জীবন ক্যানভাসে আঁকা গল্প
৮০ বছর বয়স্কা এক বৃদ্ধা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে একবার ভাষণ দিতে ওঠেন। সকলের অনুরোধে বৃদ্ধা ভাষণ দিতে স্টেজে উঠতে যেয়ে হঠাৎ পা পিছলে পড়ে যান। বৃদ্ধার এমন অবস্থা দেখে সবাই কিছুটা বিব্রত বোধ করেন। বৃদ্ধা কারও দিকে না তাকিয়ে হাসি-মুখেই ভাষণ দিতে ওঠেন এবং শুরুতেই মাইক্রোফোনের সামনে বলেন, “পড়ে গেছিলাম বলেই এখানে উঠতে পেরেছি । যখন উঠতে গেছি তখন আমার ধারণা হয়েছিল এতো উঁচু জায়গার উপর আমি উঠতে পারবো না। ঠিক তাই হয়েছে- চেষ্টা করা মাত্র পড়ে গেছি। আর যখনই পড়ে গেছি তখনই মাথায় চিন্তা এসেছে আমি উঠেই ছাড়বো আর তাই উঠতে পেরেছি। তার মানে এখানে আমার জন্য পড়ে যাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তা না হলে উপরে ওঠার মতো মানসিকতার সৃষ্টি হতো না”।
বৃদ্ধার এমন প্রারম্ভিক বক্তব্য শুনেই সবাই হাততালি দিতে শুরু করল। বৃদ্ধা এবারে সবাইকে থামতে বলে তার বক্তব্য দিতে শুরু করেনঃ
“আমরা এখন আগের মতো খেলতে পারি না কারণ আমরা বৃদ্ধ হয়ে গেছি। আমরা বৃদ্ধ হয়ে গেছি কারণ আমরা খেলা ছেড়ে দিয়েছি। মানুষের বয়স বাড়ে কারণ সে খেলা ছেড়ে দেয়। বৃদ্ধ হবার অর্থ অচল হয়ে থাকা। মানুষ কোনও কিছু না করলে তাকে অচল বলা যায়, আর অচলের আরেক অর্থ বৃদ্ধ হওয়া। এখানে কিছু করার অর্থ কোনও আয় করা নয় বরং কোনও কাজে লেগে থাকা। কারও বয়স যদি হয় ২০ আর সে কোনও কাজ না করে তাহলে তার মূল বয়স হবে ৬০। কারণ সাধারনত ৬০ বছর বয়স হলেই মানুষের বিশ্রাম নেওয়ার একটা প্রবণতা থাকে। আবার কারও বয়স যদি হয় ৮০ কিন্তু সারাদিন কোনও না কোনও কাজে নিজেকে ব্যাস্ত রাখে তবে তার বয়স দাঁড়ায় ৩০ বছরে। কারণ সাধারনত ৩০ বছরের যুবকেরা সারাদিন কাজে ব্যাস্ত থাকে। সুতরাং এখানে যারা আমার বক্তব্য শুনছো তাদের সবাইকে আমি তোমাদের বন্ধু আবার অভিভাবক হিসেবে অনুরোধ করবো কেউ তোমরা অযথা সময় নষ্ট করবে না। বয়সের ভারে বৃদ্ধ না হয়ে বরং কাজের ভারে যুবক থাকার চেষ্টা করো। জীবনে এখনও অনেক পথ তোমাদের পাড়ি দিতে হবে। এখানে কল্পনাকে প্রশ্রয় দেবে না, মনের মাঝে নানা রঙের স্বপ্ন না এঁকে বাস্তবতার ফানুস উড়াবে। যারা কাজ না করে শুধু স্বপ্ন নিয়ে পড়ে থাকে, তারাই বাস্তবতার মোকাবেলা করতে পারে না। কিন্তূ যারা বাস্তবতাই বিশ্বাসী তারাই এ জগত সংসারে টিকে থাকে। আশা করি সবাই ভেবে দেখবে। সকলের প্রতি রইলো শুভ কামনা”।