somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহীরুহ, শুভেচ্ছা তোমাকে

৩১ শে মে, ২০১১ দুপুর ২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেয়েটির নাম মারিয়া, বাড়ি উরুগুয়ে। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়ে যায়, স্বামি ছিল ট্রেড ইউনিয়নের নেতা। কিছুদিন পর একটি মেয়ে হয় তার। ১৯৭৩ সালে উরুগুয়েতে সেনাবাহিনি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে নিল। সারা দেশে শুরু হল ভয়াবহ দমন-পীড়ন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই উরুগুয়ে হয়ে উঠল সারা দক্ষিন আমেরিকার অত্যাচার আর নির্যাতনের কেন্দ্র। মারিয়ার স্বামি দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেল। কিশোরী মারিয়া একদিন গ্রেফতার হল। তার সন্তানকে কেড়ে নিল সেনাবাহিনি। তথাকথিত বিচারে তার ৭৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হল। অন্ধকার একটি সেলে তার কারাবাস শুরু হল। কখন দিন কখন রাত, কত সময়, কোন দিন- কিছুই জানার উপায় ছিল না। মাঝেমাঝে আশেপাশের সেল থেকে বন্দীদের আর্তচিৎকার ভেসে আসত। খাবার ছিল অতি কুৎসিত, বিস্বাদ। মারিয়া কিছুই খেতে পারত না। কিন্তু বাধ্য হয়ে কিছুদিন পর থেকে ওই খাবারই খেতে শুরু করল। জেরার সময় সামরিক কর্তারা তাকে নানা ভাবে হুমকি দিতে লাগল। তাদের প্রশ্ন একটাই- তার স্বামি কোথায় লুকিয়ে আছে তা বলতে হবে। মারিয়া কিছুতেই তাদের বোঝাতে পারল না যে তার স্বামির সরকার বিরোধি কার্যকলাপ সম্পর্কে কিছুই সে জানে না। তবুও সেনাবাহিনি তাকে ছাড়ল না। তাদের হুমকি, তার স্বামির খোঁজ না দিলে তার সন্তানের ক্ষতি হবে। একদিন তারা মারিয়াকে বলল, স্বামির খোঁজ না দিলে তারা তার দাঁত তুলে নেবে। এক পর্যায়ে তারা নির্যাতন থামাতে বাধ্য হল- কারণ মারিয়ার মুখে তখন আর কোন দাঁত অবশিষ্ট ছিল না। মারিয়া তার সবগুলো দাঁত হারাল। একদিন ওরা মারিয়াকে হত্যার কথা বলল। মারিয়া বন্দুক তৈরি করার আওয়াজ শুনল। এ সময় একজন রক্ষি বলল 'খাওয়ার সময় হয়ে গেছে,গুলিটা না হয় খাওয়ার পর এসেই করব'। ক্লান্ত-অবসন্ন মারিয়া একদিন সেলে বসে ছিল। এ সময় এক কারারক্ষী এসে তাকে একটি পোস্টকার্ড দিল। মারিয়া সেটা খুলে দেখল তাতে লেখা আছে 'মারিয়া তোমার কথা ভাবছি- মার্গারেট, স্কটল্যান্ড'। মারিয়া বলল, 'এটা ভুল ঠিকানায় এসেছে। আমি স্কটল্যান্ডের কোন মার্গারেটকে চিনি না।' কিছুদিন পর একইরকম আরও চিঠি আসতে লাগল কানাডা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা থেকে। প্রতিটি চিঠিতে একই লেখা-'মারিয়া তোমার কথা ভাবছি'। সবগুলো চিঠিতে একটিই প্রতীক- কাঁটাতার দিয়ে জড়ানো একটি মোমবাতি। আর যে সংগঠনটির খামে চিঠিগুলোও এসেছিলো তার নাম Amnesty International । মারিয়া এমন কোন সংগঠনের নাম আগে শোনেনি। মারিয়া জানতে চাইল তার আরও কোন চিঠি এসেছে কি না। কারা কর্তৃপক্ষ জানালো, 'সবগুলো চিঠি এখন দিতে পারছি না, শুধু আজকে আসা চিঠিগুলো নিয়ে যাও।' তারা মারিয়াকে প্রায় ৯০০ টি চিঠি দিল। চিঠিগুলো পড়ে মারিয়া বুঝতে পারল তার অজান্তেই সে সারা পৃথিবীতে এক অভুতপুর্ব আন্দোলনের কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে। কারা কর্মকর্তা তাকে ডেকে একদিন বললেন, 'তুমি আমাদের জন্য বিশাল ঝামেলায় পরিনত হয়েছ। আমরা ঠিক করেছি তোমাকে ছেড়ে দেব। তাহলে এই চিঠির বোঝা থেকে আমরা মুক্তি পাব। যাওয়ার সময় এই চিঠিগুলো নিয়ে যেও'। এই বলে তাকে ৪-৫ টি বড় বড় বস্তা দেখিয়ে দিল। অবশেষে ১ বছর কারাবাসের পর মারিয়া মুক্তি পেল। সেনারা তাকে আর্জেন্টিনাগামি একটি নৌকায় তুলে দিল। সেখানে সে দিশেহারাভাবে সে পথে পথে ঘুরে বেড়াতে লাগল। হঠাৎ একদিন একটি বাড়ির উপর খুব পরিচিত একটি প্রতীক দেখতে পেল। তারকাটা দিয়ে জড়ানো মোমবাতি-Amnesty International এর প্রতীক, যারা তাকে কারাজীবনে সাহস জুগিয়ে এসেছে। মারিয়া অফিসে গিয়ে তার পরিচয় জানালো। তাদের মাধ্যমে মারিয়া লন্ডনে আশ্রয় পেল। ফিরে পেল নিজের মেয়েকে। সে এখন স্বাধীন, আবার বিয়ে করে মারিয়া গিলেস্পি উত্তর ইংল্যান্ডে বসবাস করছেন।
এ তো একজন মাত্র মারিয়ার কথা বললাম। এরকম আরও মারিয়াকে সারা পৃথিবীজুড়ে হতে হচ্ছে সরকারি পুলিশ বা সেনাবাহিনির অন্যায়ভাবে গ্রেফতার ও নির্যাতনের স্বীকার। তাদের সবার জন্য Amnesty International একটি ছায়াস্বরূপ। আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই Peter Benenson ( http://en.wikipedia.org/wiki/Peter_Benenson ) কে, যিনি ২ জন পর্তুগিজ ছাত্রকে সাহায্য করতে গিয়ে এই মহান সংগঠনের জন্ম দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, 'অন্ধকার কারাপ্রকোষ্ঠের ভেতর বন্দীদের মাঝে আলোর রেখা দেখাতে চাই আমরা'। Amnesty, আরও বেগবান হোক তোমার আলোর পথে জয়যাত্রা। ৫০ তম জন্মদিনে বিশ্বজুড়ে নিপীড়িত জনগনের পক্ষ হতে শুভেচ্ছা তোমাকে।

[সুত্রঃ বিবিসি বাংলা]
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×