somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন
বৃহত্তম বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন মানব সম্পদ উন্নয়ন প্রশিক্ষক আমি। একজন শৌখিন লেখকও বটে। শখের বশে কবিতাও লিখেছি এক সময়। বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় ও বিভাগীয় পত্রিকায় এবং ব্লগে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে অনিয়মিতভাবে বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করি।

বাংলাদেশ পুলিশঃ প্রেক্ষাপট

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে অবসর প্রাপ্ত জনৈক মেজর জসীমের সাথে কথা প্রসঙ্গে তিনি বলছিলেন, “আর্মি অফিসারদের পিছনে গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই সবসময় টিকটিকির মতো ছায়া হয়ে লেগে থাকে। বিশেষ করে অবসর প্রাপ্ত অফিসারদের বিষয়ে ব্যাপারটা তো রীতিমতো বিরক্তির উদ্রেক ঘটায়”। কারণ হিসেবে জানতে চাইলে তিনি উল্লেখ করেন- অবসর বা চাকরীরত কোন অফিসার যাতে স্বাধীনতা বা দেশের সার্বভৌমত্ব বিরোধী কোন প্রকার কার্যকলাপের সাথে জড়িয়ে পড়তে না পারে।
অপর এক অবসর প্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা কিছুদিন বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনপূর্বক প্রধান মন্ত্রী বরাবর আবেদন করেছেন কনভার্শন এর জন্য অর্থাৎ বাংলাদেশের কোন নিরাপত্তা কর্মকান্ডের সাথে পুনারায় নিয়োগ প্রাপ্তির আশায়। সিভিল জীবন-যাপন তার কাছে আর নিরাপদ ঠেকছে না দেশের বর্তমান রাজনৈতিক আর নিরাপত্তার প্রশ্নে। তদুপরি, তিনি নিজেকে বর্তমান রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার কাজে ন্যস্ত রাখতে চান।
বর্তমানে দেশে জনগণ তথা নিরাপত্তা বাহিনীর উপর উপুর্যপরি হামলা ভাবিয়ে তুলছে আবাল বৃদ্ধ-বনীতা সকলকে। হতাশা আর নিরাপত্তাহীনতায় পর্যুদস্ত সমগ্র দেশ। ইত্যোপূর্বকার র‌্যাবসহ পুলিশ বাহিনীর বিতর্কীত কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে পড়ার পুরানো কেচ্ছা না-ই বা গাইলাম। আমরা সবাই জানি গত কয়েক মাসে পুলিশ বাহিনীর উপর ঘটে যাওয়া দুর্বৃত্তের কিছু হামলায় বাংলাদেশ পুলিশের নিরাপত্তা বিষয়ক কর্মকান্ডে জনগণের মনে প্রশ্ন জেগেছে, যাতে প্রাণ হারিয়েছেন কয়েকজন তাজা প্রাণ তরুণ পুলিশ কর্মকর্তা। উল্লেখ্য, গত ২২ অক্টোবর ঢাকা গাবতলী চেকপোস্টের কাছে ঘাতক কর্তৃক নির্মম হত্যার শিকার হন এক সাব-ইন্সপেক্টর। এরপর ৪ঠা নভেম্বর আশুলিয়ায় চেকপোস্টের কাছে দুর্বৃত্তের আঘাতে প্রাণ হারান আরেক পুলিশ সদস্য। সর্বশেষ, গত ১০ই নভেম্বর আনুমানিক সকাল ১০টার দিকে সেনানিবাস সংলগ্ন কাফরুল থানাধীন এলাকায় ঘাতক দ্বারা মর্মান্তিক হত্যার শিকার হন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ল্যান্স করপোরাল সামিদুল ইসলাম।
তরুণ ওই পুলিশ সদস্যদের বিয়োগে যদিও কিছুটা ব্যাথিত ছিলেন সাধারণ মানুয় কিন্তু ইতোপূর্বকার পুলিশি নানাবিধ নীতি বর্হীভূত ক্রিয়াকলাপে ক্ষোভের তোপের মুখে নাগরিক নিরাপত্তায় দায়িত্ব প্রাপ্ত এই বাহিনী। অপরদিকে ততোধিক জনমনে শোক আর সমবেদনা জেগেছে সেনা সদস্যের অশনি মৃত্যুতে।

বরাবরের মতো কিছু বাস্তব ঘটনার দৃশ্যায়নের অনুমতি চাচ্ছি পাঠক মহোদয়ের কাছেঃ
ক. গত ২৭ সেপ্টেম্বর ঈদুল আজাহা পরবর্তী ছুটির শেষদিন কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম ফেরার পথে নতুন ব্রীজ সংলগ্ন পুলিশ চেকপোস্টে অনিয়মিতভাবেই পুলিশের নির্দেশে বাস থামলে ৪/৫ জন লোক বাসে উঠলেন তল্লাশীর নামে। হাতে এবং কোমরে স্বসজ্জিত রয়েছে মোটামুটি রকমের প্রয়োজনীয় অস্ত্রসস্ত্র। তারা যাত্রীদের ব্যাগ-পোটলা হাতাতে শুরু করলেন এবং প্রশ্ন করতে লাগলেন। তাদের কেউ পাঞ্জাবী পরিহিত, কেউ জীন্স প্যান্ট ও টি-শার্ট আবার কেউ সানগ্লাস পরিহিত আঁট-শাঁট হাফ শার্ট পরা (যেন মডেলদের শো মঞ্চস্থ ), চুল স্পাইক করা, হাতে সালমান খান টাইপড্ ব্রেইসলেট এবং মোবাইল, গলায় চেইন আর কথা বলার ধরণতো পাড়ার গুন্ডাদের মতো। ঠিক বুঝতে পারলাম না এরা কারা। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাবাহিনী না অন্য কেউ? নিরাপত্তাহীনতার প্রশ্নে কিছু না বলে নিজেই ভয়ে গুটিশুঁটি খেয়ে থাকলাম। ঠিক একই রকম ঘটনা প্রায় ঘটে ঢাকাগামী যাত্রীদের বেলায় কাঁচপুর ব্রীজ বা দাউদকান্দি চেকপোষ্টে। একবারতো এক মহিলাকে তারা বাস থেকে নামিয়েই নিয়ে গেল জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলে কারণ দেখিয়ে। সেটা ছিল রাতের ঘটনা। কে জানে কোনটা সত্য আর কোনটা উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
খ. বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম (ইউএসটিসি) এর সামনে দিয়ে পুলিশ লিখা নেইমপ্লেটধারী বাইকে এক ব্যক্তিকে দেখে ভয় পেয়ে গেলাম রীতিমতো। টাইট-ফিট টি-শার্ট, জীন্স প্যান্ট, হাতে ঝুলন্ত ব্রেইসলেট আর সানগ্লাস পরিহিত সেই বাইকারের কোমরে খোলসের ভিতর থেকে উঁকি দিয়ে ভয় দেখাচ্ছিল উন্মুক্ত অস্ত্র। বোকার মনে প্রশ্নে জাগলো- আসলেই তিনি নিরাপত্তাদানকারী অন্যতম প্রধান রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্য কিনা।

বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীর আচরণে অহংকার, সাধারণ জনগণের প্রতি অশ্রদ্ধা আর তুচ্ছ-তাচ্ছিল্ল্যের একটা প্রচ্ছায়া আমরা সবসময় দেখতে পাই সাধারণত। যা তাদের কথায়, অঙ্গ-ভঙ্গি ও চলনে প্রকাশ পায়। তাই সময় এসেছে পুলিশ বাহিনী তথা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ঢালাওভাবে নতুন করে সাজাবার। এই মর্মে সুখবর হচ্ছে বাংলাদেশ সরকার কিছু প্রসংশনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন সংশোধনীরঃ

১. রাজারবাগ পুলিশ লাইনে গত ৯ নভেম্বর সোমবার সর্বস্তরের পুলিশ সদস্যদের সাথে মতোবিনিময়কালে বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক নির্দেশনা জারি করেছেন, ’দায়িত্বরত অবস্থায় মোবাইল ব্যবহার করতে পারবে না পুলিশ।’ কারণ দায়িত্ব পালনকালে অনেককে মোবাইল ফোনে আলাপে ব্যস্ত দেখা যায় আবার অনেকে ব্যস্ত সময় পার করে ইন্টারনেটে।
২. ১১ নভেম্বর বুধবার সংসদে সরকারি দলের সদস্য গোলাম মোস্তাফা বিশ্বাসের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আধুনিকায়নসহ পুলিশ বাহিনীতে যোগ হবে আরও ৫০ হাজার জনবল এবং বাস্তব কাজের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন ট্রেনিং ম্যানুয়াল সংশোধন করা হচ্ছে’।
৩. হবিগঞ্জ নিউফিল্ড মাঠে আয়োজিত ১২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা কমিউনিটি পুলিশিং মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় পুলিশের আইজিপি বলেন, ‘কমিউনিটি পুলিশের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করতে চাই। জনগণ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার শক্তি একসাথে কাজ করলে কোনো অপশক্তিই সমাজে বিস্তার লাভ করতে পারবে না’।

এখন শুধু সময়েরই অপেক্ষা। দেখা যাক আমরা কতদূর যেতে পারি। আমরা আশাবাদী।


লেখকঃ মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৪০
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×