somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এমন মালিক আমাদের দেশেই আছে

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শ্রমিকের দেওয়া আগুনেই পুড়েছে এক হাজার ২০২ কোটি টাকার সম্পদ। এর পরও শ্রমিকদের ওপর আস্থা হারাননি স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের মালিক ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসাইন। বরং তিনি নিজের দগদগে ক্ষত ভুলে সমবেদনায় শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। কোনো শ্রমিককে বেকার হতে দেব না- উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, পোড়া কারখানা চালু করা না গেলেও নিজের অন্য কারখানাগুলোতে চাকরি দেবেন তাদের। অল্প মেশিনে বাড়তি শ্রমিকের কাজের সংস্থান করতে চালু করবেন দুই শিফট। মেয়েরা কাজ করবে দিনের বেলায়, ছেলেরা রাতে। প্রয়োজনে নিজে না খেয়ে থাকবেন, তবু পুড়ে যাওয়া কারখানার ১৮ হাজার ৮০০ শ্রমিককে গত নভেম্বর মাসের বেতনও দেবেন তিনি। এ জন্য যত লোকসানই হোক, সব তিনি মেনে নেবেন।

স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোশাররফ হোসাইন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যমুনার নদীভাঙনে নিঃস্ব এই মানুষগুলোকে ডেকে এনে নিজের কারখানায় চাকরি দিয়েছি। আমি ওদের কাউকে বেকার করে রাখতে পারব না। আমার ধনসম্পদের দরকার নেই। প্রয়োজনে আমার আর যেসব কারখানা আছে, সেখানেই ওদের নিয়োগ দেব। শ্রমিকদের নারী-পুরুষে ভাগ করে দুই শিফটে কাজ করাব।’

শ্রমিকের আগুনে নিজের বিপুল আর্থিক ক্ষতির পরও তাদের প্রতি ক্ষোভ নেই মোশাররফ হোসাইনের। উল্টো শ্রমিকদের কল্যাণের কথাই ভাবছেন তিনি। গতকাল সোমবার নিজের দপ্তরে বসে তিনি বলেন, ‘এক রাতে আমার এক হাজার ২০২ কোটি টাকার সম্পদ পুড়ে যাওয়ার পরও আমি শ্রমিকদের দোষ দেব না। বেশির ভাগ শ্রমিকই আমাকে কাছে পেলে কাঁদবে। তবে অল্প কিছু শ্রমিক আছে, যাদের সংখ্যা ১০০ জনে একজনেরও কম। তারাই বহিরাগত সন্ত্রাসীদের সঙ্গে মিশে পরিকল্পিতভাবে আগুন দিয়েছে। আমার তৈরি করা মসজিদের মাইকে মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে আমাকেই ধ্বংস করা হয়েছে।

গুটিকয়েক শ্রমিকের জন্য আমি সব শ্রমিকের রুটি-রুজিতে বাধা হয়ে দাঁড়াব না।’ তিনি আরো বলেন, শুধু কারখানা নয়, প্রত্যেক শ্রমিকই তাঁর সম্পদ। বিদেশি ক্রেতা, নিজ পরিবারের সদস্যদের মতো কারখানা ও শ্রমিকও তাঁর আপন। শ্রমিকদের প্রতি তাঁর সব সময় শুভকামনা থাকে।
নিজেদের উৎপাদিত পণ্য, কারখানা, মেশিন ও কাঁচামাল সব পুড়ে অঙ্গার হলেও শ্রমিকদের দেশের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী সব ধরনের সুবিধা দেওয়া হবে বলেও জানান মোশাররফ হোসাইন। তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে আমি না খেয়ে মরব, শ্রমিকদের কোনো সমস্যা হতে দেব না। কোনো শ্রমিককেই তার পাওনা থেকে বঞ্চিত করব না। তাদের স্বার্থ রক্ষা করা আমার নৈতিক দায়িত্ব। শ্রমিক স্বার্থ নিয়ে আমি কখনো দ্বিধা করি না। শ্রমিকদের বঞ্চিত করে নিজে কখনোই লাভবান হতে চাইনি। একজন মানুষ হিসেবে শ্রমিকদের সঙ্গে মানুষের মতোই মিশতে চেষ্টা করেছি। দেশের আইন ও বিধি অনুযায়ী তাদের জন্য সব কিছুই করব। প্রয়োজনে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তাদের পাওনা পরিশোধ করব। আমার ক্ষতি যত বড়ই হোক, একজন শ্রমিকের কাছে ১০ হাজার টাকা অনেক বড়।’


এত বড় লোকসানে শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়লেও অধৈর্য হননি মোশাররফ হোসাইন। কারণ দীর্ঘদিন ধরে স্বচ্ছতার সঙ্গে লেনদেন করায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও তাঁর পাশে দাঁড়ানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছে। হংকংভিত্তিক কাঁচামাল সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠান গতকাল তাঁকে ই-মেইলে জানিয়েছে, ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সহযোগিতা করতে চায় তারা। এ জন্য বিনা মূল্যে বা ডিসকাউন্ট মূল্যে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপকে আরো বেশি কাঁচামাল সরবরাহ করার কথা বলা হয়েছে ই-মেইল বার্তায়। এ প্রতিবেদকের সামনেই হংকংয়ের ওই প্রতিষ্ঠানটির কর্তা টেলিফোনে কথা বলছিলেন মোশাররফ হোসাইনের সঙ্গে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের যেসব বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ থেকে পোশাক কিনত, তারাও ই-মেইল বা টেলিফোনে সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছে। এখন ক্রেতা বা বিক্রেতা- বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছেই আর্থিক কোনো সহযোগিতা চাননি তিনি। শুধু দোয়া আর সমর্থন চেয়েছেন।


এ প্রসঙ্গে কালের কণ্ঠকে মোশাররফ হোসাইন বলেন, ‘আমি বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান কারো কাছেই কোনো সহযোগিতা চাইনি। আমার শুধু একটি জায়গায় সহযোগিতার দরকার হবে। সে জন্য সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে আমি লিখিতভাবে আবেদন করব।

স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আরো বলেন, ‘যে ভবনটি পুড়েছে, সেখানে আমার ছয়টি কারখানা ছিল। অনেক বড় গুদাম ছিল। ওই কারখানাগুলোর বিপরীতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ৪০০ কোটি টাকার আমদানি বিল আছে। সবসহ কারখানা পুড়ে যাওয়ায় তা পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে আমদানি বিলগুলো ফোর্সড লোনে রূপান্তর হবে। প্রতি মাসে ওই ঋণের বিপরীতে সুদ বাড়তে থাকবে। আমি ব্যাংকগুলোর কাছে ঋণের আসল অর্থ থেকে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়ার দাবি করব না। পুরো সুদও মাফ করতে বলব না। তবে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক আমার পাশে দাঁড়িয়ে সুদ হারে কিছুটা ছাড় দেবে- এমনটা আশা করি আমি। এটুকু সুবিধা চাচ্ছি এ জন্য, যাতে আমি এ ঋণের একটা সুরাহা করে যেতে পারি। না হলে আমার ছেলেদের পক্ষে এ ঋণ পরিশোধ করা আর সম্ভব হবে না।’
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×