somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিলেকোঠার সেপাইয়ের রহমতউল্লা

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের চিলেকোঠার সেপাই উপন্যাসের প্রভাবশালী চরিত্র রহমতউল্লা। তার বাড়ির চিলেকোঠায় থাকে ওসমান। ওসমান ইপিআরসি অফিসে চাকরি করে। সিঙ্গেল। ইপিআরসিতে কাজ পাওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে অফিসের এক সহকর্মীর কল্যাণে ওসমান এই ঘরের খোঁজ পায়। ঘর মানে রহমতউল্লার বাড়ির চিলেকোঠা। চিলেকোঠার সেপাই ওসমান। খায় ইসলামিয়া রেস্টুরেন্ট কিংবা আমজাদিয়া হোটেলে। সাথে চলে কিংস্টর্ক সিগারেট। রহমতউল্লাহর বাডিটির অবস্থান পুরাতন ঢাকার ভেতরে। বাড়ির যে ছবি আখতারুজ্জামান ইলিয়াস এঁকেছেন তার কিছুটা পরিচিয় দেয়া যেতে পারে,

' পেচ্ছাব করা ও মুখ ধোয়াটা ওসমান ছাদেই সেরে নেয়। কোনোটিতেই বাড়িওয়ালার সম্মতি নাই। গোসল করতে হলে অবশ্য নিচে নামতেই হয়। নিচতলায় বাড়িওয়ালার ' গওসল আজম সু ফ্যাক্টরি '। কারখানায় প্রায় ৮/১০ জন লোক। সারি বাঁধা পায়খানার ৩টে প্রায় তাদের দখলেই থাকে। ওসমান তাই অফিসে কি সিনেমা হলে কি মসজিদে পায়খানা করে। গোসলের জন্য পাকা স্যাঁতস্যাঁতে উঠানের একদিক জুড়ে চৌবাচ্চা, এটাকে বলা হয় হাউস। কিন্তু ওটার দিকে চোখ পড়লেই তার শীতশীত করে। গোসল করাটা প্রায় হয়েই ওঠে না।

...বাড়িটা হোপলেস। সামনে খোলা জায়গা নাই। ড্রেনের পরেই বাড়ি শুরু হয়ে গেলো। রাস্তার ওপরে চওড়া দরজা, দরজাটা একটু নিচু। বাড়ির বাসিন্দারা, এমনকি বেঁটে লোকজনও মাথা নীচু করে ঐ দরজা দিয়ে বাড়িতে ঢোকে।... রাস্তার ওপরে এই একটিমাত্র দরজা বন্ধ করে দিলে এই বিশাল ও বেঢপ দালানে ঢোকা অসম্ভব। দোতলা ও তিনতলার সামনে বারান্দায় বাঙালিদের পেট সমান উঁচু লোহার রেলিঙ। ঘরগুলো ছোটো, এর মধ্যে হার্ডবোর্ড,কাঠের পার্টিশন ও বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘরের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। ঘরের মূল দেওয়াল খুব পুরু, থামগুলো মোটা। বাড়ি তৈরীর সময় মনে হয় শত্রুর হাত থেকে বাঁচার জন্য একটি প্রবলরকম ইচ্ছা খুব তৎপর ছিলো। সেই শত্রু কে? কোনো শত্রু না থাকলে বাড়িটাকে এরকম না-দূর্গ না বাড়ি বানাবার মানে কি? মানে যারা জানতো সেই সাহা কি বসাক কি পোদ্দার মশাইরা ১৯৫০ সালে রহমতউল্লার কাছে বাড়ি বেচে ইন্ডিয়া চলে গেছে। '

বাড়ির ২ তলায় থাকে রঞ্জুদের ফ্যামিলি। রঞ্জু রানু মোতালেব এবং তাদের মা বাবা। রঞ্জুর বাবা চাকরির দায়িত্ব পালনে ঢাকার বাইরেও যায়। উপন্যাসের শুরুতেই রঞ্জুর ভাই মোতালেব মারা যায় পুলিসের গুলি খেয়ে।
ছাত্র- নেতারা শুক্রবার হওয়ায় মোতালেবের লাশ বায়তুল মোকাররমের সামনে জানাজা শেষে আজিমপুর করবস্থানে দাফনের কথা বলে।তাতে সায় দেয় ওসমান। বাড়িওয়ালা রহমতউল্লা জানায়, ' বাবারা চ্যাতেন ক্যান? গোসল টোসল কমপিলিট। গোরস্থানে কবর খোঁড়ার কাজ চলতাছে। জানাজা হইবো ওহানেই। এর মইদ্যে পলিটক্স ঢোকাইতে চান ক্যান? ' তার ভাতিজার লাশ নামাজের আগেই জুড়াইন গোরস্থানে করবরস্ত করার কথা বলে। মোতালেব তার কোন জনমের ভাতিজা তা জানা না গেলেও ঘরভর্তি মানুষের সামনে সেকথা জানান দিয়ে সে হিক্কা তুলে কেঁদে পরিবেশ ভারী করে তোলে। পুলিস লাশের পাশে দাঁড়িয়ে থেকে জানায়, ' মুর্দার গার্জেনের রিকোয়েস্টে আমরা হেল্প করতে এসেছি। ' পুলিস রহমতউল্লাহর কথায় বেশ জোড় পায়। পুলিস ঘরের সবাইকে জানায় লাশ দাফনের আগে মানে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনারা চলে যাবেন। ওসমান ভাবে তার মানে কি আমরা এখন বন্দী ? রহমতউল্লা লাশ ট্টাকে তুলে জুড়াইনে দাফনের ব্যবস্থা করলে পুলিস চলে যায়। পুলিস চেয়েছিল লাশ নিয়ে যেন মিছিল-টিছিল না হয়।

রহমতউল্লার একটা রিক্সা গ্যারেজ আছে। তার ভাগ্নে আলাউদ্দিন সেটা দেখাশুনা করে। অালাউদ্দিন আন্দোলনকারীদের একজন। কিন্তু রহমতউল্লাহর কাজে সাহায্য-টাহায্য করে । গ্যারেজে থাকে হাড্ডি খিজির। হাড্ডি খিজিরই এই উপন্যাসের নায়ক চরিত্র। যার পিতার নাম সে জানে না। তার মা এক সময় ছিল ফালু মিস্ত্রির সাথে। ফালু মিস্ত্রি রহমতউল্লার গ্যারেজে কাজ করত। সেই হাড্ডি খিজিরের মাকে দিয়েছিল তার বাসায় কাজ করতে। ফালু মিস্ত্রির সাথে থাকলেও হাড্ডি খিজিরের পিতা সে নয়। খিজিরের মা কাজ করে রহমতউল্লার বাড়িতে। থাকে সিড়ির নীচে। সিড়ির নীচেই রহমতউল্লা প্রতিরাতে তাকে ব্যবহার করে। হাড্ডি খিজির যখন ছোট ছিল তখন মায়ের সাথেই ঘুমাতো। ঘুমের মধ্যে মায়ের গায়ে হাত দিতে গিয়ে এক রাতে বড় একটা শরীরে হাত পড়ায় সে চমকে উঠেছিল। সে চমক সারাজীবন তাকে তাড়া করে।রহমতউল্লাহই তাকে এরপর গ্যারেজে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়।
হাড্ডি খিজিরের মায়ের গর্ভপাত করাতে গিয়েই মেরে ফেলে রহমতউল্লাহ।
এরপর জুম্মনের মাকে বাসায় কাজের জন্য রাখে। তাকে ব্যবহার করার সুবিধার্থে হাড্ডি খিজিরের সাথে বিয়েও দেয়। হাড্ডি খিজির দুপুর বেলা মাঝে মাঝে স্ত্রীকে ভালোবাসার চেষ্টা করে। জুম্মনের মারও ইচ্ছে হয় একটু একটু। কিন্তু তৎক্ষণাৎ তার মনে পড়ে রহমতউল্লা হয়তো দুপুরের খাবার কিংবা পানির জন্য অপেক্ষা করছে। সে চলে যায় রহমতউল্লার কাছে । কারণ রহমতউল্লা তার অন্নদাতা। ছিন্নমূল জুম্মনের মা বটগাছের ছায়ার নীচে আছে তাই অনেককিছু ভেবে হাড্ডি খিজিরের এতটুকু আশাও পূরণ করতে ব্যর্থ হয়।

রহমতউল্লাহর স্ত্রী সবকিছুই জানে কিন্তু কিছু গায়ে মাখে না । সাধারণত বাড়িওয়ালার বউরা যা হয়! কাজের লোক, পরিবারের বিশাল ব্যয়বিধানের কোন কিছুই তাকে ভাবতে হয়না, তাই স্বামীকে সহায়তাও করে। এক সময় হাড্ডি খিজির আইয়ূব খানের বিরুদ্ধে পোস্টার লাগায়। রহমতউল্লা সে কথা জানতে পেরে তাকে ডেকে বলে, ' চুতমারানি, আমারই খাইবি, আমি ঘর না দিলে জায়গা নাই আর আমার লগে নিমকহারামি করস? ' রহমতউল্লার স্ত্রী তার মুখের উপর বলে, ' পোলায় কি ফেরেশতা? মায়ের কারবার পোলায় জানে না, না? এ্যারে জিগাও তো বাপের নাম কইবার পারবো? জিগাও না! ' হাড্ডি খিজির মায়ের মৃত্যুশোকে কাতর। তার উপর মহাজনের স্ত্রীর এরকম কথা শুনে স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। এরপর খিজির রহমতউল্লার গ্যারেজ ত্যাগ করে চলে যায়। খিজির একদিন মৃত্যুবরণ করে চিলেকোটার সেপাই ওসমানকে খাঁচা ভেঙে বেরিয়ে আসতে প্রেরণা জোগায়।
এসব কথা পরে বলা যাবে।

রহমতউল্লা জিন্নাটুপি মাথায় দিলেই নিজেকে আইয়ুব খানের চেয়েও শক্তিশালী ভাবে। আইয়ুব খান তার আদর্শ। মানে তার জান।
------ ক্রমশঃ
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:০০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×