somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিঝুমের হারিয়ে যাওয়া!!

২২ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার ছাত্রী বুশরা।আমি যখন যখন ওকে পড়ানো শুরু করি তখন ও মাত্র ক্লাস টু তে পড়তো।বিকেল ৪ টা থেকে পড়ানো শুরু করলে অনেক সময় ৫।৩০ এর আগে ছুটি দিতে পারতাম না।কিন্তু ৫ টা বাজলেই বুশরার বান্ধবীরা বুশরাকে ডাকা শুরু করতো।বুশরার চোখ দুটো তখন ছলছল করে উঠতো নিচে নামার জন্য।শেষ পর্যন্ত বাধ্য হতাম তাকে তাড়াতাড়ি ছুটি দিতে।আমি বুশরাকে নিয়েই অনেক সময় নিচে নামতাম।তখন ওর ছোট্ট বান্ধবীরা আমাকে সালাম দিতো।এদের ভিতরে একজনের নাম ছিলো নিঝুম।ওকে প্রথম দেখায়ই আমার খুব পছন্দ হয়েছিলো।খুব লাজুক এবং ঠান্ডা ধরণের মেয়ে ছিলো।ওর চোখগুলো অনেক সুন্দর টানাটানা।লজ্জায় কথা বলতো না।শুধু সালামটা সুন্দরভাবে দিতো আর হাসতো।ঈদের দিন বুশরা নিঝুম বাসায় আসতো।সালাম করতো।আমি ৫ টাকা করে দিতাম।তাতেই তারা খুব খুশী হতো।ওদের এতো আপন মনে হতো!!মায়াটা হয়তো সেখান থেকেই জন্ম নিয়েছিলো।ওরা কোন দিন হারিয়ে যাবে ভাবি নাই।যা হোক এক সময় বুশরা কে পড়ানো ছেড়ে দিয়েছি।বুশরা এসএসসি দিলো,তারপর এইচ এস সি দিলো।এখন অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ে।মাঝে মাঝে যেতাম ওর বাসায়।আর ফোনে নিয়মিতো যোগাযোগ হতো।মাঝে মাঝে ওর বান্ধবীদেরও খবর নিতাম।কে কই পড়ছে ইত্যাদী।এর ভিতরে এক সময় জানলাম নিঝুম এর বিয়ে হয়ে গেছে ৫ বছর আগেই এস এস সি দেয়ার পর পরই।আমেরিকা প্রবাসী ওর ফুফাতো ভাই মামুনের সাথে।ওর একটা সন্তানও আছে।নিঝুম দেখতে কেমন হলো দেখার খুব ইচ্ছে ছিলো।তিন বছর আগে বুশরার মাধ্যমে ওর ফেসবুক আই ডি পেলাম।ওকে দেখলাম।সেই ছোট্টো নিঝুম কতো বড় হয়ে গেছে!!!কিন্তু মুখের ভিতরে সেই সরলতা আর লাজুক ভাবটা ধরে রেখেছে আর চোখ দুটো হয়েছে আরো সুন্দর।সব ছবিতেই সেই হাসি মুখ।
আজ দুপুরে গেলাম বসুন্ধরা সিটিতে একটা ট্যাব কেনার জন্য।সবে দোতলায় উঠলাম।ভিড়ের ভিতরে হঠাত একটা মেয়ে দেখে কেমন পরিচিতো মনে হলো।ফেসটা যে কোথায় দেখেছি?কিভাবে যেনো মেয়েটাকে চিনি।কোন ভাবেই মনে করতে পারছিলাম না।মেয়েটার দিকে বার বার তাকানোর ফলে আমার সাথে ওর দুইবার চোখাচোখি হলো।হাসিমুখ।মেয়েটা ওর হাসবেন্ডের হাত ধরে একতলার দিকে নেমে যাচ্ছিলো।ওর সাথে একটা বাচ্চাও ছিলো।হঠাত মনে হলো আরে এটাতো নিঝুম মনে হয়!!পিছে পিছে নেমে আসলাম।পিছন থেকে ডাক দিলাম।মেয়েটা ডাক শুনেই ঘুরে চাইলো আমার দিকে।ওর হাসবেন্ড কিছুদুর সামনে চলে গেলো।কথা বলেই ভুল করলাম।সারা দিন মন খারাপ করে বসে রইলাম।বারবার পুরো সময়টা স্পষ্ট চোখের সামনে ভাসছিলো।কথাগুলোই শুধু মনে পড়ছিলো।

রবিউলঃএই যে---এই যে----এক্সকিউজ মি---একটু শুনবেন?সরি কিছু মনে করবেন না।আপনার নাম কি নিঝুম---মানে নিঝুম খন্দকার?
নিঝুমঃজি!বাট আপনি কে?আপনাকে তো আমি চিনতে পারছি না?
রবিউলঃওমমম---আমাকে চিনতে পারার কথা না?অনেকদিন পরে দেখা হলোতো-----আমার নাম রবিউল।
নিঝুমঃসরি কোন রবিউল একটু বলবেন?আমিতো এই নামে কাউকে চিনি না।
রবিউলঃবুশরাকে মনে আছে? আপনার ছোট বেলার ফ্রেন্ড ছিলো?একই বিল্ডিং এ থাকতেন?
নিঝুমঃহুমমমম---বুশরা নামে তো আমার এক ফ্রেন্ড ছিলো।ছোটবেলার ফ্রেন্ড।এক সাথে একই বিল্ডিংয়ে থাকতাম।ওর সাথে তো অনেক দিন ধরে যোগাযোগ নাই।আর আপনিই বা বুশরাকে চিনেন কিভাবে?
রবিউলঃহা হা হা----আমি তো আপনার পাশের বিল্ডিংয়েই থাকতাম।আমি বুশরাকে ছোট বেলায় পড়াতাম।আপনিতো ছোট বেলায় আমার বাসায়ও আসছিলেন?ঈদে আসতেন?আপনার কি কিছুই মনে নাই?
নিঝুমঃসরি আপনি কিছু মনে করবেন না।আমি আসলেই আপনাকে চিনতে পারছি না।আর একটা জরুরী কাজে আমাকে এখন যেতে হবে।আপনাকে আর সময় দিতে পারছি না।
রবিউলঃএকটু দাড়ান-----প্লিজ---আপনি কি আসলেই চিনতে পারছেন না?উনি আপনার হাসবেন্ড মামুন না?
নিঝুমঃ আরেরররর----আপনি তো দেখি আমার হাসবেন্ড এর নামও জানেন?জি উনিই আমার হাসবেন্ড আর ওইটা আমার সন্তান।আমার খুব অবাক লাগছে।আপনাকে তো আমি একটুও চিনতে পারছি না।
রবিউলঃহা হা হা--- ইউএসএ থেকে কবে আসলেন?আবার কবে যাবেন?
নিঝুমঃআমি ইউএসএ তে থাকি সেটাও জানেন?আমি দেশে আসলাম প্রায় এক মাস আগে।২ দিন পর চলে যাচ্ছি।বুঝতে পারছি না!!আসলে আমার খুব অবাক লাগছে যে আমি আপনাকে একটুও চিনতে পারছিনা---ইয়ে –--সরি আমাকে এখন যেতে হচ্ছে---হাসবেন্ড ডাকছে।----কিছু মনে করবেন না।আমাকে একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে জয়েন করতে হবে।কেমন যেনো লজ্জায় মিশে যাচ্ছিলো।
রবিউলঃনাহ!!আপনি একটুও বদলান নাই---ঠিক আছে---আমি আসলে আপনার ছোট বেলার ফ্রেন্ড বুশরার সুজন স্যার।এখন আপনাকে আমি নিজেকে কিভাবে চিনাবো!!!
নিঝুমঃসুজন স্যার!!!-----আপনি!!!ওয়েট ওয়েট একটু একটু মনে পড়ছে।কিন্তু---কিন্তু--- আমি তো আপনার কথা বুশরার কাছে অনেক শুনতাম।আপনিতো শুনেছি ভালো জব পেয়েছিলেন।তাই বুশরাকে আর সময় দিতে পারলেন না।ইয়েস আপনিই সুজন স্যার।আমার এখন মনে পড়েছে।স্যার এখন আপনি কোথায় আছেন?
রবিউলঃ হ্যা আমি ভালোই আছি কিন্তু আপনাকে তো আর এখন আটকে রাখতে পারছিনা।আমারও সময় নাই।আপনার হাসবেন্ড আর ছেলে আপনাকে ডাকছে।ঠিক আছে আজকে আপনি যান।দেখে খুব খুশীই হলাম।
নিঝুমঃনা—না-- স্যার সময় আছে।আপনার সাথে অনেক দিন পরে দেখা!!২ দিন পরেতো চলেই যাচ্ছি।আর দেখা হবে না।স্যার একটু দাড়ান!!কোথায় আছেন বল্লেন না তো!!আপনি এখন থাকেনই বা কোথায়?
রবিউলঃবলে আর লাভ কি?তুমি আসলে এতক্ষণেও আমাকে চিনতে পারো নাই।অভিনয় করে যাচ্ছো।ফেসবুকে বুশরার ফ্রেন্ড লিষ্টে আমাকে পাবে।এখন আর সময় নষ্ট করে লাভ নেই।যাও ভালো থেকো।বিদায়।গলাটা ধরে আসছিলো।চোখ দিয়ে পানি এসে পরবে মনে হচ্ছিলো।জলদি ফিরতি পথে হাটা দিলাম।
একটু পরে পিছন ফিরে চাইলাম।নিঝুম দেখি তাকিয়ে আছে।পাশে ওর হাসবেন্ড।জোরে বলে উঠলো স্যার ভালো থাইকেন।ওর হাসবেন্ডও হাত নাড়লো।চোখটা ঝাপসা হয়ে আসলো।দোতলায় উঠে কাচের ভিতর দিয়ে নিচের দিকে চাইলাম।দেখি ঝকঝকে লাল একটা কারে করে নিঝুম চলে যাচ্ছে।মনে মনে ভাবলাম আসলে ওর সাথে আর কোন দিনই দেখা হবে না।বুশরার ফ্রেন্ডলিষ্টে যে আসলে আমি নেই!!!ভালো থেকো নিঝুম!!!/:)/:)/:)/:)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:০৩
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রফেসদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×