somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুরস্কের কামাল আতাতুর্ক কি ঈশ্বর?

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটি ছবি। ছবিতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়ে। মেয়েটির নাম এমিনে শাহীন বয়স ২১ বছর। কালো বোরকায় ঢাকা পুরো শরীর শুধু চোখ দুটি দেখা যায়। একজন মহিলা পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।



ছবিটি তুরস্কের পশ্চিম অঞ্চলীয় এদিরনে শহর থেকে তোলা। মেয়েটির অপরাধ সে তুরস্কের প্রথম প্রেসিডেন্ট এবং আধুনিক তুর্কির জন্মদাতা মোস্তফা কামাল আতাতুর্ককে অপমান করেছে।

১০ নভেম্বর আতাতুর্কের মৃত্যু দিবস। আজ থেকে ৮০ বছর আগে ১৯৩৮ সালের ১০ নভেম্বর সকাল ৯টা ৫ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন তুর্কির এই রাষ্ট্রনায়ক। তার মৃত্যুর স্মরণে সারা দেশে ১০ নভেম্বর সকাল ৯টা বেজে ৫ মিনিটের সময় এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়।

বাসায় অফিসে বাসে মেট্রোতে ট্রেনে নৌকায় জাহাজে যে খানে যে অবস্থায় যে কাজেই থাকুক না কেন সব কিছু বন্ধকরে দিয়ে দাঁড়িয়ে পরে তাদের জাতির পিতার সম্মানে।

তুর্কির প্রথম বহুদলীয় নির্বাচনে আতাতুর্ক এবং ধর্মনিরপেক্ষতা পরিপন্থী দল ডেমোক্রাট পার্টি ক্ষমতায় আসে ১৯৫০ সালে। ১৯৫১ সালের ৩১ জুলাই ডেমোক্র্যাট পার্টি লিডার আদনান মেনদেরেস নির্দেশে প্রথম আতাতুর্ক সুরক্ষা আইন নাম একটি আইন সরকারি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।

এই আইনের মাধ্যমে আতাতুর্কের স্মৃতির অপমান বা অসদাচরণকে অপরাধ বলে গণ্য করা হয়।

আইনে বলা হয়, কেউ আতাতুর্কের স্মৃতিগুলোকে প্রকাশ্যে অপমান বা অসদাচরণ করলে তাকে এক থেকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হবে।

আতাতুর্ককের মূর্তি, স্মৃতিসৌধ, অথবা কবরকে যদি কেউ ভেঙে ফেলে বা ধ্বংস করে ফেলে তাহলে তাকে এক থেকে পাঁচ বছরের জন্য কারাদণ্ড দেয়া হয়। কোনো ব্যক্তি উপরের অনুচ্ছেদের লিখিত অপরাধের জন্য অন্যদের উৎসাহিত করলে তাকে প্রধান অপরাধী হিসাবে শাস্তি দেয়া হবে।

পত্রপত্রিকার খবরে বলা হয়, এডিরনে প্রদেশের ওই মেয়েটি আতাতুর্কের সম্মানে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে, 'আতাতুর্ক ঈশ্বর নন। আল্লাহর আইন আছে। আতাতুর্ক এদেশে পশ্চিমা আইন পরবর্তন করেছেন।'

ঘটনার পরপরই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। হাসপাতালে মেডিকেল চেকআপ এর সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'আমি আসলে ওইভাবে বলিনি। আমি বলতে চেয়েছি আমরা শুধু আল্লাহর আইন মেনে কিয়াম করি (নামাজে দাঁড়াই)। অন্য কারো জন্য দাঁড়ানোর নিয়ম নাই ইসলামে নাই। এটা পশ্চিমা আইন।"

এমিনে শাহীনের হয়তো জেল হতে পারে কিন্তু তাকে গ্রেফতারের ঘটনা আতাতুর্কের প্রতি মানুষের মাঝে সম্মান বাড়াবে না বটে।

১০ নভেম্বর সকলের সামনে দাঁড়িয়ে সম্মান জানানোর নিয়ম থাকলেও প্রতি বছরই অনেক মানুষকে হাঁটতে বা গাড়ি চালিয়ে যেতে দেখা যায়। যুবসমাজ বিষয়টা নিয়ে দ্বিধা বিভক্ত। অনেক এর বিরুদ্ধে মুখ খুলে তাদের বিরোক্ততার কথা প্ৰকাশ করে। গত বছর ও ইস্তাম্বুলে অনেকেই যখন দাঁড়িয়ে পড়ল একদল কলেজ পড়ুয়া স্টুডেন্টকে হাটতে দেখা গেছে। এরকম ঘটনা তুরস্কের সব এলাকায় ঘটতে দেখা যায়।

মজার বিষয় হলো আতাতুর্ককে সম্মান দেখানো বা না দেখানো নিয়ে যে বিতর্ক তুর্কিতে অনেক দিন ধরে চলছে তার মূলে ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী আর ধর্ম নিরপেক্ষদের বিবাদকেই আসল প্রভাবক হিসেবে মনে করা হয়। কিন্তু আইনটি যে প্রণয়ন করছে সেই আদনান মেনদেরেসকে তুর্কির ডানপন্থীরা নিজেদের বীর মনে করে।

আদনান মেনডেরেসকে ১৯৬০ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত এবং ফাঁসি দেয়ার পিছনেও এই ধর্ম নিরপেক্ষ মতবাদীদের দায়ী করা হয়।

বর্তমান প্রেসিডেন্ট এরদোগানও মনে করেন আদান মেনদেরেস তাদের যোগ্য পূর্বপরুষ যিনি তুরস্ককে আতাতুর্কের ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ থেকে কিছুটা হলেও ইসলামী মূল্যবোধে ফিরিয়ে এনেছেন। অথচ সেই আদনান মেনদেরেসই নাকি আতাতুর্ক সুরক্ষা আইন পাস করেন। অথচ তুরস্কের বেশিরভাগ লোকই বিশ্বাস করে যে আইনটি মেনদেরেসের পূর্বের প্রেসিডেন্ট ইসমেত ইনোনু যিনি আতাতুর্কের পার্টির প্রধান তিনিই আইনটি পাস করেছেন।

আর তুরস্কের ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসীরাও মনে করেন আইনটি আতাতুর্কের পার্টির চাপিয়ে দেয়া একটা বিষয়। অথচ আসল ঘটনা পুরোই ভিন্ন।

আইনের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির সম্মান বাড়ানো সম্ভব না। তবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা ব্যক্তিত্ব এবং প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করতে আইনের দরকার হয়। কিন্তু মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতা এবং চিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করে নয়।

বি:দ্র: শাহিনকে জেলে নেওয়ার পর থেকেই তুরস্কের বিভিন্ন জায়গায় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার পক্ষে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে ওঠে। তুর্কীর আদালত গত বুধার তাকে জামিন দেয়।

খবরটি দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশ হয়। লিংক->>
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:১৫
১১টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×