somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

:D:D:D:D:D:D:D:আমাদের ইকবাল সমাচার-নৌকা ও বাস ভ্রমন সংক্রান্ত একটা মেগা আজাইরা গালগল্পের শেষ পর্ব। হাসতে হাসতে বলা যায় না হার্টফেল করতে পারেন। B-)B-)B-)B-)B-)B-)B-):):):):):):):):D:D:D:D:D:D:D

৩০ শে অক্টোবর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যারা ১ম পর্ব পড়েন নাই তারা এইখানে একটা হালকা গুতা দেন।
২য় পর্ব
এই ঘটনার পর বেশ কিছুদিন ইকবালকে আমাদের ধারে কাছেও দেখলাম না। আমরাও ব্যাপারটা নিয়ে আর তেমন একটা মাথা ঘামালাম না। শুধু জানতাম আমাদের আতেলীয় ইকবাল থেকে এইবার উচ্চমার্গীয় একটা মাস্টারপীছ বের হবে। ব্যাপারটা ভালমতো বুঝতে পারলাম যেদিন আমাদের বাংলা ২য় পত্র খাতা দেখাবার দিন এল, আমরা যা ভেবেছিলাম এটা তার চেয়েও চমকপ্রদ ছিল। ক্লাসে ঢুকেই ম্যাডাম সবার খাতা দেয়া শুরু করল। এদিকে ইকবালের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে দেখি ব্যাটা খাম্বার মত ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। সবার খাতা দেয়া শেষ হলে এবারও যথারীতি ম্যাডাম ইকবালকে আলাদা করে ডেকে নিয়ে গেলেন সবার সামনে এবং নির্দেশ দিলেন,সে রচনার জায়গায় কি লেখেছে তা পড়ে শোনাবার জন্য। আমরাও খানিকটা নড়ে-চড়ে বসলাম মজাদার কিছুর আশায়। ইকবালের ভাষ্যমতেই তা হুবহূ নিচে বর্ননা করা হলো। এইখানে একটা ব্যাপার উল্লেখ করার মত, ইকবাল রচনার শিরোনামটা বাস ভ্রমনই দিয়েছিল। কিন্তু ভেতরের মাল-মসলা ছিল অনেকটা এইরকম।
বাস-ভ্রমন

সূচনাঃ এইবার শীতে আমাদের স্কুল থেকে একটা বনভোজনের আয়োজন করা হয়েছিল। আমরা সবাই মিলে একটা বিরাট দশ টনি বাস ভাড়া করলাম, সাথে একটা জাম্বো সাইজের মাইকও ভাড়া করা হল। তারপর একটা সুন্দর দিনক্ষন দেখে সব ছাত্র-ছাত্রীরা ও স্যারেরা মিলে সব তল্পি-তল্পা গুছিয়ে নিয়ে যাত্রা শুরু করলাম। যাত্রা পথে অনেক বেশুমার আনন্দ হল। আমরা মনের আনন্দে গান ধরলাম ”আনন্দধারা বহিছে ভুবনে”, কিছুক্ষন পর আমরা বাসে বসে প্রাতঃরাশ হিসেবে সিংগারা আর ডালপুরি খেলাম। খাওয়া আর ভ্রমণের আনন্দে আমাদের সবার লম্ফ-ঝম্ফ দিয়ে নাচার খুব খায়েশ হল। মাইকের কান ফাটানো গানের তালে তালে আমরা সবাই পুরা বাস কাপিয়ে,দাপিয়ে আর ঝাঁকিয়ে নাচতে লাগলাম। কিন্তু কথাই আছেনা, ”যত হাসি তত কান্না,বলে গেছেন রাম সন্না” তাই আমাদের আনন্দও বেশিক্ষন স্থায়ী হলনা। আমাদের জেলা শহরের মাঝ বরাবর দিয়ে বয়ে যাওয়া কর্নফুলী নদী পার হবার সময় বিরাট একটা বিপত্তি ঘটল। আমাদের গগন বিদারী চিল্লা-ফাল্লা আর দুনিয়া কাপানো নাচের জন্যই কিনা জানিনা,আমাদের দশ টনি বাসের সামনের চাকা দুইটা একসাথে বিকট শব্দে পাংচার হয়ে গেল। আমরা পড়লাম মহা মুসিবতে। আমাদের ড্রাইভার ও তার দুই হেলপার হারামজাদা অনেক চেস্টার পরও এই অচল বাসকে আর সচল করতে পারলনা। আমরা সবাই মাথাই হাত দিয়ে বসলাম, তাহলে কি আমাদের এত সাধের বনভোজন মাঠে মারা গেল। কিন্তু না, কবিগুরু বলেছেন,“ বিপদে মোরে রক্ষা কর এই নহে মোর প্রার্থনা, দুঃখতাপে ব্যথিত চিত্তে নাই বা দিলে সান্তনা” তাই আমরা এই ঘোরতর বিপদেও মনোবাল হারালাম না, সব ছাত্র-ছাত্রী আর স্যারেরা মিলে ঘটনাস্থলে তাৎক্ষনিকভাবে গোল-বৈঠকে বসলাম,অনেক হাউ-কাউয়ের পর বনভোজন কমিটি এই সিধান্তে উপনিত হল যে, বাস ভ্রমনে আর কাজ নাই বরং বিকল্প কোন ভ্রমনের ব্যবস্থা করা হবে। এরই মধ্যে সবাই হন্টন দিয়ে নদীর পাড়ে পৌছে গেলাম আর পাড়ে বাধা নৌকার ঝাঁক দেখে চোখ আনন্দে চকচক করতে লাগল। প্রায় সাথে সাথেই সবাই নৌকা ভ্রমনের জন্য একপায়ে খাড়া হয়ে গেলাম। আমাদের স্যারেরাও নিমরাজি। সুতরাং সবাই এই সিধান্তে একমত হলাম যে, সব ছাত্র-ছাত্রী আর স্যারেরা মিলে ভাগাভাগি করে নৌকাই উঠে যাব আর আমাদের ভ্রমন অব্যাহত রাখব। সবাই আস্তে আস্তে নৌকাই উঠতে লাগল, আমিও চামে একটাতে উঠে পড়লাম।
এটুকু লেখার পর ইকবাল যা লিখেছিল তা হচ্ছে, একটা গতানুগতিক নৌকা ভ্রমন রচনা। ইকবাল অতি সুকৌশলে তার বাস ভ্রমন রচনাকে নৌকা ভ্রমন রচনাই রুপান্তর ঘটাল,ব্যাপারটা এইখানে শেষ হয়ে গেলেই ভাল হত। কিন্তু আমাদের ইকবাল ছিল অন্য ধাতু দিয়ে গড়া, সে রচনার উপসংহারে গিয়ে বিরাট গণ্ডগোল বাঁধিয়ে ফেলল। তার উপসংহারটা ছিল অনেকটা এইরকম,” নৌকা নদীর মাঝখানে আসার প্রায় সাথে সাথে আমাদের নৌকার তলা ডুবো চরে ধাক্কা খেয়ে ফুটো হয়ে গেল, আমরা আবারও মহা মুসিবতে পড়ে গেলাম। নৌকার ফুটো দিয়ে বানের পানির মত জল ঢুকতে লাগল। আমাদের নৌকা মাঝনদীতে অনিশ্চয়তায় দুলতে লাগল। ইতিমধ্যে আমাদের মাঝি অবস্থা বেগতিক দেখে মাঝনদীতে ঝাপ দিল। আমাদের শেষ আশা বলতে কিছুই রইলনা। বিপদের উপরে বিপদ,বাসে বসে খাওয়া ডালপুরি আর সিংগারার ডাবল অ্যাকশনে কিনা জানিনা, এরইমধ্যে আমার ধরছে বেজায় হাগা। এই মাঝনদীতে কোথায় একটু শান্তিতে মলত্যাগ করব সেটা চিন্তা করে পাগল হয়ে গেলাম। হায় খোদা!! হায় মাবুদ!! শেষ পর্যন্ত আমার কপালে এটাই লেখা ছিল। এরচেয়ে তো মরনও অনেক ভাল ছিল। জাতির বিবেকের কাছে এটা আমার বিরাট প্রশ্ন রইল। ইকবালের রচনা এখানেই শেষ হয়। অন্য যে কোন কারনে হোক আর পরীক্ষার হলে সময় সল্পতার কারনেই হোক, ইকবালের এই নৌকা ভ্রমনের কাহিনী মতান্তরে রচনা আর দীর্ঘায়িত হয়নি। কিন্তু যা লিখেছে তাই আমাদের জন্য যথেষ্ট ছিল। ইকবালের রচনা পড়া শেষ হওয়া মাত্র,পুরা ক্লাসে হাসির রোল পড়ে গেল। হাসতে হাসতে আমাদের চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেল। এমনকি আমাদের অতি গম্ভীর ম্যাডামও হাসি আটকাতে পারলেন না। আমাদের ম্যাডাম নেহায়েত ভদ্রমহিলা ছিলেন বিধায় হালকা প্যাদানী দিয়ে ইকবালকে ছেড়ে দিয়েছিলেন,অন্য কেউ হলে ইকবাল কপালে নির্ঘাত খারাপি ছিল।
আজকের ইকবালনামার এইখানেই সমাপ্তি। এই দীর্ঘ রম্য কাহিনী পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। শরীরটা বিশেষ ভাল যাচ্ছিলনা,কিন্তু অনেকের তাগাদা ছিল লেখাটার জন্য তাই কষ্ট করে হলেও সবার জন্য লেখলাম। খুব শীঘ্রই অন্য কোন মজাদার কিছু নিয়ে হাজির হব। ভাল কথা, এত কষ্টের পর লেখার জন্য সবার সরস মন্তব্য চাই,চাই,চাই। সবাইকে ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৪৮
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×