সুপ্রিমকোর্টের সামনের মূর্তি অপসারণ । মূর্তি আর মূর্তি পূজা এক নয় এটি হেফাজতের মত ধর্মান্ধরা বুঝবে না। কারন তাদের যে মাদ্রাসা লাইনে লেখাপড়া। এই মাদ্রাসায় এইসব জ্ঞান দেওয়া হয়না। তাদের পড়ানো হয় হাদীস-কোরআন, ইজমা, কেয়াশ।
সুপ্রিমকোর্ট কোন ইসলামিক ইবাদতখানা নায়। মূর্তি স্থাপন কোন মসজিদের চত্ত্বরে ঘটেনি। ঈদগাহের মিম্বরে ঘটেনি। তারচেয়ে বড় কথা, এটি মূর্তি পূজার খাতিরেও স্থাপন করা হয়নাই। প্রতি বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ঐ মূর্তির পায়ের নিচে কেউ পুষ্পস্তবক অর্পণ বা মোমবাতি প্রজ্বলন করবে এমনটির উদ্দেশ্যেও এটি স্থাপন করা হয়েছিলো বলে আমি মনে করিনা।
আমাদের প্রায় সকলের ঘরের শোকেসে ছোট ছোট নানান ধরনের পুতুলের প্রতিকৃতি আছে সেটি কোন মূর্তি পূজা নয়। কারন এটাকে কেউ দুধকলা এমনকি জবাফুল কিংবা ধুপও দেয়না, দিবেও না। এমনটিকেও যেমন মূর্তীপূজা বলা যাবে না। ঠিক কোর্টের সামনেরটিও মূর্তীপূজা নয়।
সোলামান (আ) তিনিও পূর্তি (ভাস্কর্য) তৈরী করতেন, করাতেন কোরআন তার জ্বলন্ত উদাহরণ। চলুন একটু দেখে নেয় ইসলামের দৃষ্টিতে কোরআনের সেই আয়াত।
সূরা সাবা ৩৭:১৩ আয়াতঃ يَعْمَلُونَ لَهُ مَا يَشَاءُ مِن مَّحَارِيبَ وَتَمَاثِيلَ وَجِفَانٍ كَالْجَوَابِ وَقُدُورٍ رَّاسِيَاتٍ اعْمَلُوا آلَ دَاوُودَ شُكْرًا وَقَلِيلٌ مِّنْ فَلَمَّا قَضَيْنَا عَلَيْهِ
অর্থঃ তারা সোলায়মানের ইচ্ছানুযায়ী দুর্গ, ভাস্কর্য, হাউযসদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং চুল্লির উপর স্থাপিত বিশাল ডেগ নির্মাণ করত। হে দাউদ পরিবার! কৃতজ্ঞতা সহকারে তোমরা কাজ করে যাও। আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পসংখ্যকই কৃতজ্ঞ।
আল্লাহর হুকুমে দাউদ পরিবার এই কাজটি করতো। কিন্তু যারা নাবুজের দল তাদের কোরআনের এই আয়াতগুলো চোখে পড়বে না। এবং চোখে পড়লেও তা মানবে না।
মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করছি। সুপ্রিমকোর্টের সামনের মূর্তি অপসারণ দাবী করে আসছিলো তথাকথিত ইসলাম নামধারী হেফাজতে ইসলাম। আমি মনেকরি সরকার হেফাজতের একটি দাবী মানলো~ তারমানে তাদের ভিত কিছুটা শক্ত করেদিলো । আপনারাও ক্ষমতায় থাকার ভিত শক্তের খেলায় হেফাজতের ফাঁদে পা দিয়েছে বলে আমি মনে করি। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী হেফাজতে ইসলামের সমস্ত দাবী মানলেও তারা নৌকায় কখনো ভোট দিবেনা, সুযোগপেলে ছোবল দিবে। তারা এই দেশ মানেনা, দেশের স্বাধীনতা মানে না। হেফাজতে ইসলামে জামায়াতের প্রেতাত্মা ভর করে আছে তার জন্ম লগ্ন থেকে। আপনি গুটিকয়েক ধর্মমান্ধ মানুষের কথায় ভাস্কর্যটি অবশেষে সরালেন? আপনার কি মনে হয় প্রগতিশীলরা এই দেশে সংখ্যায় খুবই কম। আপনাকে প্রগতিশীলরা অনেক ভালো বাসে। আজ ভোটের লোভে কিংবা তাদের সাথে জোট বাঁধার আশায় এই গুটিকয়েক ধর্মান্ধ মূর্খদের কথায় কোর্টের ভাস্কর্য অপসারণ করলেন। আগামীকাল ওরাই দেশের স্বাধীনতার ভাস্কর্য এবং এমনকি আপনার বাবার ভাস্কর্যগুলো ভাংতে দিধা করবে না!
১৯৯৬ তে আফগানিস্থানে তালেবানরা ক্ষমতা পায়। ক্ষমতা পাওয়ার সাথে সাথে তারা সেদেশের গুরুত্বপূর্ণ সব ভাস্কর্য ধর্মের দোহাই দিয়ে ভেঙ্গে ফেলা শুরু করে। ২০০১ সালে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বৌদ্ধমূর্তি ‘বামিয়ান ভাস্কর্য’ তারা ভেঙ্গে ফেলে। শুধু ভেঙ্গে ফেলা নয় তারা মনে করেন এটি তাদের ঈমানী দায়ীত্ব। ইরানের মসুল শহরে জঙ্গীগোষ্ঠী আইএস একটি যাদুঘরের সব ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলে সেটি ইলেক্ট্রিক মিডিয়াতে আমরা সকলে দেখেছি। আজকের দিনে বাংলাদেশে সেই একই মানসিকতার বীজ বপন হলো। আমি মনে করি সুপ্রিমকোর্টের সামনের মূর্তি অপসারণ করা হেফাজতের মিশনের সূচনা। আজ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এমনকি মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই। আজ আপনারা রাষ্ট্র ক্ষমতায়। কিন্তু যদি এমন হতোঃ আপনারা বিরোধী দল আর চারদলীয় জামায়াত-বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে এই ভাস্কর্য সরানোর কাজটি যদি করতো তাহলে আপনারা কি বলতেন এবং কি করতেন? তায় বলি যা করবেন ভেবে করুন, এটা উপদেশ নয় পরামর্শ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১৭ রাত ১২:২৭