বাংলা সিনেমার চৌধুরী সাহেবের ছেলের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বী খন্দকার সাহেবের মেয়ের চিরাচরিত ভালবাসার গল্পই হলও আবহাওয়া বিজ্ঞানের ভাষায় বজ্রপাত
বজ্রপাত কি? বজ্রপাত কেন হয়? বজ্রপাত কোথায় হয়? বজ্রপাত কতপ্রকার ও কি কি?
ছবি কৃতজ্ঞতা: হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ
খুব সহজ উত্তর হলও বজ্রপাত হলও ধনাত্মক চার্জ ও ঋনাত্ন চার্জ এর মধ্যে ভালোবাসার (বিদ্যুৎ) আদান-প্রদান। ধনাত্মক ও ঋণাত্মক চার্জ মেঘের বিভিন্ন উচ্চতায় ও পৃথিবী পৃষ্ঠের কোন স্থানে জমা হতে পারে। কোন স্থানে ধনাত্মক চার্জ সৃষ্টি হলে তার পাশে বিপরীতমুখী ঋণাত্মক চার্জ সৃষ্টি হয় প্রকৃতির নিয়মে (অবশ্যই বিজ্ঞানের নিয়মে)। যেহেতু বিপরীত মুখি চার্জ পরস্পরকে আকর্ষণ করে ও প্রকৃতি সাম্যাবস্থা পছন্দ করে তাই কোন স্থানে স্বাভাবিক নিয়মে দীর্ঘ সময় ধরে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক চার্জ ভারসাম্যহীন অবস্থায় থাকতে পারে না যদি সেই বিপরীতমুখী চার্জ খুবই কাছা-কাছি চলে আসে। একটি শক্তিশালী চুম্বক এর উত্তর মেরু যখন অন্য একটি দুর্বল চুম্বকের দক্ষিন মেরুর কাছাকাছি নিয়ে আসা হয় তখন শক্তিশালী চুম্বকটির আকর্ষণে দুর্বল চুম্বকটিকে নিজের দিকে টেনে নেয় ঠিক একই ঘটনা ঘটে বজ্রপাতের সময়। মেঘ কিংবা ভূ-পৃষ্ঠের যে স্থানে বেশি শক্তিশালী চার্জ জমা হয় সেই স্থান থেকে চার্জ অপেক্ষাকৃত দুর্বল চার্জের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এই শক্তিশালী চার্জ যখন অপেক্ষাকৃত দুর্বল চার্জের খুব কাছাকাছি চলে আসে তখন শক্তিশালী চার্জের আকর্ষণের প্রভাবে দুর্বল চার্জটিও শক্তিশালী চার্জটির দিকে অগ্রসর হতে বাধ্য হয়। দুই বিপরীত চার্জ যখন খুব কাছাকাছি চলে আসে ঠিক তখনই বজ্রপাত ঘটে। অর্থাৎ দুই স্থানের মধ্যে চার্জের আদান প্রদান ঘটে ও দুই স্থান সাম্যাবস্থায় আসে।
বজ্রপাতকে বাংলা সিনেমার নায়ক-নায়িকার মধ্যে প্রেমের প্রস্তাবের সাথেও তুলনা করতে পারেন। নায়ক ও নায়িকার মাধ্বে যার একটু সাহস বেশি সেই প্রথমে অগ্রসর হয়ে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। বজ্রপাতের ঘটনাটিও ঠিক তেমনি। ধনাত্মক ও ঋণাত্মক চার্জ এর মধ্যে যার শক্তি বেশি সেই বজ্রপাত ঘটানোর জন্য প্রথম উদ্যোগ নেয়।
বজ্রপাত সাধারণত ৪ প্রকার:
১) মেঘের ঋনাত্নক প্রান্ত থেকে ভূমিতে অবস্থিত ধনাত্মক প্রান্তের মধ্যে ভালোবাসার আদানপ্রদান (খন্দকার বাড়ির মেয়ে পক্ষ থেকে চৌধুরি বাড়ির ছেলের জন্য বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোর সাথে তুলনা করা যেতে পারে)
২) মেঘের ধনাত্মক প্রান্ত থেকে ভূমিতে অবস্থিত ঋনাত্নক প্রান্তের মধ্যে ভালোবাসা আদান--প্রদান (চৌধুরি বাড়ির ছেলে পক্ষ থেকে খন্দকার বাড়ির মেয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোর সাথে তুলনা করা যেতে পারে)
৩) মেঘের মধ্যে অবস্থিত ধনাত্মক চার্জের সাথে মেঘের মধ্যে অবস্থিত ঋনাত্নক চার্জের ভালোবাসার আদান-প্রদান। এই বজ্রপাত আবার ২ প্রকার হতে পারে। একই মেঘের মাধ্বে অবস্থিত দুই বিপরীত মুখি চার্জের কিংবা একটি মেঘের এক প্রকার চার্জের সাথে পাশের মেঘের বিপরীত মুখি চার্জের আদান-প্রদান। (আরও সহজ ভাষায় বলা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলের (মেয়ের) কাজি অফিসে গিয়ে বুয়েটের মেয়েকে (ছেলেকে) বিয়ে করা কিংবা ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়ুয়া ছেলের নিজ মেডিকেল কলেজের ক্লাসমেট বা জুনিয়র ডাক্তার মেয়েকে কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করার সাথে তুলনা করা যেতে পারে)।
৪) মেঘের কিনারা থেকে ধনাত্ন চার্জের বাতাসে অবস্থিত বিপরীত মুখি চার্জের দিকে উদ্দেশহীন ভাবে অগ্রসর হওয়া। (এই প্রকার বজ্রপাতকে তুলনা করা যেতে পারে বাংলা সিনেমার নায়ক বাপ্পারাজের মদের বোতল হাতে নিয়ে নিয়ন্ত্রনহীন ভাবে রাস্তায় চলতে-চলতে আকাশের দিকে ভালবাসা ছুড়ে মারার সাথে)।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৩:২২