লেখাটি প্রথমে সামহোয়্যারইন ব্লগে পোস্ট হয়েছিল অ্যন্টিগল্প হিসেবে সম্ভবত ২০০৯ সালে। তারপর কি মনে করে ২য় পর্ব লিখে ফেললাম। শুভানুধ্যায়ীরা বললেন এটা উপন্যাস হতে পারে। আমিও ভাবলাম-হতেই তো পারে। কিন্তু যখন লিখতে বসলাম তখন হাড়ে হাড়ে বুঝলাম যত অনায়াসে 'হতেই পারে' বলে বসেছি, কাজটা মোটেই 'বসলাম-লিখলাম' নয়। বড় ক্যানভাসে লেখার স্পর্ধা দেখানোর জন্য নিজেই অবাক হলাম। শেষে যা হয়, কাজটা থমকে গেল টানা দুবছর। ২০১১ তে ফের শুরু করলাম। টানা লিখলাম প্রায় পঞ্চাশ ভাগ। আবার স্টপ। অনুজপ্রতিম আল বিরুণী প্রমিথ-এর ক্রমাগত তাগাদায় স্থীর করেছিলাম এবছর শেষ করবই। শেষ পর্যন্ত তাও হচ্ছিল না। গত বছর ডিসেম্বরে নিজেকে প্রচণ্ড গালাগাল করে চাকরিকে গুডবাই জানিয়ে রাতদিন মাথা গুঁজে অবশষে শেষ করতে পেরেছিলাম, কিন্তু ছাপা হয়ে বেরুবে সে আশা ছিলনা রাজনৈতিক অস্থিরতায়। 'ঐতিহ্য' প্রকাশনীর নাইম ভাই দুঃসাহস দেখিয়ে বাকি কাজটি করে দিলেন। 'আকাশে উড়ল' 'পেটকাটি চাঁদিয়াল'।
তারই কিছু অংশ......................
শমশের-নায়েকরা বলে দিল- গ্রাভিটি জোনে যাওয়া যায় ভাই, যাওয়া যায়ই। কে শোনে কার কথা? বোরাক দুল দুল আর্ধেক গোড়া-আর্ধেক মানুষ। ডারউইন শালা কি মরেছে ? ঘনাদের বোল লাশ নেওয়া বোল, বল হরি হরি বোল। মুসলিম পাড়ায় ধুন্ধুমার বেগে ঘৃণা উপছে পড়ে বৃষ জবেহ করে বৃষ হোল। তবুও ঘনা কুঁই কুঁই করে,ঘনাক্লাসেরা হৈ হৈ করে > বল হরি- হরি বোল................................।
শীর্ণ প্রাণহীন দেহটা সটান পড়ে ছিল। আগেও ওভাবে পড়ে থাকত। ফারাক,আগে কালে-ভদ্রে নড়ত। এখন নড়ে না। এর বেশি কোন বোধ ঘনার খেলে না। চাটাই বেড়ার চারধার জুড়ে সস্তা দেব-দেবী। কোজাগরি লখ্সমি,বজরংবালি, বিশ্বকর্মা আর রাম-সীতা। অনড়। হাসি হাসি মুখ। জগতের কোন বিটকেল পর্শ করে না। করেনি কোন কালে। কে মানে? বামুনের বাচ্চা হলে ঘনাকে আজই মাথামুড়োতে হতো। মুঠোবাঁধা কাঠি হাতে কাউকে কাঠি করার বদলে একবস্ত্রে ৪০দিন। আতপ চালের মাঢ়িভাতে নুন মেখে মুখে যেত। তাও জলে উব্দো করে সব ফেলে যেটুকু লেগে থাকে তাই। ঘনা হরিজন। অজাত। তাই রক্ষে!
জগত সংসারে যার কিছু নেই তারও একটা থালা আছে। সেটা সে ধোয়, মোছে। তারও একটা মাথা গোঁজবার ঠাঁই আছে। সেখানে সে মাথা সমেত পুরো শরীর গুঁজে রাখে। রোজকার খেয়া পারের সময় অচেনা যাত্রী ক্ষণিকের যাত্রাপথে মাঝির সাথে ভাব জমায়। ওপারে নামার সময় বলে যায়- গেলাম। বসে থাকা ঘাসের ওপর থেকে ওঠার পরও অনেকক্ষণ ঘাস নুয়ে থাকে। যেন চিহ্ন রাখে। আগুনে পোড়া ঘরের ভিটেয় তাও পোড়া বাঁশ খুটি আর ভাঙ্গা টিনের টুকরো থাকে। শেষমেষ ছাই থাকে। কিন্তু নদীভাঙ্গা ঘরের কিছুই থাকেনা।
হাতে গোণা কিছু পরিমানে সহায় সম্পদ থাকার পরও কেন এই তিনজন ভিটে মাটি ছেড়ে পরবাসী হতে চায় সে রহস্য অজানা। হাজার চেষ্টা করেও এর সুরাহা করতে পারেনা কেউ। সব রকম হিসেব টিসেব মিলিয়ে যা পাওয়া যায় তা হলো ছোট্ট ফকির বা মাষ্টের শেকড় ছিঁড়ে সরতে পারে, কিন্তু মইলোবি কেন? তার তো ব্যবসা মরে যায়নি! তাকে তো কেউ ফষ্টিনষ্টি করার দায়ে ঠেঙ্গিয়ে আধামরা করেনি! কিন্তু সব হিসেব নিকেষ টোকা মেরে উড়িয়ে দিয়ে এই তিনজন শহর ছাড়ে। তাতে এই শহরের একটা নেড়ি কুকুরেও কোনো কিছু যায় আসে না। রাতের ট্রেনে চড়ে বসার আগে-পরে কেউ কোন কথাও বলেনি। ঘুমিয়ে পড়ার আগে মাষ্টের খুব আস্তে আস্তে বলেছিল..... ‘ছেনো। ছেনোরে মনে আছে?’
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:২৬