০১.
শবে বরাতের তারিখ ঘনিয়ে এসেছে, অথচ এ সম্পর্কে জানে না-- এমন মুসলিম কি খুঁজে পাওয়া যাবে আমাদের দেশে? সবাই সারা বছর আর যাই করি আর না করি, শবে বরাত হাতছাড়া করতে কেউ রাজি না। শবে বরাতের আগে পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি, মসজিদে মসজিদে ইমাম সাহেবদের ঐ দিন মাহফিলের ঘোষণা, বাসায় বাসায় হালুয়া-রুটি বানানোর প্রস্তুতি--- সব মিলিয়ে মহা কারবার। একরাতে সারা বছরের (!) ইবাদত কভার করার জন্য আমাদের সবার প্রচেষ্টার কোন ত্রুটি থাকে না।
০২.
শুধু কি শবে বরাত? শবে মিরাজ, ঈদে মিলাদুন্নবীসহ আরো যত ভিত্তিহীন দিন তৈরি করা যায় তাতেই যেন আমরা খুশি। অথচ কখনো কি আমরা ভেবে দেখেছি আমরা ইবাদত মনে করে যা করছি তা কি আসলেই ইবাদতের মধ্যে পড়ে কি না? কখনো কি খুঁজে দেখেছি শবে বরাত, শবে মিরাজ, ঈদে মিলাদুন্নবীর নামে আমরা যা পালন করছি তার কোন সুস্পষ্ট ভিত্তি আছে কি না? অথচ সেযব দিনে ইবাদতের ব্যাপারে কোরআন এবং হাদিসে সুস্পষ্ট করে বলা হয়েছে সেগুলো নিয়ে আমাদের তেমন কোন চিন্তা নেই। আমাদের ইমাম সাহেবরাও এগুলো নিয়ে কিছু বলেন না।
০৩.
যে সকল দিনে ইবাদতের কথা কোরআন এবং হাদিসে এসেছে সেগুলোর অন্যতম হল জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশদিন।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালা এ সম্পর্কে শপথ করেছেন। এবং এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কোরআনে কোন বিষয় নিয়ে শপথ করা হয় মূলত তার গুরুত্ব বুঝানোর জন্য।
পবিত্র কোরআনের সূরা আল-ফাজর(৮৯) এর শুরুতেই আল্লাহতায়ালা বলেছেনঃ "(১)শপথ ফজরের, (২)শপথ দশ রাত্রির……"।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের মতে, উপর্যুক্ত আয়াতে "দশ রাত্রি" বলতে জিলহজ্জের প্রথম দশ রাত্রিকেই বুঝানো হয়েছে। অধিকাংশ মুফাসসিররাও এ মতের পক্ষে। প্রখ্যাত মুফাসসির আল্লামা ইবনে কাছির বলেছেনঃ এ মতটিই শুদ্ধ।
০৪.
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "এই দিনগুলির (জিলহজ্জের প্রথম দশদিন) আমলের চেয়ে আর কোন দিনের আমল আল্লাহর নিকটে অধিক প্রিয় নয়।" সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, অন্য দিনের জিহাদও কি এর চেয়ে বেশি প্রিয় নয়? তিনি উত্তরে বললেন,"না, অন্য দিনের জিহাদও এর চেয়ে বেশি প্রিয় নয়। তবে যে ব্যক্তি নিজে তার জান-মাল নিয়ে জিহাদে গিয়ে আর ফিরে আসেনি অর্থাৎ নিজে শহিদ হয়েছে ও সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় বিলিন করে দিয়েছে, তার কথা ভিন্ন"। বুখারী
জিলহজ্জের প্রথম দশ দিনে ইবাদতের গুরুত্বের ব্যাপারে এ হাদিসের বক্তব্য স্পষ্ট। কিছু শর্ত ছাড়া অন্যান্য দিনে জিহাদের থেকেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এ দিবসগুলোর ইবাদতকে।
হযরত উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সঃ) বলেছেন, "এই দশদিনের আমলের চেয়ে আর কোন দিনের আমল এত মহান ও আল্লাহর নিকটে এত অধিক প্রিয় নয়। তাই তোমরা এই দিবসগুলোতে বেশি বেশি তাহলীল, তাকবীর ও তাহমীদ পাঠ কর।" অর্থাৎ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার, আল হামদুলিল্লাহ।
০৫.
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, কোন ধরণের ইবাদত করা উচিৎ?
এই দশদিনে নির্দিষ্ট কোন ইবাদত নেই। প্রত্যেকে যার যার সাধ্যমত ইবাদত-বন্দেগী করবে। সকল প্রকার নফল ইবাদাতসমূহ যেমনঃ ওমরা আদায়, নফল নামায, নফল রোযা, কোরআন তেলাওয়াত, দান-সাদকা, বেশি বেশি তাহলীল-তাকবীর-তাহমীদ পাঠ, পূর্ববর্তী জীবনের ভুল-ভ্রান্তি এবং যাবতীয় গুনাহ থেকে তওবা করা প্রভৃতি আমলগুলো করা যেতে পারে।
হাজীরা ছাড়া অন্যদের আরাফার দিন রোযা রাখার জন্য বিশেষভাবে চেষ্টা করা উচিৎ। রাসূল (সঃ) বলেছেন, "আমি আল্লাহর কাছে আশা করি আরাফার দিবসের রোজার প্রতিদানে তিনি এক বছর পূর্বের ও এক বছর পরের গোনাহ ক্ষমা করে দিবেন"। (মুসলিম)
আসুন আমরা সবাই মূল্যবান এই দশদিন কাজে লাগানোর চেষ্টা করি এবং অপরকেও এ ব্যাপারে উৎসাহিত করি।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের তৌফিক দান করুন। আমীন
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:৩০