অসংক্রামক (non communicable disease-NCD) / জীবনাচার (Lifestyle) সংশ্লিষ্ট রোগ
১। সাম্প্রতিক বিশ্বে অসংক্রামক রোগে (NCDs) বিশেষত হৃদরোগে (CVD), ক্যান্সার, ক্রনিক শ্বাসযন্ত্রের রোগ (CPD), ডায়াবেটিস এবং কিডনী রোগে আক্রান্ত হওয়া অথবা এর পরিনামে মৃত্যুবরণের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে । বর্তমান সময়ে NCD তে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে সারা বছরে ৩.৫ লাখ লোক মৃত্যুবরণ করেণ, যা বিশ্ব মৃত্যু হারের ৬০% এবং এর শতকরা ৮০% ভাগই নিম্ন এবং মধ্য আয়ের দেশগুলোতে ঘটে থাকে । সকল রোগই প্রতিরোধযোগ্য হওয়া সত্বেও যথা সময়ে দৃষ্টি না দিলে এই সকল প্রতিরোধযোগ্য রোগে মৃত্যুহার এবং আক্রান্তের সংখ্যা আশংকাজনক ভাবে বেড়ে যাবে । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে এখনই ব্যবস্থা না নিলে আগামী ১০ বৎসরে এই সকল রোগে মৃত্যুর হার ১৭% বেড়ে যাবে ।
আনুপাতিক ভাবে NCD তে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া উদ্বেগজনক । এ ধরণের প্রতিরোধযোগ্য রোগে আক্রান্ত হলে যেমন ব্যাক্তক্ষতিগ্গ্রস্হ হয়, তাদের পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয় তেমনি সামগ্রিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থতার ভার পড়ে দেশের উপর । NCD এ আক্রান্ত ব্যক্তির জীবনযাপনের মান (quality of life) যেমন নিম্নগামী হয়, তেমনি নিম্নগামী হয় তার কর্মদক্ষতা ও মানসিক স্পৃহা ।
প্রধান NCDরোগ সমূহ ঃ এ সমস্ত রোগ সমূহে জনগোষ্ঠী দীর্ঘকাল অথবা জীবনব্যাপী আক্রান্ত থাকেন এবং রোগ সমূহ ধীরে ধীরে আক্রান্তদের আয়ু ও জীবনীশক্তি ক্ষয় করতে থাকে ঃ
ক। হৃদরোগ সমূহ (CVS diseses) ঃ হৃদপিন্ড, রক্তসরবরাহ নালিকার রোগ অথবা রক্ত সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে এই রোগ সমূহে আক্রান্ত হয় । NCD তে আক্রান্ত মৃত্যুর শতকরা ৮২ ভাগ হৃদপিন্ড জনিত রোগ যেমন, করোনারী হার্ট ডিজিজ (CHD/IHD), স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ অথবা কনজেসটিভ হার্ট ফেইলিউর। শতকরা ৮০ ভাগ রোগাক্রান্ত হয় জীবনাযাত্রা ঝুঁকি সমূহের (যেমন ঃ শারীরিক অনভ্যাস, খাদ্যাভাস ও ধুমপান) কারণে ।
খ। ক্যান্সার ঃ শরীরের বিভিন্ন অংশে অনিয়ন্ত্রিত দ্রুত বর্ধনশীল ও অস্বাভাবিক কোষ বিভাজন এর কারণ । শরীরের স্বাভাবিক কোষগুলোকে ক্যান্সার কোষ সমূহ দ্রুত দখল করে নেয় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে । শতাধিক বিভিন্ন প্রকারের ক্যান্সার রয়েছে এবং তাদের ঝুকি উপাদানও ভিন্ন । ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণের হার বিশ্বজুড়ে দ্বিতীয় সর্বাধিক । খাদ্যাভাস, ধুমপান, এ্যাসবেস্টস, আর্সেনিক, রেডিয়েশন , সুর্যালোক, গাড়ীর ধোয়া, কিছু ভাইরাস, হেপাটাইটিস বি ও সি প্রভৃতি কারণে ক্যান্সার হতে পারে ।
গ। শ্বাস যন্ত্রের রোগ Respiratory diseases) ঃ শ্বাস প্রনালী ও ফুসফুসের ক্রমাগত (chronic) রোগসমূহ । সাধারণ ভাবে এ্যাজমা, প্রতিবন্ধকতা জনিত ফুসফুসের রোগ (COPD), শ্বাসতন্ত্রের এ্যালার্জি, পেশাজনিত শ্বাসতন্ত্রের অসুখ এসবের অন্তর্ভূক্ত । বিশ্ব জুড়ে সমস্ত মৃত্যুর শতকরা ৭ ভাগ এসকল রোগের কারণে হয় । এসকল রোগের ঝুঁকি উপাদান গুলো হলো, সক্রিয় ধুমপান, নিস্ক্রিয় ধুমপান, আভ্যন্তরীণ ও উন্মুক্ত বায়ুদুষন, অ্যালার্জেন, পেশাগত রাসায়নিক বস্তুর সংস্পর্শ, খাদ্যাভাস ইত্যাদি ।
ঘ। ডায়াবেটিস ঃ বিপাকজনিত রোগ । ইনসুলিনের অভাবে শরীর রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রন করতে পারে না । ডায়াবেটিস এককভাবে ব্যাপক মৃত্যুর কারণ না হলেও ডায়বেটিসের কারণে শরীরে অন্যান্য যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে মৃত্যুর কারণ ঘটায় । ডায়াবেটিস হার্টডিজিজ কিডনী রোগ এবং অন্ধত্বের জন্য একটি প্রধান ঝুকি উপাদান ।
বিভিন্ন NCD অথবা lifestyle (জীবনাচার) রোগের ঝুঁকি উপাদান সমূহ (Risk factors ) ।
চারটি NCD- হ্নদযন্ত্রের রোগ, (CVS disease), ক্যান্সার, ফুসফুসের রোগ (COPD) এবং ডায়াবেটিস জীবন যাপন পদ্ধতির সাথে সংশ্লিষ্ট কিন্তু ঝুঁকি উপাদান সমূহ মোটামুটি একই রকম । এগুলো হলো খাদ্যাভাস, অপরিমিত কায়িক পরিশ্রম ও ধুমপান । এসকল রোগসমূহ প্রতিরোধে প্রয়োজন risk factor গুলো নিয়ন্ত্রনে সমন্বিত পরিকল্পনা ও প্রয়োগ, যা শুরু করতে হবে পরিবার এবং সামাজিক পর্যায়ে । অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে এসকল রোগ গুলো সবই প্রতিরোধযোগ্য এবং এগুলো সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং জীবনাচার সমূহ নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে আয়ত্বে আনা সম্ভব । এ সকল ঝুকি দুধরণের হতে পারে ঃ
ক। নিয়ন্ত্রনযোগ্য (modifiable) ঝুঁকি ঃ এগুলো জীবনযাত্রা ও আচরণ পরিবর্তনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রনযোগ্য । যেমন - খাদ্য গ্রহনে অসঙ্গতি, শারীরিক ব্যায়াম ও ওজন নিয়ন্ত্রন, ধুমপান ও মদ্যপান ।
খ। অনিয়ন্ত্রনযোগ্য (non-modifiable) ঝুঁকি ঃ এসকল ঝুকি বয়স, লিঙ্গভেদ, জেনেটিক (জন্মগত) বৈশিষ্ট্য যা অপরিবর্তনীয় ।
প্রতিরোধ ঃ
সামগ্রিক ভাবে সচেতনতা বৃদ্ধি । সবাইকে অনুধাবন করতে হবে যে, চিকিৎসার চাইতে প্রতিরোধ শ্রেয় ।
হৃদরোগ
(১) ধুমপান অথবা তামাক পরিহার করা ।
(২) সপ্তাহের অধিকাংশ দিন কমপক্ষে ৪০ মিনিট করে শরীরচর্চা করা । শুধুমাত্র উপস্থিতি এবং গল্পগুজব করে সময় পার করে দেওয়া যথেষ্ট নয় ।
৩) স্বাস্থ্যকর ও পরিমিত খাবার খাওয়া, এটি হৃদযন্ত্রকে সুরক্ষা দেবে । চর্বি, কোলেষ্টেরল, ও লবন যুক্ত খাবার কম খাওয়া এবং বেশী করে সব্জি, ফল, দানাদার শস্য, কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার খাওয়া । কি ধরণের চর্বি খাচ্ছেন সেটিও জানা জরুরী । সম্পৃক্ত চর্বি (saturated fat) করোনারী হার্ট ডিজিজের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। লাল মাংস, দুগ্ধজাত খাদ্য, নারিকেল এবং পাম অয়েল ডালডা, ডুবোতেলে ভাজা ফাষ্টফুড, প্যাকেট করা স্ন্যাকস, চানাচুর ভাজা, মার্জারিন ইত্যাদি ক্ষতিকর সম্পৃক্ত চর্বি সমৃদ্ধ খাদ্য বর্জন করা ।
(৪) ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমবে । সামুদ্রিক মাছ, সয়াবিন তেল এবং সুর্যমুখী তেলে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছে ।
(৫) এ্যালকোহল পরিত্যাগ করা, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা ।
(৬) প্রাপ্ত বয়স্কদের ওজন বেড়ে যায় শুধুমাত্র শরীরে চর্বি বাড়ার কারণে, মাংসপেশী বৃদ্ধির কারণে নয় । এই অতিরিক্ত ওজন হার্টডিজিজের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় । বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী নিজ ওজন সীমার মধ্যে রাখা উচিৎ । শতকরা ১০ ভাগ মাত্র উচ্চ ওজন কমালেই রক্তচাপ, কোলষ্টেরল এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে আসতে শুরু করে অনেক গুন ।
(৭) নিয়মিত পরীক্ষা/নিরীক্ষার মাধ্যমে হৃদপিন্ড, কোলষ্টেরল প্রভৃতির অবস্থা জেনে নেওয়া । বয়স্কদের প্রতি বৎসরে ন্যূূনতম একবার রক্তচাপ পরীক্ষা করা উচিৎ । যদি রক্তচাপ প্রান্তসীমায় (১৪০/৯০ মি মি পারদ) থাকে তবে আরো ঘন ঘন পরীক্ষা করানো উচিৎ (২০ বৎসরের উর্দ্ধে বয়স হলে প্রতি ৫ বৎসরে ন্যুনতম একবার কোলেষ্টেরল মাত্রা দেখা উচিৎ ) । বয়স বৃদ্ধির সাথে যদি অন্যান্য ঝুঁকি (অধিক ওজন) থাকে তবে আরো নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিৎ । ডায়াবেটিস যেহেতু হৃদরোগের একটি ঝুঁকি সুতরাং নিয়মিত রক্তে শর্করার মাত্রাও পরীক্ষা করা উচিৎ ।
ক্যান্সার
(১) জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব । এগুলো হয়তো ক্যান্সার না হওয়ার নিশ্চয়তা দেবেনা তবে ঝুঁকি বহুলাংশে কমিয়ে আনবে । ধুমপান বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের সাথে সম্পৃক্ত যেমন, ফুসফুস, মুত্রথলি, জরায়ু এবং কিডনী । জর্দা চিবানোর ফলে মুখ গহবরের এবং অগ্নাশয়ের ক্যান্সার হতে পারে । এমনকি ধুমপান না করলেও পরোক্ষ ধুমপানে একই মাত্রার ক্ষতি হতে পারে । ধুমপান বর্জন করা অথবা ধুমপান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া একজনের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সিদ্ধান্ত হতে পারে ।
(২) স্বাস্থ্যকর খাবার ঃ স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ক্যান্সার ঝুঁকি কমিয়ে আনে । প্রচুর পরিমানে শাকসব্জি ও ফল খান । উদ্ভিদজাত উৎস থেকে বেশীরভাগ খাবার নির্বাচন করুন । চর্বিজাত বিশেষত লাল মাংস থেকে আসা চর্বি যথাসম্ভব কম খান । জাংক ফুড, ফাষ্ট ফুড প্রভৃতি বর্জন করার সচেতন অভ্যাস গড়ে তুলুন ।
(৩) ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখা এবং দৈনন্দিন শরীর চর্চা ঃ ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখলে কিছু কিছু ক্যান্সার, যেমন স্তন, প্রোষ্টেট, ফুসফুস, কোলন ও কিডনীর ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে । নিয়মিত শরীর চর্চা, ওজন কমানোর পাশাপাশি স্তন ও কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় । দৈনিক ন্যুনতম ৪০ মিনিট শরীর চর্চা করা উচিৎ, যদি বেশী পারা যায় আরো ভালো ।
ডায়াবেটিস ঃ
জীবনযাত্রা প্রণালীর পরিবর্তন ডায়াবেটিস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে । অনেক বেশী দেরী হয়ে যাওয়ার আগে, এখনই শুরু করা উচিৎ । টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে প্রতিরোধ অনেক গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত যদি কারো ঝুঁকি উপাদান সমূহ যেমন, অধিক ওজন ও পারিবারিক ইতিহাস থাকে ঃ
(১) শারীরিক পরিশ্রম/সক্রিয়তা ঃ নিয়মিত শরীর চর্চার অনেক উপকার রয়েছে ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে এটি ওজন কমাবে, রক্তে শর্করার পরিমান কমিয়ে আনবে, আর ইনসুলিনের সক্রিয়তাকে বাড়িয়ে রক্তে শর্করার পরিমান মাত্রার মধ্যে রাখবে ।
(২) আঁশযুক্ত খাবার ঃ প্রচুর পরিমানে আঁশযুক্ত খাবার খাবেন । আঁশযুক্ত খাবার রক্তে শর্করার পরিমান নিয়ন্ত্রনে রেখে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করবে, হার্টডিজিজ এর সম্ভাবনা কমিয়ে দেবে, ওজন কমাতে সাহায্য করবে । আঁশযুক্ত খাবার মূলত ফল, শাকসব্জি, শস্যদানায় তৈরি খাবার এগুলোতে পাওয়া যায় ।
(৩) অতিরিক্ত ওজন ঝেড়ে ফেলা ঃ প্রতি পাউন্ড অতিরিক্ত ওজন কমানোর সাথে আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটতে থাকবে । আশ্চর্য রকম ভাবে হালকা বোধ করবেন । সমীক্ষায় দেখা গেছে অতিরিক্ত ওজন সম্পন্ন প্রাপ্ত বয়স্কদের প্রতি কেজি ওজন কমানোর সাথে সাথে শতকতা ১৬ ভাগ ডায়াবেটিস ঝুঁকি কমে । অতিরিক্ত ওজনধারী কেউ যদি ৫-১০% ওজন কমায় এবং নিয়মিত শরীর চর্চা করে তবে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ৬০ ভাগ কমে যায় । তবে এটি কমপক্ষে তিন বৎসর একাধারে করতে হবে ।
(৪) ডায়েটিং ঃ বিভিন্ন প্রচলিত ডায়েট যেমন ঋখ ধভনঢ়, অঢ়যভশড় ধভনঢ় এগুলো দ্রুত ওজন কমাতে হয়তো সাহায্য করবে কিন্তু এগুলোর দীর্ঘস্থায়ী ফলাফল এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধে ভূমিকা এখনও প্রশ্নসাপেক্ষ বরং কোন নির্দিষ্ট গ্রুপের খাবার বাদ দেবার ফলে শরীরে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের ঘাটতি দেখা দেবার সম্ভাবনা রয়েছে ।
(৫) ডাক্তারকে দেখান/পরামর্শ নিন ঃ কারো বয়স ৪৫ বৎসর উর্ধ্বে, অতিরিক্ত ওজন, পারিবারিক ইতিহাস, অফিসে বসে বসে কাজে অভ্যস্ত (জনধনশঢ়তক্ষঁ ংষক্ষয) থাকেন তবে রক্তে নিয়মিত শর্করা পরীক্ষা করান এবং ডাক্তারক েআপনার উদ্বেগের কথা জানান ।
ঘ। শ্বাসযন্ত্রের রোগ (Chronic Obstructive Pulmonary Disease- COPD) ঃ
শ্বাস যন্ত্রের রোগের প্রধান কারণ ধুমপান । ধুমপান ত্যাগ করার মাধ্যমে ইঘঙঈ রোগ হবার সম্ভাবনা কমিয়ে আনা যায় । শ্বাসযন্ত্রের রোগে ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়ে থাকলে ধুমপান ত্যাগ রোগের অগ্রগতি কমিয়ে দিতে পারে । অন্যান্য রাসায়নিক ধোঁয়া, ধুলো, যানবাহনের ধোঁয়া ইত্যাদিও শ্বাসযন্ত্রের রোগে ভূমিকা রাখে । নিয়মিত শরীর চর্চা, ফুসফুস ও বক্ষ পিঞ্জরের মাংশপেশীকে শক্তিশালী করে ও শ্বাস প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় । স্বাস্থ্যসম্মত খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়ে শ্বাসযন্ত্রের ইনফেকশনের ঝুঁকি কমায় । ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখাও জরুরী । অতিরিক্ত ওজনে হৃদপিন্ড ও ফুসফুসের উপর চাপ পড়ে, যার ফলে শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা হতে পারে অন্যদিকে কম ওজনের ফলে ফুসফুসের মাংশপেশী ও ডায়ফ্রাম দুর্বল হয়ে পড়তে পারে ।
কিডনী রোগ ঃ
কিডনী শরীর থেকে বিষাক্ত ও বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয়, হরমোন তৈরী করে, জৈব রাসায়নিক পদার্থের মাত্রা নিয়ন্ত্রন করে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে ভূমিকা রাখে । রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তে চর্বির মাত্রা নিয়ন্ত্রন, ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত ঔষধ(বিশেষত ব্যাথার ঔষধ)সেবন না করা, খাদ্য নিয়ন্ত্রন, শরীরচর্চা ও প্রচুর বিশুদ্ধ পানি পানের মাধ্যমে কিডনী রোগের বিশেষতঃ দীর্ঘস্থায়ী কিডনী রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে ।
অসংক্রামক রোগ সমূহ (NCD) কে জীবন যাত্রার সাথে সম্পর্কিত রোগ বলা হচ্ছে । বিভিন্ন পদক্ষেপ যেমন, ভ্যাকসিনেশন, এন্টিবায়োটিক, খাবার পুষ্টিমান বৃদ্ধি, জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের সাথে সাথে সংক্রামক (Infectious) রোগ সমূহ কমে আসলেও জীবনযাত্রার সংগে সংশ্লিষ্ট অসংক্রামক রোগ সমূহ (NCD) বেড়ে গিয়েছে । দীর্ঘ সময় ধরে অনিয়ন্ত্রিত, অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের ফলে রোগগুলো হচ্ছে । অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের তাৎক্ষণিক কোন লক্ষণ শরীরে দেখা না দিলেও হঠাৎই অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতাল এ ভর্তি হচ্ছেন । যখন হয়তো সংশ্লিষ্ট রোগ অনেকদূর অগ্রসর হয়ে গিয়েছে । সচেতনতার সাথে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহন করা হলে অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব । পরিবার পর্যায়েও সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে । সন্তানদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য এখনই সচেতন না হলে বয়ঃপ্রাপ্ত হয়ে জীবনযাত্রা সংশ্লিষ্ট রোগে আক্রান্ত হলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মও ঝুঁকিপূর্ণ জীবনের সম্মুখীন হবে ।
NCD রোগ সমূহ চুড়ান্ত বিচারে কর্মদক্ষতা, কর্মক্ষমতা, স্পৃহা, সৃজনশীলতা কমিয়ে দিচ্ছে । কর্মস্থলে অনুপস্থিতি, রোগের কারণে অকাল মৃত্যু প্রভৃতি কারণে জনগোষ্ঠীর সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা ও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে । প্রতিরোধযোগ্য এই সকল রোগের পেছনে স্বাস্থ্য খাতে বিপুল পরিমান ব্যায় বরাদ্দও রাখতে হচ্ছে ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১২ সকাল ১০:৫৬