somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসঃ স্বপ্নের থার্ড রাইখ(৫ম পর্ব) "হিটলার, জার্মানির ফুয়েরার"।

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



হিটলারের প্রিয় S.A বাহিনীর অপমৃত্যু ঘটে ১৯৩৪ সালের ৩০শে জুন। ১৯২০ সাল থেকে S.A বাহিনী ছিল নাৎসি পার্টির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ কথা মোটেই অস্বীকার করা যাবে না যে, হিটলারের ক্ষমতায় আসার পিছনে S.Aএর অবদান ছিল অনেক বেশী। অথচ ১৪ বছর পর, হিটলার নিজ হাতে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করলেন। S.A এর সংগ্রামের এ কেমন প্রতিদান?

কিন্তু S.A কে ধ্বংস করা ছাড়া হিটলারের কোনো উপায় ছিল না। তিনি ছিলেন অতি সাবধানী। এ কারণে কোনো সুযোগই তিনি নিতে চাননি। ১৯৩৩ সালে চ্যান্সেলর হবার পর থেকেই, S.A বাহিনীর প্রধান এবং সেই সাথে হিটলারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এর্ন্‌স্ট্‌ রোহ্‌ম, S.A কে জার্মান সেনাবাহিনীর স্থলাভিষিক্ত করার জন্যে হিটলারের কাছে জোড়াজুড়ি করতে থাকেন। ফরাসি বীর ন্যাপোলিয়ন রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের পর তার নিজ বাহিনীকে মূল সেনাবাহিনীর স্থলাভিষিক্ত করেছিলেন। রোহ্‌মেরও একই স্বপ্ন ছিল।

রোহ্‌মের প্রস্তাবটি অযৌক্তিক ছিল না। ১৯৩৩ সালে, S.Aএর সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্য সংখ্যা ছিল প্রায় ২০ লাখ। পক্ষান্তরে সেনাবাহিনীর সৈন্য সংখ্যা ছিল এক লাখ। ভার্সাই চুক্তির কোপানলে পড়ে তৎকালীন সময়ে জার্মান সেনাবাহিনী কার্যত পঙ্গু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু রোহ্‌ম ভুলে গিয়েছিলেন যে, সেনাবাহিনী আকারে খর্বাকৃতির হলেও, মানুষের হৃদয়ে তাদের স্থান ছিল অনেক উঁচুতে। ১৯১৮ সালে, ১ম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের সময়, সেনাবাহিনীর পাশে দাঁড়িয়ে, পুরো জার্মানি পরাজয়ের দুঃখে কেঁদেছিল। সেনাবাহিনীকে স্থলাভিষিক্ত করতে গেলে যে একটি গৃহযুদ্ধ বেঁধে যাবে, এই বাস্তবতাটিকে রোহ্‌ম খুব একটা আমলে নিতে চাননি।

কিন্তু অন্যদিকে, হিটলারেরও হাত বাঁধা ছিল। S.Aকে নিয়ে যখন পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হয়ে উঠছিল, তখন প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গ হিটলারকে তলব করেন। তিনি হিটলারকে সাফ জানিয়ে দেন যে, হিটলারের কারণে সেনাবাহিনীর কিছু হলে তিনি মার্শাল ল জারি করে দিবেন। এতে হিটলারের শাসনের অবসান ঘটবে।

এরকম পরিস্থিতিতে, রোহ্‌মের আচরণও সন্দেহজনক হয়ে উঠতে থাকে। ১৯৩৪ সালের শুরু থেকে হিটলারের প্রতি রোহ্‌মের আচরণে ব্যপক পরিবর্তন আসে। আগের সেই আনুগত্যমূলক ব্যবহারের লেশ মাত্রও নেই!!!(রোহ্‌মও বুঝতে পেরেছিলেন যে তার বাহিনী সকলের পথের কাটা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, এই কারণে নিজের অস্তিত্ব বাচিয়ে রাখার জন্যে তিনি এমনটি করছিলেন।)। ধীরে ধীরে হিটলারের কাছে খবর আসতে থাকে যে, রোহ্‌ম তার বাহিনী নিয়ে যে কোনো সময় বিদ্রোহ করতে পারেন।

হিটলারের জন্যে পরিস্থিতি এর চেয়ে বেশী খারাপ হতে পারে না।

****

হিটলার বুঝতে পারলেন যে তিনি উভয় সংকটে পড়ে গিয়েছেন। শীঘ্রই কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা না নিলে তাকে সব কিছু হারাতে হতে পারে। তার কাছে দুটি পথ খোলা আছে, হয় রোহ্‌মের পক্ষ নিয়ে তার বাহিনীকে সেনাবাহিনীর স্থলাভিষিক্ত করা(এতে গৃহযুদ্ধ অবধারিত। সেই সাথে তার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার সম্ভাবনা একদম নিশ্চিত।), নতুবা রোহ্‌ম এবং তার S.A বাহিনীকে ধ্বংস করে ফেলা। শেষেরটি করলে সেনাবাহিনীর প্রশ্নাতীত আনুগত্য অবধারিতভাবে পাওয়া যাবে। হিটলার যদি কোনো যুদ্ধ বাঁধিয়ে ফেলেন(৫ বছর পরেই তিনি তা বাঁধাবেন) তবে সেনাবাহিনী হাসিমুখে তার জন্যে যুদ্ধ করবে।

আর তাছাড়া ১৯৩৪ সালে S.A বাহিনীর প্রয়োজন ফুড়িয়ে গিয়েছিল। জার্মানিতে নাৎসি পার্টি বাদে কোনো রাজনৈতিক দলের অস্তিত্বটুকুও ছিল না। এমতাবস্থায় রাস্তায় রাস্তায় S.A বাহিনী কাদের সাথে লড়াই করবে?

এ পর্যায়ে এসে হিটলার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন। নিজেকে এবং সেই সাথে নিজের স্বপ্নগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে, S.Aকে ধ্বংস করতে হবে।

****

১৯৩৪ সালের ৩০শে জুন সকাল বেলা, অপারেশন হামিংবার্ড আরম্ভ করবার মাধ্যমে S.A এর উপর হিটলার তার নিষ্ঠুর ধ্বংসযজ্ঞ চালান। S.A এর শীর্ষস্থানীয় সকল নেতাকে হত্যা করা হয়। টানা দুই দিন ধরে হত্যাযজ্ঞ চলে। অবশেষে ২ জুলাই অপারেশন হামিংবার্ডের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। নাৎসিদের পক্ষ থেকে ৮২জন মৃতের সংখ্যা ঘোষণা করা হয়। এদের মধ্যে আবার অনেকেই ছিলেন S.A এর সাথে যাদের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। কেবলমাত্র হিটলারের সাথে শত্রুতার জোড়েই তাদের হত্যা করা হয়।(১৯৪৫ সালে যুদ্ধের পর ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালে অনেক নাৎসি বিরোধী ব্যক্তিগণ এই সংখ্যাটি আরও বেশী হবে বলে দাবী করেন। কিন্তু প্রকৃত মৃতের সংখ্যা কোনোদিনও জানা যাবে না। কেননা নাৎসিরা অপারেশন হামিংবার্ড সম্পর্কিত সমস্ত নথি যুদ্ধের শেষ দিকে ধ্বংস করে ফেলতে সক্ষম হয়েছিল।)

অপারেশন হামিংবার্ড S.A কে পুরোপুরি পঙ্গু করে দিয়েছিল। হাইনরিখ হিমলার কর্তৃক পরিচালিত S.S বাহিনীকে S.A থেকে আলাদা করে ফেলা হয়। অপারেশনের আগে S.A এর সৈন্য সংখ্যা ছিল ২০ লাখ। অপারেশনের পর এই আকার অনেকাংশে কমিয়ে ফেলা হয়। S.A সৈন্যদেরকে জার্মান সেনাবাহিনীর অন্তর্ভূক্ত করা হয়।

অপারেশনের পর থেকে যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত S.A তার পূর্ববর্তী কার্যকলাপের ছায়া হয়ে বিরাজ করতে থাকে। যুদ্ধের শেষের দিকে উপায়ন্তর না দেখে S.A এর সৈন্যদেরকে নিয়ে জোড়াতালি দিয়ে একটি প্যানযার ডিভিশন গঠন করা হয়। যুদ্ধ শেষে নাৎসিদের সাথে S.A এরও পতন ঘটে।

****

অপারেশন হামিংবার্ডের সাফল্যে হিটলার হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। তার মানসিক অবস্থারও বেশ উন্নতি হয়। ভাগ্যও তাকে সাহায্য করা শুরু করে। উল্লেখ্য, ১৯৩৪ সালের প্রথম ছয় মাস বেশ দুশ্চিন্তার মধ্যে কাটলেও, শেষ ছয় মাস ধরে ভাগ্য দেবী তাকে দু হাত ভরে সবকিছু দিতে থাকে।

****

অপারেশন হামিংবার্ডের এক মাস পর হিটলারের কাছে দুঃসংবাদের মোড়কে একটি সুসংবাদ আসে। অগাস্ট মাসের দুই তারিখ প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গ মৃত্যুবরণ করেন। আপাত দৃষ্টিতে সকলের কাছে এটি দুঃসংবাদ হলেও হিটলারের কাছে এটিই ছিল সুসংবাদ। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এই মুহুর্তের জন্যে অপেক্ষা করছিলেন। পরবর্তী ঘটনা সম্পর্কে আলোচনা করার আগে এই বিষয়ে কিছু বলে নেওয়া জরুরি।

১৯৩৩ সালে হিটলারের জোড়াজুড়িতে "Enabling Act" আইনটি চালু করা হয়। এই আইনের মাধ্যমে হিটলার অসামান্য ক্ষমতা লাভ করেন। কিন্তু এই আইনের আওতায় প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বলবত রাখা হয়। এটি একটি মারাত্মক ভুল ছিল। যেদিন প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গ হিটলারকে তলব করে মার্শাল ল জারি করার হুমকি দেন সেদিনই হিটলার প্রথম বুঝতে পারেন যে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বলবৎ রাখাটা কত বড় একটি ভুল ছিল। এই ঘটনার পর থেকেই হিটলার প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর প্রতীক্ষা করছিলেন। তার একটি মাত্রই উদ্দেশ্য ছিল, তা হল প্রেসিডেন্টের পদটি নিজের জন্যে করায়ত্ত করা(প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা নিজের করে নেওয়ার তীব্র ইচ্ছা থাকলেও হিটলার প্রেসিডেন্ট পদটি আর রাখতে চাননি। তিনি চেয়েছিলেন তার আনুষ্ঠানিক পদবী হোক "দ্য ফুয়েরার"। নাৎসিরা তাকে ফুয়েরার বলে ডাকলেও আনুষ্ঠানিকভাবে তার পদবী ছিল চ্যান্সেলর। প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা নিজের কাছে কুক্ষিগত করার পর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ফুয়েরার পদবী ধারণ করেন।)

কিন্তু, অন্যদিকে হিটলারের মতবিরোধী লোকের সঙ্খ্যাও কম ছিল না। তাদের মধ্যে অনেকেই জার্মান রাজবংশের পুনঃজাগরনণে বিশ্বাস করতেন। হিন্ডেনবার্গের মৃত্যুর পর রাজবংশেরই কোনো সদস্য প্রেসিডেন্টের পদটি অধিগ্রহণ করুক, এমনটা তারা চাইতেন। হিটলারের ভাইস চ্যান্সেলর ফ্রাঞ্জ ভন পাপেন ছিলেন এই দলেরই অন্তর্ভুক্ত। অপারেশন হামিংবার্ড আরম্ভ হবার কয়েকদিন আগে পাপেন প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গের সাথে দেখা করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গ তাকে অন্ধের মত বিশ্বাস করতেন। তিনি হিটলারের ক্রমাগত ক্ষমতা কুক্ষিগত করার ব্যাপারটি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন এবং এই কারণে তিনি পাপেনকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার জন্যে অনুরোধ করেন। পাপেন অবশ্য হিন্ডেনবার্গের অনুরোধ রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। বরং, নিজ জীবন বাঁচাতে অপারেশন হামিংবার্ডের দিন তাকে জার্মানি ছেড়ে পালাতে হয়েছিল।

****

১৯৩৪ সালের ২রা অগাস্ট, সকাল ৯টায়, প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গ মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে তিনি তার উইল তৈরি করে পাপেনের কাছে রেখে গিয়েছিলেন। হিন্ডেনবার্গ উইলের মধ্যে রাজবংশের পুনরুত্থানের ব্যাপারে কোনো আদেশ দেননি। এটি পাপেনকে বেশ অবাক করেছিল। প্রেসিডেন্ট পাপেনকে একটি চিঠিও দেন। চিঠিটি হিটলারের জন্যে ছিল। তিনি পাপেনকে মৃত্যুর পর চিঠিটি হিটলারের কাছে পৌছে দেওয়ার জন্যে অনুরোধ করেন। তিনি পাপেনকে এও বলেন যে চিঠিটিতে তিনি হিটলারকে তার মৃত্যুর পর রাজবংশের হাতে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা হস্তান্তর করার জন্যে অনুরোধ(কেবল অনুরোধ করেছেন, কোনো আদেশ দেননি) করেছেন।

****

১৯৩৪ সালের ২রা অগাস্ট, প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর কয়েক ঘন্টার মধ্যে হিটলার তার "Enabling Act" আইনের ক্ষমতাবলে একটি নতুন আইন জারি করে বসেন।

The Reich Government has enacted the following law which is hereby promugated.

Section 1: The office of Reich President will be combined with that of Reich Chancellor. The existing authority of the Reich President will consequently be transferred to the Fuhrer and Reich Chancellor, Adolf Hitler. He will select his deputy.

Section 2: This law is effective as of the time of the death of Reich President von Hindenburg.


এই আইনের প্রথম অংশে, প্রেসিডেন্টের সকল ক্ষমতা চ্যান্সেলর অ্যাডলফ হিটলারের কাছে হস্তগত করার কথা বলা হয়। সেই সাথে প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এবং চ্যান্সেলরের কার্যালয়কে একীভূত করার কথাও এখানে বলা হয়।

দ্বিতীয় অংশটিতে বলা হয় যে, প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর সময়কাল থেকে এই আইনটি কার্যকর করা হয়েছে।

****

হিটলার যে আইনটি প্রণয়ন করেছিলেন তা কিন্তু এক দিক দিয়ে বেআইনি ছিল। "Enabling Act" আইনানুযায়ী, হিটলার প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কিন্তু প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর পর চতুর হিটলার ঠিকই প্রেসিডেন্টের কার্যালয়কে তার কার্যালয়ের সাথে একীভূত করে ফেলেন। আশ্চর্যের বিষয় হল, কেউ এই ঘটনার প্রতিবাদ করেনি। সবাই যেন মেনে নিয়েছে যে, হিটলারের কথাই আইন।

****

হিটলারের কেরামতি কিন্তু এখানেই শেষ হয়ে যায়নি। একই দিনে তিনি আরেক অবিশ্বাস্য কান্ড করে বসেন। হিটলারের আদেশে জার্মান সেনাবাহিনীর প্রত্যেক সদস্যকে, জেনারেল ফিল্ড মার্শাল থেকে শুরু করে সাধারণ সৈনিক পর্যন্ত, একটি আনুগত্যের শপথ নিতে হয়।

"শক্তিমান সৃষ্টিকর্তাকে সাক্ষী রেখে আমি শপথ করছি যে, জার্মান রাইখের এবং জনগণের ফুয়েরার, সেনাবাহিনীর সুপ্রীম কমান্ডার, অ্যাডলফ হিটলারের প্রতি, আমি আমার শর্তহীন আনুগত্য প্রকাশ করব। একজন নির্ভীক সৈনিক হিসেবে, এই শপথ রক্ষা করার জন্যে, নিজের জীবন বিপন্ন করতে, আমি দ্বিধাবোধ করব না।"

লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, এই শপথবাক্য পাঠ করা হয়েছে অ্যাডলফ হিটলারকে উদ্দেশ্য করে, জার্মানিকে নয়(পূর্বের সকল প্রকারের সামরিক শপথ মাতৃভূমি এবং জার্মান সংবিধানকে উদ্দেশ্য করা নেওয়া হত।)

এই শপথ নেওয়ার মাধ্যমে সেনাবাহিনীর প্রতিটি সৈনিক হিটলারের কাছে দায়বদ্ধ হয়ে পড়েন। এরপর থেকে হিটলারের প্রতি শর্থহীন আনুগত্য প্রদান করা প্রতিটি জার্মান সৈনিকের জন্যে একটি পবিত্র দায়িত্ব হয়ে পড়ে। হিটলার অপারেশন হামিংবার্ড সংঘটিত করে সেনাবাহিনীকে ভাবী বিপদ থেকে উদ্ধার করেছিলেন। শর্থহীন আনুগত্য প্রকাশ করা ছিল সেনাবাহিনীর তরফ থেকে হিটলারের জন্যে একটি বিশেষ উপহার।






****

১৯৩৪ সালের ৭ অগাস্ট, প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। সেখানে ডিফেন্স মিনিস্টার জেনারেল ফিল্ড মার্শাল ভার্নার ভন ব্লমবার্গ হিটলারকে "মাইন ফুয়েরার(আমার নেতা)" বলে সম্বোধন করেন। তিনি এও প্রস্তাব করেন যে আজ থেকে "হাইল হিটলার"এর পরিবর্তে হিটলারকে "মাইন ফুয়েরার" বলে সম্বোধন করা হোক। পরবর্তীতে এটিই হিটলারকে সম্বোধন করার আনুষ্ঠানিক রীতিতে পরিণত হয়।

হিন্ডেনবার্গের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান।

****

প্রেসিডেন্টের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের পর, নাৎসি সরকার হিটলারের নতুন ক্ষমতাকে একটি বৈধতা প্রদানের জন্যে পুরো জার্মানি জুড়ে একটি গণভোটের ব্যবস্থা করে। কিন্তু এরই মাঝে হিটলার পাপেনের কাছ থেকে প্রেসিডেন্টের উইল, টেস্টামেন্ট এবং চিঠি পান। চিঠিটি পড়ে হিটলার বিপাকে পড়ে যান। চিঠিটিতে রাজবংশ থেকে প্রেসিডেন্ট বাছাই করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু হিটলার এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট পদটিকে বাতিল করে তার কার্যালয়কে নিজের সাথে একীভূত করে ফেলেছেন। এই চিঠির কথা প্রকাশ পেলে বিপদ হতে পারে এই ভেবে হিটলার ততখানত চিঠিটি পুড়িয়ে ফেলেন।

কিন্তু হিটলার ঠিকই প্রেসিডেন্টের উইল এবং টেস্টামেন্ট প্রকাশ করেন। তাও গণভোটে বেশী ভোট পাওয়ার জন্যে, কাটঝাট করে এটি প্রকাশ করা হয়।

যুদ্ধের পর ন্যুরেম্বার্গ ট্রায়ালে, পাপেনের কাছ থেকে প্রথমবারের মত হিন্ডেনবার্গের চিঠির কথা জানতে পারে বাহিরের বিশ্ব।

****

১৯৩৪ সালের ১৯শে অগাস্ট, গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। হিটলার যে বিশাল ব্যবধানে জয়ী হবেন সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ ছিল না। ৩ কোটি ৮০ লাখ জার্মান(মোট জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ) "হ্যা" ভোট প্রদানের মাধ্যমে হিটলারের প্রেসিডেন্ট পদ অধিগ্রহণের পক্ষে নিজেদের সিদ্ধান্ত জানায়। তারা মেনে নেয় যে, প্রেসিডেন্ট এবং চ্যান্সেলর, উভয়েরই ক্ষমতা এক হিটলারের উপরে বর্তাবে। তিনি হবেন জার্মানির ফুয়েরার।

২০শে অগাস্ট, জার্মানির সকল সরকারী বেসরকারি কর্মচারীকে বাধ্যতামূলক শপথ নিতে হয়।

"আমি শপথ করছি যে, আমি জার্মানির ফুয়েরার,অ্যাডলফ হিটলারের প্রতি আনুগত থাকবো এবং তাকে মান্য করব। আমি জার্মান সংবিধান অনুযায়ী সকল আইন মান্য করব এবং সুনাগরিক হিসেবে নিজের কর্তব্যগুলো যথাযথভাবে পালন করব। খোদা আমার সহায় হন।"

****

অবশেষে, চৌদ্দ বছর সংগ্রামের পর হিটলার তার স্বপ্নের 'টোটাল পাওয়ার" কায়েম করতে সক্ষম হন।

---------------------------------------------------------------------------------
এই সিরিজের অন্য পর্বগুলো

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসঃ স্বপ্নের থার্ড রাইখ(৪র্থ পর্ব) operation hummingbird

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসঃ স্বপ্নের থার্ড রাইখ(৩য় পর্ব) the night of the long knives

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসঃ স্বপ্নের থার্ড রাইখ(২য় পর্ব) Hitler becomes Dictator

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসঃ স্বপ্নের থার্ড রাইখ(১ম পর্ব) রাইখস্টাগ অগ্নিকান্ড(The Reichstag on fire)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে আমার আগের সব লেখার লিংক।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৬
২৮টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×