somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের স্বীকৃতি

২২ শে নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যে’ স্থান পাওয়া উপলক্ষে শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত নাগরিক কমিটির সুবিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন তা সবিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ইতিহাস সত্যকে তুলে ধরে, ইতিহাস প্রতিশোধ নেয়, ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ইতিহাস বিকৃতকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। এটি অস্বীকার করার আদৌ কোন উপায় নেই যে, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণ হচ্ছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদী ঘোষণা, মুক্তিযুদ্ধের সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলাসহ যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে সশস্ত্র প্রতিরোধ তথা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার উদাত্ত আহ্বান। এমনকি পরবর্তীকালে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পুনর্গঠনেরও যথাযথ দিকনির্দেশনা হচ্ছে এটি। অথচ দুঃখজনক হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে নির্মমনৃশংসভাবে হত্যার পর তৎকালীন সরকার মেতে ওঠে ইতিহাস বিকৃতির হীন প্রচেষ্টায়। তারা বঙ্গবন্ধুর ভাষণ পর্যন্ত নিষিদ্ধ করে। রেডিওটেলিভিশনসহ প্রায় সর্বত্র সবখান থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু ও তাঁর দল আওয়ামী লীগের নামনিশানা পর্যন্ত মুছে ফেলার ঘৃণ্য অপপ্রয়াস চালায়। জিয়াএরশাদ আমল পর্যন্ত দীর্ঘ ২১ বছর ধরে এই প্রচেষ্টা চলে। দীর্ঘ সংগ্রাম, আন্দোলন ও ত্যাগতিতিক্ষার পর বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে ধীরে ধীরে হলেও সত্য উন্মোচিত হতে থাকে তরুণ প্রজন্মের কাছে। যদি তা না হতো তাহলে হয়ত চিরদিনের জন্য হারিয়ে যেতে পারত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রকৃত ইতিহাস। তবে এও সত্যি যে, দেশ ও জাতির ঐতিহাসিক এবং অনিবার্য প্রয়োজনে ইতিহাস তার অমোঘ ও অমিত শক্তি নিয়ে আবির্ভূত হয়। দীর্ঘ ৪৬ বছর পর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরিক সমাবেশের ব্যাপ্তি ও বিশালতা ইতিহাসের সেই পুনরুত্থানকেই যেন স্মরণ করিয়ে দেয়। অতঃপর সেই ইতিহাসকে অবিকৃত ও চিরস্থায়ী সত্য হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে বাঙালী জাতিকে সদা জাগ্রত ও সচেতন থাকার আহ্বানটি অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ এবং গুরুত্ববহ বৈকি। অবশ্য চক্রান্তকারীদের সেই হীন প্রচেষ্টা যে থেমে গেছে এমন বলা যাবে না।
গত বছর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নিজদলীয় এক মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে মন্তব্য করেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে। হঠাৎ করে কেন তিনি মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন তা বোধগম্য হয়নি অনেকেরই। ফলে স্বভাবতই এর জের ধরে তীব্র বিতর্ক ও বাদানুবাদ শুরু হয় রাজনৈতিক মহলে এবং সারাদেশে। গণজাগরণ মঞ্চসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন, সর্বোপরি সরকারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এ নিয়ে জানায় তীব্র প্রতিবাদ। জনসভা, মিছিলমিটিংও হয়েছিল রাজধানীসহ সারাদেশে। একাধিক মামলামোকদ্দমাও হয়েছে।
মহান মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতির চিরদিনের অহঙ্কার ও গৌরবের। সবাই জানেন অন্ততপক্ষে ত্রিশ লাখ শহীদান ও তিন লাখ মাবোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। এটি ঐতিহাসিকভাবে প্রতিষ্ঠিত সর্বজনীন সত্য। জাতীয় সংবিধানেও ৪টি মূলনীতিসহ বিষয়টি লিপিবদ্ধ আছে। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে যে বা যারা বিতর্ক সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালায় তারা সংবিধানবিরোধী। প্রকারান্তরে তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করতে চায় না। উপরন্তু মহল বিশেষের পক্ষে কাজ করে পানি ঘোলা করে মাছ শিকার করতে চায়। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এক রায়ে বলেছে, মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ মানুষের শহীদ হওয়া ও লাখ লাখ নারীর সম্ভ্রম বিসর্জন প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস। এই ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধের পবিত্র আবেগ ও গৌরবের মধ্যে মিশে আছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ যেহেতু একটি মীমাংসিত বিষয় এবং ত্রিশ লাখ শহীদানসহ তিন লাখ মাবোনের সম্ভ্রমহানিও, সেহেতু তা নিয়ে কারও কোন বিতর্ক বা বক্তব্য রাখার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে যথাসম্ভব আইন প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি। তাহলেই দেশ অসুস্থ বা রুগ্ন রাজনীতি থেকে মুক্ত হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:০৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×