somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আঁতেলের মিটিং

১১ ই অক্টোবর, ২০০৮ সকাল ১১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘটনাটা প্রায় ৮ থেকে ৯ বছর আগের, আমি তখন মধ্যপ্রাচ্যের একটি কম্পানিতে এডমিনিসট্রেশন এবং পারসোনাল ডিপার্টমেন্টে কাজ করতাম। আমাদের কম্পানিতে কাজের বিশে কোন নিয়ম সৃঙ্খলা না থাকায় কিছু কিছু ডিপার্টমেন্টে সব সময় কাজের চাপ লেগেই থাকত। কোন এক ডিপার্টমেন্টে কাজের বেশি চাপ থাকলেই অন্য ডিপার্টমেন্ট থেকে কেউকে এনে কাজ করান হত। এই রকম পরিস্থিতিতে আমাকেও পরতে হত, পরবর্তিতে এমন হল যে কাজটা স্থায়ী ভাবে আমার দ্বয়িত্বের মধ্যেই এসে গেল। কাজটা ছিল মিটিং মিনিটিস লেখা, যেই কাজটা আমি মনে প্রানে অপছন্দ করতাম এবং এখনও করি।

মিটিং মিনিটিস নেওয়ার কাজটা আমার কাছে খুবই এক ঘেয়ামি পূর্ণ লাগত। এই কারনে কাজটা করার সময় আমি যথা সম্ভব ফাকি দেওয়ার চেষ্টা করতাম এবং মিটিং এর মধ্যে যখনই ঘুমানোর(ঝিমানোর) সুযোগ পেতাম, সুযোগটা কাজে লাগাতে কখনওই ভুল করতাম না।

একদিন আমাদের কম্পানিতে একটা মাঝারি ধরনের দূর্ঘটনা ঘটল, দূর্ঘটনার মূল কারন ছিল আমাদের কম্পানির প্রয়জনের তুলনায় অতি স্বল্প জনবল সম্পন্ন সেফটি ডিপার্টমেন্টের অপারগতা। আল্লাহর রহমতে ঐ দিন কোন প্রানহানি ঘটেনি, শুধু মালামালে আগুন লেগেছিল, দুর্ঘটনাটা শুধু মাত্র আর্থিক ক্ষতি সাধন করেছিল।

দুর্ঘটনার সাথে সাথে আমাদের জি এম (জেনারেল ম্যেনেজার) দুর্ঘটনার জায়গাটা পরির্দশন করে এসেই জরুরি মিটিং ডাকলেন, আর যথারিতি ডাক পরল আমারও মিটিং মিনিটিস নেওয়ার জন্য। আসময়ে বিরক্তিকর মিটিং এই কারনে আমিও ইচ্ছাকৃত ভাবে একটু দেরি করেই যাচ্ছিলাম। মিটিং রুমে যেয়ে দেখি আঁতেলে, আঁতেল আর আঁতেল, আমাদের কম্পানির সব আঁতেল গুলা এসে পড়েছে মিটিং রুমে মন খুলে আঁতলামি করার জন্য। বিশাল মিটিং রুমের একটা চেয়ারও খালি নাই সব গুলা চেয়ার আঁতেলে পরিপূর্ণ, এর মধ্যে কিছু কিছু আঁতেল অন্য রুম থেকে চেয়ার নিয়ে আসছে, আমিও একটা চেয়ার যোগার করে বসে পরলাম। টেবিলে জায়গা পেলাম না, মনে মনে একটু খুশিই হচ্ছিলাম হয়তবা যায়গা সংকুলান না হওয়ার কারনে আমাকে আর আজকে আর মিনিটিস নিতে হবে না।

আমাদের জি এম আসলেন মিটিং রুমে এসেই একসাথে সব গুলা আঁতেলকে দেখে বেশ খুশি হলেন এবং হয়তবা মনে মনে বলছিলেন বাহঃ আজকে আঁতলামিটা বেশ জমবে ;)

জি এম শুরু করলেন Today we have a very important issue to discuss, everybody turn off your mobile and …………………………….. We have to note all the notes properly. তার পরই উনি আমাকে খুজতে লাগলেন, দেখলেন আমি জায়গা না পেয়ে টেবিলে নাই, টেবিলের বাইরে চেয়ারে বসে আছি এবং উনি খেয়াল করলেন ঐ ভাবে আমার পক্ষে সব মিনিটস নেওয়াও সম্ভব না, তাই উনি আমার নাম ধরে ডেকে বললেন …… you come here sit beside me উনি উনার চেয়ারটা একটু পিছনে সরিয়ে নিয়ে আমকে জায়গা দিয়ে বললেন bring your chair, note down everything what I say, safety is very important issue, don’t miss anything. আমি মনে মনে বলছিলাম এত দিন তোমার হুশ কোথায় ছিল, ঘটনা ঘটার পরে ঢুশ খেয়ে তোমার হুশ হয়েছে।

জি এম তার মুল্যবান আঁতলামি শুরু করলেন আমিও শুরু করলাম নোট করা, মোটামটি ৫ মিনিট পরে হঠাৎ করে মিটিং-এ উপস্থিত এক আরবি-ভাষি আঁতেল আমাদের আরবি-ভাষি জি এম কে আরবি তে একটা প্রশ্ন করে বসল, আমাদের জি এম-ও তাকে আরবি তে উত্তর দিতে লাগলেন, ৫ মিনিট যায় ১০ মিনিট যায় জি এম আর থেমে না উনি আরবি তে আঁতলামি (বক বক) করেই যাচ্ছেন। আমিও সুযোগ পেয়ে চুপ চাপ বসে আছি কিছক্ষন পর আমার ঝিমানি ধরে গেল আমিও সুযোগের সদ্বব্যাবহার করা শুরু করে দিলাম। আমাদের জি এম বক বক করেই যাচ্ছেন করেই যাচ্ছেন। প্রায় ৪৫ মিনিট এক নাগারে আরবিতে আঁতলামি (বক বক) করার পর জি এম আমাকে বললেন Now tell me what you have noted, আমি হঠাৎ কাচা ঘুম থেকে উঠে চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকিয়ে থাকলাম, উনি আবার বলে উঠলেন Read what you have noted. আমি-ত আকাশ থেকে পড়লাম। বোকা বোকা চেহারা করে উনাকে বললাম Sir, you spoke everything in Arabic, how I will note. উনি বলে উঠলেন What!! You didn’t note anything. আমি বললাম Sir, you spoke everything in Arabic, how I will write. মিটিং রুম ভরতি সব আঁতেল এক সাথে হো হো করে হেসে উঠল। আমিও মনে মনে হাসলাম কিন্তু বোকা বোকা চেহারা করে জি এম এর দিকে তাকিয়ে থাকলাম ;)

এই ঘটনার পর আমাকে আর বেশি দিন আঁতেল দের আঁতলামি উপোভোগ করতে হয়নি।

আর এখন, আমিও এক আঁতেল সুযোগ পেলে আমাকেও মিনিং-এ আঁতলামি করতে হয়। আর সেই আসহায় তরুণ যে মিটিং মিনিটস নেয় তাকে দেখে মনে মনে বলি তুমি এখন কি ভাবছ তা আমার অজানা নয়।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০০৮ সকাল ১১:৩২
২২টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×