রাত অনেক; সবাই ঘুম। কোথাও কোন শব্দ নেই। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে একটি বাচ্চা ছেলে সমানে কেঁদে চলেছে; কেউ শুনছে না তার সেই কান্না।
আমার আম্মুর ঘুম খুব পাতলা; আম্মু বললেন "এই ছেলে এই, কান্না করিস কেন???"
কিছু বলিনা; মাকে জড়িয়ে ধরে সমানে কেঁদে চলি।
#সালমান_শাহ্ মড়ে গেছে; ছোট্ট ছেলেটার "মড়ে যাওয়া" কি জিনিস সেটা জানার কথা না। সে জানেও না মড়ে যাওয়া কি জিনিস। তার ধারনা কেউ মড়ে গেলে তাকে আর দেখা যায়না; টিভি সিনেমাতেও না। ভেবেছিলাম আর কোনোদিন "ও সাথিরে" গানটা শুনতে পাবোনা; দেখতে পারবো না আর প্রিয় সালমান শাহ্ কে টিভিতে।
প্রথম সিনেমা হলে সিনেমা দেখেছিলাম "আনন্দ" সিনেমা হলে; সিনেমার নাম ছিল "সত্যের মৃত্যু নেই"। শেষ সিনে সালমানকে ফাঁসী দেয়া হবে; আমি সিনেমা হলে বসেই চিৎকার করছিলাম "না! না!! না!!!"
সিনেমা দেখেই কেঁদে কেটে অস্থির; আজ সে সত্যি সত্যি মড়ে গেলো!!!
আমি কি কান্না না করে পারি???
আমার আম্মুর তখন খুব বিশ্বাস ছিল যীশুতে; আমি সারা রাত কান্না করেছিলাম আর আমার আমাকে জড়িয়ে ধরে সারা রাত প্রার্থনা করেছিলেন। যীশু; কত অলৌকিক কাজ তুমি করেছিলে। মৃত লাসারকে জীবন দিয়েছিলে। জীবন ফিরিয়ে দিয়েছিলে বিধবার ছেলেকে; জীবন দিয়েছিলে ছোট্ট সেই মেয়েটিকে। আজ আরেকটা অলৌকিক কাজ করো; কান্না থামিয়ে দাও আমার ছেলের। সালমান শাহ্কে জীবিত করে দাও; ফিরিয়ে দাও তাকে আবার আমাদের মাঝে।
আম্মুর প্রার্থনা ঈশ্বর-যীশু শোনেন নি; কারন তাদের সে ক্ষমতা কোন কালেই ছিলোনা। সবই গাল গপ্পো আর বানানো কিসসা।
আমার ছোট খালা আমার থেকে ২-৩ বছরের বড়। যখন থেকে সৃতি আছে; দাদু বাড়িতে তখন থেকেই দেখে আসছি সালমান শাহ্র বিশাল এক ফটো। সোনালী রিমের চশমা; আর গলায় চার কোনা একটা লকেট পড়া ছবি। কি সুন্দর সুদর্শন যুবক; দেখলেই দৌড়ে কোলে উঠে যেতে ইচ্ছে করতো।
ছবিটা আমার খালা সেই আমলের ৫০০ টাকা দিয়ে কিনেছিলেন। কত কষ্ট করে টাকা জমিয়েছিলেন সেটা সহজেই অনুমান করা যায়।
কি অসম্ভব ভালবাসা; ভালোলাগা।
আমি নিশ্চিত আমার মতন আমার খালাও সে রাতে কেঁদেছিলেন সালমানের জন্য; কেঁদেছিলেন তার আরও হাজার লক্ষ কোটি ভক্ত।
আজ সেই ৬ সেপ্টেম্বর; মহানায়কের মহাপ্রয়াণ দিবস।
ভাবতাম, এখন আর তার জন্য অতো কষ্ট লাগেনা; সময় সব কিছুই ভুলিয়ে দিতে পারে।
কিন্তু সেটা ভুল; যে ভালবাসা তখন ছিল; আজো সেটা অম্লান।
থাকবেও চিরকাল।
তুমি বলেছিলে, "ভালো আছি ভালো থেকো; আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখ"।
এই স্ট্যাটাসটা লিখতে লিখতে বারবার চোখ ঘোলা হয়ে আসছে; এই চিঠি হয়তো পৌঁছাবে না তোমার কাছে। কিন্তু এই ২ ফোঁটা চোখের জল সে তো মিথ্যে নয়।
তোমাকে এখনো ভালোবাসি; এই চোখের জলই তার প্রমান।
তাদের ধন্যবাদ; যাদের স্ট্যাটাস না দেখলে ভুলেই গিয়েছিলাম আজকের দিনটার কথা।
গান শুনছি এখন;
ও সাথীরে, যেওনা কখনো দূরে,
তোমারই প্রানে আমার এই প্রান
তুমি ছাড়া বাঁচি কি করে!!!
ফেসবুক পোস্ট লিঙ্কঃ Click This Link