somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার স্মৃতিআকাশ-১

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১২ ভোর ৫:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ এই রাতে খুব ছোটবেলার স্মৃতিগুলো মনে পড়ছে। যখন ব্লগিং এ প্রবেশ করিনি তখন ডায়রিই ছিল সম্বল। কিন্তু এখন ব্লগ হয়েছে সবচেয়ে বড় জগৎ। তাই শুরু করলাম আমার ব্যক্তিগত লেখা দিয়ে “আমার স্মৃতিআকাশ”।:)

ছোটবেলায় রোজার মাস এলে এক টান টান উত্তেজনা অনুভব করতাম। রোজা রাখা ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। পাড়ার কোন ছেলেটা কতবেশি রোজা রাখতে পারল তাই ছিল সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। বিশ্ব অলিম্পিক নিয়ে আজ যতটা না মাথাব্যথা, তার চেয়ে হাজারগুণ মাথাব্যথা ছিল রোজা থাকা নিয়ে। রোজা রাখার জন্য পাদাপা-দাপী করে যখন আম্মুর সামনে শত রকম কথার মোড়া মারতাম, তখন আম্মু নিরুপায় হয়ে রাতে ডাকার প্রতিশ্রুতি দিত। ছোট ছিলাম, সংগে জেদ এবং রাগ ছিল খুব বেশি। রাতে ঘুমানোর আগে আম্মুর কাছে শত রকমের প্রতিজ্ঞা করিয়ে তারপর ঘুমাতাম। ফলাফল খুবই অপ্রত্যাশিত। ঘুম ভেংগে উঠে দেখি ভোরের পাখিগুলো কিচিরমিচির করছে। পাখিগুলোর ডাক তখন যেন বিষের মত কানে বিধত। উঠেই শত রাগের ভাণ্ডার এক সাথে জড় করে তা একদম জিপ ফাইল করে আম্মুর সামনে ফেলতাম। আম্মু তখন ব্যস্ত থাকত। আব্বু অফিস যাবে তাই গুছিয়ে দিতে হবে। এদিকে আব্বু আমার রাগে আরেকটু ঘি ঢেলে অফিসে রোনা দেয়,আর আমি রাগের আকাশ তৈরি করে আম্মুর সামনে পাড়তে থাকি।

রমজান মাসের শেষের দিকে স্কুল ছুটি দিত একমাসের জন্য। স্কুল যেদিন বন্ধ দিবে সেদিন প্রতিজ্ঞা করতাম বন্ধের মধ্যে পুরানো পড়াগুলা ভাল করে পড়ব। বন্ধুদের কাছ থেকে সাময়িক বিদায় নিয়ে, শিক্ষকদের কাছ থেকে না বলা টাইপের বিদায় নিয়ে বাড়ি ফিরতাম তাং নাং নাং করতে করতে। সকালের করা প্রতিজ্ঞা তখন কে মনে রাখে!

রোজা যে রাখতে দিত না তা কিন্তু নয়। কয়েকটা রাখা হত অর্ধেক, কয়েকটা তার অর্ধেক। এগুলোকে রোজা রাখা বলা চলে না, কিন্তু তখনকার দিনে মিথ্যা কথা বলতে গেলে এমন কিছুটা কর্ম যে আবশ্যক ছিল তা আর বলার কি আছে। :D তবে অনেক মোড়ামুড়ি করে একটা রোজা বরাবরই রাখার সৌভাগ্য অর্জন করতাম আর তা হল শবে কদরের রোজাটা, যাকে ২৭শে রমজানের রোজা বলা হয়(শবে কদর শেষ দশের বিজোড় রাত্রি…)।

মাত্র দুদিন পরে ঈদ। কেনাকাটা শেষ দিন দশেক আগে। যা যা কেনা হয়েছে তা বাইরে আনা সম্পূর্ণ বারণ। পুরোনো হয়ে যাবে এই ভয়ে। এদিকে ঈদ নিয়ে কি তোড় জোড়! সবচেয়ে মজা পেতাম না পড়ার জন্য। ঈদের দু-তিন দিন আগের থেকে ওটা মাফ। আমাদের বাড়ির সামনে বন্ধুরা মিলে গেইট সাজাতাম, ঈদ মোবারক লিখে টানিয়ে দিতাম…আর মেহেদি পাতার আগাম ব্যবস্থা করতাম। ঈদগাহ সাজানোর দায়িত্ব পড়ত বড় ভাইয়াদের, সেগুলো দেখতে আগে ভাগে ছুটে যেতাম ঈদগাহে। অথচ বিগত একবছরে একবারও ঈদগাহে ভুলেও যাইনি।

অন্যদিন খুব সকালে না উঠলেও ঈদের দিন সকালে সপ্নপূরী থেকে খুব সহজেই বিদায় হত। উঠে দাঁত ব্রাশ করতে করতে ছুটে যেতাম এদিক থেকে ওদিকে। রাস্তার পাশে রংবেরংগের ছোট ছোট দোকানের ভাল ভাল খেলনাগুলো দাম জিজ্ঞাসা করে রাখতাম। একটু পরেই ঈদের নামাজ। পোশাক পরে নামাজ শেষে কোলাকুলি পর্ব সেরে দৌড়াতাম দোকানের দিকে। বন্ধুদের সাথে ঘুরে বেড়িয়ে প্রায় আধ খাওয়া অবস্থায় পারকরতাম ব্যস্ততম ঈদটা। বিকালে খুব খারাপ লাগত। মনে হত যদি এমন দিনটা কখনোই শেষ না হত?:|

আজ দু-তিন বছর হল গ্রামে ঈদপালন করিনি। সুযোগ হয়নি, আব্বু আম্মুও যাবার সুযোগ করে উঠতে পারেনি। সেই আনন্দ আজ আর মনে দোলে না, সেই পাংশু মেঘের ফাঁকে ছায়া ছায়া গ্রামের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সপ্নগুলো আর দেখিনা, সেই ছোট্ট পাওয়ার বিশাল আনন্দ আর পাইনা, বন্ধুগুলোকেও দেখিনি কয়েক বছর! আজ আমি ঈদের দিনেও পড়ায় ব্যস্ত থাকি, আজ আমি রোজা রাখলে সেই তীব্র আনন্দকে খুব খুব খুব মিস করি। জানি আর পাবনা সেই হারানো পথের দিশা, হাটবোনা সেই চেনা রাস্তায় সেই ভাবে, সেই সপ্নরাজার দেশে। /:)
লেখাটি আমার নিজস্ব ব্লগে পেতে দয়াকরে এখানে ক্লিক করুন
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×