somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তিযুদ্ধে নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্?ীর ভূমিকা, শফিউদ্দিন তালুকদার

০৭ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভূমিকা
১৯৭১ সাল। দু’শ †ছষট্টি দিনে এক সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে সবুজ †প্রক্ষাপটে রক্তিম সূর্যের প্রতীক নিয়ে পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভেŠম বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়। এই অভ্যুদয়ের †পছনে রয়েছে †শাষণবাদী পাকিস্তানি রাজনৈতিক-সামরিক শাসকচক্রের কলংকময় পদচারণা এবং স্বাধিকারের †চতনায় সমৃদ্ধ তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানভূক্ত বাঙালি জনসাধারণের বুকের রক্ত। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্?ার পরপরই পূর্বপাকিস্তানি জনগণের ন্যায়সঙ্গত অধিকার †থকে বঞ্চিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। আর প্রতিবাদও শুরু হয় তখন †থকেই।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের বিশ্বের বিষ্ময়কর শক্তিধর সাংগ?নিক †নতা †শখ মুজিবুর রহমান †ঘাষিত বাঙালির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৫৭ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে এক অছেদ্য ঐক্যবন্ধনে আবদ্ধ হয় বাংলার মানুষ। পূর্ববাংলার জনগণের প্রতি পাকিস্তান শাসকগোষ্?ীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক †ক্ষত্রে বৈষম্য, †শাষণমূলক নীতি ও আচরণের ফলে বাংলার জনগণের মনে তীব্র †ক্ষাভের সঞ্চার হতে থাকে। আর বাংলার জনগণের †ক্ষাভের বহি:প্রকাশই হলো ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
১৯৭১ সালে মাত্র ৯ মাসে এদেশের মানুষ রক্তের নদী বয়ে নিয়ে এসেছে স্বাধীনতার সাম্পান। অল্প সময়ে এতো বড় অর্জন সম্ভব হয়েছিল †সই মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলার আপামর জনসাধারণের সম্পৃক্ততার কারণে। সম্পৃক্ততা ছিল বাঙালি ছাড়া আরও প্রায় অর্ধশত নৃ-†গাষ্?ীর যারা আমাদের মূল¯্রােতেরই অংশÑ এদেশের আদিবাসী। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে †দশের আদিবাসী জনগোষ্?ীর অংশগ্রহণ একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষ, উপকূল এলাকার রাখাইন, বৃহত্তর ময়মনসিংহের গারো, হাজং, †কাচ, বানাই, উত্তরবঙ্গের সাঁওতাল, ওরাঁও, মু-া, সিলেট অঞ্চলের মণিপুরী, খাসীয়াসহ চা বাগানের জনগোষ্?ীর মানুষ প্রত্যক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। শুধুমাত্র গারো, হাজং ও †কাচদের মধ্য †থকেই চারশ’র অধিক মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ †নন। হালুয়াঘাট, †ধাবাউড়া, কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও মধুপুর অঞ্চল †থকে ২৭২ জন নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্?ীর মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। উল্লেখ্য †য, হালুয়াঘাট উপজেলাই আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১২১ জন।

মুক্তিযুদ্ধের সংগ?ক
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে †বশ কয়েকজন আদিবাসী †নতা মুক্তিযুদ্ধের সংগ?ক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা¡ পালন করেছেন। তাদের মধ্যে মানিকছড়ির মং রাজা মপ্রু †সইন ছিলেন অন্যতম সংগ?ক। মুক্তিযুদ্ধের শুরু †থকে তিনি †মজর মীর শওকত আলীকে সরাসরি সহযোগিতা করেন। তিনি পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে ঘুরে ঘুরে মুক্তিযুদ্ধের প্রচার কাজ চালাতেন। মপ্রু †সইন পরবর্তীতে ভারতে আশ্রয় †নওয়ার পর মুজিবনগর সরকার তার জন্য বিশেষ ভাতা মঞ্জুর করে। পার্বত্য চট্টগ্রাম †জলা পরিষদের সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকেŠশলী †জ্যাতিবিকাশ চাকমা মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি সাহসিকতার সাথে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। বরুণ ত্রিপুরাও মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সাঁওতাল আদিবাসীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের অনুপ্রেরণা †যাগান সাগরাম মাঝি (হাঁসদা)। তিনি ভারতের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে মুক্তিযুদ্ধের প্রচারণা চালিয়ে সাঁওতাল তরুণদের উদ্বুদ্ধ করেন। তার অনুপ্রেরণায় প্রায় তিনশত আদিবাসী সাঁওতাল তরুণ মুক্তিযুদ্ধে †যাগদান করেন। সিলেটের মণিপুরী নৃ-†গাষ্?ীর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের সংগ?ক হিসেবে নীলমণি চট্টোপাধ্যায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ছাড়াও নন্দেশ্বর সিংহ, বিজয় সিংহ প্রমুখ মুক্তিযুদ্ধের সংগ?ক হিসেবেও কাজ করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধে গারো নৃ-†গাষ্?ীর মধ্যে †বশ কয়েকজন সংগ?কের নাম পাওয়া যায়। তাদের একজন হলেন-†নত্রকোণা †জলার দুর্গাপুরের মাধবপুর গ্রামের †যায়াকিম আশাক্রা। অনলবর্ষী বক্তা †যায়াকিম আশাক্রা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতের †মঘালয় প্রদেশের বাঘমারা ফ্রন্টে মুক্তিযুদ্ধের একজন প্রভাবশালী সংগ?ক ও উপদেষ্টা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। হালুয়াঘাটের বিন্দুনাথ হাউই মুক্তিযুদ্ধের সময়ে চন্দ্রকোণা, †ঘাষগাঁও এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের সংগ?ক হিসেবে আদিবাসী ছাত্র যুবকদের মুক্তিযুদ্ধে †যাগদানের উৎসাহ ও উদ্দীপনা †যাগান। ১৯৭৫ সালে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তিনি কারাবরণও করেন।
দুর্গাপুরের বিরিশিরির †রভারেন্ড সুভাষ চন্দ্র সাংমা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সংগ?ক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ভারতের †মঘালয় প্রদেশের বাঘমারা ক্যাম্পে মিত্রবাহিনীর ক্যাপ্টেন মুরারীর সাথে †থকে গারো, †কাচ, বানাই যুবকদের পাশাপাশি বাঙালি যুবকদের মুক্তিযুদ্ধে ভর্তি করতে সহযোগিতা করেন। যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি মুরারীর সাথে নলুয়াপাড়া, কুল্লাপাড়াসহ কয়েকটি মুক্তাঞ্চলে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস যুগিয়েছেন। ডিসেম্বর মাসে তিনি দুর্গাপুর-বিরিশিরি মুক্ত অভিযানেও মিত্রবাহিনীর সাথে অংশগ্রহণ করেন। বর্তমানে হালুয়াঘাট-†ধাবাউড়া †থকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানখিন ১৯৭১ সালে ভারতের †মঘালয় প্রদেশের শিববাড়ী আশ্রয় †কন্দ্রে †রশনিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাছাড়া তিনি শিববাড়ী-গাছুয়াপাড়া ফ্রন্টে মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগ?ক হিসেবে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখেন।

†ট্রনিং †সন্টার ও যুদ্ধক্ষেত্র
উত্তরাঞ্চলের আদিবাসী সাঁওতালরা মুক্তিযুদ্ধের †ট্রনিং †নন ভারতের শিলিগুড়ি, পাতিরাম, পশ্চিম দিনাজপুর, পানিঘাটা, রায়গঞ্জ প্রভৃতি †ট্রনিং †সন্টারে। †ট্রনিং †শষে তারা বাঙালি মুক্তিযেদ্ধাদের সাথে মিলিত হয়ে ফুলবাড়ী, শিবগঞ্জ, পাহাড়পুর, বদলগাছি, রাজশাহীর তানোর ব্রিজ অপারেশন, তানোর থানা অপারেশন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তবর্তী এলাকা, নওগাঁওয়ের রাঙ্গামাটিসহ বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
মগ আদিবাসী ছাত্র যুবকেরা ভারতের হাফলং, বগাপাড়, ত্রিপুরা, পলাশডাঙ্গা, হরিণা, তা-ুয়া, †সানাইপুর †ট্রনিং †সন্টারে মুক্তিযুদ্ধের †ট্রনিং †নন। †ট্রনিং †শষে তারা মাইনিমুখ, পানছড়ি, নুনছড়ি, তবলছড়ি, মানিকছড়ি, কুকিছড়ি, রাঙাপাহাড় ও পাবনা, রাজশাহী, হিলি, হলদিডাঙ্গায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর †মাকাবেলা করেন।
চাকমা তরুণেরা ভারতের মিজোরাম, রামগড় †ট্রনিং †সন্টারে মুক্তিযুদ্ধের †ট্রনিং †নন। †দশের অভ্যন্তরে এসে তারা রাংগীপাড়া, †টগা সীমান্ত, জারালছড়ি, বড়াতলী ও কাউখালী এলাকায় যুদ্ধ করেন। রাখাইন মুক্তিযোদ্ধারা ডুলাহাজরা ও মহেশখালী এলাকায় যুদ্ধ করেন।
মারমা আদিবাসী যুবকেরা ভারতের †দমগ্রী ও পলাশডাঙ্গায় মুক্তিযুদ্ধের †ট্রনিং †নন। তারা অস্ত্র ও †গালাবারুদসহ †দশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে রাঙ্গামাটির বরকল, চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও রামুর মাটিরাঙা এলাকায় †দশ মাতৃকাকে মুক্ত করার জন্য পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। ত্রিপুরা নৃ-†গাষ্?ীর তরুণরা মুক্তিযুদ্ধের †ট্রনিং †নন ভারতের †দরাদুন ও রামনগরে। †ট্রনিং †শষে তারা মহালছড়ি, †সানাইপুর ও যুগাছোল এলাকায় যুদ্ধ করেন। মু-া-মাহাতো-ওরাঁও জনগোষ্?ীর যুবকেরা ভারতের †গায়ালপাড়া, †সাবরা, গঙ্গারামপুর ও মালঞ্চ †সন্টারে মুক্তিযুদ্ধের †ট্রনিং †নন। যুদ্ধ করেন †গাদাগাড়ি, †মাহনপুর, কাঁকনহাট ও সিলেটের শিমুলতলা এলাকায়।
গারো-হাজং-†কাচ নৃ-†গাষ্?ীর ছাত্র যুবকেরা ভুটান, ভারতের তুরার রংনাবাগ ও †গাহাটি †সন্টারে মুক্তিযুদ্ধের †ট্রনিং †নন। বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে তাদের অপারেশন এরিয়া ছিল বিশাল। ধানুয়া-কামালপুর সীমান্ত এলাকা, কাটাখালী ব্রিজ অপারেশন, তিনআনী †ফরি ধ্বংস, রাঙ্গামাটির যুদ্ধ, বারোমারী, ফান্দা, রণসিংহপুর, চারুয়াপাড়া, †তলিখালী, কাশিগঞ্জ, নালিতাবাড়ী, নাজিরপুর, টাঙ্গাটি, বিজয়পুর, বান্দরকাটা, হাতিপাগার, ফারাংপাড়া, কামারখালী, পানিহাটা, তন্তর, হলদিগ্রাম, নন্নী ব্রিজ অপারেশন, বাউসী ব্রিজ অপারেশন, বয়ড়া †রলওয়ে ব্রিজ অপারেশন, কলসিন্দুর, †গায়াতলা, নকশী, চ-ীগড়, ভবানীপুর, দুর্গাপুর-বিরিশিরি, হালুয়াঘাট, কলমাকান্দা, ঝিনাইগাতী, ফুলপুর, বড়ইকান্দী, †পাড়াকান্দুলিয়া প্রভৃতি রণাঙ্গনে তারা যুদ্ধ করেন।

†কাম্পানি কমান্ডার
আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অনেকে †কাম্পানি কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করার †গŠরব অর্জন করেছেন। তাদের মধ্যে ময়মনসিংহ †জলার হালুয়াঘাটের চরবাঙ্গালিয়া গ্রামের উইলিয়াম ম্রং (১৯৭১ সালের ৬ জুলাই রাঙামাটির যুদ্ধে †কাম্পানি কমান্ডার নাজমুল আহসান শহীদ হলে উইলিয়াম ¤্রং †কাম্পানি কমান্ডার নিযুক্ত হন), †নত্রকোণা †জলার দুর্গাপুরের বিরিশিরি গ্রামের দীপক সাংমা, বান্দরবানের ইউকে চিং মারমা। আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ইউকে চিং মারমাই ‘বীর বিক্রম’ †খতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধারা †য সব বাঙালি †কাম্পানি কমান্ডারদের অধীনে যুদ্ধ করেছেন তাদের মধ্যে নালিতাবাড়ীর নাজমুল আহসান, হালুয়াঘাটের আব্দুল গণি, জিয়াউদ্দিন, †মাহনগঞ্জের ইলিয়াস †চŠধুরী, কলমাকান্দার এনায়েত বিশ্বাস, ময়মনসিংহের নাজমুল হক তারা, ঝিনাইগাতীর আব্দুল গফুর, ফুলপুরের আব্দুল হালিম, দুর্গাপুরের স্নিগ্ধেন্দু বাউল, ফজলুর রহমান আকঞ্জি, চুন্নু মিয়া, ময়মনসিংহের হাফিজ উদ্দিন। এখানে উল্লেখ্য †য, উইলিয়াম মং †কাম্পানির ১১৯ জন মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে ৪০ জনই ছিলেন আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা।

প্লাটুন কমান্ডার
মুক্তিযুদ্ধে আদিবাসীদের মধ্যে প্লাটুন কমান্ডার, সহকারী প্লাটুন কমান্ডার ও †সকশন কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছেন এমন মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যাও কম নয়। রাজশাহীর তানোর ও †গাদাগাড়ী এলাকার চারজন মুক্তিযোদ্ধা বিভিন্ন †কাম্পানিতে প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তারা হলেন-
১. বিশ্বনাথ টুডু, শীতলপুর, †গাদাগাড়ী
২. অভয় চাঁদ ওঁরাও, ভজনপুর, †গাদাগাড়ী
৩. বিশ্বনাথ †হমব্রম, †সাগুনা, তানোর
৪. সুকলাল মুর্মু, ময়েনপুর, তানোর।
গারো, হাজং ও সাঁওতাল জনগোষ্?ীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ১৯ জন মুক্তিযোদ্ধা এ ধরণের দায়িত্ব পালন করেন। তারা হলেন-
১. অরবিন্দ সাংমা দিও, উৎরাইল, দুর্গাপুর। মৃত্যু- ২০০৮ খ্রিস্টাব্দ।
২. আলবার্ট ¤্রং, দুধনই, ঝিনাইগাতী। বর্তমানে মধুপুরে বসবাস করছেন।
৩. আলেকজান্ডার ঘাগ্রা, বারোমারী, দুর্গাপুর। বর্তমানে হালুয়াঘাটের জয়রামকুড়া গ্রামে বসবাস করছেন।
৪. উইলিয়াম †রারাম, †সনপাড়া, কলমাকান্দা।
৫. একজিবিশান বনোয়ারী, গামারীতলা, †ধাবাউড়া।
৬. কার্নেস চিসিম, ধলাপানি, হালুয়াঘাট। বর্তমানে হালুয়াঘটের কালিয়ানীকান্দা গ্রামে বসবাস করছেন।
৭. জনু রাংসা, †গাহালীঢেউ, দুর্গাপুর।
৮. বীরন্দ্রে সাংমা, ঝিনাইগাতী।
৯. তরুণ ডি সাংমা, †চংনীরামপুর, কলমাকান্দা।
১০. প্রদীপ চিসিম, আচকিপাড়া, হালুয়াঘাট।
১১. দানিয়েল মান্দা, মনিকুড়া, হালুয়াঘাট।
১২. ধীরেন্দ্র চিরান, ঝিনাইগাতী।
১৩. হাজং সতেন্দ্র চন্দ্র রায়, জাঙ্গালিয়াপাড়া, †ধাবাউড়া।
১৪. স্টিফান নকরেক, কাউবাড়ী, কলমাকান্দা।
১৫. সাখিনাথ পা?াং, †গাবরাকুড়া, হালুয়াঘাট।
১৬. সুজয় †রমা, বাঘাইতলা, হালুয়াঘাট।
১৭. প্রদীপ সাংমা, কুমুরিয়া, হালুয়াঘাট।
১৮. প্রণব রিছিল, সংড়া, হালুয়াঘাট।
১৯. ভদ্র ¤্রং, সানখোলা, দুর্গাপুর। বর্তমানে হালুয়াঘাটের রাংরাপাড়া গ্রামে বাস করছেন।

শহীদ মুক্তিযোদ্ধা
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অনেক আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা সম্মুখযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন। গারো-হাজং-ডালু-হদি-সাঁওতাল-রাখাইন-মণিপুরী নৃ-†গাষ্?ীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ইতিহাসে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। গারো শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে স¤প্রদায়ের হালুয়াঘাটের বাঘাইতলা গ্রামের শহীদ আরেং রিছিল, মনিকুড়া গ্রামের শহীদ পরিমল দ্রং, বকশীগঞ্জের দিগ্নিকোন গ্রামের শহীদ সম্রাট দালবৎ, ভালুকার মল্লিকবাড়ির শহীদ অনীল সাংমা প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। হাজংদের মধ্যে দুর্গাপুরের বগাউড়া গ্রামের শহীদ সুধীর হাজং ও হদি মুক্তিযোদ্ধা দুর্গাপুরের কুড়ালিয়া গ্রামের সন্তোষ চন্দ্র বিশ্বাস বিজয়পুরের সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন। †তলিখালীর যুদ্ধে শহীদ হন মুক্তিযোদ্ধা চিত্তরঞ্জন ডালু।
মুক্তিযুদ্ধে ১৫ জন মণিপুরী মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন। তাদের মধ্যে সিলেটের আম্বরখানার †খা. রমন সিংহ, †গাহাইপাড়ার †নাংমাইখেম, †গাবরাখোলার †থাকচোম, সুবিদবাজারের †খা. †খামদোল সিংহ প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পক্ষ নিলেও দশ/বার জন চাকমা মুক্তিযুদ্ধে অংশ †নন। শুধু তাই নয়, মুক্তিযুদ্ধে খগেন্দ্রনাথ চাকমা ও সঞ্জিব চাকমা নামে দু’জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন বলে জানা যায়। ১৯৭১ সালের ৬ আগস্ট বান্দরকাটার যুদ্ধে ঝিনাইগাতীর দুধনই গ্রামের লব সাংমা, ৭ অক্টোবর পানিহাটার যুদ্ধে †ধাবাউড়ার চন্দ্রকোণা গ্রামের নিতিশ সাংমা পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে সম্মুখযুদ্ধে আহত হন।
নারী মুক্তিযোদ্ধা
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আদিবাসী নারী মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান †ছাট করে †দখার মত নয়। খাসীয়া নারী সুনামগঞ্জের †দায়ারবাজারের কাঁকেট †হনইঞিতা (যিনি কাঁকন বিবি নামে সমধিক পরিচিত), রাখাইন নারী প্রিনছা †খ, মধুপুর জানজালিয়ার গারো নারী সন্ধ্যারাণী সাংমা (বর্তমানে কলমাকান্দা উপজেলার নলচাপ্রা গ্রামে বসবাস করছেন), মধুপুরের আমলীতলা গ্রামের †ভরোনিকা সিমসাংসহ অনেক নারী মহান মুক্তিযুদ্ধে স্মরণীয় অবদান †রখেছেন। কাঁকন বিবি †সক্টর কমান্ডার মীর শওকত আলী ও ক্যাপ্টেন †হলাল উদ্দিনের অধীনে পরিচালিত শহীদ †কাম্পানির একজন সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা। প্রিনছা †খ মূলতঃ মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে †সবিকার দায়িত্ব পালন করতেন। পাকিস্তানি বাহিনী প্রিনছাকে বন্দী করে। বর্বর নির্যাতন চালায় অহরহ। †গাপনে বিষ সংগ্রহ করে পাকিস্তানি †সনাদের খাবারে তা মিশিয়ে প্রিনছা †খ ১৫ জন পাকিস্তানি †সনাকে †মরে †ফলেন। সারা বাংলাদেশে এমন অসংখ্য আদিবাসী নারী মুক্তিযুদ্ধে নিজেদের ইজ্জত বিকিয়েছেন। অস্ত্র ধরেছেন পাকিস্তানি বর্বর পশুদের বিরুদ্ধে। ক্যাম্পে ক্যাম্পে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাস্থ্য †সবা দিয়েছেন। তাছাড়া ভারতীয় †রডক্রসের ভলান্টিয়ার হিসেবে অনেক আদিবাসী নারী বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে †সবা দান করেছেন। তাদের মধ্যে হালুয়াঘাটের নলকুড়ার চামেলী †রমা, সূর্যপুরের ইভা চাম্বুগং, স্বর্ণলতা হাজং প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

উপসংহার
মুক্তিযুদ্ধে আদিবাসীদের অবদান প্রশংসনীয়। †দশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মাতৃভূমির স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনার জন্য ১৯৭১ সালে আদিবাসী অনেক তরুণ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। শুধু তাই †দশ স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু †শখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকা-েরও প্রতিবাদ করেন বৃহত্তর ময়মনসিংহের অধিকাংশ আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা ছাড়াও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্?ীর অনেক মানুষ। অর্থাৎ ১৯৭৫ সালে †দশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গারো পাহাড় অঞ্চলে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী (বীর উত্তম) এর †নতৃত্বে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে †য বিদ্রোহ ও সশস্ত্র অভিযান পরিচালিত হয়- তার মূল শক্তিই ছিল গারোরা। এ †প্রক্ষিতে বৃহত্তর ময়মনসিংহের অধিকাংশ আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা নির্বাতিত হয়েছেন, কারাবরণ করেছেন ভিটেমাটি ছাড়া হয়েছেন- †দশান্তরিতও হয়েছেন। এ অঞ্চলের হাতে †গানা কয়েকজন ছাড়া প্রায় সব মুক্তিযোদ্ধাই ভূমিহীন ও দিনমজুর। অনেকেই গৃহহীন। এ চিত্র বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের †ক্ষত্রেও।

পরিশেষে বলবো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধারা এখনও অনেকটা ইতিহাসের অন্তরালেই রয়ে †গছেন। মুক্তিযুদ্ধে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ, যুদ্ধক্ষেত্রে বীরত্বপূর্ণ অবদান এবং †দশমাতৃকাকে মুক্ত করতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে সম্মুখযুদ্ধে জীবনদানের ইতিহাসও তারা সৃষ্টি করেছেন। আদিবাসীদের নৃতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারা নিয়ে বিস্তর গবেষণা হলেও মুক্তিযুদ্ধে তাদের অংশগ্রহণ ও অবদান নিয়ে †তমন †কানো গবেষণা হয়নি বললেও চলে। এ প্রজন্মের সন্তানরা বিষয়টি নিয়ে নিশ্চয়ই ভাববেন।

শফিউদ্দিন তালুকদার। †লখক ও গবেষক। সহকারী অধ্যাপক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, শমসের ফকির ডিগ্রি কলেজ, ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল। †মাবাইল : ০১৭১৮-০৩৮৫৩৩। ই-†মইল : সড়হরৎ৯শ@মসধরষ.পড়স
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:১৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×