কেন ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যার পরিসংখ্যান?
প্রশ্নটা জরুরি। এবং, তার উত্তর ভারতের বহুত্বের পক্ষে সুসংবাদ নয়। সত্যি কথা হল, মুসলমানরা প্রবল ভাবে জনসংখ্যা বাড়িয়ে ক্রমে ভারত নামক দেশটাকে ‘দখল’ করে নেবে, হিন্দুরা ‘নিজভূমে পরবাসী’ হবে— দেশের প্রায় একশো কোটি হিন্দুর একটা বড় অংশ স্বেচ্ছায় এই সুপরিকল্পিত গুজবে বিশ্বাসী। অতএব, এই গুজব়টাকেই যদি পরিসংখ্যানের মাটিতে দাঁড় করানো যায়, ভোটের বাজারে তার দাম তো থাকবেই।
এখন দেখা যাক, সঙ্ঘ পরিবার ভোটের বাজারে যে ‘আতঙ্ক’ ফেরি করে, সেটা কত দূর সত্য। অদূর ভবিষ্যতে কি মুসলমানরা ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে উঠতে পারেন?
২০০১ থেকে ২০১১ অবধি ভারতে মুসলমান জনসংখ্যা বেড়েছে ২৪.৬ শতাংশ, আর হিন্দুদের সংখ্যা বেড়েছে ১৬.৭৬ শতাংশ। অর্থাৎ, এই দশ বছরের প্রতি বছর এই দুই গোষ্ঠীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির গড় হার যথাক্রমে ২.২ ও ১.৫৬ শতাংশ। এই হার যদি অপরিবর্তিত থাকে, জনসংখ্যায় হিন্দুদের টপকে যেতে মুসলমানদের কত বছর সময় লাগবে, অঙ্কের হিসেব বলে, দুশো বছরেরও বেশি। ২২২০ সালে কী হবে, সেই গল্প বেচে ২০১৫ সালের ভোট জিততে চাওয়া কিন্তু প্রতিশ্রুতির চেয়েও বড় মিথ্যাচার।
ভারতে মুসলমানরা গোষ্ঠীগত ভাবে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছেন, কতটা পিছিয়ে রয়েছেন, তার কয়েকটা নমুনা পেশ করা যাক। মুসলমানদের মধ্যে সাক্ষরতার হার দেশের গড়ের তুলনায় প্রায় দশ শতাংশ কম। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, মুসলমানদের মাথাপিছু ব্যয়ক্ষমতা গোটা দেশে সবচেয়ে কম— ২০০৯-১০ সালের নমুনা সমীক্ষার হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে, এক জন হিন্দু গড়ে প্রতি মাসে ব্যয় করেন ১১২৫ টাকা, আর এক জন মুসলমান ৯৮০ টাকা। পাকা শৌচাগারই হোক অথবা শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হার, বিবিধ আর্থ-সামাজিক সূচকেই মুসলমানরা জনগোষ্ঠী হিসেবে দেশের মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে। সরকারি চাকরিতে মুসলমানদের সংখ্যা কার্যত হিসেবেই আসে না। বস্তুত, সংগঠিত ক্ষেত্রেই তাঁদের উপস্থিতি জনসংখ্যার অনুপাতে উদ্বেগজনক রকম কম। কাজেই, মুসলমানদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির পিছনে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের সন্ধান না করে বরং উন্নয়নের অসমতা নিয়ে লজ্জিত হওয়া উচিত।