somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দু মুহূর্তের অনুভূতি (ছোট গল্প )

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
সন্ধ্যে থেকেই মিরাজ কেবল উশখুশ করছিল । ইস, কত্ত কাজ বাকি এখনও !



উচ্চ মধ্যবিত্তের এলোমেলো সংসারের ছেলে মিরাজ । মা মারা গেছে বছর তিনেক হল । সংসার বলতে কেবল বাবা আর ছোট বোন । নিজের জগৎটাকে একান্তই আপন করে সাজাতে চায় সে । কত্ত স্বপ্ন তার নিজেকে ঘিরে । নিজের জীবনটাকে একান্তই সে নিজের তুলিতে এঁকে নিতে চায় । জীবনকে সাজাতেই তার যত পথচলা । হাহ , বললেই হল ? জীবন সাজাতে প্রয়োজন নানা রকমের অর্জন । আর এই অর্জনগুলোকে এক হাড়িতে এনে রন্ধনের ইন্ধন হিসেবে চাই অর্থ ।

অর্থকড়ি নিয়ে মিরাজের বরাবরই লোভ কম । তার শুধু প্রয়োজন মিটলেই চলে । কিন্তু, হাতির প্রয়োজন কি আর সাধারণ প্রয়োজনের সমান ? ছেলেটা তাই খালি উশখুস করে । ভাঙা সংসারে বাবার কাছে ওভাবে আর আব্দারগুলো করা হয়ে উঠে না । কি আর করা , নিজ হাতে কামাও এবার ।

জীবনটাকে অতিমাত্রায় সাজাতে গিয়ে পুরোপুরি তেজপাতা বানিয়ে ফেলেছে সে । নিত্যদিন দূরান্তে গিয়ে লেখাপড়া আর সন্ধ্যের পর টিউশনি । জীবন যেন এক কলের মেশিনের মত । চলছে অবিরাম । এই দুই করে কি আর তার কাজ শেষ হয় ? একটু ফুসরত পেলেই এটা কর, ওটা কর ।উফফ, হাঁপিয়ে উঠেছে প্রাণটা ।

সন্ধ্যে থেকেই তার মেজাজটা বিগড়ে আছে । কত্তগুলো কাজ বাকী । টিউশনি করাতে হবে । বাসায় ফিরে লন্ড্রি থেকে কাপড় ফেরত আনা,মোবাইলে টাকা ভরা, দুই মোবাইল থেকে দুই মুঠোফোন বান্ধবীদের ফোন করা (!) , পরশুদিনের ক্লাব মিটিংয়ের নোটিশ সব ক্লাব মেম্বারদের জানানো ইত্যাদি ইত্যাদি ......। ধ্যাৎ, ফুটপাতে হাঁটতে হাঁটতে সে শিডিউল সাজাতে থাকে । কিন্তু, রাত বারোটার মধ্যে সব কাজ শেষ করার শিডিউল মেলানো অসমাপ্তই থেকে যায় ।

নয়ছয় ভাবতে ভাবতে বহু জ্যাম পেরিয়ে , বাসযাত্রীদের ঘামের দুর্গন্ধ হজম করে টিউশনির বাসায় অবশেষে গমন করা গেল । বাসায় ঢুকতে না ঢুকতেই মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেল । বিদ্যুৎ নেই । ঠ্যালা ঠ্যালো , দুর্বিষহ গরমে ছাত্রের কাছে দেড় ঘণ্টার ভ্যাগর ভ্যাগর !

জ্ঞান বিক্রি শেষ করে যখন সে বাইরে বেরুলো তখন প্রায় রাত্রি নয়টা । ঘেমে নেয়ে শরীরটা জবজবে হয়ে গেছে । মাথাটা ব্যথা করছে।
---০---
একটি অভিজাত এলাকার এক প্রান্তে টিউশনি করায় সে । নিজেও একই এলাকার অধিবাসী । থাকে আরেক প্রান্তে । এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে আসতে ভালই ঝামেলা পোহাতে হয় । রিকশা,বাস অতঃপর পয়সা বাঁচাতে হন্টন !

নিজ বাসার সামনের মহাসড়কে বাস থেকে প্রায় লাফিয়েই নামল মিরাজ । এ জায়গাটায় বাস সিগন্যাল ছাড়া থামলেই বাসের হেল্পার “বাম পা...বাম পা” বলে লাফিয়ে নামার নিখুঁত ডিরেক্টরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় । আর মিরাজের মত জীবন যুদ্ধের অভিনেতারা সেই অভিনয় সম্পাদন করে হররোজ ।

বাস থেকে নেমে হাঁটা ধরল মিরাজ । শহরের এক প্রান্তে বলে এলাকাটি খুব নির্জন । অল্প রাত্তিরেই সুনসান নিরবতা নেমে আসে । চিরচেনা পথ বেয়ে চাবি দেওয়া পুতুলের মত হেঁটে যাচ্ছে মিরাজ । প্রতিটি পদক্ষেপ যেন গতকালেরই পুনরাবৃত্তি । ধনীর দুলালদের একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল পেরিয়ে আসতেই দুর্বোধ্য নির্জনতায় ছেয়ে থাকা মসজিদ লেনটিতে পা পড়ে মিরাজের । আজ যে তার কি হয়েছে । কোন কিছুই হিসেব মত মিলছে না । ফুটপাত ছেড়ে সে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে শুরু করল । মধ্যভাগ দিয়ে হাঁটছে , যেন এটিই ফুটপাত !

আচমকা বিদ্যুৎ চলে গেল । গাছগাছালিতে ঢাকা গলিটিতে ফুটে উঠল ঘন আঁধার । মিরাজ স্তব্ধ হয়ে গেল । এ দৃশ্য যে সে কখনোই দেখেনি ! অভিজাত এই এলাকায় কখনোই আঁধার নেমে আসতে দেখেনি সে । বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর মুহূর্তেই জ্বলে উঠে প্রতিটি বাড়ির নিজস্ব ব্যবস্থাপনার আলো । রাস্তাগুলো কখোনই অন্ধকারের ছোঁয়া পায় না । কিন্তু, আজ সে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার আগ মুহূর্তে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে । তাই হঠাৎ এই অচেনা দৃশ্যের সঙ্গী । খুব ভাল লাগছে তার । মনের মধ্যে কেমন যেন রোমাঞ্চ জেগে উঠছে । নিকষ আঁধারে হারিয়ে গেছে সে । পাশেই প্রকৃতি স্বরূপ বৃক্ষরাজি আর সুনসান নীরবতা । কেন জানি এই মুহূর্তে একটি গাড়িও নেই গলিটিতে । তার অন্ধকার মন যেন এক বৃহৎ অন্ধকারের মাঝে বিলীন হয়ে গেছে ।

ভট..ভট...ভট...ভট...... বিকট শব্দে প্রতিটি বাড়ি থেকে জেনারেটর চালু হয়ে গেল আর সেই সাথে চারিদিকে আলোর বন্যা । মিরাজের দু মুহূর্তের অনুভূতি শুন্যে মিলিয়ে গেল সাথে সাথেই !

লেখনী ও লেখনীর স্বত্বাধিকার : মুনকির নাঈম সানি
সৃজিত হয়েছে : ১৯ আগস্ট ২০১০
*লেখকের অনুমতি ব্যতীত লেখার কোন প্রকার অংশ গ্রহণ এবং প্রকাশ করা যাবে না ।

লেখকের অন্যান্য পোস্ট :
#জীবন কড়চা (নিবন্ধ)
#মানুষ কেন ভালবাসে? /প্রেমাখ্যান (নিবন্ধ)
#ভালবাসায় ঠগবাজি এবং প্রাচ্য ভাবনা (নিবন্ধ)

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৩৬
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জেনারেল রাও ফরমান আলী ছিল ইন্ডিয়ান 'র'-এর এজেন্ট

লিখেছেন ধূসর সন্ধ্যা, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২২



জেনারেল রাও ফরমান আলী ছিল ইন্ডিয়ান 'র'-এর একজন এজেন্ট। এই তথ্য কেউ জানতো না। তার ফ্যামিলিও জানতো না। ১৯৪১ সালে বর্ডার ক্রস করে সে ঢুকেছিল পাকিস্তান। তারপর আস্তে আস্তে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×