somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিন স্টুজী এবার কুয়াকাটায়...

০৩ রা আগস্ট, ২০১০ সকাল ১১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এ আমার ডায়রীর দুটো পাতা। কেন যেন আর rewrite করতে ইচ্ছে করছিল না, তাই সরাসরি পোস্ট। পাঠক বিরক্ত হতে পারেন, তাই পূর্বেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। এবার ছবি তোলা হয় নি তেমন, শুধুই বৃষ্টিতে ভিজেছি :), তবে কতগুলো ছবি আকাঁর প্লট মাথায় নিয়ে এসেছি :);)
------------------------------------------------------------------------

২৮ জুলাই সারাদিন গেল আমাদের প্ল্যানিং করতে, এ রকম ঘটনা এর আগে কখনো ঘটে নি। আমাদের সব সময়কার বৈশিষ্ট্য ছিল- ঝটিকা সিদ্ধান্ত এবং গমন। যাই হোক, অনেক বাক-বিতন্ডার পর ঠিক হলো কুয়াকাটা। আমি আর অনিন কয়েকবছর আগে ঘুরে এলেও স্টুজী-৩ এর জন্যে কুয়াকাটা নতুন। এক দিন আগেই পূর্নিমা ছিল, তাই সিদ্ধান্ত লঞ্চে করে চাঁদের শোভা দেখতে দেখতে বরিশাল যাব আর তারপর বাসে কুয়াকাটা, ফোনে হোটেলে রুম বুক করলাম (এই ঘটনাটাও আমাদের তিন জনের জন্য নতুন)।

সন্ধ্যা থেকেই ডেকে ছিলাম, চাঁদের আলোয় চারপাশটার ছবি তোলার চেষ্টা করছিলাম। আমার 3000D আমাকে সাপোর্ট করছিল না যদিও। ১০-৩০ পর্যন্ত খোলা ডেকে থেকে সঙ্গে নিয়ে আসা চিকেন বিরিয়ানী খেতে কেবিনে আসলাম। নামার সময় শারমিন ভয় পেয়ে গেল- আমরা কি আর ডেকে আসবো না? (লঞ্চ এ ওর এই প্রথম ভ্রমণ) আমি অবাক এবং বিরক্ত- কী আজিব! আসব না কেন? সারা রাত তো ডেকেই থাকব (আমার পূর্ব ভ্রমণে সারা রাত ডেকে থাকার কথা মনে করে বললাম)।











কিন্তু হায়! খাওয়ার পর পরই আগের রাত না ঘুমানোর ক্লান্তিতে আমি ঘুমে ঢুলু ঢুলু হয়ে ভাবলাম- কিছুটা সময় ঘুমাই (এমনিতেই জার্নিতে আমার ঘুম হয় না, তাই আত্মবিশ্বাস ছিল একটু পরই জেগে যাব)। রাত দু'টায় ঘুম ভেঙ্গে কিছুক্ষণ কেবিনের সামনের ডেকে বসার চেষ্টা করলাম, পারলাম না- আবারো বিছানায়।





২৯ জুলাই ভোর ৬ টায় বাসে যাত্রা শুরু কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে। ১২টায় পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে এক্কেবারে সকাল কাম দুপুরের খাওয়া খেয়ে সৈকতে। বাসজার্নিতে (পাঁচটা ফেরী পার হতে গিয়ে!!) খুব মেজাজ খারাপ হচ্ছিল, দুঃসহ জার্নি জেনেও কেন কুয়াকাটায় আস্তে চাইলাম, কিন্তু সৈকতে এসে সমুদ্রের ঠান্ডা হাওয়া গায়ে লাগতেই সব ভুলে গেলাম। বেশীর ভাগ সময়টাতেই সৈকতে আমরা তিনজন ছাড়া কোন ট্যুরিস্ট ছিল না। কক্সবাজারে গেলে আমার মনে হয় যদি আশাপাশের মানুষগুলোকে ইরেজার দিয়ে মুছে ফেলতে পারতাম! কুয়াকাটায় সমুদ্র শুধু আমার!!:)







আমাদের এইবার প্ল্যান শুধু সমুদ্রের বালুবেলায় বসে হা করে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকাB-)। আর মাঝে মাঝে সমুদ্রের গহবরে গিয়ে দাপাদাপি করে আসা। আমি আবার বড় অস্থির। তাই একটু পর পরই ওদেরকে পটিয়ে নিয়ে সমুদ্রের পার ধরে যে কোন এক দিকে হাঁটা শুরু করে দিই, হাটঁতে হাটঁতে অনেক দূর চলে যাই। মূল পয়েন্ট থেকে যত দূরে যাই, চারপাশটা যেন তত সুন্দর।











প্রথমবার যখন কুয়াকাটা যাই, তখনও ছিল বর্ষাকাল- সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দুই সময়েই সূর্য আমাদের ফাঁকি দিয়ে একা একা থাকল। খেয়ালও করি নি আমরা যে এখনো শ্রাবণ মাস। পশ্চিমাকাশ মেঘে ঢাকা। হাটঁতে হাটঁতে অনেক দূর গিয়ে দেখি-অস্ত যাওয়ার ঠিক পূর্বের মুহূর্তে দুই লেয়ার মেঘের ফাঁকে সূর্যের একটু ঝিলিক। ওটুকু এত্ত সুন্দর ছিল আর সূর্য যদি নিজেকে ওই মেঘের ঘোমটার আড়াল থেকে বের করত তা যে কী ভয়াবহ সুন্দর হত বুঝতে পারলাম- ঠিক যেন বোরকা পরা সুন্দর মেয়ের হিজাবের বাইরের পটলচেরা দুটি সুন্দর চোখের মতোন- যা দেখে আমরা ভাবি মেয়েটা না জানি কত্ত সুন্দর!;):)









আরো কয়েকজন ট্যুরিস্ট চোখে পড়ল। মনে হলো ওরা যেন এই শূণ্য বালুবেলায় অস্থির হয়ে পড়েছে। আমাদেরকে ওদের ওখানে পার্টির আমন্ত্রণ জানালো। আমরা যদিও খুব রক্ষণশীল নই, কিন্তু নিশ্চুপ বালুকাবেলায় সমুদ্রের গর্জন শুনতেই যে ভালো লাগছিল!তবে শারমিন খুব অবাক- এমন কিছু নেই আমাদের মাঝে যা দেখে আমাদেরকে পার্টিতে আমন্ত্রণ দেয়া যায়:P;) বরঞ্চ আমাদের থেকে দূরে থাকাই যে নিরাপদ এটা যে কেউ প্রথম দেখাতেই বুঝতে পারে।B-)

সন্ধ্যায় বীচে বসে ফুচকা খাওয়ার সময় দেখি অনেক পুলিশ- একটা মৃতদেহ। স্থানীয় লোকজনের কাছে শুনলাম কিছুদিন আগে মাছ ধরার ট্রলার ডুবিতে অনেক জেলে মারা যায়, তারই একজ়নের লাশ আজ ভেসে এসেছে। মনটাই খারাপ হয়ে গেল- দেখেই বোঝা যাচ্ছিল কোন টগবগে তরুণের মৃতদেহ, ওর আত্মীয়-পরিজনের কথা ভেবে খুব খারাপ লাগছিল।

মশার কামড়ে রাতে ঘুমুতে পারি নি পর্যটনের হোটেলে, ৩০ জুলাই সকাল হতেই দেখি ঝুম বৃষ্টি। কিছুদিন আগে আবহাওয়া বার্তা শুনে বৃষ্টি আসবে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম কক্সবাজারে। বৃষ্টি আমাদের ফাঁকি দিয়েছিল, তাই বৃষ্টি দেখে আর দেরী নয়, ভিজে ভিজেই দৌঁড় লাগালাম বীচের দিকে। রৃষ্টিতে সমুদ্র যে কী ভয়ঙ্কর সুন্দর!
ধূষর আকাশ, ধূষর সমুদ্র আর ধূষর সৈকত- অদ্ভুত সুন্দর। বৃষ্টিতে সমুদ্র থেকে সৈকতকে আলাদা করা যায় না, মনে হয় যেন এক মহাসমুদ্রের মাঝে দাঁড়িয়ে আছি, ভয়ও লাগে একটু একটু আর ভয় লাগাটাও ভয়ঙ্কর সুন্দর। প্রথমে ভেবছিলাম আমরা তিনজন ছাড়া কেউ নেই, কিন্তু একটু পরই দেখি একটা ছেলে ঠিক অনিন্দিতা স্টাইলে বীচে বসে আছে, আমাদের প্যাক প্যাকে মনে হয় বিরক্ত হয়ে একটু পর উঠে চলে গেল। আমরা তো ভাবলাম স্যুইসাইড কেইস- আহারে! বেচারাকে শান্তিতে মরতেও দিলাম না;):P

বৃষ্টি একটু ধরলে আমরা এসে নাশতা করলাম- শারমিন হোটেলে ফিরে গেল আমার নিয়ে আসা prizes (by Erich Segal) শেষ করার জন্যে। আমি আর অনিন আবারো বীচে- দুপুর পর্যন্ত ও সমুদ্রের তীরে বসে রইল, বালি দিয়ে facial, manicure আর pedicure করল; আমি হেঁটে বেড়ালাম বীচের এ মাথা থেকে ওমাথা আর ওকে খোঁচালাম- বুড়ী আর মোটা মহিলারা এমন ধপাস মেরে বীচে বসে থাকে- আমরা হয় হাঁটব নয় দাপাদাপি করব, যাই হোক কাজ হয় নি। ভেজা কাপড় বদলে এলেও আমি আবারো ভিজলাম।

বিকেলে বীচে একা হাটঁছিলাম- কুয়াকাটা থেকে ফেরার কিছুক্ষণ আগে। শেষ মুহূর্তে প্রাণভরে সমুদ্রটাকে দেখে নেয়ার আশায়। সমুদ্রের নেশা বড় মারাত্মক, বার বার ফিরে আসার সময় ভাবি- আরেকটু থাকি, আরেকটু খানি।


------------------------------------------------------------------------
এক্কেবারে শেষ রাউণ্ড হাঁটা শেষে যখন ফিরি, দেখি ওই পার্টিগ্রুপের ছেলেটা একজন পার্টিগার্ল খুঁজে পেয়েছে:D:P ও আরেকটা কথা, ওই ছেলেগুলো ছিল বীচের সাথে একদম লাগোয়া একটা কটেজে , যা দেখে আমরা হিংসায় আর রাগে জলে যাচ্ছিলাম- আমরা কেন ওই রকম একটা কটেজে থাকি নি!

তিন স্টুজীর গল্পের শুরুটা জেনে নিতে পারেন :P
Click This Link
তিন স্টুজীর ছোট্ট একটা ট্যুরঃ মাওয়ার চরে Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ১:২১
৩৯টি মন্তব্য ৪২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×