somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাল্পনিক_ভালোবাসা
বহুদিন আগে কোন এক বারান্দায় শেষ বিকেলের আলোয় আলোকিত উড়ন্ত খোলা চুলের এক তীক্ষ্ণ হৃদয়হরনকারী দৃষ্টি সম্পন্ন তরুনীকে দেখে ভেবেছিলাম, আমি যাদুকর হব। মানুষ বশীকরণের যাদু শিখে, তাকে বশ করে নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দিব সারাটি জীবন।

অনুগল্পঃ মুখ ও মুখোশ

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



একদিন রহিম সিদ্ধান্ত নিল, তার বহুল পরিচিত ভালো মানুষের মুখোশটির আড়ালে থাকা কদর্য নোংরা চেহারাটিকে ও সবার সামনে প্রকাশ করবে। সত্যকে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিতে পেরে সে বড়ই আনন্দিত এবং কিছুটা উত্তেজিতও বটে। মিথ্যে মুখোশের আড়াল থেকে মুক্তির অপেক্ষা নিদারুন যন্ত্রনাময়। সত্য প্রকাশের সাহসে যখন কোন মানুষ নেশাগ্রস্থ হয়, তখন তা পরিনত হয় পৃথিবীর ভয়ংকর নেশাতে। রহিম আজকে সেই নেশায় আচ্ছন্ন।

পরদিন ভোরে রহিম যখন তার ঐ দীর্ঘদিনের পরিচিত মুখোশটা খুলে একমাত্র নিজের চেহারার উপর ভর করে রাস্তায় বের হল, তখন মনে মনে ও আশংকা করল, এই বুঝি সবাই ভয় পাবে। বিরুপ প্রতিক্রিয়া বলবে, ছিঃ তুমি এত জঘন্য, নোংরা, কুৎসিত? আগে কেন বুঝতে পারি নাই।

কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল সম্পূর্ন ভিন্ন চিত্র। চারিদিকে উৎসবের আমেজে শহরের সব মানুষ পরেছে নানা রঙের মুখোশ। হাস্যকর ব্যাপার সবাই পরেছে নিজ নিজ চেহারারই মুখোশ। রহিম বুঝতে পারল না, মুখোশ যদি পরতেই হয় তাহলে নিজেদের চেহারার মুখোশই পড়া কেন? মানুষের স্রোত পাশ কাটিয়ে যাবার সময় পরিচিতজনরা সবাই হাসি মুখে সম্ভাষণের দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে, অন্যদের চোখেও নেই কোন আলাদা দৃষ্টিকটু শীতল অভিব্যক্তি। রহিম মনে মনে ভাবল, তবে কি এই শহরে মুখোশের আড়ালে থাকা কদর্য রুপ একটি পরিচিত দৃশ্য?

রহিম মাথা নিচু করে হাটতে থাকে। রাস্তার মোড়ে একটা পরিচিত টং দোকান দেখে ও সিগারেট ধরাবার জন্য দাঁড়ালো। পাশেই ছোট্ট একটা মেয়ে নিজের হাসিখুশি প্রতিচ্ছবির মুখোশ পরে হাড়ি পাতিল খেলছে। চোখাচোখি হতেই মিষ্টি একটা হাসি দিলো। উত্তরে রহিমেরও হাসা উচিত, কিন্তু সে হাসতে পারল না, মনের গভীরে কোথাও যেন একটা অশনি সংকেত বেজে উঠল।

সিগারেট ধরাতে গিয়ে চোখ পড়ল দোকানদারের উপর। বিশাল দেহ নিয়ে এই লোক কিভাবে এই ছোট্ট দোকানে প্রবেশ করল তা রহিমের মাথায় ঢুকল না। আরো হাস্যকর ব্যাপার এই লোকটাও নিজের পান খাওয়া বিকশিত দাঁত সমৃদ্ধ টাক মাথার একটি মুখোশ পড়ে আছে। চায়ের কথা বলার আগেই দোকানদার বলে উঠল, কি রহিম ভাই! আজকের দিনে অন্তত একটা মুখোশ পড়তেন? টাকা পয়সার সমস্যা হলে বলতেন, আমি দিতাম।

রহিম প্রচন্ড অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, মুখোশ পড়ব মানে? আমি কি কোন মুখোস পড়ে আছি নাকি? দেখেন না আমি আজকে মুখোশ ছাড়া রাস্তায় বের হয়েছি।

দোকানদার হো হো করে হেসে উঠে, বলল, ভাই কি সকাল বেলা আমারে মফিজ বানাইতে চান? আপনার এই চেহারা তো আমরা সেই কবে থেকে দেখে আসতেছি! মনে নাই, আপনার বাসায় যে আমার বউ কাম করত? চুরির অপরাধে যে গর্ভবতী বানাইয়া বিদায় কইরা দিসিলেন? বউটা মইরা গেলেও একটা মাইয়া দিয়া গেছে। ঐ যে দেহেন, পাশেই বইসা খেলতেছে। এরেও চাইলে ঘরে নিতে পারেন। কেউ কিছু বুঝব না, তয় এইবার একটু ট্যাকা বেশি দিয়েন। আমার পালতে কষ্ট হয়।

হঠাৎ রহিমের হাত পা অবশ হয়ে আসতে লাগল। ছোট্ট মেয়েটার সাথে আবারও চোখাচোখি হল। মুখোশের অন্তরালে এবারও মেয়েটার চোখে মিষ্টি কৌতুহলের হাসি। ওর আর সহ্য হলো না। চারিদিক প্রচন্ড গতিতে ক্রমাগত ঝাপসা হয়ে আসছে। প্রচন্ড আতংক বুকে নিয়ে ও ছুটে পালাতে শুরু করল। একদৌড়ে বাসায় ফিরে খুঁজে বের করল আলমারিতে খুলে রাখা তার জীবিকার একমাত্র সম্বল ভালো মানুষের মুখোস। প্রচন্ড বিস্ময়ে ও লক্ষ্য করল, তার হাতে ধরা একটা নোংরা, হিংস্র, কদর্য মুখের তেল চিটচিটে মুখোশ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৯
১২২টি মন্তব্য ৮৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×