সাম্প্রতিক সময়ে আমরা মশা নিয়ে বেশ সমস্যায় আছি, বিশেষ করে এডিস মশার কারনে ডেঙ্গু বা ডেঙ্গি নামক ভয়াবহ জ্বর আমাদের দেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। মানুষ এই মশার হাত থেকে বাঁচতে মশার কয়েল, কিটনাশক ইত্যাদি ব্যবহার করেও তেমন প্রতিকার পাচ্ছে না। ফলে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে নানা ধরনের আজগুবী পদ্ধতি বা গুজব। এই সব গুজবে পা দিলে যেমন কোন লাভ হবে না, তেমনি পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত অনেক ঝুঁকি দেখা দিতে পারে।
এই অবস্থায় আমাদের উচিত প্রয়োজনীয় করনীয় সম্পর্কে সঠিক ও পর্যাপ্ত ধারনা রাখা। আমাদের চারপাশে অনেক প্রাকৃতিক উপাদান বা গাছ রয়েছে যা দিয়ে আমরা চাইলে খুব সহজেই এই সব মশা, মাছি ও অন্যান্য কীটপতঙ্গ থেকে নিজেদের ঘরকে সুরক্ষা করতে পারি।
তাছাড়া নর্থ আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার বেশ কিছু নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাকৃতিক এই সকল উপায় নিয়ে গবেষনা করে এর সত্যতা সম্পর্কে জানতে পারে। ফলে উন্নত বিশ্বের এখন পরিবেশ রক্ষায় অনেকেই রাসায়নিক পদার্থ বাদ দিয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে মশা নিবারন করছেন।
চলুন তাহলে দেরি না করে আমরাও এমন কিছু প্রাকৃতিক উপাদান সম্পর্কে জেনে আছি।
১। ল্যাভেন্ডার
ল্যাভেন্ডার মুলত পুদিনা গোত্রের একটি উদ্ভিদ এবং এর প্রায় ৪৭টি জাত আছে। এই উদ্ভিদের নানারকম ব্যবহার আছে তবে যেটা অনেকেই হয়ত জানেন না তা হচ্ছে, ল্যাভেন্ডারের গন্ধ মশা, মাছি একদম সহ্য করতে পারে না। আপনি চাইলে বাসার বারান্দায় এই ল্যাভেন্ডার গাছটি লাগাতে পারবেন। পাশাপাশি, জানালার পাশে ছোট ছোট টবে এই গাছ লাগাতে পারেন। এতে আশা করা যায় ঘরে মশার প্রবেশ অনেকখানি কমে যাবে। যতবেশি গাছ হবে, এর কার্যকারীতাও তত বেশি হবে। প্রাচীনকাল থেকেই ল্যাভেন্ডারের গন্ধ মশা তাড়াতে কার্যকর ভুমিকা পালন করছে। ঢাকার বিভিন্ন বড় বড় নার্সারীতে এই গাছ পাওয়া যায়। এছাড়াও বাইরে গেলে ল্যাভেন্ডার তেল শরীরের খালি জায়গায় লাগাতে পারেন। এতে মশারা দুরে থাকবে।
ল্যাভেন্ডার গাছ না পেলে অন্তত ল্যাভেন্ডারের গন্ধ যুক্ত সুগন্ধী, সাবান, তেল বা এয়ার ফ্রেসনারও এই ক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী হতে পারে। এই ক্ষেত্রে কোনটা রাসায়নিক আর কোনটা সরাসরি প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তেরী তা দেখে নেয়া উচিত।
২। অ্যাপেল সাইডার ভিনিগারঃ
সমপরিমান অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার আর পানি মিশিয়ে খাটের নিচে, ঘরে রাখা গাছের নিচে বা যে সকল জায়গায় পোকামাকড় বা মশা থাকতে পারে বলে ধারনা করছেন, সেখানে স্প্রে করে দিন। দরজা জানালা কিছুক্ষন বন্ধ রাখুন, তারপর দেখবেন ম্যাজিক! আশা করা যায় মশার অত্যাচার প্রায় শেষ হয়ে যাবে। বাইরে কোথাও গেলে এই মিশ্রনটি শরীরের খালি অংশে ব্যবহার করতে পারেন। মশা দূরে থাকবে। একটি গবেষনায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত সালাদের সাথে এই অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার মিশিয়ে খায়, তাদেরকে মশা এবং কীটপতঙ্গ তুলনামুলকভাবে কম কামড়ায়।
৩। পুদিনার তেলঃ
পুদিনার তেল মশা দুর করতে খুবই কার্যকরী। বাজারে অনেক ব্যান্ডের পুদিনার তেল পাওয়া যায়। চাইলে ঘরেও আপনি পুদিনার তেল তৈরী করে নিতে পারেন। একটা ছোট কৌটায় পরিমানমত পুদিনা পাতা আর যে কোন ভেজিটেবল তেল নিয়ে ভালো করে মাখিয়ে দশদিন সকালের রোদে দিন। তারপর খুব কম আচে একটা পাতিলে নিয়ে দশ মিনিট জ্বাল দিন। তারপর ঠান্ডা হলে একটা ছাঁকনি দিয়ে ছেকে বোতলে নিয়ে সংরক্ষন করুন।
পুদিনার তেলের অনেক কার্যকারীতা আছে। হাতে সামান্য তেল নিয়ে শরীরের উন্মুক্ত স্থানে লাগিয়ে নিন। মশারা দুরে থাকবে। তাছাড়া জমা পানিতে আপনি চাইলে এই তেল সামান্য পরিমানে দিলেও মশার বংশ সমূলে বিনষ্ট হবে।
৪। তুলসীঃ
তুলসির অনেক গুণের কথা আমরা অনেকেই জানি তবে আমরা হয়ত এটা জানি না, তুলসী গাছ মশা, মাছি, পোকা-মাকড়কে দুরে রাখে। তাই সম্ভব হলে বাসায় টবে তুলসী গাছ রাখুন। এই গাছ শুধু মশা দুর করবে তা নয় বরং রুমের বাতাসকেও জীবানুমুক্ত বা বিশুদ্ধ রাখে।
৫। গাদা ফুল
আমাদের সকলের প্রিয় এই ফুলটির অনন্য সাধারন একটি দিক হচ্ছে মশা দুর করার ক্ষমতা। এর গন্ধ মশাদের সহ্য হয় না। গাদা ফুল ফুটলেই মশারা পালিয়ে যায়। তাছাড়া হাত পা কোথাও ছিলে গেলেও এই ফুলের পাতার রস ব্যবহার করা যায়। সুতরাং ঘরের বিভিন্ন খোলা স্থান, যেমন দরজা, জানালা ইত্যাদির পাশে টব রেখে দিতে পারেন
তবে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আমাদের নিজস্ব পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা। নিজের ঘরের আশেপাশে যদি পরিষ্কার না থাকে, তাহলে মশা মাছি জন্মাবেই। জ্বরে আক্রান্ত হোন বা না হোন বেশি করে পানি খান। এতে শরীর সুস্থ থাকবে এবং ডেঙ্গু সংক্রান্ত জটিলতাও প্রাথমিকভাবে দুর করা যাবে।
সবাই সুস্থ থাকুন, এই প্রার্থনাই করি।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৩:৫৫