اهل السنة امسكوا عن الرواية عنه -
তিনি (আবুল মুতী) মুরজিয়া ও হাদিসের ক্ষেত্রে ছালিহ (উপযুক্ত) ব্যক্তি ছিলেন। তাবে হাদিসের ধারক-বাহক ব্যক্তিগণ তার থেকে বর্ণনা করতে বিরত থেকেছেন। (লিসানুল মিযান, ৩/২৪৮)

আমাদের বক্তব্য : উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আবুল মুতী মুরজিয়া ছিলেন। তবে এটাও প্রমাণিত হয় যে, ইমাম আবু হানিফা রহ. ও তার শিষ্যত্ব গ্রহণকারীদেরকে মুরজিয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর দ্বারা مرجئة اهل السنة উদ্দেশ্য। مرجئة الضللة উদ্দেশ্য নয়।

আল্লামা শাহরাস্তানীর নিুোক্ত বক্তব্যই এর প্রমাণ বহন করে -
ومن العجب ان غسان كان يحكى عن ابى حنيفة مثل مذهبه و يعده من المرجئة ، ولعله كذب عليه و لعمرى كان يقال لابى حنيفة رواصحابه مرجئة السنة.

অর্থাৎ, বিস্ময়কর ব্যাপার হল, গাসসান ইমাম আবু হানিফা থেকে নিজের মতের অনুরূপ মত উল্লেখ করা সত্ত্বেও তাকে (আবু হানিফা রহ.) কে মুরজিয়া বলে অভিযুক্ত করেছেন। এবং তার ব্যাপারে মিথ্যাচার করেছেন।

আমার জীবনের শপথ ইমাম আবু হানিফা ও তার সাথীদেরকে مرجئة السنة বলা হয়।
(আল মিলাল ওয়াল নিহাল - ১/১২৬)

সর্বোপরি দ্বীনের অনেক উলামায়ে কিরাম ارجاء মত পোষণ করতে। রিজাল শাস্ত্রবিদগণের অন্যতম ব্যক্তিত্ত্ব আল্লামা শামসুদ্দীন যাহাবী রহ. এর ভাষায় -
الارجاء مذهب ابى حنيفة لعدة من اجلة العلماء ولا ينبغى التحامل على قائلة
বড় বড় অনেক উলামা ‘মুরজিয়া’ মতাদর্শী ছিলেন। তাই বলে তাদের সমালোচনা করা কিছুতেই সমীচীন হবে না।
(মিযানুল ইতেদাল-৬/৪০৯)

সুতরাং আলোচ্য হাদিসটি সিজদার ক্ষেত্রে পুরুষ মহিলার বিধান ভিন্ন হওয়ার ব্যাপারে দলীল হওয়ার যোগ্য।

(৩) روى الطبرانى عنم محمد بن عبد الله الحضرمى قال حدثتنى ميمونة ببت حجر بن عبد الجبار بن وائل بن حجر قالت سمعت عمتى ام يحيى بنب عبد الجبار عن ابيها عبد الجبار عن علقمة عمها عن وائل بن حجر قال : جئت النبى صلى الله عليه و سلم فقال : يا وائل بن حجر ! اذا صليت فاجعل يديك حذاء اذنيك والمرأة تجعل يدها حذاء ثدييها. -

قال نور الدين الهيثمى فى مجمع الزوائد ومنبع الفوائد - ২/১০৩ ، رواه الطبرانى فى حديث طويل فى مناقب وائل من طريق ميمونة بيت عبد الجبار عن عمتها ام يحيى بنت عبد الجبار ولم اعرفها و بقية رجاله ثقات - انتهى

অর্থাৎ হযরত ওয়ায়েল ইবনে হুজর রহ. থেে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল সা. এর নিকট হাজির হলে, তিনি আমাকে বলেন, হে ওয়ায়েল ! নামাযে তুমি উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠাবে আর মহিলারা উঠাবে স্তন পর্যন্ত।
(আল মুজামুল কাবীর, তাবারানী- ৯/১৪৪)


সনদ পর্যালোচনা : আল্লামা নূরুদ্দীন আল হাইছামী রহ. এর ভাষ্য অনুযায়ী আলোচ্য হাদিসের প্রত্যেক রাবী (বর্ণনাকারী) বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য। শুধু উম্মে ইয়াহইয়া বিনতে আবদুল জাব্বার ব্যতীত। তার সম্পর্কে তিনি বলেন, لم اعرفها ‘আমি তার সম্পর্কে কিছু জানি না।’

আমাদের বক্তব্য : উম্মে ইয়াহইয়া হয়ত তাবেয়ী হবেন, অথবা তাবে-তাবেয়ী। তার কিছু পরিচয় সনদেও বিদ্যমান রয়েছে। রিজাল শাস্ত্রের গ্রন্থসমূহ হতে তার সম্পর্কে এর চেয়ে অন্তত আমি পাইনি। উসূলে হাদিসের পরিভাষায় এই পর্যায়ের ব্যাক্তিদেরকে مستور বলে। আর قرون ثلاثة তথা স্বর্ণযুগের মাসতুর পর্যায়ের ব্যাক্তিদের হাদিস দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য। যেমন হাফেজ সাখাভী রহ. বলেন,
ولذا قال بعض الحنفية المستور فى زماننا لا يقبل لكثرة الفساد و قلة الرشاد وانما كان مقبولا فى زمن السلف الصالح.

কতিপয় হানাফী আলেম বলেন, আমানতদারিতার স্বল্পতা ও ফাসাদের আধিক্যের কারণে এই যুগে মাসতুর পর্যায়ের ব্যক্তিদের হাদিস গ্রহণযোগ্য হবে না। অবশ্য স্বর্ণযুগে এমন ব্যক্তিদের হাদিস গ্রহণযোগ্য হত।
(ফাতহুল মুগীস-২/৫৬)

মোল্লা আলী ক্বারী রহ. বলেন,
المستور من الصحابة والتابعين واتباعهم يقبل بشهادة عليه السلام بقوله خير القرون قرنى ثم الذين يلونهم ثم الذين يولنهم ، وغيرهم لا يقبل الا بقوفيق
অর্থাৎ স্বর্ণযুগের মাসতুর পর্যায়ের ব্যক্তিদের হাদিস গ্রহণ করা হবে। কেননা রাসূল সা. এর বাণী তাদের শ্রেষ্ঠত্বের সাক্ষ্য বহন করছে। তবে পরবর্তী যুগের এমন ব্যক্তিদের হাদিস তাহকীক করা ব্যতীত গ্রহণযোগ্য হবে না। (শরহে শরহে নুখবা ১৫৫)

প্রিয় পাঠক !
উপরোক্ত মারফু হাদিসগুলো দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয় যে, নামাযে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে পুরুষ-মহিলার পদ্ধতিগত পার্থক্য পরিলক্ষিত না হলেও রুকু-সিজদা সহ বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে উভয়ের পদ্্যধতি গত পার্থক্য রয়েছে। বিশেষত ২ নং হাদিসে মহিলাদেরকে এমন পদ্ধতি অবলম্বন করে নামায পড়তে বলা হয়েছে যা তাদের সতর রক্ষার জন্য অধিক উপযোগী। সুতরাং মহিলারা এমন পদ্ধতিতেই নামায আদায় করবে যা তাদের সতর রক্ষার জন্য অধিক সহায়ক হয়।

পক্ষান্তরে হাদিসের বিশাল ভান্ডারে উপরোক্ত হাদিসগুলোর সাথে বিরোধপূর্ণ এমন কোন হাদিস পাওয়া যাবে না , যেখানে স্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে যে উভয়ের পদ্ধতি এক ও অভিন্ন।

সাহাবায়ে কেরামের বক্তব্যের আলোকে পার্থক্য

সাহাবায়ে কেরাম রা. অকপটে স্বীকার করেছেন যে, নামযে কোন কোন ক্ষেত্রে মহিলাদের পদ্ধতি পুরুষদের পদ্ধতির চেয়ে ভিন্ন। তারা হয়ত নবীয়ে করীম সা. এর যুগে নারীদেরকে তাদের থেকে বর্ণিত পদ্ধতি অনূসারে নামায আদায় করতে দেখেছেন। কিংবা রাসুল সা. এর মুখ থেকে নারী-পুরুষের নামায আদায়ের পদ্ধতিগত পার্থক্যের কোন ইঙ্গিত পেয়েছেন বিধায় নারীদের জন্য তারা বিশেষ পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেছেন।

নিুে প্রমাণস্বরুপ দু জন সাহাবীর বক্তব্য তুলে ধরা হল -
১. হযরত আলী আবি তালিব রা. বলেন,
قال الامام ابو بكر عبد الله بن ابى شيبة حدثنا ابو الاحوص عن ابى اسحاق عن الحارث عن على قال اذا سجدت المرأة فلتحتفز و لتضم فخذيها - رواه ابن ابى شيبة فى المصنف ، ২/৫০৪ والبيهقى فى السنن الكبرى ، ৩/৭৩ واللفظ له
رجاله رجال الجماعة الا الحارث ، فهو من رجال الاربعة و قد اختلف فيه و وثقه ابن معين ، فالحديث حسن و قول الصحابى حجة عندنا.

হযরত আলী রা. বলেন, মহিলারা যখন সিজদা করবে কথন যে খুব সংকুচিত হয়ে সিজদা করে এবং উরু পেটের সাথে মিলিয়ে রাখে।
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা - ২/৫০৪, বাইহাকী - ৩/৭৩)
২। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন,

قال الامام ابو بكر عبد الله بن ابى شيبة حدثنا ابو عبد الرحمن المقرى عن سعيد بن ابى ابوب عن يزيد بن ابى حبيب عن بكير بن عبد الله بن الاشج عن ابن عباس انه سئل عن صلوة المرأة ، فقال : تجتمع و تحتفز- رواه ابن ابى شيبة فى المصنف - ২/৫০৫ ، ورجاله ثقات .
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. কে মহিলাদের সিজদার পদ্ধতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, খুব সংকুচিত হয়ে এবং এক অঙ্গ অপর অঙ্গের সাথে মিলিয়ে সিজদা করবে।
(আল মুসান্নাফ -২/৫০৫) প্রাগুক্ত।

উপরোক্ত সাহাবীদের দু্িট বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মহিলারা সিজদায় পুুরুষদের বিপরীত খুব সংকুচিত হয়ে এ অঙ্গ অপর অঙ্গের সাথে মিলিয়ে সিজদা করবে। পক্ষান্তরে কোন একজন সাহাবী থেকে উক্ত পদ্ধতির বিপরীত কোন পদ্ধতি বর্ণিত হয়নি।

তাবেয়ীগণের বক্তব্যের আলোকে পার্থক্য

আয়িম্মায়ে তাবেয়ীন যারা তারাও সাহাবায়ে কেরাম থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা অনুসারে পুরুষ-মহিলার নামায আদায়ের পদ্ধতি এক না হওয়ার ব্যাপারে মত ব্যক্ত করেছেন। নিুে প্রশিদ্ধ আয়িম্মায়ে তাবেয়ীনদের কিছু বকত্ব্য তুলে ধরা হল -
১। তাবেয়ী হাম্মাদ রহ. এর বক্তব্য :
عن عيسى بن كثير عن حماد نه كان يقول فى المرأة اذا استفتحت الصوة ترفع يديها الى ثديها - رواه ابن ابى شيبة فى المصنف ، ২/৪২১
হাম্মাদ রহ. মহিলাদের ব্যাপারে বলতেন, তারা যখন নাময শুরু করবে, উভয় হাত যেন স্তন (বুক) পর্যন্ত উত্তোলন করে।
(আল মুছান্নাফ লি ইবনে আবী শাইবা- ২/৪২১)
২। আতা ইবনে আবি রাবাহ রহ. এর বক্তব্য :

عن ابن جريج قال قلت لعطاء تشير المرأة بيديها بالتكبير كالرجل ؟ قال : لا ترفع يديها بذلك كالرجل و اشار فخفض يديها جدا و جمعهما اليه جدا و قال ان للمرأة هيئة ليست للرجال- رواه ابن ابى شيبة فى المصنف ر ৪/১২১)

ইবনে জুরাইয রহ. বলেন, আমি হযরত আতা ইবনে আবি রাবাহ রহ. কে জ্ঞিাসা বরলাম , মহিলারা কি তাকবিরে তাহরীমার সমসয় পুরুষদের ন্যায় হাত উত্তোলন করবে? তিনি বললেন, না। অত:পর তিনি নিজে উভয় হাত কিছু উত্তোলন করে এবং নিজের দিকে খুব বেশী ঝুকিয়ে নিয়ে (তাকে দেখিয়ে ) বললেন, মহিলাদের জন্য এমন বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে যা পুরুষের পদ্ধতির চেয়ে ভিন্ন।
(আল মুসান্নাফ লি আবী শাইবা- ২/৪২১)

প্রিয় পাঠক ! আতা রহ. এর উক্তি ان للمرأة هيئة ليتي للرجال (মহিলাদের জন্য এমন বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে যা পুরুষদের থেকে ভিন্ন) দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, নামাযে নারী-পুরুষের আদায়গত পদ্ধতি এক নয়।

৩। ইমাম যুহরী রহ. এর বক্তব্য :
عن الزهرى ترفع المرأة يديها حذو منكبيها .
ইমাম যুহরী রহ. বলেন, মহিলারা (তাকবীরে তাহরীমার সময়) উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাবে।
(আল মুসান্নাফ , প্রাগুক্ত)

৪। আতা ইবনে আবি রাহাব রহ. এর বক্তব্য :
عن هشيم قال اخبرنا شيخ لنا قال سمعت عطاء سئل عن المرأة كيف ترفع يديها فى الصلوة قال حذو منكبيها.

হযরত আতা রহ. কে জিজ্ঞসা করা হল, মহিলারা নামাযে কতটুকু হাত উঠাবে? তিনি বললেন, বুক পর্যন্ত। (প্রাগুক্ত)

৫। উম্মদ দারদা রহ. এর বক্তব্য :

عن عبد ربه بن زيتون قال رأيت ام الدرداء ترفع يديها حذو منكبيها حين يفتتح الصلوة .
আবদে রব্বীহ ইবনে যাইতুন রহ. বলেন, আমি উম্মুদ দারদা কে নামায শুরু করার সময় উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতে দেখেছি। (প্রাগুক্ত)

উল্লেখিত বক্তব্য থেকে এটা প্রমাণিত হয় যে, হাত উঠানোর ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বিধান এক নয় বরং নারীরা পুরুষ অপেক্ষা কম হাত উঠাবে।

৬। ইব্রাহীম নাখয়ী রহ. বলেন,

عن ابراهيم قال اذا سجدت المرأة فلتضم فخذيها و لتضع بطنها عليها .

ইব্রাহীম নাখয়ী রহ. বলেন, মহিলারা যখন সিজদা করবে তখন যেন তারা উভয় উরু পেটের সাথে মিলিয়ে রাখে এবং পেটকে উরুদ্বয়ের উপর রেখে সিজদা করে।
(আল মুসান্নাফ , ২/৫০৫)

৭। ইব্রাহীম নাখয়ী রহ. এর আরেকটি বক্তব্য :

عن ابراهيم قال : اذا سجدت المرزأة فلتلزق بطنها بفخذيها ولا ترفع عجيزتها ولا تجافى كما يجافى الرجل.

ইব্রাহীম নাখয়ী রহ. বলেন, মহিলারা যখন সিজদা করবে, তখন যেন তারা টেপকে উরুদ্বয়ের সাথে মিলিয়ে সিজদা করে এবং পুষদের ন্যায় পেটকে উরু থেকে পৃথক করে সিজদা না করে, যার ফলে কোমর উচু থেকে যায়।
(প্রাগুক্ত)

৮। হযরত হাসান বসরী রহ. বলেন,

عن الحسن قال المرأة تضطم فى السجود

হাসান বসরী রহ. বলেন, মহিলারা জড়সর হয়ে সিজদা করবে। (প্রাগুক্ত।)

৯। মুজাহিদ রহ. বলেন,
عن مجاهد انه كان يكره ان يضع الرجل بطنه على فخذيه اذا سجد كم تصنع المرأة .
মুজাহিদ রহ. পুরুষদের জন্য সিজদায় নারীদের মত উরুদ্বয়ের উপর পেট রাখা অপছন্দ করতেন। (প্রাগুক্ত।)

১০। খালেদ ইবনে লাজলাজ রহ. বলেন,

عن خالد بن اللجلاج قال فساق و فيه و لا يجلسن جلوس الرجال على اوراكهن يتقى ذلك على المرأة مخافة ان يكون منها شيئ.

খালেদ ইবনে লাজলাজ রহ. বলেন, মহিলার পুরুষদের মত যেন নামাযে না বসে। কেননা এতে (পুরুষদের মত বসার ক্ষেত্রে) আবরনযোগ্য কোন কিছু প্রকাশিত হওয়ার আশংকা রয়েছে।
(আল মুছান্নাফ লি ইবনে আবী শাইবা ২/৫০৬)

উপরোক্ত ৬,৭,৮,ও ৯ নং এ বর্ণিত আয়িম্মায়ে তাবেয়ীনদের বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত হয়ে যে, সিজদার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বিধান এক নয়, বরং নারীদের পুরষদের বিপরীত জড়সড় হয়ে সিজদা করার কথা বলা হয়েছে। বিশেষত ৯ নং এ বর্ণিত বক্তব্যে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে উরুদ্বয়ের উপর পেট রেখে সিজদা করার বিধানটি মহিলাদের জন্য, পুরুষদের জন্য নয়।

কিফতে ইসলামীর আলোকে

পূর্বেকার আলোচনা দ্বারা প্রতীয়মান হয়েছে যে, নামাযে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে নারী পুরুষের নামায আদায়ের পদ্ধতি এক ও অভিন্ন হলেও বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে উভয়ের পদ্ধতি এক নয়। এবয় তা হাদিসে নববী ও আছারে সাহাবা- তাবেয়ী দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। এখন উক্ত বিষয়টি ফিকহে ইসলামীর আলোকে প্রমাণ করার চেষ্টা করব। ইনশাআল্লাহ।
তবে তার পূর্বে ফিকহে ইসলামীর প্রয়োজনীয়তা ও গ্রহনযোগ্যতা ও কুরআন-হাদিসের সাথে তার যোগ সূত্র সম্পর্কে আলোচনা করা অতি প্রয়োজন বোধ করছি। যেন আমাদের লা মাযহাবী গায়রে মুকাল্লেদ ভাইয়েরা প্রশ্ন উত্থাপন করতে না পারে যে কুরআন-হাদিস থাকতে ফিকহের প্রয়োজন কি?

একথা সন্দেহাতীত ভাবে সত্য যে, কুরআন ও হাদিসের পরই ফিকহের স্থান। এবং ফিকহ কুরআন-হাদিস থেকে ভিন্ন কিছু নয়। কুরআন ও হাদিস হল শরীয়াতের اصل বা মূল। আর ফিকহ হল এর শাখা-প্রশাখ ও বাস্তব ভিত্তিক ব্যাখ্যা মাত্র। দুধের সাথে ঘি ও মাখনের যেমন সুগভীর সম্পর্ক । কুরআন - হাদিসের সাথে ফিকহের সম্পর্কও অনুরূপ ।

ফিকহের মাধ্যমেই কুরআন-হাদিসের প্রয়োগক্ষেত্র নির্ধারণ হয় ও মুজমাল আহকামের ব্যাখ্য-বিশ্লেষণ সম্ভব হয়। ফিকহ ব্যতীত কুরআন-হাদিসের মর্ম উপলব্ধি করা এবং তা বাস্তবায়ন করা কোনক্রমেই সম্ভব নয়। তাই প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী রহ. বলেন,
কুরআন বুঝা হাদিস বুঝার উপর নির্ভরশীল অনুরুপ ভাবে হাদিস বুঝা ফিকহ বুঝার উপর নির্ভরশীল।

مسائل غير منصوصة তথা যে বিষয়ে কুরআন ও হাদিসে স্পষ্ট কোন বর্ণনা নেই সে সব বিষয়ে ফিকহের আশ্রয় গ্রহণ করা ছাড়া কোন বিকল্প পথই নেই।

কুরআন হাদিসের নস (ভাষ্য) এর উপর পবেষণা করে ফকীহগণ শরয়ী বিধানাবলী استنباط (চয়ন) করে সেগুলোকে ধারাবাহিক ভাবে ফিকহের পূস্তকে সুবিন্যস্ত করেছেন। সর্ব শ্রেণির মানুষের ধর্মীয় জীবন যাত্রাকে সহজ করে তোলার জন্য। কেননা সরাসরি নস এর উপর আমল করা সাধারণ মানুষের জন্য খুবই কঠিন। অনারবদের কথা তো বলাই বাহুল্য। মুজতাহিদ ও ফকীহ ব্যতিত সাধারণ আরবী ভাষা ভাষীদের জন্যও সরাসরি নস থেকে মাসআলা বুঝা ও তদনুযায়ী আমল করা সম্ভব নয়।

তাই সকলের জন্য কত্যর্ব হল সেই সব মুজতাহিদ ও ফকীহদের অবিস্মরণীয় অবদান স্বীকার করা এবং তাদের জন্য দোয়া করতে থাকা । কেননা তারা গোটা মুসলিম জাতির পক্ষ থেকে এমন এক দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়েছেন যা তার না করলে মুসলিম জাতির ধর্মীয় জীকন যাত্রা অচল হয়ে যেত।

মানুষের ব্যস্ততম কর্মময় জীবনের প্রতিটি অঙ্গনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কোন কাজ কিভাবে করতে হবে, তার সঠিক নিয়মনীতি ও পদ্ধতি কি, সে সম্পর্কে অবগতি লাভ করাকে আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি মানুষের উপর ফরয করেছেন। সুতরাং ফরয, ওয়াযিব, সুন্নাত, মুস্তাহাব, মুবাহ, মাকরুহ , যাযেজ, নাযায়েজ, হালাল, হারাম, সবকিছু জানা প্রতিটি মানুষের উপর অপরিহার্য। আর এসব বিষয়ে অবগতি লাভের একমাত্র উপায় হল ফিকহ, তাই ফিকহ ব্যতীত মুসলিম জাতীর জীবন যাত্রা অচল।

আল্লামা ইবনুল আবেদীন রহ. বলেন,

ان الامة الاسلامية لا حياة لها بدون الفقه اذ هو معالم الحلال والحرام .
ফিকহ হল মুসলিম জাতির প্রাণ। ইহা ব্যতীত মুসলিম উম্মাহ বেঁচে থাকতে পারে না। কেননা ফিকহই হালাল হারাম সম্পর্কে অবগতি লাভের একমাত্র মাধ্যম।
(ফাতাওয়ায়ে শামী, ১/২২, আল ফিকরুস সামী ১/৭১)

বলা বাহুল্য যে হাদিসের মর্ম উপলব্ধি ও তার দাকাইক তথা সুক্ষ্ম বিষয়সমূহ সম্পর্কে ফকীহগণই বেশী জ্ঞানী।

ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, ان الفقهاء هم اعلم بمعانى الحديث ফকীহগণই হাদিসের সঠিক মর্ম অনুধাবনকারী। (তিরমিযী-১/১৯৩)

আল্লামা ইবনুল যাওযী রহ. বলেন,
اعمل ان فى الحديث دقائق و افات لا يعرفها العلماء الفقهاء . تارة فى نقلها و تارة فى كشف معانيها. (دفع شبه التشبيه ، ২৬)

নকল ও অর্থ প্রকাশের ক্ষেত্রে হাদিসের এমন কিছু সুক্ষ্ম বিষয় রয়েছে যা উলামায়ে ফুকাহা ব্যতিত অন্য কেহ জানে না।
(দাফউশ তাশবীহ-২৬)

কাজেই ফিকহ শাস্ত্রকে কুরআন-হাদিসের বিরোধী ও সাংঘর্ষিক ভাবা ও এমন প্রশ্ন করা যে, কুরআন হাদিস থাকতে ফিকহের কি প্রয়োজন, চরম মূর্খতার শামিল।

এবার মূল আলোচনায় ফিরে আসা যাক । আলোচ্য বিষয় তথা নামাযে কিছু ক্ষেত্রে মহিলাদের বিধান পুরুষদের বিধান থেকে ভিন্ন হওয়ার বিষয়টি চার ইমামের ফিকহ দ্বারা প্রামাণিত। তাদের মাঝে বিভিন্ন বিষয়ে মতনৈকৗ থাকলেও আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে কোন মতানৈক্য নেই। নিুে তাদের বক্তব্য তুলে ধরা হলো :

ফিকহে হানাফী

روى الامام ابو حنيفة رح عن نافع عن ابن عمر رض انه سئل كيف كان النساء يصلين على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم ، قال : كن يتريعن ثم امرن ان يحتفزن - اخرجه القاضى عمر بن الحسن الاشنائى ، جامع المسانيد - ১/৪০০ هذا اسناد صحيح.

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. কে জিজ্ঞাসা করা হল, রাসুল সা. এর যুগে মহিলারা কিভাবে নামায পড়তেন। তিনি উত্তর দিলেন, প্রথমে তারা চারজানু হয়ে বসতেন পরে জড়সড় হয়ে বসতে বলা হয়েছে।
(জামেউল মাসানিদ- ১/৪০০)

ইমাম আবু হানিফ রহ. এই হাদিসের ভিত্তিতে মহিলাদের জন্য এই মত ব্যক্ত করেছেন যে, তারা যেন উভয় পা এক দিক দিয়ে বের করে সংকুচিত হয়ে বসে পুরুষদের ন্যায় এক পা খাড়া করে না রেখে বসে।
আরো দ্রষ্টব্য : ইলাউস সুনান - ৩/২৭

২। হানাফী মাযহাবের প্রশিদ্ধ ফকীহ ও ভাষ্যকার ইমাম মুহাম্মাদ রহ. বলেন,
احب الينا ان تجتمع رجليها فى جانب و لا تنتصب انتصاب الرجل .

আমাদের নিকট অধিক পছন্দনীয় হল, মহিলারা উভয় পা এক দিকে বের করে দিয়ে বসবে। পুরুষদের ন্যায় এক পা দাড় করিয়ে বসবে না।
(কিতাবুল আসার- ১/৪৪)

৩। হানাফী মাজহাবের প্রশিদ্ধ কিতাব আদ্দুররুল মুখতার এর রচয়িতা বলেন,
المرأة ترفع يديها حذاء منكليها و هو الصحيح لانه استر لها.

স্ত্রীলোক তা উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাবে এটাই বিশুদ্ধ মত। কেননা এটা তার সতর রক্ষার জন্য অধিক উপযোগী।
(আদ দুররুল মুখতার - ২/১৬০)

ফিকহে মালেকী

১। মালেকী মাহযহাবের প্রশিদ্ধ ফকীহ ইমাম আবুল আব্বাস আল কারাফী রহ. বলেন,
واما مساواة النساء للرجال ففى النوادر عن مالك تضع فخذها اليمنى على اليسرى و تنضم قدر طاقتها ولا تفرج فى ركوعو ولا سجود ولا جلوس بخلاف الرجل.

নামাযে মহিলাদের বিধান পুরষদের মত কিনা এ ব্যাপারে ইমাম রহ. থেকে উল্লেখ আছে যে, মহিলারা ডান উরু বাম উরুর উপর রেখে যথা সম্ভব সংকুচিত হয়ে বসবেচ। রুকু, সিজদাহ ও বৈঠকে নিজেকে পুরুষদের ন্যায় ফাকা করে রাখবে না।

(আযযাখিরা ইমাম কারাফী - ২/১৯৩)

ফিকহে শাফেয়ী
১। ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন,
وقد ادب الله تعالى النساء بالاستتار و ادبهن بذلك رسول الله صلى الله عليه وسلم و احب للمرأة ان تضم بعضها الى بعض و تلصق بطنها بفخذيها و تسجد كاستر ما يكون لها . وهكذا احب لها فى الركوع و الجلوس و جميع الصلوة ان تكون فيها كاستر ما يكون لها.
আল্লাহ তায়ালা মহিলাদেরকে পুরোপুরি আবৃত থাকার শিক্ষা দিয়েছেন। তার রাসুলও অনুরূপ শিক্ষা দিয়েছেন। তাই আমার নিকট পছন্দনীয় হলো, সিজদা অবস্থায় মহিলারা এক অঙ্গের সাথে অপর অঙ্গকে মিলিয়ে রাখবে। পেট ও উরুর সাথে মিলিয়ে রাখবে এবং সিজদা এমনভাবে করবে যাতে সতরের পূর্ণ হেফাযত হয়। অনুরূপ রুকু, বৈঠক ও গোটা নামাযে এমনভাবে থাকবে যাতে সতরের পুরোপুরি হেফাযত হয়।
(কিতাবুল উম্ম, ইমাম শাফেয়ী রহ. ১/১৩৮)

২। শাফেয়ী মাজহাবের ভাষ্যকার ইমাম বায়হাকী রহ. বলেন,
و جميع ما يفارق المرأة فيه الرجل من احكان الصلوة راجع الى الستر وانها مامورة بكل ما كان استر لها و الابواب التى تلى هذه تكشف عن معناه و تفضيله.

নামাযের বিভিন্ন বিধানের ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলাদের পদ্ধতিগত ভিন্নতার মূল বিবেচ্চ বিষয় হয় সতর। মহিলারা এমন পদ্ধতিতে নামায আদায় করতে আদিষ্ট হয়েছে যা তাদের সতর রক্ষার জন্য অধিক উপযোগী। সামনের অধ্যায়গুলোতে এর প্রমাণ ও বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।
(আস সুনানুলকুবরা, ইমাম বায়হাকী - ৩/৭৩)

৩। শাফেয়ী মাযহাবের আরেক ভাষ্যকার ইমাম নববী রহ, বলেন,

قال الامام الشافعى رح والاصحاب يسن ان يجافى مرفقيه عن جنبه و يرفع بطنه عن فخذيه و تضم المرأة بعضها الى بعض.


ইমাম শাফেয়ী রহ. ও তার ছাত্রদের অভিমত হল, নামাযে পুরুষদের জন্য উভয় বাহুকে উভয় পার্শদেশ এবং পেটকে উভয় উরু থেকে পৃথক রাখবে। পক্ষান্তরে মহিলাদের জন্য এক অঙ্গ এর সাথে অন্য মিলিয়ে রাখা সুন্নাত।
(আল মাজম, শরহুল মুহাজ্জাব - ৩/৩৯০)

ফিকহে হাম্বলী

১। হাম্বলী মাযহাবের প্রশিদ্ধ ভাষ্যকার ইমাম ইবনে কুদামা রহ. বলেন,
فاما المرأة فذكر القاضى فيها روايتين عن احمد ، احدهما ترفع .... ولان من شرع حقه التكبير شرع فى حقه الرفع كالرجل فعلى هذا ترفع قليلا ، قال احمد : رفع دون رفع . والثانية : لا يشرع لانه فى معنى التجافى ولا يشرع ذلك لها بل تجمع نفسها فى الركوع و السجود و سائر صلوته .

তাকবীরে তাহরীমার সময় মহিলারা হাত উঠাবে কিনা এ সম্পর্কে কাযী, ইমাম আহমাদ রহ. হতে দুটি বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। প্রথম বর্ণনা হল, হাত উঠাবে। কেননা যার তাকীর বলার বিধান রযেছে তার হাত উঠানোর বিধানও রয়েছে। তবে এমত অনুযায়ী মহিলারা খুব সামান্য হাত উঠাবে। ইমাম আহমাদ রহ. এর ভাষ্য হল, رفع دون رفع অর্থাৎ খুব সামান্য হাত উঠাবে। দ্বিতীয় বর্ণনা হল, মহিলাদের জন্য হাত উঠানের বিধানই নেই, কেননা হাত উঠানেরা ফলে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ প্রকাশ পেয়ে যায়। যা তাদের জন্য ঠিক নয়। বরং তাদের জন্য করণীয় হল, রুকু, সিজদা সহ পুরো নামাযে নিজেদেরকে গুটিয়ে রাখা।
(আল মুগনি ইবনে কুদাম - ২/১৮)

২। তিনি অন্য স্থানে বলেন,
الاصل ان يثبت فى حق المرأة من احكام الصلوة ما ثبت للرجال لان الخطاب يشملها غاير خالفته فى ترك التجافى لانها عورة ، فاستحب لها جمع نفسها ليكون استر لها لانه لا يؤمن ان يبدو شيئ منها حال التجافى.

মুলনীতি হলো, নামাযের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরুষদের জন্য যে বিধান সাব্যস্ত হয়, তা মহিলাদের জন্যও সাব্যস্ত হবে। কেননা হাদিসের সাধারণ ভাষ্য উভয়কেই নির্দেশ করে। তথাপি মহিলারা যেহেতু আবরণযোগ্য তাই তারা (পুরুষদের ন্যায়) পেট উরু থেকে পৃথক করে সিজদা করবে না। সুতরাং তাদের জন্য করণীয় হল, নিজেকে এমন ভাবে গুটিয়ে নেয়া যা তাদের সতর রক্ষার জন্য অধিক সহায়ক হয়। কেননা, (পুরুষদের ন্যায়) অসংকুচিত হয়ে সিজদা করার ক্ষেত্রে কোন অঙ্গ প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
(আল মুগনি ইবনে কুদামা ২/১১৬)

ফিকহে ইসলামীল আলোকে পার্থক্যের ক্ষেত্র সমূহ

আলোচনার এ পর্যায়ে ফিকহে ইসলামীর আলোকে পার্থক্যের ক্ষেত্রগুলো তুলে ধরছি। তবে সেসব ক্ষেত্র বর্ণনা করতে গিয়ে পুরুষদের পদ্ধতি সর্বজন স্বীকৃত ও সুপ্রশিদ্ধ হওয়ায় শুধুমাত্র মহিলাদের পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো।

আমরার দেখতে পাচ্ছি যে, নামাযে এমন কিছু ক্ষেত্র রয়েছে , যে ক্ষেত্রগুলোতে পুরুষ-মহিলার বিধান এক ও অভিন্ন। অনুরূপভাবে এমন কিছু ক্ষেত্র রয়েছে যেগুলোতে উভয়ের বিধান এক নয়। নিুে এমন ি কছু ক্ষেত্র তুলে ধরা হলো।

১. নামায শুরু করার পূর্বে মহিলাদের এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া জরুরী যে তাদের মুখমন্ডল-হাত-পা ব্যতীত সমস্ত শরীর কাপড়ে আবৃত আছে কি না? অনেক মহিলা এমন ভাবে নাময পড়েন যে, তাদের মাথার চুল বের হয়ে থাকে। অনেকের কনুই বের হয়ে থাকে। আবার অনেকে এত ছোট ওড়না ব্যবহার করে যে, ওড়নার নিচ দিয়ে চুল ঝুলে থাকে; এপদ্ধতিগুলো নাযায়েজ। নামাযের ভিতর যদি মুখমন্ডল,হাত, পা ব্যতীত আবরণযোগ্য কোন অঙ্গের এক চতুর্থাংশ পরিমাণ এতটুকু সময়ের জন্য বের হয়ে থাকে যে সময়ের মধ্যে তিনবার তাসবীহ পড়া যায়, তাহলে নামায নষ্ট হয়ে যাবে। যেমন, রদ্দুল মুহতার ২/৭৪ এ বলা হয়েয়ে -
يمنع صحة الصلاة كشف ربع عضو قدر اداء ركن بسنة و ذلك قدر ثلاث تسبيحات و هو المختار للاحتياط.

অর্থাৎ বিশুদ্ধ মতানুযায়ী সুন্নত তরিকায় একটি রুকন আদায় করার সময় পরিমাণ আবরণ যোগ্য কোন অঙ্গের এক চতুর্থাংশ খুলে থাকা নামায শুদ্ধ হওয়ার জন্য প্রতিবন্ধক। (আরো দ্রষ্টব্য : ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৬৫, খোলাছাতুল ফাতাওয়া- ১/৭৪)

১। المرأة ترفع يديها حذاء منكبيها و هو الصحيح لانه استر لها
স্ত্রীলোক তার উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাবে এটাই বিশুদ্ধ অভিমত। কেননা এটা তার সতর রক্ষার জন্্য অধিক উপযোগী। (রদ্দুল মুহতার -২/১৬০, ফাতাওয়া হিন্দিয়া - ১/৮০, খোলাছাতুল ফাতাওয়া -১/৫৪, ফতহুল ক্বদীর - ১/২৪৬, আল বাহরুর রায়েক - ১/৫৩২, বাদায়েউস সানায়ে - ১/২৯৬)

২। تضع المرأة يديها على صدرها
অর্থাৎ স্ত্রীলোক উভয় হাত বুকের উপর রাখবে। (রদ্দুল মুহতার -১/১৬৫, ফাতাওয়া হিন্দিয়া - ১/৮১, আল বাহরুর রায়েক - ১/৫২৯, বাদায়েউস সানায়ে - ১/২৯৯)


৩। المرأة لا تخرج كفيها من كميها عند التكبير حذرا من كشف ذراعيها
স্ত্রীলোক তাকবীরে তাহরিমার সময় উভয় হাত জামার আস্তীন থেকে বের করবেনা। হাতের কিছু অংশ প্রকাশ পাওয়ার আশংকা থাকার কারণে। (রদ্দুল মুহতার ২/১৫৫, বাহর, হাশিয়াতুত তাহতাভী- ২৭৬)

৪। المرأة تضع الكف اليمنى على ظاهر كف اليسرى من غير تحليق باخذ رسغيها بخنصرها و ابهامها

স্ত্রীলোক ডান হাতের তালুর পেট বাম হাতের পিঠের উপর রাখবে। কনিষ্ঠাঙ্গুল ও বৃদ্ধাঙ্গুল দ্বার (বাম হাতের ) কব্জির উপর বেষ্টনী বা গোলাকার করবেনা। (রদ্দুল মুহতার -১/১৬৬, তাহতাবী-২৫৯)

৫। لا تأخذ ركبتيها بيديها بل تضع عليها و ضعا و لا تعتمد عليها.
স্ত্রীলোক উভয় হাত দ্বারা হাটু শক্ত করে ধরা এবং তাতে টেক লাগানো ছাড়া স্বাভাবিক ভাবে তা হাটুর উপর রেখে দিবে। (রদ্দুল মুহতার - ২/১৫৩, হিন্দিয়া - ১/৮২)

৬। لا تفرج اصابعها فى الركوع بل تضم
স্ত্রীলোক রুকুতে আঙ্গুল গুলোর মাঝে ফাঁকা রাখবে না, বরং তা পরস্পর মিলিয়ে রাখবে। (রদ্দুল মুহতার ২/১৫৩, হিন্দিয়া ১/৮২, তাহতাবী ২৬৬)

৮। انها تنحنى فى الركوع يسيرا بحيث تبلغ حد الركوع

স্ত্রীলোক রুকুতে এত সামান্য ঝুঁকবে যার দ্বারা রুকু আদায় হয়েছে বলে বলা যায়। (রদ্দুল মুহতার- ২/১৭৪, হিন্দিয়া-১/৮২, তাহতাবী-২৫৯ )

৯। لا تجافى عضديها فى الركوع اي تلزق مرفقيها بجنبيها فيه.

স্ত্রীলোক রুকুতে উভয় বাহু উভয় পার্শ্বদেশ থেকে পৃথক রাখবে না বরং তার সাথে মিলিয়ে রাখবে। (রদ্দুল মুহতার-২/১৭৪, হিন্দিয়া-১/৮২, আল বাহর - ১/৫৬১, খোলাছাতুল ফাতাওয়া-১/৫৪ )

১০। المرأة تنخفض فى سجودها و تلزق بطنها بفخذيها لان ذلك استر لها.

স্ত্রীলোক জড়সড় হয়ে সিজদা করবে। অর্থাৎ পেট উরুদ্বয়ের সাথে মিলিয়ে রাখবে। কেননা এটা তার সতর রক্ষার জন্য অধিক উপযোগী। (রদ্দুল-২/১৮৬, হিন্দিয়া-১/৮৩, বাদায়ে-১/৩১২, ফাতহুল কাদীর -১/২৬৭, আল বাহর - ১/৫৬০)

১১। تفترش ذراعيها فى الارض

স্ত্রীলোক উছয় হাতের কনুই তথা হাতের নিুাংাশ জমিনে বিছিয়ে দিবে। (সিজদাবস্থায়) (রদ্দুল : ২/১৮৬, বাদায়ে : ১/৩১২, হিন্দিয়া : ১/৮৩, খোলাছা: ১/৫৪)

১২। لا تنتصب اصابع القدمين كانتصاب الرجل
স্ত্রীলোক সিজদায় পুরুষদের ন্যায় পায়ের আঙ্গুলগুলো দাড় করিয়ে রাখবেনা। (আল বাহর: ১/৫৬১, বাদায়ে: ১/৩১২)

১৩। المرأة تقعد كاستر ما يكون لها فتجلس متوركة لان مراعات فرض الستر اولى من مراعاة سنة القعدة.

স্ত্রীলোক এমন পদ্ধতি অবলম্বন করে বসবে যা তাদের সতর রক্ষার জন্য অধিক উপযোগী। যেমন, বাম নিতম্বের উপর বসে ডানদিক দিয়ে উভয় পা বের করে দিবে। কেননা বসার সুন্নতের চেয়ে সতরের সুন্নতের প্রতি লক্ষ্য রাখা অধিক শ্রেয়।
(রদ্দুল : ২/১৮৬, হিন্দিয়া: ১/৮৩, বাদায়ে : ১/৩১৩, খোলাছা : ১৫৪, বাহর: ১/৫৬৪)

১৪। يكره للنساء اي يصلين وحدهن الجماعة .
স্ত্রীলোকদের একাকী জামাতে নামায পড়া মাকরুহে তাহরীমি। (রদ্দুল : ২/২৬২, বাদায়ে : ১/২৩৪, আল বাহর : ১/৬১০)

১৫। لا يستحب فى حقها الجهر بالقراءة فى الصلوة الجهرية.

মহিলাদের জন্য জেহরী নামায তথা উচ্চস্বরে কেরাত বিশিষ্ট নামাযে অনুচ্চস্বরে কেরাত পড়তে হবে। (রদ্দুল : ২/৭২, বাহর : ১/৬৫১, ফাতহুল কাদীর : ১/২২৭)

১৬। لا يستحب فى حقها الاسفار بالفجر لانه اقرب للستر.

মহিলাদের জন্য ফররের নামায অন্ধকারে পড়াই শ্রেয়। কেননা অন্ধকার তাদের সতর রক্ষার জন্য অধিক সহায়ক।
(রদ্দুল : ২/২৩, বাহর : ১/৪২৯, তাহতাবী : ২৫৯)

১৭। تقوم الامام اوسطهن

মহিলারা যদি (মাকরুহ হওয়া সত্ত্বেও) জামাআতের সাথে নামায আদায় করে, তাহলে (মহিলা) ইমাম তাদের মাঝে দাড়াবে। (আগে বেড়ে গিয়ে দাড়াবে না। )
(রদ্দুল : ২/২৬৩, বাদায়ে : ১/২৩৪, বাহর : ১/৬১০)

১৮। تاخرن فى الصف لان محاذاتهن مفسدة ........

নারী-পুরুষ এক সমানে দাড়ানোর দ্বারা যেহেতু নামায নষ্ট হয়ে যায়, তাই নারীদের সর্ব পেছনে দাড়াতে হবে।
(রদ্দুল : ২/২৭০, বাদায়ে : ১/২৩৭, ফাতহুল কাদীর : ১/৩১১ )

১৯। لا يصح اقتداء رجل بامرأة

পুরুষদের জন্য কোন নারীর পিছনে ইকতিদা করা জায়েজ নাই।
(রদ্দুল : ২/২৭৬, বাদায়ে : ১/৩৩৭, খোলাছা: ১/১৪৬, বাহর : ১/৬২৮ )
২০। নামাযে ইমাম কর্তৃক কেন ভুল হলে মহিলাদেরকে লোকমা দেওয়ার জন্য তাসফীক তথা হাতে শব্দ করতে বলা হয়েছে।

২১। المرأة ان توذن ييتحب ان يعاد على وجه السنة

স্ত্রীলোক আযান দিলে তা দোহরানো মুস্তাহাব যেন আযান সুন্নত মোতাবেক হয়।

২২। لا تجب الجمعة على امرأة

নারীদের জুমার নামায নেই।

প্রিয় পাঠক ! এ পর্যন্ত পার্থক্যে যে ক্ষেত্রগুলো নিয়ে আলোচনা কর হল, তা ছিল নামায বিষয়ক । নামাযের বিষয় ব্যতিত অন্যান্য বিষয়েও আমরা এমন কিছু ক্ষেত্র দেখতে পাই যে ক্ষেত্রগুলোতে নারীদের বিধান পুরুষদের বিধান থেকে ভিন্ন। এ ধরণের কিছু ক্ষেত্র নিুে তুলে ধরা হলো।

২৩। يعتبر فى المرأة ان يكون لها محرم تحج به او زوج فلا يجوز لها ان تحج بغيرهما اذا كان بينها وبين مكة ثلاثة أيام .

অর্থাৎ স্ত্রীলোকের জন্য শর্ত হল, হজ্জের সফরে তার সঙ্গে তার স্বামী বা কোন মাহরাম থাকা। যদি তার ও মক্কা শরীফেল মাঝে তিন দিনের দূরত্ব থাকে। তাহলে স্বামী বা মাহরাম ছাড়া হজ্জ করতে যাওয়া তার জন্য জায়েয নয়।

২৪। انها لا تكشف رأسها لانها عروة
স্ত্রীলোকদের জন্য ইহরাম অবস্থায় মাথা খুলে রাখা জায়েজ নেই। কেননা এটা তার সতরের অন্তর্ভুক্ত। (যা ঢেকে রাখা জরুরী)
(রদ্দুল : ৩৪৮৮, ফতহুল কদীর : ২/৪০৩-৪০৪)

২৫। لا ترفع صوتها بالتلبية لما فيه من الفتنة.
স্ত্রীলোক উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ করবে না। কেননা এত ফেতনার আশংকা রয়েছে।
(রদ্দুল : ৩/৪৮৮, ফাতহুল কদীর : ২/৪০৩)

২৬। لا ترمل لانها مخل بستر العورة.

স্ত্রীলোক তাওয়াফে রমল (হাটার সময় কাঁধ ঝাকি দিয়ে হাটা, যুদ্ধমুখী দুই সারীর মাঝখানে দম্ভকারী প্রতিদ্বন্দীর মত) করবে না। কেননা তা সতর ঢেকে রাখার ক্ষেত্রে বিঘœ সৃষ্টি করে। (রদ্দুল : ৩/৪৮৮, ফাতহুল কাদীর : ২/৪৩৩)

২৭। لا تسعى بين الميلين الاخضرين
নারীরা সায়ী করার সময় সবুল নিশানাদ্বয়ের মাঝে দৌড়াবে না। কেননা তা সতর ঢেকে রাখার ক্ষেত্রে বিঘœ সৃষ্টি করে। (রদ্দুল : ৩/৪৮৮, ফাতহুল কাদীর : ২/৪৩৩ )

২৮। لا تحلق و لكن تقصر
নারীরা মাথা মুন্ডাবে না। বরং চুল ছোট করবে।
(রদ্দুল : ৩/৪৮৯, ফাতহুল কদীর : ২/৪০৫, খোলাছা : ১/২৮০ )

২৯। تلبس من المخيط ما بدا لها لان فى لبس غير المخيط كشف العورة
মহিলারা ইহরাম অবস্থায় ইচ্ছামত সেলাই করা কাপড় পরিধান করতে পারবে। কেননা সেলাইবিহীন কাপড় পরিধানে সতর খুলে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।

৩০। لا تستلم الحجر اذا كان هناك جمع لانها ممنوعة عن مماسة الرجال الا ان تجد الموضع خاليا.
স্ত্রীলোক ভীড় থাকলে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করার চেষ্টা করবে না। কেননা এতে পুরুষদের সাথে শরীর স্পর্শ হয়ে যায়। অথচ তা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অবশ্য ফাঁকা পেলে স্পর্শ করতে কোন অসুবিধা নেই।
(রদ্দুল : ৩/৪৮৯, ফাতহুল কাদীর : ২/৪০৫ )

৩১। বিবাহের ক্ষেত্রে নারী -পুরুষ সম অধিকার লাভ করলেও তালাক প্রদানের ক্ষমতা শুধু পুরুষকে দেওয়া হয়েছে। নারীকে নয়।

৩২। অনূরুপভাবে ইদ্দত পালনের বিষয়টি শুধু নারীর উপর ন্যস্ত করা হয়েছে; পুরুষের উপর নয়।

৩৩। একাধিক স্ত্রী গ্রহণের ক্ষমতা শুধু পুরুষকে দেওয়া হয়েছে নারীকে একাধিক স্বামী গ্রহণের ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।

প্রিয় পাঠক ! এখানে আমি ৩৩ টি ক্ষেত্র উল্লেখ করলাম। আগ্রহী পাঠক চিন্তা ভাবনা করলে এ ধরণের আরও অনেক ক্ষেত্র পেয়ে যাবেন, যেখানে নারী পুরুষের বিধান এক নয়; বরং ভিন্ন।

চার ইমাম ব্যতীত অন্যান্য মহা মনীষীগণের বক্তব্যের আলোকে পার্থক্য

আলোচ্য বিষয় তথা পুরুষ- মহিলার নামায আদায়ের পদ্ধতি এক না হওয়ার বিষয়ে চার ইমাম গণেরও মতামত ইতিপূর্বে আলোচিত হয়েছে। এখন এ সম্পর্কে অন্যান্য মনীষীগণের দৃষ্টিভঙ্গি ও মতামত উল্লেখ করছি ।
১। হযরত আতা ইবনে আবী রাবাহ রহ. এর মতামত :
ان للمرأة هيئة ليست للرجل
মহিলাদের জন্য (নামাযে) বিশেষ কিছু পদ্ধতি রয়েছে, যা পুরুষদের পদ্ধতি থেকে ভিন্ন।
(মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা : ২/৪২১)

২। প্রখ্যাত ফকীহ আল্লামা ফখরুদ্দীন যায়লায়ী রহ. এর মতামত :
اعلم ان المرأة تخالف الرجل فى كثير من احكان الصلوة
জেনে রাখো, নামাযের অনেক ক্ষেত্রেই মহিলাদের বিধান পুরুষদের বিধান থেকে ভিন্ন। (তাবইনুল হাকায়েক : ১৫৫)

৩। আল্লামা আবদুল হাই লখনবী রহ. এর মতামত :

هذا كله فى حق الرجال و اما فى حق النساء فاتفقوا على الن السنة لهن وضع اليدين على الصدر.

নাভির নিচে হাত বাঁধার বিধানটি পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আর নারীদের সম্পর্কে সকল উলামায়ে কিরাম একমত যে, তাদের জন্য সন্নত হলো, বুকের উপর হাত বাঁধা। কারণ এটাই তাদের সতর রক্ষার জন্য অধিক সহায়ক।
(সিআয়া - ২/১৬৫)

তিনি আরও বলেন,
تنبيه : المرأة تخالف الرجال فى افعال الصلوة و ما يتعلق بها فى كثير من الاحكام .
নামায সংক্রান্ত অনেক বিষয়ে মহিলাদের বিধান পুরুষদের বিধান থেকে ভিন্ন।
(সিআয়া : ১/১০৫)

৪। মুহাদ্দিসে কাবীর আল্লাম যফর আহমাদ উসমানী রহ. বলেন,

قلت هذه المسئلة مما انفردت فيها النساء عن الرجال
বুকের উপর হাত বাঁধার মাসআলা ঐ সব মাসআলার অন্তর্ভুক্ত যে মাসআলায় নারীদের বিধান পুরুষদের বিধান থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে।
(ইলাউস সুনান: ২/২০০)

৫। মদীনা মুনাওয়ারার প্রখ্যাত মুহাদ্দিস শায়েখ আওয়ামা এর মতামত :
ان للمرأة هيئة خاصة فى بعض موافق صلوتها تختلف فيها مع الرجل

নামাযে বেশ কিছু ক্ষেত্রে মহিলাদের বিশেষ কিছু পদ্ধতি রয়েছে যা পুরুষদের পদ্ধতি থেকে ভিন্ন।
(আল মুসান্নাফ, তাহকীক মোহাম্মাদ আওয়ামা : ২/২০৭)

৬। শায়খুল হাদিস আল্লামা যাকারিয়া রহ. এর মতামত :
سنة الجلوس عندنا للرجل فى التشهدين غير ما هو سنة للمرأة فيهما.
হানাফী মাযহাব অনুসারে উভয় তাশাহুদে পুরুষদের জন্য বসার পদ্ধতি মহিলাদের পদ্ধতি থেকে ভিন্ন।
(লামেউদ দারারী : ১/৩৩০)

সারকথা, রুকু সিজদা, জলসা সহ বেশ কিছু বিষয়ে মহিলাদের বিধান পুরুষদের বিধান থেকে ভিন্ন হওয়াটা একটি স্বীকৃত বিষয়। এই স্বীকৃত বিষয়কে বর্তমান যুগের কিছু লা মাযহাবী গায়রে মুকাল্লিদগণ ব্যতিত কেউ অস্বীকার করেনি। তারা সহজ সরল কোমলমতি জনগণকে বুঝাতে চেষ্টা করছে যে, পুরুষ ও মহিলার নামযের পদ্ধতি এক ও অভিন্ন।
তাদের এ কথায় সাধারণ মানুষ যেন বিভ্রান্ত না হয় এজন্যই আমরা উম্মতের স্বীকৃত ফকীহ ও মুহাদ্দিসগণের দৃষ্টিভঙ্গি উল্লেখ করলাম।

লা মাযহাবী গায়রে মুকাল্লিদ আলেমদের দৃষ্টিতে পার্থক্য

ইতিপূর্বে আমরা আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে মুসলিম উম্মাহর স্বীকৃত ফকীহ ও মুহাদ্দিসগণের মতামত তুলে ধরেছি। যারা দ্ব্যার্থহীন ভাবে স্বীকার করেছেন যে নামাযে বেশ কিছ ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলার বিধান এক ও অভিন্ন হলেও বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে উভয়ের পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এটা এমন এক স্বীকৃত বিষয় যার সমর্থণে হাদীস, আছার, সুন্নাতে মুতাওয়ারিছা সহ যুগ যুগ ধরে মহিলাদের আমল অব্যাহত রয়েছে। যার কারণে লা মাযহাবী গায়রে মুকাল্লিদ আলেমরা পর্যন্ত এ কথা বলতে বাধ্য হয়েছেন যে, নামাযে কিছু ক্ষেত্রে পুরুষ মহিলার বিধান এক নয়। প্রমাণ স্বরুপ নিুে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি উল্লেখ করছি।
১। প্রখ্যাত গায়রে মুকাল্লিদ আলেম আবদুল জব্বার গযনবী রহ. এর দৃষ্টিতে ,


অর্থাৎ আবদুল জব্বার গযনবী রহ. কে জিজ্ঞাসা করা হয়, মহিলারা জড়সড় হয়ে সিজদা করবে কিনা ? তিনি প্রথমে আবু দাউদ শরীফের পার্থক্য সংক্রান্ত হাদিস উল্লেখ করে বলেন, পুরুষ-মহিলার নামাযের বিধান এক না হওয়ার ব্যাপারে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের চার মাযহাবের ইমাম সহ সকল ইমামদের তাআমুল (অবিচ্ছিন্ন কর্মধারা) রয়েছে। অত:পর তিনি চার মাযহাবের কিতাব থেকে উদ্বৃতি উল্লেখ করে বলেন, মোট কথা নামাযে মহিলাদের জড়সড় হয়ে সিজদা করার বিষয়টি অসংখ্য হাদিস এবং সংখ্যাগরিষ্ট উলামায়ে কিরামের তাআমুল দ্বারা প্রমাণিত। সুতরাং যে তা অস্বীকার করবে সে যেন হাদিস ও গুনীজণদের তাইমুল সম্পর্কে অজ্ঞ।
(ফাতাওয়ায়ে গযনাবিয়্যাহ : ২৮, ফাতাওয়ায়ে উলামায়ে আহলে হাদিস : ৩/১৪৮)

২। প্রখ্যাত ল মাযহাবী গায়রে মুকাল্লিদ আলেম ইমাম শাওকানী রহ. এর শিক্ষক মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাইল আমিরে ইয়ামানী রহ. سبل السلام شرح بلوغ المرام গ্রন্থে আবু দাউদ শরীফের মুরসাল হাদিস এর মাধ্যমে পুরুষ-মহিলার সিজদার পদ্ধতি ভিন্ন হওয়াকে প্রমাণ করেছেন। তার ভাষায়
هذا فى حق الرجال لا فى المرأة لما رواه ابو داؤد فى مراسيله الخ
উপরোল্লিখিত পদ্ধতি পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য; মহিলাদের ক্ষেত্রে নয়। কারণ তাদের পদ্ধতি সেটাই যা, আবু দাউদ শরীফের মুরসাল হাদিসে উল্লেখ রয়েছে।
(সুবুলুস সালাম : ১/৩৫১)

৩। আহলে হাদিসদের ভাষ্যকার ও এক সময়ের মুখপাত্র নওয়াব সিদ্দিক হাসান খান কানুজী বুখারী শরীফের ভাষ্যগ্রন্থ عون البارى তেত লিখেন,
فمن يرى المرسل حجة و هو مذهب ابى حنيفة و مالك فى طائفة والامام احمد فى المشهور عنه فحججهم المرسل المذكور ، ومن لا يرى كالشافعى و جمهور المحدثين فباعتضاد كل من الموصول والمرسل بالأخر و حصول القوة من الصورة المجموعة.

আবু দাউদ শরীফের পার্থক্য সংক্রান্ত মুরসাল হাদিসটি সকল ইমামদের মূলনীতি অনূসারে দলীল যোগ্য। (আওনুল বারী : ১/৪০০)

এতে প্রমাণিত হয়ে যে, তিনি (নওয়াব সিদ্দিক সাহেব)ও পার্থক্যের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

৪। লা মাযহাবী গায়রে মুকাল্লিদ আলেম আবদুর রহমান মোবারকপুরী রহ. তার তোহফাতুল আহওয়াজী তে ইমাম আবু হানিফার মাযহাব নকল করে বলেন,
فاعلم ان مذهب الامام ابى حنيفة ان الرجل يضع اليدين فى الصلاة تحت السرة و المرأة تضعها على الصدر.
ইমাম আবু হানিফার রহ. এর মতে নামাযে পুরুষরা নাভির নিচে এবং মহিলারা বুকের উপর হাত বাঁধবে।
অত:পর তিনি শুধু পুরুষদের বিধানকে দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে খন্ডন করেন। এত প্রতীয়মান হয় যে, মহিলাদের যে বিধান অর্থাৎ বুকের উপর হাত বাঁধা তা তিনি স্বীকার করেন।

৫। অনূরূপভাবে গায়রে মুকাল্লিদ আলেম মৌলভী আল মোহাম্মাদ সাইদী ফাতাওয়ায়ে উলামায়ে আহলে হাদিস নামক গ্রন্থে পুরুষ -মহলিার বিধান এক না হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এমনকি গায়রে মুকাল্লিদ আলেম মৌলভী আবদুল হক হাশেমী মুহাজিরে মক্কী এই বিষয়ে একটি স্বতন্ত্র পূস্তিকা রচনা করেন যার নাম نصب العمود فى تحقيق مسئلة تجافى المرأة فى الركوع و السجود و القعود.

লা মাযহাবী গায়রে মুকাল্লিদ ভাইদের দলীল ও পর্যালোচনা

১। আমার জানা মতে সর্বপ্রথম যিনি নামাযে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরষ-মহিলার নামায আদায়ের পদ্ধতি এক ও অভিন্ন হওয়ার কথা বলেছেন, তিনি হলেন শায়েখ নাছিরুদ্দীন আলবানী । তিনি তার صفة صلاة النبى صلى الله عليه وسلم من التكبير الى التسليم كانك تراها নামক গ্রন্থে নামাযের পদ্ধতি উল্লেখ করত: বলেন, নবী স. এর সালাতের যে বিবরণ ও পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো এতে নারী ও পুরুষ সবাই সমান।
(ছিফাতুল সালাহ : ২০৫)

তিনি নিজের দাবী প্রমাণের জন্য তিনটি দলীল পেশ করেন,
প্রথম দলীল : বুখারী শরীফের নিুোক্ত হাদিস : صلوا كما رأيتمونى اصلى
তোমরা ঠিক ঐ ভাবে সালাত আদায় কর; যেভাবে আমাকে আদায় করতে দেখ।
(বুখারী : ১/৮৮, ২/২৮৮ )

দ্বিতীয় দলীল : ইব্রাহীন নাখয়ীর নিুোক্ত উক্তি । তিনি নাকি বলেন,
تفعل المرأة فى الصلوة كما يفعل الرجل
সালাতে নারীরা তাই করবে যা একজন পুরুষ করে থাকে। তিনি এ দলীলের সূত্র উল্লেখ করেছেন, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা : ১/৭৫

তৃতীয় দলীল : তারিখে ছগীর ও বুখারী শরীফের নিুোক্ত হাদিস :
عن ام الدرداء انها كانت تجلس فى الصلوة جلسة الرجل و كانت فقيهة.
উম্মু দারদা রা. নামাযে পুরুষদের বসার মতই বসতেন। এবং তিনি ফকীহা তথা ধর্ম জ্ঞানের অধিকারীনী ছিলেন। (তারীখে ছগীর ১/৯৫, বুখারী : ১/১১৪)

প্রথম দলীলের জবাব :
প্রথম দলীলের উত্তরে যাবার আগে জানা আবশ্যক যে নামায আদায়ের পদ্ধতি সংক্রান্ত যে রেওয়ায়েতগুলো বর্ণিত হয়েছে তা দু ধরনের।
এক. কতক রেওয়ায়েতে পুরুষের কথা স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। যেমন নিুোক্ত রেওয়ায়েতগুলোতে :
(১) نهى ان يفترش الرجل ذراعيه افتراش السبع.

রাসুল সা. পুরুষকে উভয় হাত হিংস্র প্রাণীর ন্যায় জমিনে বিছাতে নিষেধ করেছেন। (মুসলিম : ১/১৯৫)

(১) لا تجزى صلاة لا يقيم الرجل فيهما يعنى صلبه فى الركوع و السجود
যে ব্যক্তি রুকু এবং সিজদায় পিঠ সোজা করে না তার নামায পরিপূর্ণ নয়। (তিরমিযী : ১/৬১)

উপরোক্ত এই দুটি বর্ণনায় স্পষ্ট ভাবে পুরুষদের কথা উল্লেখ রয়েছে। সুতরাং উক্ত বিধানটি পুরুষদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে; নারীদের ক্ষেত্রে নয়। কারণ এতে (নারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হওয়ার ক্ষেত্রে) পুরুষদের কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করার বিশেষত্ব নষ্ট হয়ে যায়।

উম্মতের সর্ব স্বীকৃত মুহাদ্দিস ও ফকীহগণও এ ধরণের রেওয়ায়েত থেকে এমন অর্থই গ্রহণ করেছেন। যেমন, ইমাম তিরমিযী রহ. দ্বিতীয় রেওয়ায়েতের ব্যাখ্যায় বলেন,
اصحاب النبى صلى الله عليه وسلم و من بعدهم يرون ان يقيم الرجل صلبه فى الركوع والسجود. - جامع الترمذى : ১/৬১

এখানে তিনি رجل (পুরুষ নির্দেশক শব্দ) ব্যবহার করে বুঝাতে চেয়েছেন যে, রেওয়ায়েতে বর্ণিত পদ্ধতি পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে; নারীদের ক্ষেত্রে নয়।

অনূরুপ ভাবে ইবনে কুদামাহ রহ تجافى (বাহুকে পার্শদেশ থেকে পৃথক করণ) সংক্রান্ত রেওয়ায়েতের ব্যাখ্যায় বলেন, التجافى فى السجود للرجل مستحب : المغنى : ২/৭২ এখানে তিনিও رجل (পুংলিঙ্গের শব্দ ) ব্যবহার করে বুঝাতে চেয়েছেন যে, তাজাফির বিধান পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ; মহিলাদের ক্ষেত্রে নয়।

২। কতক রেওয়ায়েতে পুরুষ ও মহিলা উভয়ের কথাই উল্লেখ রয়েছে। যেমন নিুোক্ত রেওয়ায়েতগুলোতে -
(১) قال عليه السلام : اعتدلوا فى السجود و لا يبسط احدكم ذراعيه انبساط الكلب.
তোমরার স্থির চিত্তে সিজদা কর। তোমাদের কেউ যেন কুকুরের ন্যায় উভয় হাত জমিনে বিছিয়ে না দেয়।

এই রেওয়ায়েতে যদিও اصلا (প্রত্যক্ষ ভাবে ) পুরুষদের শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে; তথাপি تبعا বা পরোক্ষভাবে স্ত্রীলিঙ্গও উদ্দেশ্য হবে। যেমন اقيموا الصلاة وآتوا الزكوة এ শব্দদ্বয়ের মাঝে প্রত্যক্ষ ভাবে পুরুষ লিঙ্গের শব্দ ব্যবহৃত হওয়া সত্ত্বেও স্ত্রীলিঙ্গও উদ্দেশ্য হয়ে থাকে।

তবে মহিলাদের সতর ও পর্দার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে তাদেরকে এ ধরণের রেওয়ায়েতে বর্ণিত পদ্ধতি থেকে অব্যাহতি দিয়ে পুরুষদের পদ্ধতির ভিন্ন এমন পদ্ধতি অবলম্বন করতে বলা হয়েছে যা তাদের সতর রক্ষার জন্য অধিক সহায়ক।

নিুে এর কিছু দৃষ্টান্ত পেশ করছি যার দ্বারা প্রতীয়মান হবে যে, হাদিসের সাধারণ ভঙ্গি নারী পুরুষ উভয়কে নির্দেশ করা সত্ত্বেও পর্দা ও সতরের বিষয়টি বিবেচনায় উভয়কে একে অপরের ভিন্ন হুকুম প্রদাণ করা হয়েছে।

যেমন মহান আল্লাহ তায়ালার বাণী :
ولله على الناس حج البيت من استطاع اليه سبيلا
এ আয়াতে নারী-পুরুষ উভয়কেই হুকুমের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সুতরাং পুরুষ যে সকল কার্য সম্পাদন করে হজ্জ পালন করবে; নারীরাও তাই করবে। এতদসত্ত্বেও নিুোক্ত কিছু বিষয়ে উভয়ের মাঝে পদ্ধতিগত ভিন্নতা রয়েছে।

১। افضل الحج العج و الثج فالعج رفع الصوت بالتليية و الثج اسالة الدم

উত্তম হজ্জ হলো আজ্জ ও সাজ্জ । আজ্জ বলা হয, উচ্চস্বরে তালবীয়া পড়া আর সাজ্জ বলা হয় রক্ত প্রবহিত করা।
(বুখারী : ১/২১০, তিরমিযী : ১/১৭০, ইবনে মাজা : ২১০)

এই হাদিসে উচ্চস্বরে তালবিয়া পড়াকে উত্তম হজ্জ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এবং হাদিসের সাধারণ ভঙ্গি নারী-পুরুষ উভয়কে নির্দেশ করে। তথাপি নারীদেরকে ফেতনার আশংকা থাকার কারণে অনুচ্চস্বরে তালবিয়া পড়তে বলা হয়েছে।

২। لا تلبسوا القميص و لا السراويل و لا العمائم و لا البرانس و لا الخفاف

রাসূল সা. বলেন, তোমরা হজ্জের ইহরাম অবস্থায় সেলাইকৃত পাঞ্জাবী, পায়জামা, পাগড়ী, টুটি এবং মোজা পরিধান করবে না। (বুখারী : ১/৩৭২, তিরমিযী : ১/১৭১)

এই হাদিসের ভঙ্গিও নারী-পুরুষ উভয়কে নির্দেশ করে। তা সত্ত্বেও নারীদেরকে ইহরাম অবস্থায় সেলাই কাপড় পরিধান করতে বলা হয়েছে। সেলাই বিহীন কাপড় পরিধান করলে সতর খুলে যাওয়ার আশংকা থাকার কারণে।

৩। ارملوا بالبيت ثلاثا রাসূল সা. বলেন, তোমরা তাওয়াফ কালে তিনবার রমল (মুজাহদিদরে মত বুক ফুলিয়ে দুই বাহু ঝাকি দিয়ে চলা) কর।
(বুখারী : ১/২১৮, আবু দাউদ : ১/২৫৯)

এই হাদিসের ভঙ্গিও নারী-পুরুষ উভয়কেই নির্দেশ করা হয়েছে। তথাপি নারীদেরকে তওয়াফে রমল করতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা তা সতর ঢেকে রাখার ক্ষেত্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।

এখন আমরা প্রথম দলীলের দিকে যেতে পারি। তার (আলবানী সাহেবের) প্রথম দলীল صلو كما رايتمونى اصلى এর সম্পর্কেও আমরা একই কথা পূন:রাবৃত্তি করবো যে, এর সাধারণ ভঙ্গি যদিও নারী-পুরুষ উভয়কে নির্দেশ করে; (যেমনটা তিনি বলেছেন; আমরাও বলি) তথাপি পর্দা ও সতরের বিবেচণায় তাদেরকে এমন এক পদ্ধতিতে নামায আদায় করতে বলা হয়েছে যা, পুরুষদের পদ্ধতির চেয়ে ভিন্ন হওয়ার পাশাপাশি সতর রক্ষার জন্য অধিক সহায়ক হয়।

দ্বিতীয় দলীলের উত্তর

দ্বিতীয় দলীল সম্পর্কে বর্তমান যুগের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামা বিশদ আলোচনা করেছেন। আগ্রহী পাঠকের অবগতির জন্য তার হুবহু পূর্ণ ভাষ্য উল্লেখ করছি।
تقعد المرأة فى الصلاة كم يقعد الرجل ، هكذا جائت الكلمة (تقعد) مرتين فى النسخ كلها و تحرفت فى نسخة الظاهرية التى هى مختصر من المصنف ففيها ১/৮৬ تفعل المرأة ...... و هذا مخالف للنسخ و لا يتفق مع عنوان الباب و مخالف لما تقدم برقم (২৭৯৮) من ان للمرأة هيئة خاصة فى بعض موافق صلوتها تختلف فيها مع الرجل و وقع فى هذا التحريف صاحب صفة صلاة النبى صلى الله عليه وسلم الخ فى الخاتمة التى كتبها فى كتابه هذا ص : ২০৭ من الطبعة الثامنة و غلط فى نسبة القول الى المصنف فكانه كان يظن نسخة الظاهرية التى هى مختصر اصلا.
অর্থাৎ সঠিক ইবারত تفعل المرأة فى الصلوة كما يفعل الرجل এভাবে নয় বরং تقعد المرأة فى الصلوة كما يقعد الرجل এভাবে; যা মুসান্নাফের সকল নুসখায় (সংস্করনে) এসেছে। নুসখাতুছ ছাহিবায়্যাহ যা মুসান্নাফের সংক্ষিপ্ত নুসখা (সংস্করণ) তাতে শুধু প্রথমোক্ত ইবারাত এসেছে। যা বিকৃত এবং অন্যান্য সকল সহীহ নুসখার পরিপন্থী। উপরন্তু তা বাবের শিরোনামের সাথে অসামঞ্জস্যশীল হওয়ার পাশাপাশি ২৭৯৮ নং হাদিসে বর্ণিত বক্তব্য “নামাযে কিছু ক্ষেত্রে মহিলাদের বিশেষ কিছু বিধান বা পদ্ধতি রয়েয়ে যা পুরুষদের বিধান বা পদ্ধতি থেকে ভিন্ন” এর পরিপন্থীও বটে। ছিফাতুস সালাত এর রচয়িতা আল্লামা নাছিরুদ্দীন আলবানী সাহেব উক্ত গ্রন্থের খাতেমায় (পরিশিষ্ট) আলোচনা করতে গিয়ে এই ভুলের মধে পতিত হয়েছেন। এবং তিনি নুছখাতুছ ছাহিবিয়্যাহ কে মুসান্নাফের মূল নুসখা (সংস্করণ) ধারণা করে মুসান্নাফের উদ্ধৃতি দিতে গিয়ে ভুল করেছেন।
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা - তাহকীক : মুহাম্মাদ আওয়ামা ২/২০৭)

প্রিয় পাঠক ! تفعل المرأة فى الصلاة كما يفعل الرجل এবং تقعد المرأة كم تقعد الرجل এবারতদ্বয়ের অর্থ এক নয়। প্রথমোক্ত ইবারাতের অর্থ হল, মহিলারা নামাযে তাই করবে যা পুরুষেরা করে। এতে সর্বক্ষেত্রে উভয়ের পদ্ধতি এক হওয়া বুঝা যায়। আর দ্বিতীয় ইবারাতের অর্থ হল, মহিলারা নামাযে পুরুষের ন্যায় বসবে। এতে শুধু বসা ক্ষেত্রে উভয়ের পদ্ধতি এক হওয়া বুঝায়। প্রথমোক্ত এবারত শায়েখ মুহাম্মাদ আওয়ামা রহ. এর আলোচনা দ্বারা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এবং দিতীয় এবারাত সঠিক প্রমাণিত হয়েছে; যা শুধু বসার ক্ষেত্রে উভয়ের পদ্ধতি এক হওয়া বুঝায়।

এখন আমরা এর উত্তরে বলবো যে, এটা নিছক তার (ইব্রাহীমে নাখয়ীর) একক অভিমত যা মারফু হাদিস, আছার ও সংখ্যাগরিষ্ঠ উলামায়ে কেরামের তায়ামুল এর বিপরীত; তাই গ্রহণযোগ্য হবে না।

তৃতীয় দলীলের উত্তর

আলবানী সাহেব তৃতীয় দলীরেল দুটি وجه استدلال থাকতে পারে। প্রথমত : উম্মুদ দারদা রা. এর এই রেওয়ায়েত নারী -পুরুষের উভয়ের নামায আদায়ের পদ্ধতি এক ও অভিন্ন হওয়া বুঝায়। দ্বিতীয়ত : অপার্থক্য সম্বলিত এই রেওয়ায়েত বুখারী শরীফে রয়েছে। পক্ষান্তরে পার্থক্য সম্বলিত রেওয়ায়েত হাদিসের অন্যান্য গ্রন্থে রয়েছে; বুখারীতে নেই। আর যে হাদিস বুখারী কিংবা মুসলিমে থাকে তা অন্যান্য কিতাবের হাদিসের চেয়ে অগ্রগন্য।


প্রথম ওয়াজহে ইসতিদলালের জবাব

আমরা বলি যে, উম্মুদ দারদা উপরোক্ত রেওয়ায়াত নারী-পুরুয়ের নামায আদায়ের পদ্ধতি এক ও অভিন্ন হওয়া বুঝায় না। বরং ভিন্ন হওয়াই বুঝায়। আর তা এই ভাবে যে, ছাহাবী মহিলাগণ এবং তাবেয়ী মহিলাগণ নামাযে বসার ক্ষেত্রে (রাসূল সা. থেকেপ প্রাপ্ত শিক্ষা অনূসারে) যে স্বীকৃত পদ্ধতি অবলম্বন করে বসতেন, তিনি (উম্মু দারদা) সে পদ্ধতি (বিশেষ কোন এক কারণে) পরিহার করে পুরুষদের ন্যায় বসতেন; যা ছিল অস্বাভাবিক এবং ব্যতিক্রমধর্মী। এই কারণে তার উক্ত পদ্ধতি ইতিহাসে স্থান পেয়েছে। এবং তার সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তিনি পুরুষদের ন্যায় বসতেন।

পক্ষান্তরে সেই যুগের সকল মহিলারা পুরুষদের পদ্ধতির ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে বসতেন। যা ছিল স্বাভাবিক এবং হুজুর সা. থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা মোতাবিক। অতএব উম্মুদ দারদার একক পদ্ধতির প্রতি কর্ণপাত না করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মহিলারা যে পদ্ধতি অবলম্বন করে আসছে তা গ্রহণ করাই হবে শ্রেয়।

সর্বোপরি, যদি ধরেও নেওয়া হয় যে, উম্মুদ দারদার রেওয়ায়েত নারী-পুরুষের নামায আদায়ের পদ্ধতি এক ও অভিন্ন হওয়াটাই বুঝায়; তাহলে আমরা বলবো যে, তিনি বিশুদ্ধ মত অনূসারে তাবেয়ীয়াহ (মহিলা তাবেয়ী) ) ছিলেন। ছাহাবিয়াহ (মহিলা ছাহাবী ) ছিলেন না। তার রেওয়ায়েত দ্বারা শুধু বসার ক্ষেত্রে পুরুষ-মহিলার বিধান এক হওয়া বুঝা যায়, সর্বক্ষেত্রে এক হওয়া বুঝা যায় না। তিনি তার উক্ত আমলের সমর্থণে না কোন হাদিস উল্লেখ করেছেন; না কোন ছাহাবী বা তাবেয়ীর বক্তব্য। এতে প্রমাণিত হয় যে, উক্ত তার ব্যক্তিগত আমল ছিল। আর তাবেয়ীগণের বক্তব্যের ব্যাপারে উসূল বা মূলনীতি হল, তাদের একক বক্তব্য - যদিও তা হাদিস এবং সাহাবায়ে কেরামের বক্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক না হয়- তাহলে তা প্রমাণের যোগ্যম নয়। যেমন, শাইখুল হাদিস আল্লামা যাকারিয়া রহ. বলেন,
وعمل التابعى بمفرده و لو لم يخالف لا يحتج به

তাবেয়ীগণের একক আমল যদিও তা সাংঘর্ষিক না হয়- তা প্রমান যোগ্য নয়।
(এলাউস সুনান: ৩/৩৩, লামেউদ দারারী - ১/৩৩১)

অদিকন্তু তার উক্ত আমল হাদিস, আছার ও তায়ামুলের সাথে সাংঘর্ষিক। সুতরাং কিছুতেই তা কর্ণপাত যোগ্য হবে না।

একটি প্রশ্ন ও তার উত্তর

এখানে একটি প্রশ্ন হতে পারে যে, স্ত্রী উম্মুদ দারদার উক্ত আমল সম্পর্কে তার স্বামী আবুদ্দারদা অবগত ছিলেন এবং তা সমর্থণ করেছেন। ফলে উক্ত আমল ছাহাবীর সমর্থণে সমর্থিত হওয়া বুঝা যায়।

উত্তর : প্রথমত: স্ত্রীর সকল কার্যকলাপ সম্পর্কে স্বামীর অবগত থাকা আবশ্যক নয়। অনেক সময় এমন হয় যে, স্ত্রী কি করে স্বামী সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ উদাসীন ও অনবগত থাবে। এখানেও সম্ভবত তিনি স্ত্রীর উক্ত আমল সম্পর্কে অনববগত ছিলেন। যদি ধরেও নেয়া হয় যে তিনি অবগত ছিলেন এবং তা সমর্থণও করেছেন; তাহলে তা হবে উক্ত ছাহাবীর তাকরীর ( সমর্থণ) যা অন্যান্য ছাহাবীদের স্পষ্ট বক্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক। আর এটা সর্বজন স্বীকৃত উছুল যে القول مقدم على التقرير সমর্থণের চেয়ে বক্তব্য অগ্রগন্য।

দ্বিতীয় وجه استدلال এর উত্তর:

কোন হাদিস শুধু একারণেই গ্রহণযোগ্য হওয়া যে তা সহীহ বুখারীতে কিংবা সহীহ মুসলিমে রয়েছে : এটা একটি শ্লোগান হতে পারে; উসুলে হাদিসের ভিত্তি হতে পারে না। কেননা ইমাম বুখারী এবং ইমাম মুসলিম রহ. এই দাবী করেন নি যে, তারা তাদের গ্রন্থে সকল সহীহ হাদিস সংকলন করেছেন। বরং সহীহ বুখারী এবং সহীহ মুসলিম এর বহিরেও অনেক সহীহ হাদিস বিদ্যমান রয়েছে। স্বয়ং ইমাম বুখারী রহ. তা স্বীকারও করেছেন। তিনি বলেন,
ما ادخلت فى كتاب الجامع الا ما صح و تركت من الصحاح لحال الطول

সহীহ বুখারীতে শুধু সহীহ হাদিসই উল্লেখ করেছি। কিতাবের কলেবর বড় হওয়ার আশংকায় অনেক সহীহ হাদিস ছেড়ে দিয়েছি।
(শুরুতুল আইম্মাতিস সিত্তাহ : ৭১, সিয়ার : ১০/৮৫)

ইমাম মুসলিম রহ. এর ভাষায়,
ليس كل شيئ عندى صحيح وضعته ههنا انما وضعت ههنا ما اجمعوا عليه
আমার কাছে যে হাদিসগুলো সহীহ তার সবগুলোই আমি এ কিতাবে উল্লেখ করিনি। কেবল সেই হাদিসগুলোই উল্লেখ করেছি যেগুলো সহীহ হওয়ার ব্যাপারে হাদিস বিশরদগণ একমত পোষণ করেছেন। (মুসলিম : ১/৭৪)

মোট কথা সহীহ বুখারী ও মুসলিমে উল্লেখযোগ্য সহীহ হাদিস সংকলিত হয়েছে; তবে এর অর্থ এই নয় যে, এর বাহিরে আর কোন সহীহ হাদিস নেই। বরং এর বাইরেও সহীহ হাদিসের অনেক কিতাব রয়েছে। যার সংকলকগণ সহীহ কিংবা হাসান হাদিস উল্লেখ করার এলতেযাম করেছেন। যেমন, মুয়াত্তা ইমাম মালিক রহ., কিতাবুল আছার লি ইমাম আবু হানিফা, সহীহ ইবনে খুযাইমা, সহীহ ইবনে হিব্বান, আল মুখতারা জিয়াউদ্দীন আল মাকদিসী, আল মুসতাদরাক আলাস সহিহাইন, হাকিম আবু আবদুল্লাহ নায়সাপুরী রহ. প্রমূখ।


আহলে হাদিসের এক সময়ের মুখপাত্র আল্লামা শাওকানী রহ. রফয়ে ইয়াদাইন এর মাসআলা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন,
اعلم ان هذه السنة تشترك فيها الرجال والنساء ولم يرد ما يدل على الفرق بينهما و كذا لم يرد ما يدل على الفرق بين الرجل والمرأة فى مقدار الرفع و روى عن الحنفية ان الرجل يرفع الى الاذنين و المرأة الى المنكبين ، لانه استر لها ، ولا دليل على ذلك كم عرفت ، (نيل الاوطار : ২/৫৪০)

নামাযে তাকবিরে তাহরিমার সময় হাত উত্তোলনের বিষয়ে পুরষ মহিলার বিধান এক ও অভিন্ন। উভয়ের মাঝে পার্থক্যকারী কোন হাদিস বর্ণিত হয়নি। যেমনিভাবে হাত উত্তলোনের পরিমাণের ক্ষেত্রে কোন হাদিস বর্ণিত হয়নি। সুতরাং হানাফী উলামাগণের এমন দাবী -পুরুষরা কান পর্যন্ত আর মহিলারা কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠাবে- এর সপক্ষে কোন হাদিস নেই। (নাইলুল আওতার : ২/৫৪০)
এখানে আল্লাম শাওকানী রহ. رفع يدين ও مقدار رفع يدين এই দুই ক্ষেত্রে পুরুষ মহিলার মাঝে পার্থক্য না থাকার কথা বলেছেন। সামগ্রিক ভাবে অন্যান্য ক্ষেত্রেও পার্থক্য হবে না এমন কথা কিন্তু তিনি বলেন নি। উক্ত দুই ক্ষেত্রে পার্থক্য না থাকার কারণ হিসাবে বলেছেন যে, পার্থক্যকারী কোন হাদিস নেই।

অথচ, পূর্বে আমরা পার্থক্যকারী মারফু এবং মাওকুফ হাদিস উল্লেখ করেছি। সুতরাং তার এমন দাবী হাদিসে নববী সম্পর্কে ক্ষীণ দৃষ্টির পরিচায়ক বৈ কিছুই নয়।

শাইখুল হাদিস আল্লামা যাকারিয়া রহ. বলেন,
فما قال الشوكانى و غيره لا دليل للحنفية على الفرق بينهما غلط ناشئ عن قلة النظر منه .
অর্থাৎ নারী-পুরুষের মাঝে পার্থক্যকারী কোন হাদিস নেই - শাওকানী সাহেবের এমন দাবী সঠিক নয়। যা হাদিসে নববী সম্পর্কে ক্ষীণ দৃষ্টির কারণে সৃষ্টি হয়েছে।
(আওযাজুল মাসালেক : ২/৫৮)

অধিকন্তু আল্লামা শাওকানী রহ. পুরুষ-মহিলার নামায আদায়ের পদ্ধতি অভিন্ন হওয়ার কথা বলে সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে বিভ্রান্ত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন। যেমনিভাবে মুসলিম উম্মাহর জন্য চারের অধিক স্ত্রী রাখা বৈধ ফতোয়া দিয়ে এবং চার ইমাম অনুসারীদেরকে কাফের বলে আখ্যায়িত করে বিভ্রান্ত করেছেন।

আল্লামা ইবনু হুরায়ওয়াহ রহ. তার মুখোশ উম্মোচন করে বলেন,
انه يهودى مندس بين المسلمين لافساد دينهم
তিনি (শাওকানী)Ñ দ্বীনের মাঝে বিকৃতি সাধনের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর সাথে প্রতারণা করেছেন।
আল্লামা জাহেদ কাওসারী রহ. তার সম্পর্কে বলেন,

والشوكانى و الامير صغانى ليسا على مناهج اهل البيت ولا على مسالك ائمة السنة فى الفقه بل هما مضطربان فيه على قلة بضاعتهما فى الحديث و فقرهما من جهة الكتب رغم تشبيعهما بما لم يعطياه (مقالات كرثرى : ১৩২)

তাই মুসলিম উম্মাহর একান্ত কর্তব্য হলো, তার কথার প্রতি কর্ণপাত না করে দ্বীনের সংখ্যাগরিষ্ঠ উলামায়ে কেরামের অভিমত গ্রহণ কর।

৩। শাফেয়ী মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইবনু রুসলান বলেন,
التفريق بين الرجل والمرأة لم يقل به الا الحنفية كذا فى اوجز ২/৫৮
অর্থাৎ শুধু হানাফী ওলামাগণ (নামাযে) পুরুষ মহিলার বিধান ভিন্ন হওয়ার কথা বলেন,
(আওযাজুল মাসালিক : ২/৫৮)

নামাযে হাত উত্তোলন প্রসঙ্গে তিনি উক্ত কথাটি বলেছেন। এর দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে তার মতে শুধু হাত উত্তোলনের ক্ষেত্রে উভয়ের মাঝে কোন পার্থক্য নেই্। এরপর তিনি হানাফী ওলামা সম্পর্কে অভিযোগ আরোপ করে বলেন যে, উক্ত ক্ষেত্রে পার্থক্যের কথা কেবল তারাই বলেছেন। এটা তাদের একক অভিমত।
তার এই অভিযোগ বাস্তবসম্মত নয়। কারণ ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ. ও উক্ত ক্ষেত্রে একই মত পোষণ করেন। যেমন হাম্মলী মাযহাবের প্রখ্যাত গ্রন্থ আল মুগনীর ১/১৮ তে রয়েছে -
فاما المرأة فذكر القاضى فيها روايتين عن احمد : احديهما ترفع قليلا قال احمد رفع دون رفع و الثانية لا ترفع بل تجمع نفسها فى الركوع والسجود و سائر صلوتها.


৪। সম্প্রতি প্রখ্যাত আহলে হাদিস মুখপাত্র ড. আসাদুল্লাহ আল গালিব তার “সালাতুর রসুল” নামক গ্রন্থে লিখেছেন, পুরুষ ও মহিলাদের সালাতের মধ্যে পদ্ধতিগত কোন পার্থক্য নেই। সালাতে নারীরাও পুরুষের অনগামী। নবী করীম সা. বলেন, صلو كما رأيتمونى اصلى ঠিক সেভাবে নাময পড় যেভাবে আমাকে তোমরা পড়তে দেখ।

মসজিদে নববীতে নারী-পুরুষ সকলে তার পিছনে একই পদ্ধতিতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ও জুমা পড়তেন। উদ্ধৃতি নায়লুল আওতার : ১৫২
(ছালাতুর রসুল : ১৪৩)

পর্যালোচনা : ড. গালিব সাহেব পুরুষ-মহিলার নামায আদায়ের পদ্ধতি অভিন্ন হওয়ার ব্যাপারে দুটি যুক্তি তুলে ধরেছেন। প্রথমত : صلوا كما رأيتمونى اصلى হাদিসের সাধারণ ভঙ্গি পুরুষ মহিলা উভযকেই অন্তর্ভুক্ত করে। দ্বিতীয়ত : পুরুষ মহিলা সকলেই হুজুর সা. এর পিছনে একই পদ্ধতিতে নামায আদায় করেছেন। প্রমাণ স্বরুপ নাইলুল আওতার গ্রন্থের রেফারেন্স দিয়েছেন।
প্রথম যুক্তি সম্পর্কে বলব যে, উক্ত হাদিসের সাধারণ ভঙ্গি নারী-পুরুষ উভয়কে শামিল করলেও পর্দা ও সতরের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে মহিলাদেরকে কিছু ক্ষেত্রে পুরুষদের ভিন্ন হুকুম প্রদান করা হয়েছে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা পৃষ্ঠায় করা হয়েছে।

দ্বিতীয় যুক্তি সম্পর্কে বলব যে, নারী পুরুষ উভয়ে হুজুর সা. এর পিছনে নামায পড়ত ঠিক কিন্তু একই পদ্ধতিতে পড়ত তা ঠিক নয়। কেননা মহিলার কোন পদ্ধতিতে নামায আদায় করবে তা হযরত আলী রা. সহ অনেক সাহাবায়ে কেরাম রা. হুজুর সা. থেকে শুনে বর্ণনা করেছেন। আর তারা মহিলাদের জন্য পুরুষদের চেয়ে ভিন্ন পদ্ধতির কথাই বর্ণনা করেছেন।

এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, তাদের থেকে বর্ণিত পদ্ধতিতেই হুজুর সা. এর যুগে প্রচলিত ছিল। এবং মহিলারা সে পদ্ধতি অনুসারেই নামায পড়ত। সুতরাং একথা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা যায় যে, হুজুর সা. এর যুগে মহিলারা তার পিছনে পুরুষদের পদ্ধতির চেয়ে ভিন্ন পদ্ধতিতে নামায আদায় করত। একই পদ্ধতিতে নয়।

আর তিনি নায়লুল আওতার নামক গ্রন্থের যে উদ্ধৃতি দিয়েছেন, এর দ্বারা তার উল্লেখিত বক্তব্য প্রমাণিত হয়না। বরং শুধু একটুকু প্রমাণিত হয় যে, হাত উত্তোলনের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ এর বিধান এক ও অভিন্ন। এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা পৃষ্ঠায় করা হয়েছে।

৫। সম্প্রতি আহলে হাদিসের প্রকাশিত আবদুল হামীদ ফাইযীর এর রচনায় “মহিলাদের নামায” নামক গ্রন্থে নারী-পুরুষের নামায এর পদ্ধতি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, নারী-পুরুষের নামায আদায়ের পদ্ধতি একই প্রকার। সুতরাং মহিলারাও সেরুপ একই পদ্ধতিতে নামায পড়তে যেরুপ পুরুষ আদায় করে থাকে। কারণ নারী ও পুরুষ উভয় জাতিকে সম্বোধন করে নবী করীম সা. বলেছেন, صلوا كما رأيتمونى اصلى তোমর ঠিক সেভাবে নামায আদায় কর যেভাবে আমাকে আদায় করতে দেখ।

সুতরাং যে আদেশ শরিয়াত পুরুষদেরকে দিয়েছে সে আদেশ মহিলাদের জন্য এবং সাধারণ আদেশ মহিলাদেরকে দিয়েছে তাও পুরুষদের ক্ষেত্রে পালনীয়; যদি বিশেষ হওয়ার ব্যাপারে কোন হাদিস না থাকে। যেমন .......... সুতরাং মহিলারাও তাদের নামাযে পুরুষদের মতই হাত তুলবে, পিঠ লম্বা করে রুকু করবে, সিজদায় জমিন হতে পেট উঠিয়ে রাখবে, তাশাহুদেও সেরুপ বসবে যেরুপ পুরুষেরা বসে।

উম্মুদ দারদা রা. থেকে বর্ণিত انها كانت تجلس فى الصلوة جلسة الرجل و كانت فقيهة
তিনি নামাযে পুরুষদের ন্যায় বসতেন এবং তিনি ফকীহ তথা ধর্মজ্ঞানের অধিকারিণী ছিলেন।

আর মহিলাদের জড়সড় হয়ে সিজদা করার ব্যাপারে কোন সহীহ হাদিস নেই। এই জন্যই ইব্রাহীম নাখয়ী রহ. বলেন, تفعل ا لمرأة فى الصلاة كما تفعل الرجل
অর্থাৎ মহিলারা নামাযে তাই করবে যা পুরুষেরা করে থাকে।

পক্ষান্তরে দলীলের ভিত্তিতেই নামাযের কিছু ব্যাপারে মহিলারা পুরুষদের থেকে ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করবে। যেমন,
১। মহিলারা অনুচ্চস্বরে কেরাত পড়বে।
২। মহিলা ইমাম কাতারের মাঝখানে দাড়াবে।
৩। ইমামমে সংশোধনকালে মহিলারা তাছফীক করবে।
৪। মহিলারা চুল বেধে নামায পড়বে।
(মহিলাদের নামায: আবদুল হামীদ ফায়যী: ;৭৫-৭৮ )

পর্যালোচনা : গ্রন্থকার পুরুষ মহিলাদের নামায আদায়ের পদ্ধতি অভিন্ন হওয়ার ব্যাপারে কয়েকটি যুক্তি পেশ করেছেন। নিুে যুক্তিগুলো উত্তর সহ উল্লেখ করা হলো :
ক. صلوا كما رأيتمونى اصلى এর সাধারণ ভঙ্গি নারী-পুরুষ উভয়কে সমানভাবে অন্তর্ভুক্ত করে।
উত্তর : যদিও উক্ত হাদিসের সাধারণ ভঙ্গি উভয়কে সমান ভাবে অন্তর্ভুক্ত করে, তথাপি সতরের বিবেচনায় নারীকে পুরুষদের ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। বিস্তারিত পৃষ্ঠায়।

২। বিশেষ হওয়ার দলীল না থাকলে পুরুষদের যে পদ্ধতি তা নারীদের ক্ষেত্রেওে প্রযোজ্য হবে।
উত্তর : এখানে বিশেষ হওয়ার দলীল বিদ্যমান রয়েছে। যা ইতিপূর্বে আমরা উল্লেখ করেছি। সুতরাং ঐ সব দলীলের ভিত্তিতে উভয়কে বিশেষ বিধান প্রদান করা হয়েছে।

৩। উম্মুদ দারদা এর রেওয়ায়েত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নারী -পুরুষ উভয়ের বসার পদ্ধতি অভিন্ন।
উত্তর : উক্ত রেওয়ায়েতের বিস্তারিত আলোচনা পৃষ্ঠায় করা হয়েছে।

৪। মহিলাদের জন্য সংকুচিত হয়ে সিজদা করার হাদিসটি সহীহ নয়।
উত্তর : ছহীহ নয় ঠিক কিন্তু তা দলীল হওয়ার যোগ্য। বিস্তারিত পৃষ্ঠায়।

পরিশেষে সম্মানিত লেখক এটা স্বীকার করেছেন যে, দলীলের ভিত্তিতে নামাযে কিছু ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বিধান ভিন্ন ভিন্ন। অত:পর তিনি ঐ সব ক্ষেত্রগুলো সবিস্তারে উল্লেখ করেছেন।

আমরা বলব, তার উল্লেখিত ক্ষেত্রগুলোতে যেমনিভাবে উভয়ের বিধান ভিন্ন হওয়ার দলীল রয়েছে; ঠিক তদ্রুপ তাকবিরে তাহরীম, রুকু, সিজদা সহ পার্থক্যের অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতেও ভিন্নতার দলীল রয়েছে; যা ইতিপূর্বে আমরা উল্লেখ করেছি।



মহিলাদের বিশেষ পদ্ধতিতে নামায আদায়ের হুকুম

বক্ষমান গ্রন্থে মহিলাদেরকে যে বিশেষ পদ্ধতিতে নামায পড়তে বলা হয়েছে তা তাদের জন্য মুস্তাহাব (আবশ্যক নয়)

প্রখ্যাত মুসলিম মনীষিদের নিুোক্ত বর্ণনাগুলোই মুস্তাহাব হওয়ার প্রমাণ হিসেবে যথেষ্ট :
(১) باب ما يستحب للمرأة من ترك التجافى (السنن الكبرى : ৩/৭৪)
(২) غير ان للمرأة خالفت الرجل فى ترك التجافى لانها عورة فاستحب لها جمع نفسها ليكون استر لها فانه لا يؤمن ان يبدو عنها شيئ حال ا لتافى (المغنى : ২/১১৬)
(৩) بخلاف المرأة فانها تضع يديها على صدرها لانه استر لها فيكون فى حقها اولى - (اعلاء السنن : ২/১৯৯)

তাদের শরীরের কোন অংশ যেন প্রকাশ পেয়ে না যায় সে জন্যই তাদেরকে এই বিশেষ পদ্ধতিতে নামায পড়তে বলা হয়েছে। এ সম্পর্কে আল্লামা আমীন ছফদর রহ. বলেন,

অর্থাৎ মহিলাদের নামাযে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, সতরের বিষয়। এ জন্য যে পদ্ধতিতে নামায আদায় করলে সতর বেশী রক্ষা হবে সে পদ্ধতিতে মহিলাদের নামায আদায় করা আল্লাহ তায়ালার নিকট সর্বাধিক পছন্দনীয় হবে। এবং ক্ষমা প্রাপ্তির কারণ হবে।

মোদ্দাকথা হলো, শরিয়ত মহিলাদের জন্য এই রীতি নির্ধারণ করেছে যে তারা এমন পদ্ধতি অবলম্বন করে নামায আদায় করবে যার ফলে সতর অধিক রক্ষা হয়।
(তাজাল্লিয়াতে সফদার : ১/৩০০)


নামায নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হওয়া

সম্প্রতি ল মাযহাবী গায়রে মুকাল্লিদ বন্ধুদের মাঝে এই প্রবণতা অধিক মাত্রায় পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, কোন মহিলা যখন চার ইমামগণের মাযহাব অনুসরণ করে পুরুষদের চেয়ে ভিন্ন পদ্ধতিতে নামায আদায় করে; তখন তারা বলে যে, তার নামায হয় নাই। নারী-পুরুষ উভয়কে একই পদ্ধতিতে নামায আদায় করতে হবো। এভাবে তারা কোমলমতি নারী সহ সর্বসাধারণকে বিভ্রান্ত করছে এবং দিধা দ্বন্দ্বের দিকে এগিয়ে দিচ্ছে।

অথব সর্বসাধারণকে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের দিকে এগিয়ে দেয়া মোটেই ঠিক নয়। এ সম্পর্কে আল্লাম আমীন ছাফদার রহ. যা বলেছেন তা উল্লেখ করার লোভ সংবরণ করতে পারলাম না। তার ভাষায় -

অর্থাৎ প্রথমে যখন কেউ গায়রে মুকাল্লিদ হয় তখন তার প্রথম কাজ হয় চৌদ্দশত বছর ধরে চলে আসা নামাযকে ভুল সাব্যস্ত করা। এবং এক নতুন নামায গায়রে মুকাল্লিদদেরকে উপহার দেওয়া যা অবিচ্ছিন্নভাবে চলে আসা নামাযের পরিপন্থি। যেন মুসলমানরা দৈনন্দিন অন্তত পাঁচবার পরস্পর বাক বিতন্ডায় লিপ্ত হয়। এবং সকল মসজিদ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। তাদের মধ্যে যারা শুধু উর্দু ভাষী তারা উর্দু তরজমা সামনে রেখে এক নতুন নামায উদ্ভাবন করে। কখন তার নাম রাখে “ছালাতুর রসুল” আবার কখনও সালাতুন নবী, কখনও “পিয়ারে নবী কি পিয়ারী নামায” ইত্যাদি। অনূরুপ ভাবে কখনও তারা চার ইমামগণ থেকে বর্ণিত নামাযকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং এক নতুন নামায সর্ব সাধারণকে দান করে।

আল্লামা আলবানী সাহেবও গায়রে মুকাল্লিদ হয়ে স্বীয় দায়িত্ব পালন করে এবং صفة صلاة النبى من التكبير الى التسليم كانك تراه নামক গ্রন্থ রচনা করেন।
(তাজাল্লিয়াতে ছফদার : ৩/২৭৬)

মোটকথা তারা মুসলিম উম্মাহ কে বিভ্রান্ত এবং তাদের পারস্পরিক ঐক্য বিনষ্ট করে বিভেদ ও বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে।

অথচ পারস্পরিক ঐক্যবদ্ধতা যে কত প্রশংসনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ তা বলাই বাহুল্য। তাদেরই অনুসরনীয় ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন,
الاجتماع و الالتئام من اعظم امور التى اوجبها الله و رسوله
পারস্পরিক ঐক্যবদ্ধতা ও সহমর্মিতা ঐসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদীর মধ্যে হতে একটি যা আল্লাহ ও তার রাসূল সা. আবশ্যকীয় করেছেন।
(মাযমুয়া ফাতাওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া : ২২/২১১)

তিনি অন্যত্র বলেন,
يستحب للرجل اي يقصد الى تاليف القلوب
প্রত্যেকের জন্য করণীয় হলো সামাজিক ঐক্যবদ্ধতা ও সহমর্মিতা বজায় রাখার চেষ্টা কর। কোন বিভেদ বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি না কর।

(মাযমুয়া ফাতাওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া : ২২/২১১)


পরিশিষ্ট

আহলে হাদিসদের পরিচয় ও আহলে হাদিস শব্দের অপপ্রয়োগ

যেহেতু আলোচ্য বিষয়টিকে আহলে হাদিস নাম ধারী সম্প্রদায় ব্যতীত আর কেউ অস্বীকার করেনা। তাদের মতে নারী-পুরুষের একই পদ্ধতিতে নামায আদায় করতে হবে। তাই তাদের সম্পর্কে সম্যক আলোচনা করা প্রয়োজন বোধ করছি। যাতে সর্ব সাধারণ মানুষ তাদের পাতানো ফাদে ফেসে না যায়।

১২৪৬ হিজরীর পর বৃটিশ শাষিত ভারত বর্ষে ইংরেজ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও ছত্রছায়ায় আত্মপ্রকাশ ঘটে আহলে হাদিস নামধারী দলটির।
তাদের ভ্রান্ত অপতৎপরাত লক্ষ করে জনগণ যখন তাদেরকে ওহাবী বলতে থাকে; তখন তারা নিজেদেরকে মোহাম্মাদী বলে ঘোষণা করে। সর্বশেষে আহলে হাদিস নাম ধারণ করে এবং রীতিমতো ইংরেজ সরকারের তরফ থেকে উক্ত নামের বৈধতা সনদও হাসিল করে।

খোদ আহলে হাদিসের একেবারে ঘরের মানুষ মৌলভী আসলাম জিরাজপুরী লিখেন,

উদ্দু

প্রথমদিকে এই দল নিজেদের জন্য বিশেষ কোন নাম নির্ধারণ করেন নি। মাওলান সায়্যিদ আহমাদ শহীদ এর মৃত্যুর পর যখন বিরদ্ধবাদীরা দূর্ণাম রটানোর জন্য তাদেরকে ওহাবী বলতে লাগলো তখন তার নিজেদেরকে মুহাম্মাদী নামে পরিচয় দিতে লাগল। পরিশেষে আহলে হাদিস খেতাব নির্বাচন করল। যা আজ পর্যন্ত বলবৎ রয়েছে।
(নাওয়াদিরাত : ৩৪২)

এতো ছিল, তাদের সম্যক পরিচয় এবার মূল শিরোনামের দ্বিতীয় অংশ নিয়ে আলোচনা করা যাক। আহলে হাদিস দলটির মতে আহলে হাদিস উপাধি লাভের জন্য হাদিস সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান থাকারও প্রয়োজন নাই্ । বাস্তব জীবনে তদানুযায়ী আমলের আবশ্যকতা বরং শরিয়াত সম্পর্কে অজ্ঞ-মূর্খ যে কোন সাধারণ মানুষও তাদের পাঠশালায় ভর্তি হয়ে অনায়াসে এই উপাধি লাভ করতে পারেন এই শর্তে যে, সে শরীয়াতের বিধি বিধান জানার জন্য কোন ইমাম বা মুজতাহিদের অনুসরণ করবে না।

“রদ্দে গায়রে মুকাল্লিদিয়্যাত” এর রচয়িতার ভাষায় -
এদের মতে আহলে হাদিস হওয়ার অথ হল একজন সাধারণ মানুষের কোরআন ও সুন্নাহ সম্পর্কে অনভিজ্ঞ হওয়া সত্ত্বেও দ্বীন বুঝা ও শরিয়াতের বিধি বিধান জানার জন্য কোন ইমাম বা মুজতাহিদের অনূসরণ না করা। (পৃ. ২২)

প্রিয় পাঠক ! তারা যেভাবে আহলে হাদিস শব্দটির সঙ্গায়িত করেছে এতে উক্ত শব্দের অপপ্রয়োগই হয়েছে। বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে সত্যিকার আহলে হাদিসের পরিচয় শিরোনামের লেখার প্রতি চোখ রাখলে।

সত্যিকার আহলে হাদিসের পরিচয়

হাদিস বর্ণনা, হাদিস সংরক্ষণ ও পর্যবেক্ষণ, হাদিসের পঠন-পাঠন, হাদিস মুখস্ত, ফিকহে হাদিস তথা হাদিসের মর্মবাণী অণূধাবন সহ হাদিসের খেদমত ও চর্চায় নিয়োজিত ব্যক্তিদেরই আহলে হাদিস বা আসহাবে হাদিস বলা হয়। চাই সে যে মাযহাবেরই হোক না কেন?

হাদিস ইসলামী জ্ঞানের একটি বিশেষ তবকা বা বিভাগ। যেমনিভাবে নাহব (আরবী ব্যবরণ শাস্ত্র) ছরফ (শব্দ প্রকরণ শাস্ত্র) বালাগাত (অলঙ্কার শাস্ত্র) ইত্যাদি ইসলামী জ্ঞানের একটি বিভাগ।

এসব বিভাগে পারদর্শী ব্যক্তিকে যথাক্রমে আহলে নাহব, আহলে সরফ, আহলে বালাগাত, বলা হয়। তদ্রুপ ইলমে হাদিসে পারদর্শী ব্যক্তিকে আহলে হাদিস বলা হয়।

আর যার মাঝে নাহব-সরফ-বালাগাত ইত্যাদি শাস্ত্রের আহলিয়াত বা যোগ্যতা থাকে না; তাকে যেমন আহলে নাহব, আহলে সরফ, আহলে বালাগাত বলা যায় না। ঠিক তদ্রুপ মুহাদ্দিসিনে কেরামে হাদিস শাস্ত্রে পারদর্শিতার কারণে আহলে হাদিস বলা গেলেও যাদে মাঝে ন্যূনতম এই ইলমের ধারণা মাত্র নেই; তাদেরকে আহলে হাদিস বা মুহাদ্দিস বলা কিছুতেই সঙ্গত হবে না।

আহলে হাদিস এ নামটি বিশেষ কোন দল বা গোষ্ঠির উপাধি হতে পারে না। বরং হাদিস শাস্ত্র যাদের জীবনের অবিচ্ছিন্ন অংশ হয়ে গেছে কেবল তাদেরই উপাধি হতে পারে।
বলা বাহুল্য হাদিস শাস্ত্রের সাথে অন্যদের যত টান ও সম্পৃক্ততা তার চেয়ে অনেক বেশী সম্পৃক্ততা মুহাদ্দিসিনে কেরামের রয়েছে।

তাই তাদের মুহাদ্দিস নামে নামকরণ করার কারণ হিসাবে আল মিলাল ওয়ান নিহাল এর রচয়িতা লিখেন,
انما سموا اصحاب الحديث لان عنايتهم بتحصيل الاحاديث و نقل الاخبار و بناء الاحكام على النصوص و لا يرجعون الى القياس الجلى والخفى لما وجدوا خبرا او اثرا -
অর্থাৎ মুহাদ্দিসিনে কেরামকে আসহাবে হাদিস নামে নামকরণ করার কারণ হলো, তারা হাদিস সংগ্রহ, হাদিস বর্ণনা এবং হাদিসের উপর শরিয়াতের বিধি-বিধানের নির্ভরশীলতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে থাকেন। এবং তারা হাদিস কিংবা আসারের বর্তমানে কিয়াসে জলি কিংবা খফির সরনাপন্ন হতেন না।
(আল মিলাল ওয়ান নিহাল : ১/২১৭)

প্রিয় পাঠক!
কেবল মুহাদ্দিসিনে কেরামদেরই যে আহলে হাদিস বা আসহাবে হাদিস বলা হবে এ সম্পর্কে ওলামায়ে সালাফের বক্তব্য শুনুন -
১। ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন,

نحن لا نعنى باهل الحديث المقتصرين على سماعه او كتابه او روايته بل نعنى بهم كل من كان احق بحفظه و معرفته و فهمه ظاهرا وباطنا و اتباعه ظاهرا وباطنا

কেবলমাত্র হাদিস শোনা-লেখা বা বর্ণনায় সীমাবদ্ধ ব্যক্তিদেরকে আহলে হাদিস বলা হয় না। বরং আমাদের মতে আহলে হাদিস বলতে ঐ সমস্ত ব্যক্তিদের বুঝায় যারা হাদিস সংরক্ষণ পর্যবেক্ষণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অর্থ অনুধাবন করার যোগ্যতা সম্পন্ন এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ হাদিসের অনূসারী হবে।
(মাযমুয়া ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া : ৪/৬২)

২। হাফেজে হাদিস আল্লামা মোহাম্মাদ ইবনে ইব্রাহীম রহ. লিখেন,
اذ من المعلوم ان اهل الحديث اسم لمن عنى به و انقطع فى طلبه
কেননা এটা সর্বজণবিদিত যে আহলে হাদিস বলতে কেবল ঐসব ব্যক্তিদেরকেই বুঝায় যারা গুরুত্ব দিয়ে হাদিসের খেদমত করছেন এবং তার অন্বেষণে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন।
(মাযহাব বিরোধীদের স্বরুপ সন্ধানে : ২৯)
৩। قال الخطيب فى - شرف اصحاب الحديث - قال لنا ابو نعيم هذه منقبة شريفة مختصة برواة الآثا و نقلتها -
আল্লামা খতীব বাগদাদী রহ. তার রচিত শরফু আসহাবিল হাদিস গ্রন্থে প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আবু নুয়াইম রহ. এর বরাত টেনে বলেন, এটা (আহলে হাদিস উপাধি) অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ ও প্রশংসনীয় একটি উপাধি; যা কেবলমাত্র হাদিসের রাবীরাই লাভ করে থাকে। (প্রাগুক্ত)

৪। মোল্লা আলী ক্বারী রহ. লিখেন,

سلمة بن المحبق قال الطيبى بكسر الباء و اهل الحديث يفتتحونها قلت قول ا لمحدثين اقوى من اللغو واحرى كما لا يخفى - مرقات : ৪/৫২১

এটা বলা বাহুল্য যে মুহাদ্দিসিনে কেরামদেরকে যে খুছুছিয়্যাত বা বৈশিষ্ট্যের কারণে আহলে হাদিস বা আসহাবে হাদিস বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সেই সব খুছুছিয়্যাত বা বৈশিষ্টের সাথে তথাকথিত আহলে হাদিসদের দূরতম সম্পর্কও নেই। সুতরাং তাদেরকে আহলে হাদিস না বলে লা মাযহাবী (মাযহাব বিরোধী) বলাই অধিকতর যুক্তি যুক্ত।


০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×