somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিক্ষা পদ্ধতি, আমরা ও আমাদের সন্তান

১৯ শে নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




২০২৩ সাল থেকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেনিতে নতুন পাঠ্যক্রম চালু হয়েছে পরীক্ষামূলকভাবে। যেখানে অতীতের গতানুগতিক শিক্ষা থাকছে না। ছাত্র-ছাত্রীরা নাকি হাতে কলমে শিখবে। পাঠ্যক্রম সেইভাবেই সাজানো। নতুন বইতে নেই অধ্যায়ভিত্তিক কোনও প্রশ্ন। অনুসন্ধানী পাঠ এবং অনুশীলনী- এই দুই ধরণের পাঠ্যবই। বছরের শুরুতেই এমন বই হাতে ঘরে ফিরে শিক্ষার্থীরা।

বই হাতে পেয়েও পড়া শুরু করতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। কিভাবে পড়বে, কী পড়বে? শিক্ষকদের পড়ানোর উপর ট্রেনিং দেয়া হয়। এভাবে কেটে যায় মার্চ মাস পর্যন্ত। তারপর রমজান-ঈদ, এসএসসি পরীক্ষার বিশাল ছুটি। ক্লাসে পড়া বলতে এসাইন্মেন্ট দিয়ে দেয়, বাসা থেকে করে আনার জন্য। কিন্তু ক্লাসে পড়া বুঝানোর কোনও তোয়াক্কা করে না। বলছি সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের কথা। শিক্ষকদের মধ্যে প্রাইভেট পড়ানোর ঝোঁক আগে থেকেই ছিল। নতুন পদ্ধতির কারনে এটা আরও বেড়ে গিয়েছে। সরকার তাদের ট্রেনিং দিয়েছে কি প্রাইভেট পড়ানোর জন্য?

নতুন পদ্ধতিতে গতানুগতিক কোনও পরীক্ষা থাকছে না। মানে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেনিতে কোনও পরীক্ষা নেয়ার নির্দেশনা নেই। এসাইন্মেন্ট এর উপর বিবেচনা করে নাকি মুল্যায়ন করা হবে। তার মানে শিক্ষকদের উপর দায়িত্ব দিয়ে দেয়া হল শিক্ষার্থীদের মুল্যায়নের। অবশ্য শিক্ষকরাই তো জানবে কোন শিক্ষার্থী কেমন। কিন্তু আমাদের দেশের যে অবস্থা, প্রাইভেট না পড়লে অন্য চোখে দেখে শিক্ষার্থীকে। সরকারি স্কুলের কথাই এটা বলছি। যদিও শিক্ষকদের প্রাইভেট পড়ানোর উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু কে কার পরোয়া করে? কোথাও কোনও জবাবদিহিতা নেই দেশে।

দুইদিন আগে স্কুলে অভিভাবকদের নিয়ে মিটিং করল স্কুল কর্তৃপক্ষ। সেখানে জানানো হল আগামি মাসে শিক্ষার্থীদের মুল্যায়ন করা হবে। একজন একজন শিক্ষার্থীকে নাকি মৌখিকভাবে পড়া ধরবে। অভিভাবকদের কথা ক্লাসে তো পড়াই হয়নাই, কোনও সিলেবাসও দেয় নাই, তাহলে শিক্ষার্থীরা কী পড়ে পরীক্ষা দিবে। শিক্ষকেরা সদুত্তর দিতে না পেরে তরিঘরি করে মিটিং শেষ করে দিল।
মিটিং এ এও বলল, শিক্ষার্থীরা এখন যা শিখছে এরা এখন নিজেরাই ভাত, ডিম রান্না করে খাওয়াতে পারবে। বিদেশে গেলে তো নিজের রান্না নিজে করেই খেতে হয়। বাবা-মা কেও রান্না করে খাওয়াবে। কি আর বলবো?

প্রাথমিক পেরিয়ে মাধ্যমিকের প্রথম স্তর হচ্ছে এই ষষ্ঠ শ্রেণি। যাকে বলে মাধমিকের ভীত। এই ভীতটাই নষ্ট করে দিল নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা।

যারা এই শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে এসেছে এবং এক্সপেরিমেন্ট করছে তাদের সন্তানেরা তো হয় ইংরেজি মাধ্যমে পড়ে নইলে বিদেশ পাঠিয়ে দেয়। যত মরা মরে এদেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের। আমাদের সন্তানেরা ভাত-ডিম রান্না করতে পারে, বাসায় দেখে দেখেই শিখে ফেলে। আপনাদের সন্তানেরা তো এসব খায় ই না। তারা তো খায় চাইনিজ, পিজা, বার্গার এসব।

সন্তানের শিক্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন আছি। মানুষ জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য কাজ করে, আর আমাদের আমলারা কাজ করে অ-জ্ঞান করার জন্য, মূর্খ বানানোর জন্য। সরকারি স্কুলের শিক্ষকেরা কোনও অভিভাবকের কথা শুনতে চায় না। প্রধান শিক্ষক/প্রিন্সিপালও তেমনই। যারা প্রাইভেট পড়ে না শিক্ষকদের কাছে, তারা আছে আরও টেনশনে, কী হয়, কী হবে? অনেকে এই ভয়ে না পেরে উঠলেও বাধ্য হয়ে স্কুলের শিক্ষকের কাছে প্রাইভেটে দিচ্ছে। হয়ত অনেকেই বলবে- প্রাইভেট স্কুলে দিয়ে দিতে। কিন্তু প্রাইভেট স্কুলে পড়ানো, ব্যয় ভার করা তো সকলের পক্ষে সম্ভব নয়। তাছাড়া প্রাইভেট স্কুলেও তো একই কারিকুলাম। বাকি রইল ইংলিশ মিডিয়াম। সবার কি সাধ্য আছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ানোর? আমাদের দেশের মতো অন্য কোনও দেশে মনে হয় না এতো ঘনঘন শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তন করে থাকে? আবার বলবেন অনেকে- অভিযোগ করেন। কিন্তু কোথায় করবো? কে শুনবে আমাদের কথা? সবাই এক। কেউ দায়িত্ব, দায় নিতে রাজী নয়। সবাই যার যারটা বুঝে। সবাই আজ চাটুকার। আবার আইনের ফাঁক ফোঁকর তো আছেই। এর থেকে উত্তরনের উপায় কী?

বার্ষিক মূল্যায়ন চলছে স্কুলে। যাচ্ছে তাই অবস্থা। বোর্ডে প্রশ্ন লিখে তার উত্তর লিখতে হচ্ছে। তাহলে কী হল। সেই একই তো কথা। মূল্যায়নটা তাহলে কিভাবে হচ্ছে? ফাঁকি দেয়ার জন্য প্রশ্ন না ছাপিয়ে বোর্ডে প্রশ্ন লিখে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ঐ পর্যন্তই। তার কোন প্রতিফলন নেই ক্লাসে। এসাইন্মেন্টের নামে রঙ্গিন কাগজ কিনো, এটা বানাও, ঐটা বানাও, নিয়া যাও ক্লাসে। ব্যস, শেষ পড়া। শিক্ষার কোন মাথা নেই। এসব দিয়ে কি ভবিষ্যৎ এ ভালো কোনো জব বা কাজ পাবে? শেষে ভাত আর আলু ভর্তা বানিয়ে বিক্রি করে আয় করতে হবে, খরচ চালাতে হবে।

এখন অনেকেই হয়ত বলবেন- এতে হাতে-কলমে, জীবনমুখী শিক্ষা প্রতিফলিত হবে। আমরা এটাকে বিপরীতমুখী ভাবছি। কোচিং সেন্টারের সাথে যারা জড়িত, তারা এটাকে বিপথগামী হিসেবে ফুটিয়ে তুলছে। আসলে আমি কোনও কোচিং সেন্টারের সাথে জড়িত নই, আমার এমন কোনও প্রতিষ্ঠানও নেই। আমি এর বিপক্ষেও না। তবে পদ্ধতির বিপক্ষে। হাতে কলমে যদি শিক্ষার বিষয়টিই হতো, তাহলে গার্হস্থ অর্থনীতি, কর্মমুখী শিক্ষা- এমন ২-১ টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করেই তো হতো। পুরো শিক্ষা পদ্ধতি আমাদের সন্তানকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

কে শুনবে কার কথা? যারা এই পদ্ধতি প্রণয়ন করেছেন, তাঁদের সন্তানেরা কি এই পদ্ধতিতে লেখাপড়া করছে? তারা হয় ইংলিশ মিডিয়াম নয়ত বিদেশে পড়াশুনা করছে।

সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:২০
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×