যেভাবেই হোক "বাংলাদেশ" শব্দটা উচ্চারণ করা যাবে না। কেমন যেন সংকোচ বোধ হয়, দ্বিধা হয়। স্পষ্ট উচ্চারণ করে মনে হয় যেন অন্য কারো মনে আঘাত দিয়ে ফেললাম কি? মানুষজন কিছু ভেবে বসল কি? সমাজে এখন "বাংলাদেশ" শব্দটা উচ্চারণ করাটাই যেন এক প্রকার ট্যাবু। কেন এই সংকোচ?
১৯৭১ এ বাংলাদেশ নামক একটি জাতির রাষ্ট্রের অভ্যুদয় হলো ঠিকই কিন্তু বাংলাদেশ ভিত্তিক পরিচয় যাতে আমাদের আত্মায় গভীরভাবে শিকড় গাঢ়তে না পারে, সে চেষ্টাও বিভিন্ন মতাদর্শের পতাকাবাহিনী গোষ্ঠীর, স্বাধীনতার শুরু থেকেই। আমার পরিচয় নিয়ে যখন আমি সংকোচে থাকবো তখন কি নিয়ে লড়বো? সংকোচ, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব যখন মনকে দোদূল্যবান করে তোলে, তখন তো মানুষ যুদ্ধ শুরুর আগেই মনস্ত্বাত্তিকভাবে হেরে যায়। পরিচয় নিয়ে কোন প্রকার সন্দেহ নয়, সংকোচ নয়। পরিচয় যা আমার অস্ত্বিত্তকে ধারন করে তা কোনো গোপনীয় বিষয় নয়, লুকিয়ে রাখার বিষয় নয়। স্বাধীনতা উত্তর গত ৫০ বছরে এমন কি হয়ে গেল যে "বাংলাদেশ" শব্দটা আমরা গর্বের সাথে, আত্মবিশ্বাস নিয়ে উচ্চারণ করতে পারি না।
বাংলাদেশ শব্দটা কি ডাক্তার বাবুর প্রেসক্রিপশনের ওষুধ, যে ব্র্যান্ড নাম লেখা যাবে না, শুধুমাত্র জেনেরিক নাম "দেশ" ব্যবহার করতে হবে। শুধুমাত্র দেশ শব্দটা মুখোশের মতই। কিছু বোঝার কোন উপায় নেই যে, দেশকে যে ভালোবাসে, সেই দেশ প্রেমিক আসলে কোন "দেশকে" ভালোবাসে? প্রকৃতপক্ষে কোন "দেশের" দেশপ্রেমিক সে? এই প্যারাসিটামল মার্কা দেশপ্রেমের উদ্যোক্তাদের ব্যাপারে আমাদের সচেতন হতে হবে। দেশপ্রেমের বিষয়টার এত বেশি অপব্যবহার ও বিকৃত ব্যাবহার হয়েছে যে এ আর এক্সক্লুসিভ কিছু নয়। প্রতিদিনকার গ্রোসারি আইটেমের মতোই জেনেরিক কিছু একটা হয়ে গেছে। সচেতন ভাবেই বাংলাদেশ শব্দটা বিভিন্নভাবে বাদ দিয়ে ধরি মাছ না ছুই পানি নামক অবস্থাটা অনেকেই বেশ উপভোগ করছেন। অবশ্য এমনি এমনি না, কোন ধরনের ব্যাক্তিগত সুবিধার খাতগুলো নিশ্চিত না করে তো তারা এসব কাজ করেন না।
বানিজ্যিক বিজ্ঞাপন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ভেসে যায়। কত শত রকমের ট্যাগ লাইন। এ্ই যেমন: দেশকে ভালবাসুন, দেশের টাকা দেশেই রাখুন। তাতে সব কিছুই থাকে, কেবল বাংলাদেশ শব্দটা ছাড়া। বাস্তব পরিস্থিতি এখন এমনতর যে বাংলাদেশ হতে হয় "বাংলা" শব্দটা না্ই হয়ে যায়, নয়তো "দেশ"টাই নাই হয়ে যায়।
সারা বিশ্ব জুড়ে কোক স্টুডিও সাথে থাকে সংশ্লিষ্ট দেশের নাম, এই যেমন কোক স্টুডিও ইন্ডিয়া, কোক স্টুডিও পাকিস্তান। আর আমাদের দেশে সেটা হয়ে যায় কোক স্টুডিও "বাংলা"। কোক স্টুডিও "বাংলাদেশ" হওয়ার চাইতে কোক স্টুডিও বাংলা হওয়াটা এত জরুরি হল কেন? কার স্বার্থে, কার সুবিধার জন্য? কাকে খুশি রাখার জন্যে? এর বেনিফিশিয়ারি কারা?
অনেক রক্ত ঝরিয়ে কেনা এই পুরো (আংশিক নয় কিন্তু) "বাংলাদেশ" আমাদের জীবনের সাথে, আমাদের অস্তিত্বের সাথে জড়িয়ে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। প্রয়োজনে আবার রক্ত ঝরবে, অজুতে নিযুতে নিজেদের জীবন নিশ্চিতভাবেই ঝরে পড়বে কিন্তু আমাদের "বাংলাদেশ" স্বগৌরবে তার অস্তিত্ব নিয়ে টিকে থাকবে, আমাদের মাঝেই।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:১২