গতকাল মৃত্যু বরন করেছেন কবি আল মাহমুদ (ইন্নালিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন")। পদ্য সাহিত্যে আমার অনুরাগ কম তাই কবি হিসাবে বাংলা সাহিত্যে আল মাহমুদের অবদান বা তার কবিতার মান ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে স্বাধীনতা/একুশে পদক দাবি করা কবিদের সমান নাকি বেশি তা নিয়ে মন্তব্য করিতে আমি অক্ষম। জীবনে তার কোন কবিতার বই কিনেছি বলে মনে করতে পারতেছি না। সত্য কথা বলতে কি পাঠ্য বই এর কবিতার বাহিরে শুধুমাত্র রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের কবিতার বই কিনেছি। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পূর্বেই সুনীল, সমরেশ, শীর্ষেন্দু, বুদ্ধদেব গুহ এর ক্লসিক গুলো কেনা ও পড়া শেষ করলেও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া, জাফর ইকবাল স্যারের সাথে একই বিল্ডিং এ ৮ বছর অতিবাহিত করার পরেও তার কোন বই কেনা, সেই বই এ অটোগ্রাফ নেওয়া ও পড়া কোনটাই করিনি। জীবনে জাফর ইকবাল স্যারের কোন বই পড়েছি কিংবা কিনেছি বলেও মনে পড়ে না। আমি জাফর ইকবালের কোন বই পড়ি নি বলে কি লেখক হিসাবে উনি অখ্যাত? উনার লেখার কোন সাহিত্য মূল্য নাই????
যে কারণে এই স্ট্যাটাস লিখা। গতকাল থেকে ফেসবুকে কিছু মানুষের স্ট্যাটাস দিয়ে প্রশ্ন করতেছে আল মাহমুদ কোন (???) কবি? বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি কেমন করে হয়? তার কোন কবিতা বা উপন্যাস তো আমি পড়ি নাই? এই রকম হাজারো প্রশ্ন!!!!!!! তাদের আসল উদ্দেশ্য যে কি (?????) তা আর বিস্তারিত লিখলাম না!!!! প্রশ্নকারী এই মানুষ গুলোর মধ্যে চটি গল্প লেখ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, কিংবা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের উঠানে পা দেওয়া যোগ্যতাও অর্জন করে নাই তারও রয়েছেন। শেষোক্ত ক্যাটাগরির মানুষদের নিয়া কিছু বলা বা লেখে নিজের সময় নষ্ট করতে চাই না। তবে বাংলা সাহিত্যে কবি আল মাহমুদের অবদানকে ছোট করতে চাওয়া বড়-বড় ডিগ্রী-ওয়ালা মানুষদের সাথে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া কালীন নিজ বিভাগের এক শিক্ষকের মুখে শুনা একটা ঘটনা শেয়ার করার লোভ সামলাইতে পারলাম না।
ঐ শিক্ষক নিজ বিভাগের ইতিহাসে অন্যতম মেধাবী এক ছাত্রকে প্রশ্ন করেছিল পাঠ্য বই এর বাহিরে জীবনে কোন কোন লেখকের বই পড়েছে? ঐ ছাত্রটি কেমন মেধাবী ছিলও তার অল্প একটু উদাহরণ দেই। সে ছাত্রটি নাহিদ মিয়ার আমলের SSC ও HSC পাশ না। কিংবা কিংবা MCQ চালু করার পরে ও SSC ও HSC পাশ করে নি। সেই ছাত্রটি ১৯৮৯ সালে কুমিল্লা বোর্ড থেকে SSC পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় ১৬ তম স্থান অধিকার করে ও ১৯৯১ সালে কুমিল্লা বোর্ড থেকে HSC পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় ৩য় স্থান অধিকার করে। স্যারের প্রশ্ন শুনে সে অসাধারণ মেধাবী ছাত্রটি উত্তর দিয়েছিল যে জীবনে সে দুইটি মাত্র উপন্যাস পড়েছে। সেই উপন্যাস দুইটি হলও সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ রচিত লালসালু উপন্যাস ও কাজী ইমদাদুল হক -এর 'আব্দুল্লাহ' উপন্যাস। এখানে উল্লেখ্য যে এই দুইটি উপন্যাসই ছিলও SSC ও HSC এর পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত। ফলে জনৈক ছাত্রটি উক্ত দুইটি উপন্যাস পড়িতে বাধ্য হয়েছিলেন নিজের ইচ্ছেই পড়েন নাই। সেই ছাত্রটি নিজের মেধার সাক্ষর রাখিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হইয়াছেন ও এক নোবেল পুরষ্কার পাওয়া বৈজ্ঞানিকের আন্ডারে গবেষণাও করিয়াছেন।
কবি আল মাহমুদের "আমার মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেল শেষে, হেথায় খুঁজি হোথায় খুঁজি সারা বাংলাদেশে" লাইন গুলো বাংলা সাহিত্যে অনেকদিন বেঁচে থাকবে বলেই আমার বিশ্বাস। কবি আল মাহমুদের অবদানকে ছোট করতে চাওয়া বড়-বড় ডিগ্রী-ওয়ালা মানুষদের দার্শনিক প্লেটোর একটা জনপ্রিয় উক্তি মনে করিয়ে দেওয়ার লোভও সামলাইতে পারিলাম না।
“"Wise men speak because they have something to say; Fools because they have to say something." - Plato”
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৬