সাধ মিটিয়ে কাঁদতে মন চাইছে...
৭ বছর আগের কথা...
ওর SSC পরীক্ষা সামনে। ভার্সিটি থেকে বাসায় গিয়েছি অনেক দিন পর। বাবা মায়ের আদরের একমাত্র ছেলে, বাসা থেকেই বের হতে দিতে চায় না। সারাক্ষণ কি খাওয়াবে আমায় তাই নিয়ে ব্যাস্ত দুটি মানুষ। আমার আত্মীয় ওর পরিবার।
ওর বাবা মায়ের কথায় ক’দিনের জন্য পড়াতে গেলাম। আমার সাধ্যমত বিজ্ঞানের বিষয়গুলো দেখালাম। দুদিনেই আমরা বন্ধুর মত হয়ে গেলাম। ও রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমায় বলে আমি বলে দিলাম যে প্রতি রাতে ১১;৩০ এ আমায় মিস দিতে।
বাসা থেকে আসার পর প্রতি রাতে ও আমায় মিস দিতো। কদিন পর আমিও ওকে গুড নাইট বলে SMS দিতাম। কদিন SMS দিতে দিতে ও দেখি আমায় রিপ্লাই দিতে আরম্ভ করল। এমন তো হতেই পারে তাই ভেবে বিষয়টাকে গুরুত্ব দেই নি। কদিন পর আমাদের মাঝে সাধারণ কথাবার্তা, একটা থেকে কয়েকটা করে SMS বিনিময় হতে লাগল।
একদিন ও বলে ওর জীবনে নাকি কোন এক ঘটনা ঘটেছে যা আমায় শেয়ার করতে চাই। খুব দুশ্চিন্তা হয়েছিল। পরেরবার বাসায় গিয়ে ওকে পড়ানোর জন্য ওদের বাসায় যাই। ওর চোখে এবার আমি নতুন কিছু দেখতে পাই। এবারো পড়াই কিন্তু ওর পড়ার মন যেন নাই। আমি বুঝতে পারি যে ও কারো প্রেমে পড়েছে।
আসার আগের দিনের কথা। আমায় ও বলল যে ওর এক প্রিয় বান্ধবী ওদের মাঝে নেই আর এটা ছিল ওর জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা। এবং ও আমায় এও বলল যে ও আমায় খুব পছন্দ করে। আমি কিছু বললাম না।
রাতে পড়িয়ে ঘুমাতে যাব তখন ওঘর থেকে মেসেজ করেছে যেন আমি ওকে কখনো ভুলে না যায়। আমিও মনের অজান্তে ওকে প্রমিস করে ফেলেছি। পরেরদিন সকালে ওকে স্কুলের দিকে এগিয়ে দিতে গেলাম। যাওয়ার সময় ও আমায় বলল, “কাল থেকে আমায় কে এগিয়ে দেবে?”। আমি কোন উত্তর দিতে পারলামনা। যাওয়ার সময় বলে, “আস্তে আস্তে হাঁটেন”। তারপর বলল, “যখন ছেলেরা ডিস্টার্ব করে তখন আম্মু বলতে বলেছে যে আমি engaged এবং আপনার নাম বলতে বলেছে ”। আমি শুধু বললাম “হুমম”। আসলে ও অনেক সুন্দর দেখতে। বঙ্কিমের ভাষায় বলতে গেলে অনিন্দিতগৌরকান্তিস্নিগ্ধজ্যোতির্ময়রূপীণি। তাই আশেপাশের ছেলেরা খুব ডিস্টার্ব করত। ওকে স্কুলে এগিয়ে দিয়ে আমি ফিরতে পারছিলামনা। কোন এক অজানা চোখের জালে আটকা পড়ে গেছি। ও চলে গেছে ক্লাসে কিন্তু আমি এগোতে পারছিনা। একপা যাব তখন মনে হল কেউ দূর থেকে আমায় দেখছে। ঘুরে তাকাতেই দেখি ও এক করিডোর থেকে অন্য করিডোরে দৌঁড়ে গিয়ে আমায় দেখছে। দূর থেকে ওর উজ্জ্বল মুখটা সূর্্যের মতই জ্বলছে। দূর থেকে একটা ফ্লাই কিস পাঠিয়ে চলে আসলাম বাসায়।
বাসায় এসে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারছিলামনা। রাতে ওকে SMS দিলাম “9 12 21. Good night”.
রাতে আমার ফোনে ৩৭ টা মেসেজ! “এর মানে কি??? এর মানে কি??” করে প্রায় ৩০ টা আর বাকিগুলো লেখা “ I Cant sleep till understanding this. I am awaiting for ur reply…..good night”সারারাত জেগেছিল ও, আর আমিও জেগেছিলাম সারারাত, ওর ছবি দেখছিলাম আর কি করছি, ঠিক করছি না ভুল করছি তাই ভেবে অস্থির হয়ে যাচ্ছিলাম।
ক্যাম্পাস এ চলে আসলাম। প্রতিদিন রাতে ওর সাথে কথা হত কয়েকমিনিটের জন্য। একমাস পর দেখা করলাম ওর সাথে, বাসায় নয় বাসার একটু পাশে। এভাবে চলতে লাগল আমাদের ভালবাসার কাহিনী। মাত্র ২ মাস হয়েছে আমাদের সম্পর্কের। একদিন রাতে কথা বলতে গিয়ে ওর আব্বু আম্মু শুনে ফেলে। আর তখনি জানিয়ে দেয় আমার বাসায়। মেয়ে হাজার সুন্দরী হলেও আত্মীয়দের ভিতর কোন সম্পর্ক করা যাবেনা বলে দেয় আমায় আমার আব্বু আম্মু। আমার আর ওর যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। কাউকে বোঝানো যায় নি যে আমরা দু’টি মানুষ আসলে একই আত্মার, একই রকম পছন্দ, আর সবচেয়ে বড় কথা আমরা দু’জন দু’জন কে ভালবাসি! আব্বু আম্মুকে খুব ভালবাসি। হয়ত তারাই সঠিক, হয়ত আমাদের মঙ্গল নিহিত আছে এতে! কিন্তু তাও মনকে বোঝাতে পারছিলামনা। অনেক SMS করলাম ওর ফোনে, অনেক নাম্বার থেকে ফোন দিলাম কিন্তু ও কে পেলামনা। বিনিময়ে দুদিন পর বাবা মায়ের শক্ত কথা শুনলাম। কিছুই করার ছিলনা আমাদের। আমি জানি ও সারাক্ষণ কষ্ট পাচ্ছে, সারাক্ষণ আমায় ভাবছে হয়ত ওকে বকাবকি এমনকি মারাও হচ্ছে, কিন্তু আমার কিছুই করার ছিলনা। আর যা করা সম্ভব ছিল তার জন্য বাবা মায়ের সম্মানহানি করা যে আমার পক্ষে সম্ভবও ছিলনা। শাখের করাত!!
ক্যাম্পাস জীবনের হাসি আনন্দের মাঝে কেটে যেতে লাগল দিন। কিছু মেয়েরা কাছে ভিড়তে চায়, এমনকি দুএকজন বলেও বসে। কিন্তু পছন্দ ভালবাসার কথা কানে ভাসতেই ওর কথা আর ওর ছবি ভেসে ওঠে। কাউকে আর এ জীবনে ঠাঁই দিব নাহ! মনতো একটাই আর সেইখানে যে বাস করে সেইতো মনের মানুষ। সেখানে আর জায়গা নাই যে!!
একাডেমিক লেখাপড়া শেষ।ভাল একটা চাকুরী পেলাম ভাগ্যক্রমে। শুনেছি ও নাকি ভাল রেজাল্ট করে ভার্সিটিতে ভর্তি হইছে। খুব দেখতে ইচ্ছে করত ওকে, কিন্তু কে বা শুনবে!!! দিন দিন ওকে আরো বেশি মিস করতে লাগলাম। শুধু মনে হত ও আমায় জুড়ে আমার সারা পৃথিবী জুড়ে।
চাকুরী পেয়ে বাসায় ফিরছি। অনেক বাঁধা অনেক ত্যাগ এর পর বাড়ি ফেরা। এবার যাবার সময় আম্মু বলল কার নাকি বিয়ে, সেখানে আংটি দিতে হবে তাই কিনে নিয়ে যেতে। আংটি কেনার সময় চোখ ভিজে যাচ্ছিল বারংবার।
আজ ১৪ ই ফেব্রুয়ারী। বিশ্বভালাবাসা দিবস। গোলাপ ফুল হাতে অনেককেই দেখলাম ঘুরতে। বাসায় ফিরে দেখি আব্বু আম্মু মন খারাপ করে বসে। ঘরে ঢুকে দেখি আরো কয়েকজনকে দেখলাম। কিন্তু সবার মন খারাপ। আমি কিছুই বুঝতে পারছিলামনা। আম্মু বলল পুকুর পাড়ে গিয়ে বসতে। আমি কারো সাথে কথা না বলে চুপচাপ ব্যাগ রেখে পুকুর পাড়ে গেলাম। এমন পরিস্থিতিতে কারো সাথে কথা বলাও যা যায়না। বুঝতে পারছিলাম যে আমি এমন কোন সত্যের সামনে যাব যা আমায় সারাজীবন বইতে হবে, যা হয়ত মুহুর্তের পর মুহুর্ত কাঠঠোঁকরার মত আমায় কুরে কুরে খাবে।
পুকুরপাড়ে দাঁড়ালাম। কোথাও কিছু নেই। মাছরাঙ্গা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে পানির দিকে, হয়ত বধ করবে কোন ছোট মাছকে এক ঠোঁকরে। পাশের ডুমুর গাছে বসে থাকা ঝিঝিপোকা দেখে আমারো ঝিঝিপোকা হতে ইচ্ছা করছিল। হঠাৎ নারকেল গাছের আড়াল থেকে ও বেরিয়ে এসেই ছুটে আমায় জড়িয়ে ধরল। এত দিনের কষ্টের মুহুর্তগুলো বেরিয়ে আসতে চাইছে। সত্যিই সাধ মিটিয়ে কাদঁতে মন চাইছে......
ভোরের ব্লগ
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:০২