somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিন স্টুজীর ছোট্ট একটা ট্যুরঃ মাওয়ার চরে

১৫ ই আগস্ট, ২০১০ দুপুর ২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


খুব সম্ভবত ২০০৬ সালের ডিসেম্বর। হঠাৎ করেই হরতালে একদিনের জন্যে ছুটি বিশ্ববিদ্যালয়। কাছাকাছি কোন প্রজেক্ট জমার টেনশন নেই। আর তাই মন আইড়ম বাইড়ম করছে ছুটি কাজে লাগানোর জন্যে, কিন্তু মন চাইলেই তো হবে না- হরতালে কেমনে বের হই! দুপুর পর্যন্ত আমি আর অনিন নানা জল্পনা কল্পনা করলাম- এই হরতালের সময় আধাবেলার জন্যে কোথায় যাওয়া যায়!- ইয়েস! মাওয়া!!! শামরিন ক বললাম- ওতো প্রস্তাব না শুনেই কবুল, বরাবরের মতো।

'প্রথম আলো' নকশার বদৌলতে অনিন আমাদের জানালো- গুলিস্তান থেকে মাওয়ার বাস ছাড়ে আধঘন্টা পরপর।দুপুরের পর হরতালের তোড়জোড় কমে যাবে এই ভরসায় আল্লাহর নামে আমরা রওয়ানা দিয়ে দিলাম। বুড়ীগঙ্গা দুই নম্বর ব্রীজের কাছে সার্ভে করার সময় আমরা মাওয়াগামী বাস দেখেছিলাম ব্রীজের নীচটাতে। তাই সেখানেই যাওয়া স্থির করলাম। নয়াবাজারে ব্রীজের গোড়ায় তখন একটা লক্কড়-ঝক্কড় বাস দাঁড়িয়ে, হরতালের শান্ত আবহাওয়া বুঝে ওরা মাত্রই যাত্রী ডাকাডাকি শুরু করেছে। আমাদের তখন অন্য কোন অপশন ভাবার সময় নেই, উঠে গেলাম সেই মুড়ির টিন বাসে; আর তাছাড়া বাজেটও কম বরাবরের মতো।:P

বুড়ীগঙ্গা দুই নম্বর ব্রীজ পার হয়ে বাস চলছিল মাওয়ার দিকে দুপাশে সবুজ-শ্যামল প্রকৃতির মধ্য দিয়ে।এই রাস্তাটা আমার বরাবরই বড় ভালো লেগেছে- এরপর যতবারই ওইদিকে গেছি। বাসের লোকজনের অবাক দৃষ্টি (আমাদের দিকে!- তিনটা বাচ্চা মেয়ে হরতালের দিনে কই যাচ্ছে এই নিয়ে মহা চিন্তিত!!;):P)কে উপেক্ষা করে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকলাম। আনুমানিক সাড়ে তিনটার দিকে বাসওয়ালা যে জায়গায় আমাদের নামিয়ে দিল মাওয়া বলে, সেখানে দাঁড়িয়ে আমরা জল্পনা-কল্পনা করছিলাম পদ্মার পাড়ে যাওয়া যায় কীভাবে!এই করে সামনে হেঁটে দেখি বিশাল পদ্মার বালুচর!:) প্রথম যেবার কুয়াকাটায় গিয়ে বাস থেকে নেমে সমুদ্র দেখতে পেলাম, সেই সময়কার মতো অনুভূতি হলো। সমুদ্রতটের মতোই লাগছিল। বিশাল বালুকাবেলায় ছোট্ট ছোট্ট ঢেউগুলো আছড়ে পড়ছে। শীতকাল, তাই ঢেউ এর উন্মত্ততা নেই, কিন্তু অনাবিল সৌন্দর্য আছে।

তীরধরে হাঁটতে থাকলাম ডান দিকে (পূব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণ জানি না), জানি না এ দিকে গেলে কী পাব! দূরে ঘাট জাতীয় কিছু দেখা যাচ্ছিল। আর পদ্মার তীরের নানা ক্রিয়াকর্ম দেখছিলাম- মাছ ধরা, জাল বোনা- খুব কাছেই মানুষের বসতি। এর মাঝে চলল বাক-বিতন্ডাঃ আমাদের পরপর্তী প্ল্যানিং কী! আমরা কি এরকম ইতস্তত বিক্ষিপ্ত হাঁটাহাঁটি করে ফিরে যাব ঢাকায় নাকি আরেকটু explore করার জন্যে ট্রলারে করে কোন একটা চর থেকে ঘুরে আসব- টাকা-পয়সা একটা ফ্যাক্টর আর অনিনের নিয়ে আসা SLR ক্যামেরার সিকিউরিটি। যাই হোক শামরিনের প্রস্তাবনা আমার ভোট পাওয়ার পর সঙ্খ্যাগরিষ্ঠ ভোটে ট্রলারে চরভ্রমণ জয়যুক্ত হলো।:DB-)





বয়স কম ছিল আর বাপের টাকা হাত খুলে খরচ করতে বাধঁত বলে তখন কেবলি মনে হতো সবাই বোধ হয় আমাদের ঠকাতে চায়। অনেক দামাদামির পর মনে হয় একশ বা দেড়শ টাকায় আমাদের একটা চর ঘুরিয়ে আনতে রাজী হলো এক মাঝি। এটা ঠিক করার আগে অবশ্য আমরা অন্য লোকজনের সাথে খেয়া পারাপারের কোনটাতে চড়ার চেষ্টা-চরিত্র করছিলাম লোকমুখে কোন এক চরের নাম শুনে। কিন্তু সফলকাম হলাম না, লোকে তো আর ঘাস খায় না, আমরা যে কোন চরে আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে আসিনি তা সহজেই বুঝে গেল।:|;)

যাই হোক ট্রলারে করে বাদাম (ঘাটে এক চাচা আমাদেরকে কিনে দিয়েছিল ;))খেতে খেতে আর পদ্মার অপূরূপ দেখতে দেখতে আমরা পৌঁছে গেলাম এক চরে(আল্লাহ মাবুদই জানে আমাগোরে কই আইন্যা ফেলসে!;)) যাই হোক, চরে নেমে দেখি চারিদিক সুনসান। নতুনই মনে হয় জেগেছে এই চর, দখলদার এসে এখনও এর মালিকানা নিয়ে নেয় নি। তাই কোন মানুষজন নেই, আছে মানুষসমান উঁচু কাশফুল আর সর্ষে গাছে সর্ষে ফুল। যতদূর যায় চরের কোন শেষ দেখা যায় না। সূর্য যখন অস্ত অস্ত যায় যায় আমি আর শামরিন কীসের যেন এক হাতছানিতে কাশফুলের ক্ষেতের মধ্য দিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে থাকলাম, মনে হলো আরেকটু এগুলেই বোধ হয় চরের শেষ দেখা যাবে। হরতাল-চিৎকার চ্যাঁচামেচির শহর থেকে দূরে এই সুনসান চরে এসে যেন হাঁফ ছেড়ে বাচঁলাম।

এদিকে অনিন্দিতা শেষ সূর্যের আলো বন্দী করছিল তার ক্যামেরায়। আমি ক্যামেরা (ধার করা SLR) নিইনি-ডিজিটাল ক্যামেরাটা এত সহজপ্রাপ্য হয় নি, আর তখনো পর্যন্ত আমার ক্যামেরাটাকে প্রকৃতির সাথে আমার একাত্মতার ক্ষেত্রে বিরাট এক বাঁধা মনে হতো। আর তাই অনিনের ছবিতে human scale এর পরিমাপক বা কোন এক প্রাণের অস্তিত্ব হিসেবে পোজ দিতে হচ্ছিল।







আমি আর অনিন পানিতে নামা থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখতে পারলেও শামরিন কে পারি নি। হাঁটুসমান পানিতে দাঁড়িয়ে একটা ছবির জন্যে পোজ় দিয়ে তবে সে পানি থেকে উঠে আসল।ঘন্টাখানেক থাকার ইজারা নিয়ে নেমেছিলাম নৌকা থেকে, কতখানি সময় পার করলাম জানি না। সূয্যিমামাকে বিদায় দিয়ে আমরা আবার ট্রলারে উঠলাম। অস্ত যাওয়ার পরের আলোয় এক অনাবিল শান্তি বুকে নিয়ে আমরা ফিরে এলাম মাওয়া ঘাটে আর তারপর বিরাট সব কাহিনী করে রাত নয়টায় আমরা নামলাম বুড়ীগঙ্গা ব্রীজের গোড়ায়। শীতের মজার পিঠা বানাচ্ছিল এক মামা, মহানন্দে পাটি সাপ্টা পিঠা খেতে খেতে হলে ফিরলাম। মাত্র কয়েকঘন্টা ঢাকার বাইরে ছিলাম, কিন্তু মনে হলো যেন অনেকটা সময় প্রকৃতির কাছে ছিলাম আমরা! পদ্মার নির্জন চর যে শান্তি দিয়েছিল মনে তাতে যেন আরো বেশ কিছুদিন এই শহরের জঞ্জালের সাথে লড়াই করার শক্তি পেলাম!!

(বিশেষ ধন্যবাদঃ এই লেখার সাথে সংযুক্ত প্রত্যেকটা ছবি আমার বন্ধু অনিন্দিতার তোলা।)

------------------------------------------------------------------
তিন 'স্টুজি'র গপ্পো_শুরু Click This Link
তিন স্টুজী এবার কুয়াকাটায়... Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ১:৩৩
২৮টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×