আমার ত্রয়োদশবর্ষীয়া কন্যা তার ডায়েরী পড়বার অনুমতি শুধু বাবাকেই দিয়েছে। তার অনুমতি সাপেক্ষেই ১৪ই নভেম্বরে ওর অনুভূতির কথা এখানে তুলে দিলাম কোন সম্পাদনা ব্যাতিরেকেই.........
চিঠি
শ্রদ্ধেয় হুমায়ুন আহমেদ,
আমি জানিনা এই চিঠি আকাশে উড়ে আপনার কাছে পৌঁছাবে কিনা। তবুও লিখছি।
জন্মদিনের শুভেচ্ছা নেবেন। শুধু বাংলা নয়, বিশ্ব সাহিত্য যতদিন বেঁচে থাকবে, আপনি বেঁচে থাকবেন আমাদের সবার হৃদয়ের মাঝে। আমরা সবাই আপনাকে ভালোবাসি। শুধু ভালোবাসি বললে কম বলা হবে, আমরা আপনাকে প্রচন্ড ভালোবাসি।
ভালো থাকবেন। আশা করি পরকালে আপনার সাথে দেখা হবে।
বিশ্ববাসীর হয়ে….
মৃত্তিকা
ষষ্ঠ শ্রেণী
১৩ বৎসর।
অন্যকথা
হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যুর পর তার প্রথম জন্মবার্ষিকীতে এই চিঠি লেখা। আমার প্রবল ইচ্ছা ছিল এই চিঠিটা গ্যাস বেলুনে করে উড়িয়ে তার কাছে আকাশে পাঠিয়ে দিব। কিন্তূ তা পারলামনা।তবুও একটা কাজ করেছি। আমি হুমায়ুন আহমেদের বই ‘হিমু মামায়’ জেনেছি,হিমুরা নাকি গর্ত করে থাকে। এটা পড়ে আমি আমাদের বাসায় একটা মাঝারি সাইজের গর্ত করেছি হিমু সেজে। আমার কাজ দেখে দাদু বলেছিল ‘হুমায়ুন আহমেদের বই পুড়ায়া ফেলা দরকার। পুলাপানরা তার বই পড়ে পাগল হয়ে যাচ্ছে। “কিন্ত আমি জানি,আমার ৭৫ বছরের দাদু কথাটা মন থেকে বলেনি, কারণ সে-ও হুমায়ুন আহমেদের ভক্ত। ‘হুমায়ুন আহমেদ সকল বয়সের মানুষের কাছেই প্রিয় ছিলেন,আছেন এবং থাকবেন চিরকাল।
তো কি হয়েছে বলি,আমি চিঠিটা প্লাষ্টিকের বোতলে ভরে মুখবন্ধ করে সেই গর্তে ঢুকিয়ে মাটি চাপা দিয়েছি। এই আশায় যে, ভবিষ্যতের মানুষেরা এই বোতল উদ্ধার করে হুমায়ুন আহমেদ সম্পর্কে জানতে পারবে।
আমার আজকে অসম্ভব মন খারাপ ছিল,কারণ তিনি নেই। আসলে তার মতো মহান সাহিত্যিক একশ বছরে মাত্র একজনই জন্মান। আমাদের উচিত তার বইগুলো বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করে বিশ্বের সকল মানুষের কাছে পরিচিত করা। আমি বিশ্বাস করি,হিমু সিরিজের বইগুলো হ্যারি পটারের বইগুলো থেকেও জনপ্রিয়তা পাবে। জে.কে রাউলিং-ও হুমায়ুন আহমেদের মত ভালো লিখেনা। তাঁর লেখা বইগুলো এখন থেকেই সংরক্ষণের ব্যবস্হা নেওয়া উচিত। তাহলে ভবিষ্যতে কাজে দেবে। সৃষ্টিকর্তার কাছে এখন আমাদের একটাই আবদার, তিনি যেন আমাদের প্রিয় লেখককে ভালো রাখেন।
হে মহান সৃষ্টিকর্তা,আমরা যেন আমাদের দেশে সবচেয়ে ভালো ক্যান্সার হাসপাতাল গড়ে তুলতে পারি, তার শেষ ইচ্ছাগুলোও যেন পূরণ করতে পারি। (আমার দাদাভাই,ডাঃ ছিলেন,তিনিও ক্যান্সারে ভুগে চলে গেছেন)।
শাওন কিন্ত একা একা তার ইচ্ছাগুলো পূরণের কাজ করতে পারবেনা। হিমু এবং হুমায়ুন ভক্তরা, চলো আমরা তাঁর শেষ ইচ্ছা পূরণে এগিয়ে আসি। আমরা ভক্তরাই পারবো তার আত্নার শান্তি দিতে।
শ্রদ্ধেয় হুমায়ুন আহমেদ,আপনার বাড়ি এখন মেঘের উপর হলেও আপনি একা নন, আপনি চিরকাল আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন। আমরা আছি আপনার পাশে। আপনি যেখানেই থাকুননা কেন,আপনি ভাল থাকবেন এবং সৃষ্টিকর্তা আপনাকে ভালো রাখবেন। আসলামুআলাইকুম।
মৃত্তিকা
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৪২