আমি যখন পিচকি ছিলাম, মানে যখন ইশকুলে যেতাম না তখন আমার সাথে এক পিচকির খুব বন্ধুত্ব হয়ে যায় । সেই পিচকি আমার চেয়ে দুই বা তিন বছরের বড় ছিল ওর নাম ছিল নিগা । নিগা সারাক্ষণ আমাদের বাসায় থাকতো । একসাথে খেতাম আমরা, একসাথে গোসল করতাম, একসাথে ঘুমাতাম আর ও যখন বিকাল বেলায় হারমোনিয়াম নিয়ে আ-আ-আ করতো আমি তখন দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ভেংচি কাটতাম । তখন ও গান গাইতে পারতো না, ফিক করে হেসে দিত ।
তো আব্বু হঠাৎ বাসা চেঞ্জ করলেন । আমরা গাড়িতে করে চলে যাচ্ছি... আর নিগা কাঁদতে কাঁদতে গাড়ির পেছনে ছুটে আসছিল । (জটিল দৃশ্য /# আহারে সেইদিনগুলি...) ) আব্বু তখন বাধ্য হয়ে গাড়ি থামিয়ে নিগাকে সাথে করে নতুন বাসায় চলে এলেন । দুইদিন আমাদের সাথে থাকার পর নিগার আব্বু এসে জোর করে নিগাকে নিয়ে চলে গেলেন । আমরা শুধু নিগার গগন বিদারী চিৎকার শুনলাম আর হাত-পা ছোড়াছুড়ি দেখলাম । আমাদেরও প্রচন্ড মন খারাপ হল
#######
নতুন বাসার কাছে আমাদের দূর সম্পর্কের এক আত্মায়ী ছিলেন । ওনার কোন ছেলে-মেয়ে ছিল না । শেষ পর্যন্ত ওই কাকা-কাকিরা ওনাদের ছোট ভাইয়ের মেয়েকে দত্তক নিলেন । পিচকিটার নাম ছিল ঊর্মি । ওনারা যখন আব্বু-আম্মুর সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করতে এলেন তখন এই পিচকির সাথে আমাদের খুব ভাব হয়ে গেল । যাওয়ার সময় এই ঊর্মি কিছুতেই যাবে না, হাত পা ছুঁড়ে কান্না শুরু করে দিল । ওর নতুন বাবাটা অনেক বোঝাচ্ছে কাল সকালেই আবার আসবো, হ্যান ত্যান... যাইহোক, শেষপর্যন্ত ওরে নিয়ে গেল ।
সকাল না হতেই দেখি ঊর্মি এসে হাজির । ওর নতুন বাবা বলল, সারারাত উনাদের জ্বালিয়ে মেরেছে পিচকিটা । তাই নিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন ।
ঊর্মির ওর নতুন বাবা প্রায় প্রতিদিনই সকালে আমাদের বাসায় রেখে যেতেন আর সন্ধ্যায় নিয়ে যেতেন ।
কিছুদিন পরেই ঊর্মির নতুন মা ক্ষেপে গেলেন... ঊর্মিকে অন্যের বাসায় রাখার জন্য তো উনি দত্তক নেননি । সো উনি ঊর্মির আসল মাকে ডেকে পাঠালেন যাতে ঊর্মিকে নিয়ে যায় । ওর আসল মা-টা খুশিতে আটখানা হয়ে গেল, তারপর ওকে নিয়ে চলে গেল । এই নতুন মা-টার মাথায় সম্ভবত প্রবলেম ছিল.. কিছুদিন না যেতেই আবার ওকে নিয়ে আসলেন । আমরা সেটা জানতাম না । একদিন ওদের বাসায় মনিকে ডাকতে গেছি দেখি ঊর্মি! আমাকে দেখে তো লাফ মেরে কোলে উঠে গেল... ওর নতুন মা অনেক টানা-হেঁচড়া করে ওকে আমার কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলো কিন্তু ঊর্মি আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে কান্না স্টার্ট করলো সো ওর নতুন মা বাধ্য হয়ে আমার সাথে ওকে দিয়ে পাঠালেন । আমরা দুজন নাচতে নাচতে বাসায় চলে এলাম । এবার এসে ও আম্মুর কাছে বেশি থাকতো... সারাক্ষণ আম্মুর পেছন ঘুর ঘুর করতো... আম্মুর কাছে খেতো, গোসল করতো, ঘুমাতো ।
#######
আমি তখন ক্লাস ফোরে । আমরা সেই জেলা থেকে আরেক জেলায় চলে এসেছি । যে বাসায় আমরা ছিলাম সেই বাসার কাছেই দু'তলা বিল্ডিংটায় থাকতো বাড়িওয়ালা । বাড়িওয়ালার পিচকি একটা ছেলে ছিল, দুই কি তিন বছরের... ওর নাম ছিল অর্ক । বাড়িওয়ালী আম্মুর সাথে কথা বলতে আসলেন । আর ওই পিচকির সাথে আমাদের খুব খাতির হয়ে গেল । অর্ক ছিল পুরাই আলালের ঘরে দুলাল.. ওর ওজন বোধহয় আমার চেয়ে বেশি ছিল । ওর অবস্থা ছিল চিড়িয়াখানার বান্দরের মতো । ওদের দু'তলার বারান্দায় অনেকগুলো কলা ঝুলানো থাকতো, আর পিচকি অর্ক লাফিয়ে লাফিয়ে সেই কলাগুলো খেত । আমি মোটেও কলা পছন্দ করি না... আর ওর এরকম অবস্থা দেখে ওর জন্য দুঃখ লাগত...
আমার শুধু মনে হইত, আহারে.. ছেলেটা মানুষ না হয়ে বান্দর হইতেসে দিন দিন...
আমি ওরে হাট্টিম মাট্টিম টিম, তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে ইত্যাদি ইত্যাদি শিখালাম । একদিন দেখি অর্ক ওর মার সাথে আমাদের বাসায় এসে হাজির । ওর মা বলল, অর্ক কলা খাচ্ছে না, আমাদের বাসায় আসার জন্য জিদ ধরেছে... অর্কর মা অর্ককে আমাদের কাছে রেখে আম্মুর সাথে গল্প করতে গেল ।
আমার হঠাৎ মনে হল, অর্ক তো বেশ খাদক টাইপের তো আমাদের হরলিকস টা ওকে খাইয়ে দেই... আমি এসব আউল ফাউল জিনিস খেতাম না । তো চুপচুপ করে ওকে একটা কাপে করে হরলিকস দিলাম, ও খেয়ে কি যে মজা পেল আল্লাহই জানে.. আরো চায়লো! এদিকে ওর মা অর্ক, অর্ক বাবা করে ডাকছে । সো ওকে ওর মার কাছে দিয়ে এলাম । পরেরদিন দেখি, অর্ক ওর মার চুল ছিড়ছে, আর কোল থেকে নেমে যাচ্ছে... অর্কের সাস্থ্যও মাশাআল্লাহ! ওর মা ওকে সামলাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে... ওভাবেই আমাদের বাসার সামনে হাজির... আন্টি আমাকে বলল, ওকে ছাড়াও!!! আমি কাছে যেতেই অর্ক প্রায় আমার কোলে উঠে পড়লো... যেই না উঠতে গেছে ওমনি আমি গেলাম পড়ে... অর্ক সহ । সেদিন অর্কর ওপর এত মেজাজ খারাপ হয়েছিল যে ওর মা সামনে না থাকলে একটা থাপ্পড় বসায় দিতাম । আমার আম্মু কই থেকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এল... শেষে অর্কর মার কাছ থেকে জানতে পারলাম, অর্ক নাকি সারাদিন ওদের বাসায় ওটা খাবো, ওটা খাবো করছে কিন্তু 'ওটা' কি বলছে না... আম্মু আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ওটা কি রে? আমি বললাম, ওটা বোধহয় হরলিকস! :-& আম্মু বলল, এনে দে । এনে দিলাম, আর অর্ক গপগপ করে ওটা খেয়ে চলল!
এরপর কিছুদিন পর দেখি সেইম অবস্থায় অর্ক সহ ওর মা আসছে.. মানে অর্ক চুল ছিড়ছে, আর কোল থেকে নেমে যাচ্ছে... এইদিন অর্কের মা খুব রেগে ছিল বোধহয়, আম্মুকে এসে বলল, অর্ককে হরলিকস কিনে দেয়া হয়েছে কিন্তু খায় না কেন?! আপনার বাসার হরলিকস খেতে চায় কেন? শুধু আপনাদের বাসায় আসতে চায় কেন? আম্মু তো পুরাই লা-জওয়াব!! ওর মা গজরাতে গজরাতে ছেলেকে রেখে চলে গেল । আমার মেজাজ এত্ত খারাপ হইলো যে মনে হইল অর্করে তুইলা আছাড়া দিই (যদিও সম্ভব ছিল না)
তো অর্ক বলল, ওটা দাও । আমার মেজাজ খারাপ ছিল... বললাম খুঁজে নে গা! ও দেখি সত্যি সত্যি ভেতরে চলে গেল । মেজাজ খারাপ করে বসে আছি, আম্মু বলল অর্ক কই? আম্মু আর আমি দুইজনেই আঁৎকে উঠলাম, রান্না ঘরে যায়নি তো?! দুইজনে দৌড় দিলাম, গিয়ে দেখি অর্ক আমাদের উঠানে বসে বসে রোদে দেয়া আচারগুলো খাচ্ছে.. মেজাজ খারাপ করে বললাম, কি খাচ্ছো??!! অর্ক আচার মাখা মুখে মিচকি হাসি দিয়ে বলল, আমি ই-ই-টা খাচ্ছি । আমি আম্মুর দিকে তাকাতেই দেখি আম্মু আমার দিকে তাকিয়ে আছে । দুইজনেই বুঝিলাম, অর্কের 'ওটা'র সাথে এখন 'ই-ই-টা'-র সংযুক্তি ঘটিলো!
#######
ওই বাসা ছেড়ে নতুন বাসায় উঠলাম... নতুন বাসায় আরেক পিচকির সাথে পরিচয় । এর নাম ছিল পিংকি । পিংকির আম্মু খুব হাসি-খুশি টাইপের মহিলা ছিলেন । এই বাসায় শুধু পিংকি সারাক্ষণ থাকতো না, ওর আম্মুও সারাক্ষণ থাকতো!
#######
এর পর বদলি হয়ে আরেক জেলায় চলে এলাম । এইখানেও এক পিচকি ছিল । নাম ছিল তামান্না । বয়স ছিল তিন কি চার । এই পিচকি সারাক্ষণ আমার পিছ পিছ ঘুরতো । এমনকি আমার কাছে ঘুমাতোও। আমি যা করতাম এই পিচকি তাই করতো, আমার হাঁটা-চলা এভরিথিং কপি করতো ।
#######
আরো পিচকি নিমো, নিশা, ডন, নয়নও তামান্নার মতো ছিল ।
তানিমার কথা দিয়ে শেষ করি... এই পিচকির বয়স চার, আমার ফুফাতো বোনের মেয়ে । জন্মের পর ওকে আমি দেখিনি, সেও আমাকে দেখেনি । তো ঈদে দাদি বাড়ি গিয়েছি, আমি রুমে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলাম... তো হঠাৎ কই থেকে এক পিচকি এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো । আমি তো পুরাই থ, চিনি না, জানি না, কে না কে.. আমারে ধরে ক্যান... তো ওরে বললাম, এই দুষ্ট, তোমার নাম কি? ও বলল, তানিমা । রুমে আমার সব ফুফাতো চাচাতো ভাই-বোনেরা দেখি মিচকি মিচকি হাসে । ব্যাপার বুঝছি না... :-&
তো আমি আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার আম্মু কই? পিচকি দেখি খিল খিল করে হেসে দিল । আবার জিজ্ঞেস করলাম, বলতো, আমি তোমার কে হই? পিচকি বলে, তুমি আমার মনি, বলেই আবার খিল খিল করে হাসছে । এইবার সত্যি সত্যি নিজেকে বোকা মনে হইলো... শানু আপা কাছেই বসে ছিল, এইবার সে হো হো করে হেসে দিল । তারপর সে বলল, আমার মেয়ে তোকে চিনে, আর তুই চিনতে পারলি না...
যে কয়দিন ছিলাম, এই পিচকিটা আমার লাইফ হেল করে দিসিলো!
--- এই হল পিচকিদের গপ্প!
(অনেক কষ্টে ভাল বাংলায় লিখসি! তাও মাঝে মাঝে ক্যামন হয়ে গেসে!! )
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০০৮ রাত ৯:১৩